আর কোন দাবি নয় সবাইকে দেশ বাচাতে, মানুষের সুসম্মান প্রদানকল্পে এবং নিজের অধিকার ছিনিয়ে আনতে চাই বাধভাঙগা আন্দোলন, “আমরা কোটা মানি না”।
লিখেছেন লিখেছেন পাখি ভাই ২৭ মে, ২০১৩, ০৪:০১:২৭ রাত
চাকরি লাভে কোটা ব্যবস্থা ও সংবিধান সমাচার
বাংলাদেশের সংবিধান আমাকে এ প্রজাতন্ত্রের একজন নাগরিক হিসেবে সরকারি চাকুরি লাভের অধিকার নিশ্চিত করেছে কিন্তু আমি আজ সেই অধিকারের কাছে পরাভূত। আমার এ দেশে চাকুরি লাভের অধিকারকে সংকুচিত করে দিয়েছে দিচ্ছে এদেশে বসবাসরত কিছু স্বার্থন্বেশি রাজনৈতিক নেতা। আজ আমরা সাধারণ জনতা তাদের হাতের খেলার পুতুল।বাংলাদেশের সরকানি চাকুরিতে নিজের দলের লোক না থাকলে পরবর্তিতে ক্ষমতায় আসা এবং ক্ষমতায় টিকে থাকা উভয়ই সংকটে পড়বে ভেবে যে সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তারাই নিজের ভুড়ি মোটাতাজাকরন ও রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য সংবিধান সিকৃত মৌলিক অধিকারের প্রতিও প্রদর্শন করে রাজনৈতিক বৃদ্ধাঙ্গুলি যা আমাদের কে যেমন করছে চাকুরিহীন তেমনি দেশটাকে করছে মেধাহীন।
এবার আসি বর্তমান সরকারের গৃহিত কিছু পদক্ষেপের কথায়- বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার একটি মুল কারন ছিল তাদের কিছূ অমিয় বানি যেমন-ঘরে ঘরে চাকরির ব্যাবস্থা করা হবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রি হয়ত তখন ভুলে গেছিলেন তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়। উনি বলতে ভুলে গেছিলেন বলে কি বলা হবে না? তা কি করে হয়? ঠিকই বললেন হলমার্ক কেলেঙ্কারীর নেপথ্য নায়ক ও প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা মোদাচ্ছের সাহেব।“ ১০০% খাটি আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ চাকরী পাবে না।” আহ কি অমিয় বানি!!! আমরা যারা ছাত্রলীগ করি বা আওয়ামিলীগ করি তারা ছাড়া কি বাংলাদেশে আর কোন মানুষ নেই? আমাদের মত মেধাবি কি আর নেই এ দেশে? তাহলে কি সংবিধান আমাদের জন্যই রচিত? নিশ্চই নয়। তাহলে জনসাধারনের জন্য রচিত! তাহলে আমার চাকুরি লাভের সাংবিধানিক অধিকার ?
আমার এক বড় ভাই সে কোন রাজনিতি করেন না, বিসিএস পরিক্ষা দিয়েছিলেন প্রিলি, রিটেন দিল, ভাইভাও দিলেন চাকরি তিনি পেলেন না, কারণ তিনি কোন রাজনীতি করতেন না মানে ছাত্রলীগ করতেন না। সংবিধান পড়লাম। কোথাও দেখলাম না চাকুরি পেতে হলে ছাত্রলীগ করতে হবে অথবা আওয়ামীলিগ করতে হবে। তাহলে কেন এই প্রহসন?
সংধিানের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্যেখিত বিষয়টার প্রতি আলোকপাত করা যাক, অনুচ্ছেদ-২৯:(সরকারি নিয়োগলাভের সুরেযাগের সমতা্)“১- প্রজাতন্ত্রে কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।” সংবিধান বলছে সকল নাগরিকের চাকুরি লাভের সমতার কথা কিন্তু বাস্তবে আসলে কি ঘটছে এদেশে? আমরা দেখেছি ৪দলীয় জোটের আমলে গোপালগঞ্জ এর লোকদের কিভাবে চাকুরি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল, আবার এখন ডিজিটাল আমলে দেখছি গোপালগঞ্জ আর কিশোরগঞ্জ ছাড়া কোন চাকরিই নাই। বর্তমানে নিয়োগপ্রাপ্তদের যার কাছেই জানতে চাই তারই বাড়ি হয় গোপালগঞ্জ অথবা কিশোরগঞ্জ। পুলিশে নিয়োগ দেখলেই আমরা বুঝতে পারি ৩০,০০০ জনের মধ্যে প্রায় ২০০০০ শুধুমাত্র গোপালগঞ্জ আর কিশোরগঞ্জ এর যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ-২৯: এর ১নং ধারা এর পরিপন্থিই শূধূ নয় বিরোধীও বটে। এবং অন্য জেলা থেকে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারাও পরীক্ষিত লীগার। এহেন অবস্তায় সংবিধান কি বলবৎ আছে বলা যায়? এখানে কি সকল নাগরিকের সুযোগের সমতার বিধান করা হয়েছে? হয়নি। এখানে আমরা দলের বলয়ের বাইরে যেতে পারি নি। যারা দলের লোক তাদের জন্য সংবিধান এর বিধিবিধান তো আর আলাদা নয়। তাহলে কেন আমার সেই ছোট ভাইটিকে চাকরি থেকে দুরে রাখছি? যে ছেলেটি আমার চেয়েও মেধাবি সে কেন চাকরি পাচ্ছে না? আর আমি সরকার দলের বলে অমেধাবী হওয়া সত্তেও চাকরি পেলাম। তাহলে এভাবে চলতে থাকলে কি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে? হবে না। সরাকার সংবিধান নিজেই বারবার লংঘন করে চলেছেন আর তার দায়ভার আমাদের মত নেড়া জনগনের মাথায় চাপাচ্ছেন।
এবার আসি সংবিধান এর ১৯ নং অনুচ্ছেদের ২নং ধারায়, “কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপূরূষভেদ বা জন্মস্থানের কা্রনে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।” তাহলে এ ধারার আলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্য যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরকে যোগ্যতা থাকার পরও ভর্তি করা হয় না তা সম্পুর্ন বেআইনি ভাবে করা হয় যা সংবিধান অমান্যের সামিল অপরাধ। অন্যকথায় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের এধরণের পদক্ষেপ নেয়ার আইনগত কোন অধিকার নেই। কিন্তু তার পরেও তা আমরা অহরহ প্রত্যক্ষ করছি যা আমাদের জন্য হতাসার। ঐসকল ছাত্রের তো দোষ নেই যারা মাদ্রাসাই শিক্ষাগ্রহন করেন। ব্যার্থতা আমাদের আমরা তাদের শিক্ষা ব্যাবস্থাকে যুগযোপযোগি করে তুলতে কার্পন্য বোধ করি। সরকারের উচিৎ এ বিষয়টিকে সতর্কতার সাথে দেখা তা না হলে আমরা আমাদের অজ্ঞতার কারনে যেমনি নিরপরাধ মানুষকে করছি হয়রানি, তেমনি করছি সংবিধান বারবার লংঘন।
এবার আসা যাক কোটা প্রশংগে, কোটা একটা হাতিয়ার যার মাধ্যমে একটি দেশকে মেধাহীন অনুর্বর রাষ্ট্রে পরিনত করা যায়। কোটার কারণে দুর্বল ও অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা সরকার পরিচালনায় ঢুকে পড়ছে যা আমাদের জন্য হতাসার কথা। আজ আমাদের দেশে এমন অবস্থা হয়েছে যে কোটাই মূলধারা আর মেধা কোটা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কোথাও কোথাও কোটার সংখ্যা মেধার আসন সংখ্যার থেকে বেশি। তাহলে যারা পরিশ্যম করে ভালো ফলাফল করেছে তারা কি দোষ করল তা আমার মাথায় আসে না। আমরা দেখছি কত ধরণের কোটা কুটি যেমন মুক্তিযোদ্ধা কোটা, নারি কোটা, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম কোটা, প্রতিবন্ধি কোটা, আদিবাশি কোটা, অআদিবাশী কোটা, নর্তকি কোটা, শিল্পি কোটা, খেলোয়াড় কোটা, ওয়ার্ড কোটা, সরকারি চাকুরিজীবি কোটা ইত্যাদি কোটা। এই সকল কোটা কুটির ভারে আমরা আজ কুটি কুটি। এসকল কোটা কুটি কি সংবিধান স্বিকৃত নাকি সংবিধানের বিকৃত রুপ তা সংধিানের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্যেখিত। অনেকে মনে করতে পারেন আমি মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার খর্ব করছি, আসলে কিন্তু তা মেোটেও নয়। আমার দেশের সূর্য সন্তানরা আসলে কোটা লাভের আসায় মুক্তিযুদ্ধ করেন নি, নিজের জীবনের চেয়ে তাঁদের কাছে কোটা বড় ছিল না বড় ছিল আমার দেশের সম্মান। তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নিয়ে আমরা রাজনীতি করছি? যদি করি তাহলে আমরা তাদরেকে অসম্মানই শুধু করব না, এটা তাদের প্রতি আমাদের অকৃতজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ। অনেক বেশি দুঃখ লাগে যখন দেখি কোন মুক্তিযোদ্ধাকে ভিক্ষার জন্য অন্যের কাছে হাত পাতে, রিক্সা চালায়, মুটের কাজ করে, ঠেলা গাড়ি টানে, অর্ধাহারে অনাহরে দিনাতিপাত করে, রোগে ভোগে চিকিঃসার অভাবে যায় মারা; তখন আমাদের কোটার ঐ অংশটুকু কোথায় থাকে? নাকি তাদের রক্তের মূল্য ধ্বজাধারি মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের চেয়ে কম মুল্যবান? যাক সে কথা অন্য প্রসংগে চলে যাচ্ছি, আসল কথায় আসা যাক। আমরা যদি ঐ সব সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদেরকে তাদের সুসম্মান দিতে চাই তাহলে, কোটার মাধ্যমে তাদেরকে হেয় না করে সুসম্মানের সাথে দল মতের উর্ধে থেকে তাঁদেরকে পুনর্বাসন করতে হবে। তাহলে সকল মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যেমন একই সম্মানে সম্মানিত করা হল তেমনি কোটার বিতর্ক মুক্ত করা গেল, তেমনি চাকুরির ক্ষেত্রে সুযোগ পাবে মেধাবীরা, সুবিধাবাদি অমেধাবিরা হবে বিতাড়িত, দেশ হবে সমৃদ্ধ, হতবাগা বেকার যুবকরা পাবে আকার। এবার আসি নারী কোটার বিষয়ে, যে বিষয়ে কথা না বললেই নয়। সংবিধানের ২৮-নম্বল অনুচ্ছেদ(ধর্ম প্রভৃতি কারনে বৈষম্য)এর ২নং ধারায় উল্যেখ, “রাষ্ট্র ও গনজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।” তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্য প্রতিযোগিতামুলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এমনকি সংসদেও তাদের জন্য দেখি কোটার ব্যবস্থা যা মূলত সংবিধান পরিপন্থি বলেই ধরে নেয়া যায়। যেখানে সমান অধিকারের কথা বলা হচ্ছে সেখানে সংরক্ষিত আসসনের কোনস সুযোগ আছে বলে মনে করি না্। সংবিধানের ২৮-নম্বল অনুচ্ছেদ এর ৪নং ধারার প্রপাগান্ডা না ছড়িয়ে ২৮-এর ২নং ধারাকে শক্তিশালি করে নারীকে কোটার অপবাদ থেকে মুক্ত করে যতার্থ সম্মানে সম্মানিত করা হোক। তাতে যেমন তাদের আত্নসম্মান বাড়বে তেমনি চাকুরি লাভের ক্ষেত্রে সবার অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে। এবার বাকি কোটাগুলোর কথায় আসি, আসলে ঐসকল কোটা আসলে নিজেদের স্বার্থে তৈরি করা হয়েছে যা সংবিধানের ২৮-এর ২নং ধারার পরিপন্থি তবে এগুলোর মাঝে শুধুমাত্র প্রতিবন্ধি কোটাকে বলবৎ করা যেতে পারে কারন তাদের কারো হাত নেই, কারো পা নেই, কারো চোখ নেই তারা তো পুর্নঙ্গ মানুষ নন। তাহলে কেন আমরা সংবিধানের বাইরে এসে অযৌক্তিক কিছু অ-মেধাবীদের হাতে আমার এই সোনার বাংলাকে তুলে দেব? বিভিন্ন কোটার সুবিধা থাকার কারণে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবিরা সুযোগ পাচ্ছে আর প্রকৃত মেধাবিরা হচ্ছেন বঞ্চনার শিকার। অ-মেধাবীরা আসলে আমাদের কি দেবে, আমাদের দেশ কি তারা পরিচালনার যোগ্য? দেশে যদি এভাবে মেধাহীনের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে তাহলে একদিন সমগ্র দেশ মেধাহীনের দৌরাত্বে পরিনত হবে যা আমরা ইতমদ্ধেই অনুভব করতে শুরু করেছি। আমরা যখন কোন আমলার কথা শুনি তখন তার বুদ্ধিমতত্বা নিয়ে দেখা দেয় সংষয়। তাই এখনই এই কোটার বিরূদ্দে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
আর কোন দাবি নয় সবাইকে দেশ বাচাতে, মানুষের সুসম্মান প্রদানকল্পে এবং নিজের অধিকার ছিনিয়ে আনতে চাই বাধভাঙগা আন্দোলন, “আমরা কোটা মানি না”।
বিষয়: বিবিধ
৩২২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন