ইসলামের আলোকে জাতীয় সংকটরে সমাধান

লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আহমদ ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৩:২৭:৩৭ রাত



বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত। রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতায় বিশ্বাসী সকল নাগরিকই দেশের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার অধিকার রয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষের অবস্থান রয়েছে এবং একটি সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ ও কৌশলগত পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর দেশে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান রচিত হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন সরকারসমূহ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার জন্য তাদের সুবিধা অনুযায়ী সংবিধানকে সংশোধন করেছে। ফলে সংবিধানটি তার গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট হারিয়ে বর্তমানে এক জগাখিচুড়ি রূপ ধারণ করেছে। শুধু তাই নয় ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে পুরো শাসনযন্ত্রকে দলীয়করণ করেছে। ক্ষমতা বদলের জন্য যে গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয় - সে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য তারা নির্বাচন কমিশনকেও পঙ্গু বানিয়ে রেখেছে। ফলে নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। প্রতিটি ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতার দর্পে অন্ধ হয়ে অত্যাচার-নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধীদলগুলোকে নির্মূল করার চেষ্টা চালিয়েছে। ক্ষমতাসীনদের এ ধরনের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি চর্চার কারণে দেশে রাজনৈতিক সংকট তৈরী হয়েছে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে, দেশের উন্নয়নের পথ রুদ্ধ হচ্ছে, জনজীবনে অশান্তি, দ্বন্দ ও কলহের সৃষ্টি হচ্ছে এবং সর্বোপরি দেশ ও জাতি হিসেবে আমাদের মান-মর্যাদা ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে

যুগে যুগে ক্ষমতালোভী স্বার্থান্বেষীরা নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য অন্যায়-অবিচারের আশ্রয় নিয়েছে, ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছে এবং দেশের বুকে হানাহানি ও রক্তারক্তির সৃষ্টি করেছে। আজ দেশে নির্বাচনকালীন সরকার-ব্যবস্থা নিয়ে যে দ্বন্দ-সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে তা এই মন-মানসিকতারই প্রতিফলন। দেশের মানুষ চায় একটি স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হোক। তারা চায় নির্বাচনকালীন সময়ে এমন একটি সরকার ব্যবস্থা বিরাজ করুক যাতে সকল দল একই অবস্থানে থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে, সকল নাগরিক তাদের ভোট তারা নিজ ইচ্ছেমত দিতে পারবে এবং ভোটের ফলাফলে কোন ধরনের কারচুপি হবে না। একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ছাড়া অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কখনো সম্ভব নয়। তাই নির্বাচন কমিশন যাতে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। একই অবস্থানে থেকে এবং একই সুযোগ সুবিধা নিয়ে সব রাজনৈতিক দল কি ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তার বিধি-বিধান তৈরী এবং এগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাতে নির্বাচন কমিশন নিতে পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ সব ন্যায্য ব্যবস্থা যাতে সবগুলো নির্বাচনে বহাল থাকে এবং এ নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে পুণরায় কোন বিতর্ক ও দ্বন্দের সৃষ্টি না হয় সে বিষয়টি জাতীয় স্বার্থেই ফয়সালা করতে হবে।

বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত শাসকবর্গ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবর্গের অধিকাংশই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। আমাদের ব্যক্তিগত, ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে ইসলামের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর দিক-নির্দেশনা এবং বিধি-বিধান রয়েছে। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে মুসলমানদেরকে এক মধ্যমপন্থী উত্তম জাতি হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন, “তোমরাই (এই দুনিয়ায়) সর্বোত্তম জাতি, সমগ্র মানব জাতির (কল্যাণের) জন্যই তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। (তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে) তোমরা দুনিয়ার মানুষদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে, নিজেরাও তোমরা আল্লাহ্র ওপর (পুরোপুরি) ঈমান আনবে” (৩:১১০)। পারস্পরিক হানাহানি বা অশান্তি নয়, বরং মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের প্রতি আত্ম-নিবেদিত হয়ে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন চিরস্থায়ী শান্তি অর্জনই ইসলাম কামনা করে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের সতর্কবাণী সম্বলিত একটি আয়াত ঊল্লেখ করা যেতে পারে: “তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য কর, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ কর না, অন্যথায় তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের প্রভাব প্রতিপত্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে, ধৈর্য ধারণ কর; অবশ্যই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন” (৮:৪৬)।

নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে আজ বিতর্ক, বিভেদ ও সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে তাতে দেশের সর্বমহলে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। ঘরের বিবাদে বিদেশী রাষ্ট্র, এমনকি জাতিসংঘও জড়িয়ে পড়েছে এবং এ বিষয়ে তারা উৎকন্ঠা প্রকাশ করছে। এটি একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য যেমনি ক্ষতিকর তেমনি লজ্জাজনক ব্যাপার। আমরা ইসলামের আলোকে এসব বিরোধের মীমাংসা করতে পারি। এহেন পরিস্থিতিতে আমরা আল্লাহর নির্দেশের দিকে দৃষ্টিপাত করতে পারি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর নির্দেশ হলো: “যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দিবে এবং ইনছাফ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ্ ইনছাফকারীদেরকে পছন্দ করেন। মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গুনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা করে না তারাই যালেম। মুমিনগণ, তোমরা বেশী বেশী আন্দাজ-অনুমান করা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কিছু আন্দাজ-অনুমান গুনাহ। এবং কারো গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ্ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু” (৪৯:৯-১২)। পবিত্র কুরআনের এই বাণীর আলোকে আমাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক যাতে ক্ষুদ্র স্বার্থ চিন্তার ঊর্দ্ধে ওঠে জাতীয় স্বার্থে এবং ন্যায়ানুগ পন্থায় আমাদের বিরোধের মীমাংসা করতে পারি। আমীন!

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File