মানব-সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়: পর্ব - ১
লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৯:৩৭:৩২ রাত
এ বিশ্ব পরিমন্ডলে পৃথিবী নামক আামাদের এ গ্রহটিই শুধু মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বসবাসের উপযোগী। জীবন ধারণের জন্য যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা একমাত্র এ গ্রহেই বিদ্যমান। দিগন্ত বিস্তৃত প্রান্তর জুড়ে কত ধরনের বৃক্ষ-তরু-লতা, নানা স্বাদ ও রঙ-বেরঙের ফুল ও ফয়-ফসলের সমারোহ, বৃষ্টি-ঝর্ণা-নদী ও ভূতলের পানীয় ধারায় সিক্ত আমাদের এ বসুন্ধরা - এসবই মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর এক মহাদান। তিনি মানুষ ও সকল প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য সাজিয়েছেন এ মনোরম প্রকৃতি ও পরিবেশ। সমগ্র সৃষ্টি তাঁর একটি পরিবার। তিনি সবকিছুই তৈরী করেছেন প্রয়োজনমাফিক পরিমিতভাবে একটি মহৎ উদ্দেশ্যে। প্রতিটি জীব ও জড় বস্তুকে করেছেন একটি নিয়মের অধীন। মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে এবং প্রকৃতির সব কিছুকেই করেছেন মানুষের অধীন। আল্লাহ্ মানুষকে তাঁর নিয়ামতের নিদর্শনসমূহ অনুধাবন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং সাগর-নদীতে নৌবহরের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ্ তা’আলা আকাশ থেকে যে পানি বর্ষণ করেছেন, তা দিয়ে মৃত ভূমিকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্তু। আর ঋতুর পরিবর্তনে এবং মেঘমালার সঞ্চালনে যা তাঁরই নির্দেশের অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে (২:১৬৪)।”
আবাহমান কাল থেকে মানুষ প্রকৃতির কোলে এক অনুকুল পরিবেশের সাথে মিলেমিশে লালিত-পালিত হয়েছে। ফলে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সকল প্রাণীর বসবাসের জন্য পৃথিবীতে অনুকুল প্রাকৃতিক পরিবেশ বিরাজমান ছিল। যতদিন পর্যন্ত মানুষ বিশ্ব প্রকৃতির সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করেছে ততদিন পর্যন্ত বিশ্ব প্রকৃতির ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থায় কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। তারপর যখন ঊনবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবী জুড়ে শিল্প বিপ্লবের সূচনা হলো তখন থেকেই জড়বাদী যান্ত্রিক সভ্যতার প্রতিকুল প্রভাব প্রকৃতির উপর নেমে আসল। বর্তমান বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার, নব নব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং শিল্পায়নের মহাযজ্ঞ মানুষের জীবন ব্যবস্থায় নিয়ে এসেছে এক ব্যাপক পরিবর্তন। এ পরিবর্তনের ধারায় মানুষের পার্থিব কর্মব্যস্ততা তাকে এক যান্ত্রিক প্রাণীতে রূপান্তরিত করেছে। মানুষ ক্রমশ তার স্বাভাবিক মূল্যবোধগুলো হারিয়ে কৃত্রিম ভোগসর্বস্ব প্রাণীতে পরিণত হয়েছে।
শিল্পায়নের ফলে ভোগ্য পণ্যের সহজ-লভ্যতা জীবনকে করেছে আরামপ্রদ। জ্বালানী নির্ভর যান্ত্রিক পরিবহন, যাতায়াত ও টেলি-যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হওয়ায় জীবনে এসেছে গতিময়তা। প্রযুক্তির উন্নতি পৃথিবীকে মানুষের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে মানুষ পেয়েছে দীর্ঘজীবন। মানুষের ভোগবাদী জীবনে এখন চাকচিক্যের অন্ত নেই। নিত্য নতুন পণ্যের উদ্ভাবনের ফলে এবং মিডিয়ায় আকর্ষণীয় ব্যবসায়িক প্রচার প্রচারণার কারণে চাহিদা ও সরবরাহ বেড়ে গেছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়নের উত্তরোত্তর প্রসার ঘটছে। এভাবেই প্রযুক্তি নির্ভর বর্তমান বৈজ্ঞানিক সভ্যতা মানুষের জীবন যাত্রা ও ভাগ্য বদলে ফেলেছে। তবে এসবের বিপরীতে আরেকটি চিত্র হলো: মানুষের জীবন এখন অনেক যান্ত্রিক, জটিল, প্রতিযোগিতাপূর্ণ, ব্যতিব্যস্ত ও উদ্বেগ-উৎকন্ঠাময় রূপ ধারণ করেছে। আত্ম-কেন্দ্রিকতা, অতৃপ্তি, হতাশা মানুষের মন-মানসিকতাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। ভোগবাদী জীবন মানুষের যেমন মানসিক শান্তি কেড়ে নিয়েছে তেমনি পৃথিবীর নির্মল পরিবেশকে বিষময় করে তুলেছে।
জনসংখ্যার বিস্ফোরণ এবং সেই সাথে বিপুল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে। শহর-বন্দর, কল-কারখানা, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, পরিবহনের যান্ত্রিক যানবাহন, ইত্যাদি নির্মাণের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহের আঞ্জাম দিতে গিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশের উপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ পড়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আণবিক, রাসায়নিক ও ধ্বংসাত্মক সব যুদ্ধাস্ত্র। কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীট-নাশক ও রাসায়নিক সার, কল-কারখানার ধূয়া, জ্বালানী-তেল থেকে নির্গত কার্বনডাইঅক্সাইড ও বিভিন্ন শিল্প-বর্জ্য মাটি, বায়ু ও পানিকে দূষিত করে তুলেছে। অতিরিক্ত কার্বনডাইঅক্সাইড নির্গত হওয়ার কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে যা হচ্ছে তা হলো - জলবায়ুর পরিবর্তন. খরা, অতিবৃষ্টি, মেরু অঞ্চলে বরফ গলা, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, উপকূল অঞ্চলে মাটির লবণাক্তা বৃদ্ধি, ফসলহানি, নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়া, বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বৃদ্ধি, রোগ-ব্যধি, ইত্যাদি। এসব দুর্যোগ পরিবেবেশ ও জীব-বৈচিত্রের ওপর বড় ধরনের হুমকির সৃষ্টি করেছে। এছাড়া কৃষি, শিল্প-কারখানা, রাস্তাঘাট, শহর-বন্দর নির্মাণের জন্য জমির ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে গেছে। ফলে পাহাড়, জলাভূমি ও বন-জঙ্গল এবং সেই সাথে বন্য ও জলজ বহু প্রজাতির প্রাণী, গাছ-পালা ও খনিজ সম্পদ উজাড় হয়ে যাচ্ছে।
শিল্প বিপ্লবের পর সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী শক্তির উত্থানের ফলে পর সারা দুনিয়া জুড়ে ভোগ-প্রবণতা ও সম্পদ কুক্ষিগত করার যে প্রতিযোগিতা চলছে তাতে এক শ্রেণীর পুঁজিপতির হাতে সম্পদের পাহাড় জমছে অন্যদিকে শোষণ ও বৈষম্যের কবলে পড়ে অগণিত দরিদ্র, বঞ্চিত ও বুভূক্ষ মানুষের হাহাকারে পৃথিবীর আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠছে। এসব অশুভ শক্তি পৃথিবী জুড়ে যুদ্ধের ডামাঢোল পেটাচ্ছে, মানব সভ্যতা বিধ্বংসী আণবিক অস্ত্রের মহড়া চালচ্ছে এবং জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে এক মহা বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। অপরিণামদর্শী এ সর্বগ্রাসী প্রতিযোগিতায় প্রাকৃতিক পরিবেশ তথা পৃথিবীর অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়েছে, তবু এদের বোধদয় হচ্ছে না। অথচ আল্লাহ্ তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে বলেন, “আমি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল এবং এতদুভয়ের মাঝখানে কোন কিছুই ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি এগুলো যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা বুঝে না। নিশ্চয়ই বিচার ফয়সালার দিনটি তাদের সবার জন্যই নির্দ্ধারিত সময় (৪৪:৩৮-৪০)।” (চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১৩৯২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
.
গাছে ফুল ফল
নদী ভরা জল
পাখির কন্ডে গান
সকলি তোমার দান।
কথাগুলোর সাথে আমি চরমভাবে সহমত। কারণ কেয়ামতের আলামত তো এসব দিয়ে শুরু হবে।
এসব পোষ্টে কমেন্ট পাবেন না ভাই। কমেন্ট পেতে হলে ফটকামার্কা মেয়ে পটানো পোষ্ট করতে হবে, তবে স্মরণে রাখবে পোষ্টের কম করে হলেও ৩০/৪০ টা ইমো যুক্ত করবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন