মানুষ কখন সৃষ্টির সেরা জীব - পর্ব: ২
লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ২৫ অক্টোবর, ২০১৪, ০৬:২৪:৪২ সকাল
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে মানব জাতির সৃষ্টির উদ্দেশ্য, তার অতীত কর্মকান্ডের ইতিহাস, বর্তমান জীবনের রূপরেখা এবং ভবিষ্যতের পরিণতির কথা সুষ্পস্ট ভাষায় বর্ণনা করেছেন যাতে মানুষ তার জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে জানতে পারে, সঠিক পথের দিশা এবং প্রকৃত শান্তির সন্ধান পেতে পারে। প্রতিটি মানুষের অন্তরে দুটি সত্তা বিদ্যমান আছে - একটি মানবিক গুণসম্পন্ন সত্তা, অপরটি পাশবিক সত্তা। ঐশী প্রেরণা-সঞ্জাত বিবেকবোধ যখন শাণিত হয়ে ওঠে তখন মানবিক সত্তার উৎকর্ষ সাধন হয় - যা মানুষকে তার জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, দায়িত্ব-কর্তব্য ও শেষ পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করে তুলে এবং ন্যায় ও শান্তির পথে পরিচালিত করে। এ ধরনের জাগ্রত বিবেকবোধসম্পন্ন মানুষই সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে পরিগণিত হয়। এসব মানুষ তাদের স্বাধীন সত্তাকে সৎকর্ম সম্পাদনে নিয়োজিত করে। আর মানুষ যখন তার বিবেকবোধ হারিয়ে ভাল ও মন্দের এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়ে অক্ষম হয়ে পড়ে তখন তার পাশবিক সত্তা জেগে ওঠে তাকে পাপ-পঙ্কিলতায় জড়িয়ে ফেলে। এ ধরনের মানুষ পশুর মতই নিকৃষ্ট, এমনকি পশুর চেয়েও অধমে পরিণত হয়। আল্লাহ্ মানুষকে যে স্বাধীন সত্তা দান করেছেন তার কোনরূপ অপব্যবহার করলে তার জবাবদিহি একদিন তাকে করতেই হবে। কেননা আমরা সবাই মহান স্রষ্টা আল্লাহর নিকট থেকেই এসেছি এবং মৃত্যুর পর তাঁরই নিকট ফিরে যাব, বিচার দিবসে আমরা কি নিয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হব সেটাই আমাদের জীবনের প্রধান বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত।
সৃষ্টির সেরা জীব হওয়ার পথে নানাবিধ বিপদ ও পদস্খলন রয়েছে। শয়তানের কুপ্ররোচনা ও কুপ্রবৃত্তির তাড়না মানুষকে কখনও কখনও বিপথগামী করে ফেলে। যারা সচেতন তারা ভুল-ত্রুটির জন্য তৎক্ষণাৎ আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে ও তওবা করে। আল্লাহ্ মানুষকে বিপথগামীতা থেকে সতর্ক করার জন্য ও তার ঈমানের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য মাঝেমধ্যে তাদেরকে কষ্টদায়ক পরিস্থিতির সম্মুখীন করে থাকেন, তিনি বলেন, "এবং আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, জান-মালের ক্ষতি ও ফল-ফসলের বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদেরকে। যখন তারা বিপদে পতিত হয় তখন তারা বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই নিকট ফিরে যাব । তারাই সেব লোক যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত দয়া ও অনুগ্রহ রয়েছে এবং তারাই সৎ পথপ্রাপ্ত" (২:১৫৫-১৫৭)। বিপদে-আপদে মহান আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রেখে এবং ভাগ্যের ভালো ও মন্দকে সহজভাবে মেনে নিয়ে ধৈর্য ধারণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। ধৈর্যশীলতা, সৎ-চিন্তা ও সৎ-কর্মই মনের প্রশান্তি অর্জনে সহায়ক হতে পারে - অন্য কিছু নয়। মানুষ নিজেকে পরিশুদ্ধ করবে এবং অন্যকেও পরিশুদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করবে - এটাই আল্লাহ্ চান। তাই তিনি বলেন, "শপথ সময়ের, নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাগিদ করে সত্যের এবং তাগিদ করে ধৈর্য ধারণের” (১০৩:১-৩)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আনুগত্যের মধ্যেই নিহিত রয়েছে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সাফল্য। ঈমান এবং নেক আমলই হলো সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পথ ও পাথেয়। যারা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখে এবং সৎকর্ম করে তারাই সফলকাম হয়। ইহ ও পরকালে তাদের জন্য রয়েছে মহাকল্যাণ ও শান্তি। তাদের সম্পর্কেই আল্লাহ্ বলেন, "যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা” (৯৮:৭)। অপরদিকে মানুষ যখন তার সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গিয়ে বিপথগামী হয় তখন সে সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হয়। তাই এদের সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন, "সমস্ত জীবের মাঝে আল্লাহর নিকট তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা অস্বীকার করেছে অতঃপর আর ঈমান আনেনি” (৮:৫৫)। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, "যার দ্বারা মানবতা উপকৃত হয়, মানুষের মধ্যে তিনিই উত্তম"। মহানবীর (সাঃ) বিদায় হজ্বের ভাষণে স্মরণীয় উক্তিটি ছিল, "নিশ্চয় আল্লাহর দৃষ্টিতে তোমাদের মধ্যে সে-ই সবচেয়ে মর্যাদবান যে সবচেয়ে বেশী খোদা-ভীরু। সকল মানুষ আদমের বংশধর এবং আদম মাটি থেকে তৈরী। অনারবের ওপর আরবের, আরবের ওপর অনারবের, কালোর ওপর সাদার অথবা সাদার ওপর কালোর কোনই শ্রেষ্ঠত্ব নেই শুধুমাত্র ধার্মিকতা ছাড়া"। তাই মানুষ মাত্রই সৃষ্টির সেরা জীব নয়। ঈমান এবং নেক আমলের সমাবেশ যাদের মধ্যে ঘটেছে তারাই সৃষ্টির সেরা। (সমাপ্ত)
বিষয়: বিবিধ
১৩৮০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হে আল্লাহ আমাদের ঈমানের সাথে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন । আমীন ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন