তেতুল সম টক কথা ...নাকি শফি’র মুখের হক কথা

লিখেছেন লিখেছেন পাখি ভাই ১৫ জুলাই, ২০১৩, ১২:০১:৩০ রাত

আল্লামা শফির “নারী তেতুল” বক্তব্য কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।উনি একথা না বলে যদি পরিমলের মত নারী ধর্ষন করতেন তাও নারী অধিকার কর্মীদের কাছে গ্রহনযোগ্য হতো। তখন তিনি নিজেকে প্রগতিশীল যেমন ভাবতে পারতেন তেমনি তিনি থাকতেন সকল সমালোচনার উর্ধে।আমরা ছোটবেলায় দু-একটি বাংলা বর্ণের সাথে পরিচিত ছিলাম যেমন মাননীয়া, জনাবা, সদস্যা ইত্যাদি কিন্তু বর্তমানে এগুলোর ব্যাবহার নেই কারণ হিসেবে সাহিত্যিকরা বলে থাকেন এটা নাকি লিঙ্গ বৈশম্য। নারি কে কি নারী বলা যাবে না? যদি না যায় তাহলে ঐসকল নারীভোগী সুবিধাবাদিদের নিজেদের শরিরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেন নারীদের দান করে দেন। এবার আসি নারী তেতুলের ন্যায় এই মহান উক্তি প্রসঙ্গে। আল্লামা শফি কোন এক কথা প্রসঙ্গে বলেছেন নারী তেতুলের ন্যায়।এতে করে কিছু মানুষের বিষেশ অঙ্গে জ্বালাপোড়া শুরু হয়েছে। কি অশ্রাব্য, কটু, নারীর সম্মান হানিকর কথায় না উনি বলেছেন!!! যা নিয়ে আমাদের দেশের বিশেষ নারীভোগী নারী বাধিরা এবং বিশেষ ব্যাবসা সফল নারী নেত্রীরা পরনের কাপড় খুলে সেটাকে পতাকা বানিয়ে উড়াচ্ছেন আর শফি’র ফাসী চাই বক্তব্য আওড়াচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে পড়ে গেল, একদা পাড়ার কিছু দুষ্ট ছেলেরা একটি মেয়েকে পালাক্রমে ধর্ষণ করার কারণে মেয়েটি সংগা হারিয়ে ফেলফে তাকে আর ব্যাবহার করার মত উপযেোগীতা নাই ভেবে বিবস্ত্র অবস্থাই খেলাচ্ছলে তাকে রাস্তার ধারে ফেলে যান। বিবস্ত্র অবস্থাই পড়ে ছিলেন মেয়েটি। ফজরের আজান হল, গ্রামের এক হুজুর নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়া পথে এহেন দৃশ্য দেখে খুবই মর্মাহত হলেন এবং নিজের কাছে মেয়েটির যৌনাঙ্গ ঢাকার মত কোন কাপঢ় না থাকায় নিজের মাথার টুপিটা খুলে মেয়েটির লজ্জাস্তান ঢেকে দিলেন। সকাল হল, মানুষ জমা হল মেয়েটিকে ঘিরে, কোন এক যুবক বলে উঠলেন শালা হুজুর কত খারাপ!!!!! নিজেক সামলাতে না পেরে নিজের টুপি খুলে ঢেকে দিল? কত লালসা হুজুরে মনে ছিল..?

মর্ম কথা হল করলে দেষ নেই, বললে দোষ। যে দোষে আজ আল্লামা শফিকে নিয়ে বুদ্ধিজীবিমহল বাক্যবানে মিডিয়া পাড়াকে জমজমাট করে রেখেছেন। কোথায় ছিল তাদের এই সকল কথার পসরা.? যখন পরিমল এর হাতে নির্মম যৌন নির্যাতনের শিকার আমার কোন এক কোলমতি বোন, যখন চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী কে ধর্ষণ করলো যুবলীগের দুই নেতা। বাচ্চা মেয়েটা লজ্জায়, যন্ত্রনায় আত্মহত্যা করল, তখন কোথায় ছিল তাদের আহাজারি? সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারী তাদের সম্মেলনের সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচতে আসা এক তরুনীকে উপর্যুপরি ধর্ষন করল যখন, তখন কোথায় ছিলেন তারা? মানিক যখন ধর্ষনের সেঞ্চুরি পালন করে তখন কোথায় ছিলেন এসকল নারী বাদিরা ও নারী নেত্রীরা? তখন কি তারা মনে করেছে আসলে নারী তেতুলের মত নয় নারী আসলে চুইংগামের মতো? নাকি এখানে সবাই প্রগতিশিলরা করেছে বলে যায়েজ হয়ে গেছে? নাকি সেখানে কোন সাম্প্রদায়িকতা ছিলনা? অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে এটাকে কি তারা তাহলে গতিশিলদের অবদান হিসেবে মনে করেন? তাহলে ফলাফল কী দাঁড়ালো? নারীদের নিয়ে কটুক্তি বা অশ্রাব্য উপমা দিলে তাদের গ্রেফতার করার দাবী জানাতে হবে, আর আওয়ামী পন্থীরা নারী ধর্ষন করলেও সেটা নিয়ে উচ্চবাচ্য করা যাবে না?

কৃষ্ণ করলে লীলা আর শালার আমি করলে দোষ……!!!

নারী সম্পর্কে কিছু মহান উক্তি যখন বিশ্বের বিভিন্ন সাহিত্যিক করছিলেন এমনকি বাংলা সাহিত্যিকেরাও সর্বশেষ থাবা বাবা যখন নারীর যৌনাঙ্গ নিয়ে কুৎসিত ইসলাম বিদ্বেষী অশ্রাব্য ও অকথ্য চটি সাহিত্য রচনা করলেন তখনও কিন্তু আমার দেশের সুশিল সমাজ এটাকে বাহবা জানিয়েছিলেন। এমনকি আমরা থাবা বাবাকে দ্বিতীয় পজন্মের শহীদ আখ্যা দিয়ে তাকে মাথায় তুলে নেচেছি। অনেক চিত্রশিল্পির আকা চিত্রকর্মতে উলঙ্গ, সীমিত বসনা আবেদনমযী নারীর চিত্র দেখতে পাই যা দেখে আমরা বাহবা দিই, স্বজত্নে ক্রয় করে ঘরের দেয়ায়ে ঝুলিয়ে রাখি তখন নারীবাাদরা কোথায় থাকে?

এবার কিছু মহান ব্যক্তির নারীর দেহমন নিয়ে প্রকাশিত উপমা দেয়ার চেষ্টা করছি।

"বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের চুইংগামের মতো চাবাতে ইচ্ছে করে" -হুমায়ন আজাদ।

হুমায়ন আজাদ মেয়েদের চুইংগামের মতো বললে কোন দোষ নেই কারন সে প্রগতির গাছে বেড়ে ওঠা মাকাল ফল(এক ধরনের ফল যা দেখতে অনেত সুন্দর কিন্তু ভিতরে অত্যন্ত কুৎসিত) ……. আল্লামা শফির “নারী তেতুলের মত উপমা অনেক বেশি অশ্রাব্য। ভাগ্যিস উনি চিবাননোর কথা বলেন নি…..!!!!!!!

"একজন মেয়ে যাকে মন দিতে পারে, তাকে শরীরটা দেওয়া কিছুই নয় । এই শরীরে আছেটা কি?অথচ আশ্চর্য ! নিরানব্বই ভাগ পুরুষের কাছে এবং সমাজযা রা গড়েছেন তাদের কাছে এই শরীরটাই দামি । মনের দাম নেই কানাকড়িও!" এই কথাটি যে বুদ্ধদেব গুহ বলেছেন এখানে তো আর সাম্প্রদায়ীকতার চেতনার ধুয়া তোলা যাচ্ছে না তাই আমরা চুপ করে গেলাম।

ভারতীয় একটি সিনেমার গান “তুইযে আমার কোকাকোলা”- এটা শুনতে আমার কতযে ভালো লাগে, অন্তত তেতুলের মত টক তো নয়!!! এটার বিষয়ে আমার মুখ ফোটে না কারন আমি যে কোন সময় ভাদাদের (ভারতের দালাল)বিরাগভাজন হযে যেতে পারি।

"মেয়ের সম্মান মেয়েদের কাছেই সবচেয়ে কম!" -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ কথার সাথে বাংলাদেশের কোন নারী নেত্রিই দ্বিমত নন তাই তারা এটা নিয়ে ঘাটাতে চান না কারন সম্মান আর তেতুল এক জিনিস নয়।

"কম বয়েসী মেয়ে হল রসগোল্লার মত যেখানে রাখবে সেখানেই পিঁপড়ে ধরবে!" এ কথা শংকর সাহেব বলতেই পারেন কিন্তু শফি কেন বলবেন। উনি মোল্লা মানূষ নারীদের নিয়ে কি তাঁর কোন কথা মানায়???

"পৃথিবীতে বা সমুদ্রে যত হিংস্র প্রাণী আছে সবচেয়ে বৃহত্তম প্রাণী হল মেয়েরা!" মেনানডার এখানে মেয়েদেরকে প্রাণি বলেছেন জন্তু জানোয়ার বা তেতুল বলেন নাই এটা আমরা চোখবুজে মেনে নিতে পারি কারণ তাঁর মত সাহিত্যিক বলতেই পারেন কিন্তু শফি হুজুরের মত কাঠ মৈলভিরা কেন নারীকে তেতুলে উপমায় উপমিত করবেন???? এটাতে তো নারীর আর কোন মান সম্মান থাকলো না।

"পুরুষেরা মেয়েদের খেলার সামগ্রী আর মেয়েরা শয়তানের খেলার সামগ্রী! মেয়েরা সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র বৈ কিছু নয়!" –নেপোলিয়ান যখন একথা বলেছেন তখন তা মেনে নেয়া যায় কারণ এটাতো বাস্তব। আমি তো দেখছি আমার প্রেমিকা আমাকে নিয়ে কি মজার খেলাই না খেলে! আমি তো সুখে আনন্দে ভাসি কিন্তু ও তো তেতুলের মত টক না সুতরাং শফির একথা একদম ডাহা মিথ্যা। একজন হুজুর হয়ে কেমন করে এমন মিথ্যা কথা বলথে পারল?? তাই আমি তাঁর গ্রেফতার ও ফাঁসী চাই।

"বিড়াল, পাখিরা এবং মেয়েরা এই ধরণের প্রাণী যারা নিজেদের প্রসাধনের উপর সর্বাধিকসময় নষ্ট করে!" -চার্লস নড়ায়ার সঠিক কথায় বলেছেন, কারণ আমি আমার জীবনেই এটা বারাবার দেখি। আমি আমার প্রেমিকাকে কসমেটিক কিনে দিই, ভালো বুক খোলা কাপড় কিনে দিই আর তাকে তা পরে আমার সামনে আসতে বলি এবং আমি তার সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হয়ে বলি বিধাতা তোমাকে নিজ হাতে বানিয়েছেন। আমি তাকি ছুয়েও দেখি কিন্তু তাকে তো কখনও তেতুলের মত মনে হয়নি! সে তো অনেক বেশি সুন্দর, সে তেতুল হতে যাবে কেন? তাকে তেতুলের মত বলাই সে মনে কষ্ট পেয়েছে আর তার কষ্টই আমার কষ্ট এ কারনে আমি আল্লামা শফিকে গ্রেফতার করে ফাঁসীর দাবি জানাচ্ছি।

”চোখের সামনে আমার মেয়ে বড় হচ্ছে । কিন্তু সামাজিক নিয়মের বেড়াজালে আমার হাত-পা বাঁধা।" হুমায়ূন আজাদ তাঁর মেয়ে সম্পর্কে এ কথা বলতেই পারেন। তিনি হয়ত তাঁর সুন্দরী মেয়ে দেখে কোন এক কারণে বলেছেন। তিনি তো সুন্দরের পুজারী তাই নিজের মেয়েকে কেন এড়িয়ে যাবেন তার সৌন্দর্যের বর্ননা না করে। তিনি বরং ভালই বলেছেন, তাকে আর আখ্যেপ করে কেউ বলতে শোনে নাই যে-

দেখিতে গিয়েছি পর্বত মালা

দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু,

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া,

একটি ধানের শীশের উপর

একটি শিশির বিন্দু।

তিনি তাঁর মেয়ের সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা এভাবে দিতেই পারেন এখানে কোন দোষ দেখিনা, কিন্তু যখন দেখি শফি সাহেব সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা করার পরিবর্তে মেয়েদেরকে তেতুলের সাথে তুলনা করেন তখন আমার মাথা বিগড়ে যায়। তখন আমি শফির ফাঁসী চেয়ে স্লোগান দিই।

"মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেললেই তো পার - ফ্রিতেই যদি গাভীর দুধ মেলে তাহলে কোন মূর্খ টাকা খরচা করে ঘরে গাই পোষে?" –(মনেরমত মন) সমরেশ মজুমদার কিন্তু কানাকড়িও মিথ্যা বলেন নি।গাভি তো দুধ দেবেই আর সে দুধ তো আর তেতুলের মত টক বা কটু স্বাধের নয়। কিন্তু শফি সাহেব কি একটা টক টক কথা বললেন যে কারনে আমার মুখই নষ্ট হয়ে গেল এ কারণে আল্লামা শফির ফাঁসী চাই।

সর্বশেষ শেখ হাসিনার মুখেরে একটি টক কথার উল্যেখ করতে চাই…“উনার জিভে পানি আসে। উনি যে নেত্রীর পাশে বসতেন, তাকে যদি তেঁতুল মনে করে উনার জিভে পানি আসে, তাহলে আমার কিছু বলার নেই!” কথাটিও কম টক নয়………………………………………..

বিষয়: বিবিধ

৩৬৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File