সাভার ভবন ধ্বস ও কিছু অমিয় বাণী

লিখেছেন লিখেছেন পাখি ভাই ১০ মে, ২০১৩, ১২:৫৭:২৮ দুপুর

সাম্প্রতিক কালে সাভারের বহুতল ভবন ধসে স্মরণকালের ভয়াবহ মানববিপর্যয় ঘটে গেছে যা বাংলদেশের ইতিহাসে এক ভয়াবহ ঘটনা।মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে এবং কয়েক হাজার পোশাকশ্রমিক হতাহত হয়েছেন। সেই সাথে সাথে বেড়েছে রাজনৈতিক কুশিলবদের অমিয় বাণীর ফুলঝুরি যা শুধূ আমাদের হৃদয়ে নয় সারা বিশ্বের মানুষের মনে দাগ কেটেছে।আমাদের দেশের বড় বড় রাজনীতির রাঘব বোয়াল রা আমাদের ঐসকল শহীদ, দেশপ্রেমিক গার্মেন্টস কর্মীদের মৃতের সাথে তামাসা করেছেন, মিডিয়ার সামনে তাদের পেটমোটা চেহারাকে যেমন দেখিয়েছেন তেমনি দেখিয়েছেন তাদের রাজনৈনিতিক দেউলিয়াপনার নজির। মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বান কি মুন সহ বিশ্বের সকল বিবেকবান মানুষ, আর আমরা ব্যাস্ত ছিলাম একে অন্যের দোষ খোজার কাজে।

এখন আমার সোনার দেশের সোনার রাজনীতিবিদের কিছু সোনার বক্তব্য প্রকাশের চেষ্টা করছি। আমরা বাঙালিরা সবসময় নিজের দোষ দেখার আগে অন্যের দোষ খুজে বের করি যা সাভার দুর্ঘটনার সময় আমরা আবারও দেখলাম। সাভার ধ্বস সম্পর্কে বলতে গেলে আগেই আসে সরকার দলের অবস্থান। দুর্ঘটিনার ১ম দিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দিলেন,“হতাহত বেশি হয়নি, আমরা বেশিরভাগ শ্রমিকদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম।” তিনি সম্পুর্ন নিজের গা বাচানের জন্য এই বিবৃতিটি দিলেন। লাশ বাড়ার সাথে সাথে তিনি বললেন, “কতৃপক্ষ কাজে যেতে নিসেধ করেছিলেন কিন্তু শ্রমিকরা সেখানে গিয়েছিল, তাদের মালামাল সরাতে” কথাটি তাঁর অবস্থানের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা তা আপনারা দেখবেন।তারপরও তিনি তাঁর কথার বেসাতি ছড়াতে ভুলেননি। তিনি আবারও বললেন, “ভবনে সকালে জেনারেটর চালানোর কারণে তা ধ্বসে পড়ে”- এরুপ কথা শুধুমাত্র রিক্সাচালকের মুখে মানায় কোন দেশপ্রধানের মুখে নয়। যখন প্রকাশিত যে, ভবনের মালিক রানা যুবলীগের কেউ তখন আবারও প্রধানমন্ত্রী রানাকে বাচাতে বললেন, “রানা যুবলীগের কেউ না”। তিনি যদি বিষয়টাকে কম কথা বলে সুন্দর করে সমাধানের চেষ্টা করতেন তাহলে তিনি কিছু ভোট বাচাতে পরতেন, পারতেন পরবর্তিতে বুক ফুলিয়ে কথা বলতে। এবার আসি ম.খা. আলমগীর সাহেবের কথায়, তিনি তো বলে বসলেন,“ হরতাল সমর্থকদের ভবনের গেট ও স্তম্ভ ধরে ঝাকুনিতে তা ধ্বসে পড়েছে” যে বক্তব্যের কারণে আজ তিনি বোধ্যামহলে মানসিক প্রতিবন্ধি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন যা আমাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার উজ্জল নিদর্সন।আসা যাক আ.মা.আ. মুহিতের কথায়; তিনি বলেছেন “ ‍এ দুর্ঘটনা তেমন কোন বড় দুর্ঘটনা নয়’’। হাজার মানুষের লাশ যদি তেমন কিছু না হয় তাহলে তিনি বড় দুর্ঘটনা কাকে বলবেন?

সরকার দলের অনেক কথায় হল এবার বিরোধীদলের কথায় আসি তা না হলে হয়ত তারা আমার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করবেন। আমাদের মাননীয় বিরোধীদলীয় নেতা তাঁর বাণীর মধ্যমে ঐ ট্র্যাজেডির কপালে আরও বাণীর তিলক আকলেন। তিনি বললেন, “সরকারের ব্যর্থতার কারণে এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে”। তিনি এখানে সরকারের দোষ খুজে পেয়েছেন, সরকার কি ওখানে ইট সুড়কির ঢালাই কাজ করেছেন? প্রশ্ন সবার। তিনি আরও একধাপ এগিয়ে বললেন,“ এ ঘটনার ব্যর্থতার জন্য সরকারের পদত্যাগ করা উচিৎ”। তাহলে কি এখানে ক্ষমতা বড় নাকি হতাহত বড়? তিনি চেয়েছেন সরকার পদত্যাগ করুক আর আমি ক্ষমতায় গিয়ে বসি। আপনার আমলে কি আর এটা ধ্বসে পড়তে পারতো না? যাক সে কথা। একার আসি ব্যারিষ্টার মওদুদের কথায়; তিনি আরও ভয়ানক ইঙ্গিত দিলেন, তিনি বললেন,“ আমরা ক্ষমতায গেলে প্রতি নিহতের পরিবারকে ২০,০০,০০০টাকা প্রদান করব”। মওদুদ সাহেব, আপনার যদি এত টাকা দেয়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে এখন দিয়ে দেখান, জনগনের টাকা তো দেয়াই যায়।পরের মাথায় কাঠাঁল সবাই ভাংতে পারে। আপনি দুর্নিতি করবেন আর জনগনের কাছে দেশপ্রেমি জননেতা সাজবেন?আজ কিন্তু আমরা সব জানি। আমরা এদের মত রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের কে ভোট দেই এবং আমাদেরকেই আবার শাষণ ও শোষন করার সুযোগ এনে দেই।

রাজুক বলছে,“নির্মানে অনিয়মের কারনে ভবন ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে” কথা হচ্ছে রাজুকের এতগুলো কর্মকর্তা কর্মচারিদেরকে কি তাহলে ঘোড়ার ঘাস কাটতে রাখা হয়েছে?

এবার কিছু নির্বাচিত মত(কাল্পনিক),“শ্রমিকের পায়ের ধুলার ভারিতে ভবন ধ্বসের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে” অথবা, “শ্রমিকদের গলার তিব্র শব্দেই ভবন ধ্বসে পড়েছে” অথবা, “বেশি রোদের কারণে ভবনে ফাটল দেখা দেয়” আবার এটাও হতে পারে যে, “বাতাসের আঘাতে ভবনের পিলার নড়ে যায়”। ডাক্তারের মতে, “শ্রমিকদের মধ্যে একজনের পেট খারাপ হয়েছিল, তার পাদের(পেটের মধ্যে সঞ্চিত বায়ু) আঘাতে দেয়ালে প্রথম ফাটল ধরে”। প্রত্যক্ষদর্শির মত,“একটা ছাগল ভবনের দেয়ালে গা ঘসলে ভবনটি নড়ে যায় এবং তার কিছুক্ষন এর মধ্যেই তা ভেঙে পড়ে”। জনৈক আইনজীবি বললেন,“ভবন আইন ভবন নিজেই মানে নি, তাই তার এই অকাল মৃত্যু, আমার মক্কেল নির্দোষ”। জনৈক ব্যক্তি,“ভবন মালিকের উপর ভবনের অনেক দিনের ক্ষোভ, তাই রানাকে শোয়েস্তা করতেই তার এই আত্বঘাতি শিদ্ধান্ত”। সরকার,“ভবন জামাত শিবিরে সমর্থক বলে আমাদের কাছে প্রমান আছে, সরকারকে চাপে ফেলতে এঘটনা পরিকল্পিতবাবে ঘটানো হয়েছে, তদন্ত চলছে। প্রয়োজনে সাড়াসি অভিযান”। কামরূল,“যুদ্ধাপরাধীদের বাচাতে শ্রমিকরা এ নাটক সাজিয়েছে। কেউ যুদ্ধাপরাধীদের বাচাতে পারবে না। তাদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই”। রানা, “এ ভবনের মালিক মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমি না”(বিপদে পড়লে যা হয় আর কি)। হেফাজত,“ আল্লাহর গজব”। জামায়ত-শিবির,“ কেন্দ্রীয় নেতাদের ‍উপর অত্যাচারের কারণে আল্লাহর সুস্পস্ট গজব”।

ভাগ্যিস সেদিন বাজ পরেনি!!!!!! তাহলে কি হত? খুবই পরিষ্কার, সরকার বলতে বাধ্য হত,“ বাঁজ পড়ার কারনে রানাভবন ধ্বসে পড়েছে, এখানে সরকারের কোন কিছু করার ছিলনা, রানার মত দেমপ্রেমিক ভালো লোক আর একটিও নেই, কারোও কোন হাত নেই”।

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে পোশাক শিল্পে একের পর এক ট্র্যাজেডি ঘটছে; কোনো ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে না। বেচে যাচ্ছেন রানার মত প্রভাবশালী দুর্বৃত্বরা।কয়েকজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলেও এ ট্র্যাজেডির যথোপযুক্ত বিচার হবে বলে মনে হয় না। কারণ, রানাদের হাত অনেক লম্বা।

বিষয়: রাজনীতি

১২৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File