বাংলাদেশের উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ
লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ২১ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৫:২৮:৩৫ সকাল
১৯৯১ সালে স্বৈরাচারের পতনের পর গণতন্ত্রের যে অভিযাত্রা শুরু হয় সে পথ ধরে দেশে অর্থনৈতিক উন্নতির চাকা গতিশীল হয়ে ওঠে। বিগত দুদশক ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এসব সাফল্য এসেছে কৃষি ও শিল্প খাতে বিকাশের কারণে। কৃষিতে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা নিহিত। খাদ্য-শস্য উৎপাদনে আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভের কাছাকাছি। শাক-সবজি, ফলমূল ও পাটসহ অন্যান্য অর্থকরী ফসলের উৎপাদনেও আমাদের কৃষক সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে। পোষাক শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় শীর্ষতম - অর্থাৎ চীনের পরেই। পাট শিল্পের বাজারও পুণরুদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের বস্ত্র, সিমেন্ট, প্লাস্টিক, সিরামিক, মেলামাইন, ওষুধ, জাহাজ নির্মাণ, ইলেকট্রনিক, অটোমোবাইল, চা, চামড়া, ইত্যাদি বিভিন্ন শিল্পে অগ্রগতির হার উল্লেখযোগ্য। পোষাক, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য, জেনেরিক ঔষধ, এবং তথ্য-প্রযুক্তির সামগ্রী উৎপাদনে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আমাদের অবস্থান নেপাল, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের উপরে। সরকারের কিছু জনকল্যাণমুখী নীতি এবং দেশী এনজিও ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা কর্তৃক তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বল্প-ব্যয়ের রোগ প্রতিরোধক ও জন্ম-নিরোধক কর্মসূচীর ব্যাপক সাফল্য, ইত্যাদি কারণে জন্ম হার, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হারের হ্রাস এবং গড় আয়ুর বৃদ্ধি ঘটেছে। সামজিক খাতের এসব সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান থেকেও এগিয়ে গেছে। ২০১৩-১৪ সালের সরকারী অর্থনৈতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২১.৫০৮ বিলিয়ন ডলার এবং মাথাপিছু বার্ষিক আয় ১১৯০ ডলার। এরপরও বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশের তালিকায়ই অবস্থান করছে। তা সত্তেও বাংলাদেশ তার পঞ্চাশতম স্বাধীনতা বার্ষিকীতে একটি মাঝারি আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। দেশের বর্তমান বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ। এ স্বপ্ন পূরণের জন্য বিশ্ব-ব্যাংকের হিসেবমতে বাংলাদেশকে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে ৭.৫% থেকে ৮% এর মধ্যে আনতে হবে। এ হারে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ঘটলেই আমরা ২০২১ সাল নাগাদ বার্ষিক ৪ হাজার ডলারের মাঝারি আয়ের দেশে পরিণত হতে পারব। আর দারিদ্র হ্রাসের বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে আমরা ২০৩০ সাল চরম দারিদ্র খেকে মুক্ত হতে পারব বলে অর্থনীতিবিদরা আশা প্রকাশ করেছেন।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। আয়তন ও সম্পদের তুলনায় আমাদের জনসংখ্যার পরিমাণ অনেক বেশী। বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি যা দেশের উন্নয়নে এক বড় অন্তরায়। আশার কথা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে আসছে। তবে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে শহুরে জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিপুল জনসংখ্যার চাপে রাজধানী ঢাকা শহর ভারাক্রান্ত। ঢাকা কেন্দ্রীক উন্নয়নের কারণে গ্রামীণ জনস্রোত ঢাকামুখী হয়ে পড়েছে। ফলে নাগরিক সুযোগ-সুবিধার ও পরিবেশের ওপর প্রচন্ড চাপ পড়েছে। ঢাকা-কেন্দ্রীক অপরিকল্পিত শিল্পায়নও এ অবস্থার জন্য দায়ী। দারিদ্রের হার কমে আসলেও এখনও দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে পড়ে আছে। সার্কভুক্ত ৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে দারিদ্রের হার সবচেয়ে বেশী। ২০১৪ সালের উন্নয়ন সূচকে ১৮৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪২তম। অর্থনৈতিক খাতের সূচকে বাংলাদেশ এখনও বেশ পিছিয়ে। আইনের শাসন ও সুশাসনের অবনতি টেকসই উন্নয়নের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। সুশাসনের জন্য প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত একটি দক্ষ ও নিরপেক্ষ প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থা। এর কোনটাই আপাতত আমাদের নেই। এরপরই আসছে শিক্ষা, উদ্ভাবন ও তথ্য-প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জটি। এ ক্ষেত্রে যে অনেক পিছিয়ে আছে তার একটি চিত্র সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে পাওয়া যায়। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৮ দেশের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির সূচকে বাংলাদেশ শিক্ষার ক্ষেত্রে ২৫তম, উদ্ভাবনে ২৭তম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ২৬তম স্থানে অবস্থান করছে। এটা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক কোন চিত্র নয়।
প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার জন্য আমাদের প্রয়োজন প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও মেধাসম্পন্ন সৃজনশীল দক্ষ জনশক্তি। মানব সম্পদ উন্নয়নের বিষয়টি আমাদের দেশে বরাবরই উপেক্ষিত হয়ে এসেছে। এর জন্য খেসারতও দিতে হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। ’সিলিকন ইন্ডিয়া’ নামে ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার খবরে প্রকাশ, ২০১২ সালে বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয় প্রবাসীরা বাংলাদেশে অর্জিত তাদের উপার্জনের প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স ভারতে পাঠিয়েছেন। একই সূত্রে জানা যায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ৫ লক্ষ ভারতীয় কর্মী ওই সময়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টস, টেক্সটাইল ও এনজিও সেক্টরে কর্মরত ছিল। এছাড়া হাজার হাজার দক্ষ শ্রীলঙ্কান কর্মীও বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ করছে। দেশের ক্রমবর্ধমান দক্ষ জনশক্তির চাহিদা স্থানীয়ভাবে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় বিদেশী দক্ষ জনশক্তি আমদানীর ওপর আমরা নির্ভর হয়ে পড়েছি। শিক্ষা, উদ্ভাবন ও তথ্য-প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকার কারণেই এমনটা ঘঠছে। সরকারী কর্মকর্তাদের অদক্ষতার কারণে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) যথাসময়ে বাস্তবায়িত হতে পারছে না। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রীর বক্তব্য থেকে জানা যায়, এ অর্থ-বছরের (২০১৪-১৫) গত ৫ মাসে এডিপি’র মোট বরাদ্দের মাত্র ২১ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। গত বছরের চিত্রও প্রায় অনুরূপ ছিল। এডিপি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ার যেসব কারণের কথা তিনি বলেছেন তার মধ্যে অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ প্রকল্প পরিচালকের নিয়োগ এবং বিশদ পরিকল্পনা প্রণয়ণে ভুল-ভ্রান্তি অন্যতম। এটা প্রমাণ করে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাবে জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কত কঠিন হয়ে পড়ছে।
টেকসই উন্নয়নের অন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো অবকাঠামোগত পশ্চাদপদতা। উন্নত অর্থনৈতিক অবকাঠামো দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে। যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুত, জ্বালানী ও গ্যাস, বন্দর ও পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, ইত্যাদি অর্থনৈতিক অবকাঠামোর আওতাভুক্ত। বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে সামান্য উন্নতি হলেও তা আশানুরূপ নয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ নীটওয়্যার ম্যানুফেকচারিং এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) উদ্যোগে ‘গ্লোবাল বায়ার্স ইনফরমেশন ডাইরেক্টরি’ বইয়ের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন ও বিতরণ অনুষ্ঠানে নিট পোশাক শিল্পোদ্যোক্তারা অভিযোগ করেন নিটওয়্যার কারখানাগুলোতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে উৎপাদন সক্ষমতার ৪০-৪৫ শতাংশ অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে সরকারের স্বল্প-মেয়াদী ‘কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ' সাময়িক ও কিঞ্চিৎ চাহিদা মেটাতে পারলেও দীর্ঘ মেয়াদে এ পদ্ধতি ফলপ্রসু অবদান রাখতে সক্ষম নয়। এছাড়া অতি মূল্যায়িত কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ গ্রাহক পর্যায়ে সাশ্রয়ী ও লাভজনক হতে পারছে না। তাই ব্যয়-সাশ্রয়ী ও দীর্ঘ-মেয়াদী বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হলেও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে এর সেবা মূল্য অনেক বেশী। উন্নয়নের গতি বাড়াতে হলে এসব খাতে আরও মনোযোগি হতে হবে। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে এগিয়ে যেতে হলে আর্থ-সামাজিক খাতে আমাদের সার্বিক সক্ষমতাকে আরও উন্নত করতে হবে। দুর্নীতি আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক খাতের উন্নয়নে এক বড় প্রতিবন্ধক। ট্র্যান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কর্তৃক প্রকাশিত ২০১৪ সালের দুর্নীতির ধারণাসূচকে সবচেয়ে বেশী দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম। অপ্রতিহত গতিতে দেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। গত এক দশকে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি টাকা। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ১৭৮ কোটি ডলার, বাংলাদেশী টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ মুক্ত বাজার অর্থনীতি অনুসরণ করলেও অনুদার শুল্ক ও ট্যারিফ নীতিমালা এবং জটিল আইন ও বিধি-বিধানের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও শৃঙ্খলিত। দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি দেশের উন্নয়নের জন্য একটি বড় সমস্যা। সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ নীতির কারণে আর্থিক স্বাধীনতার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩১তম। এটা অতি-নিয়ন্ত্রিত ও প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ অর্থনীতির একটি চিত্র। আইনের শাসন ও যুগোপযোগি আইনের অভাব, বিচার ব্যস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি উন্নয়নের গতিকে মন্থর করে দিচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, লাগাতার হরতাল মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে ফেলছে। উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীগণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এসব কারণে বিদেশী বিনিয়োগও নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছে। অভ্যন্তরীন বিনিয়োগ খাতে যে মন্দা চলছে তা কাটিয়ে ওঠার জন্য জরুরী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে ব্যাংক ঋণে সুদের উচ্চ বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তা ও শিল্পমালিকগণ নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে, ফলে বিদেশী বিনিয়োগেও ভাটা পড়েছে। বেকারত্ব বাড়ার সাথে সাথে তরুণ সমাজের একটি অংশ নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে।
এছাড়া পরিবেশের অবক্ষয় ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আমাদের দেশের জন্য একটি বিরাট সমস্যা। এ সমস্যাটি এখন আমাদের গ্রামীন জনগণের জীবন ও জীবিকার ওপর মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য নতুন কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভবান করতে হবে। উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন, পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জনসম্পৃক্ততা থাকলে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয় এবং এর সুফল তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছুয়। দেশে দারিদ্রের হার কমিয়ে আনতে হলে মানুষের আয় বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন বেশী করে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পায় এবং আয় বাড়ে। তৃণমূল পর্যায়ে আত্ম-কর্মসংস্থান ও আয়মূলক কর্মকান্ড সৃষ্টির জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ ও আর্থিক সুবিধা সহজলভ্য করতে হবে। এর ফলে একদিকে দারিদ্রের হার কমবে, অন্যদিকে ধনী-দরিদ্রের আর্থিক বৈষম্য কমে আসবে। মানব উন্নয়নের জন্য সরকারী বাজেটে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। মানসম্মত শিক্ষা, দক্ষতা ও সুস্বাস্থ্য উৎপাদিকা শক্তি বৃদ্ধি করে এবং একই সাথে আয়ও বাড়ায়। পরিকল্পিত নগরায়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। দেশ এখন রাজধানী কেন্দ্রীক উন্নয়নের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে শিল্প ও বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুদূর মফস্বল অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে হবে। এতে ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং দেশের সামগ্রিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।
সব শেষে বলতে হয় বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ। এক দশকেরও বেশী সময় ধরে বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬ থেকে ৭ শতাংশে অবস্থান করছে। অর্থনীতিবিদদের নিকট এটা অনেকটা ধাঁধাঁর মত। এত অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি, অপশাসন, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ কাটিয়ে বাংলাদেশের যে অর্জন তা এ দেশের মানুষের অদম্য সাহস ও টিকে থাকার প্রচন্ড প্রাণশক্তির বহিঃপ্রকাশ। সামজিক খাতের কিছু সূচকেও বাংলাদেশের অগ্রগতি ভারত ও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের কৃষকের ঘামে উৎপাদিত ফসল দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাবারের যোগান দিয়ে দুর্ভিক্ষের বদনাম ঘুচিয়ে দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মহিলা শ্রমিকের প্রণান্তকর পরিশ্রমে বাংলাদেশের পোষাক শিল্প এখন বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে ওঠে এসেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের অতি কষ্টার্জিত আয়ের অর্থে বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল স্ফীত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ ও রপ্তানী আয়ের অর্থে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২.৪ বিলিয়ন ডলার যা পাকিস্তানের ১৩.৮২ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবদানে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বাংলাদেশের উদ্যমী শিল্পোদ্যোক্তাগণ প্রচন্ড ঝুঁকি মাথায় নিয়ে এবং তাদের নিরলস পরিশ্রম ও দৃঢ় মনোবলকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছেন। বিরূপ পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করে বাংলাদেশের এ ধাঁধাঁ লাগানো উন্নয়ন শুধু তাদের কারণেই সম্ভব হয়েছে। যারা এক সময়ে বাংলাদেশকে ’তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা দিয়েছিল তারাই এখন বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশের অর্থনীতি একদিন ’উদীয়মান ব্যাঘ্রে’ পরিণত হবে দেশবাসী এ স্বপ্নই দেখছে।
বিষয়: বিবিধ
২৩০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন