একটি গনহত্যা ও লাশের রাজনীতি

লিখেছেন লিখেছেন পাখি ভাই ২৯ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:০৬:০২ রাত

আজ বড় কষ্টে বুকটা্ ভেঙ্গে যেতে চাচ্ছে, খুব বেশি আবেগ আজ আমাকে তাড়া করছে।এত লাশ এতো লাশের সারি!!! আজ আমার চোখের পানি অনেক কষ্টে থামাতে পেরেছি।আজ আমার চোখের ভাষা আমি পড়তে ব্যর্থ হয়েছি।পানির বদলে সেখানে আজ আগুন দেখতে পাচ্ছি, যাতে আমি নিজেও হতবাক।গায়ের মধ্যে আমার শরিষার ফুল ফুটছে। আসলে আমরা কোথাই আছি? এ কোন রাজার রাজত্বে? যেখানে মানবাধিকার সরকার পন্থিদের পদলেহন করে নিজেদের ধন্য করে, যেকানে প্রানের আবেগ অন্ধ খুপরিতে ডুকরে কাঁদে, যেখানে লাশ নিয়ে হয় মিথ্যাচার, রাজনীতি, যেখানে লাশ থেকে শুরূ করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত হয় গুম, আমি যেখানে নির্বাক আতংকে বসে আছি গ্রেপ্তারের আসায়। কিছু প্রশ্ন বারবার উকি দিয়ে যাচ্ছে, কে দেবে আমার প্রশ্নের সমাধান? তবুও প্রশ্ন রেখে যায়। সবার বিবেক তো আর রাজনীতি করে না, কিছু খোলা দিলের মানুষ এখনও বিদ্যমান আছে।যে প্রান হানি হয়েছে তার দায়ভার আসলে কার...? ঐসকল শ্রমিকের যারা ওখানে শ্রম দিতো? যাদেরকে আমাদের সুবচনা, বঙ্গব্নধু তনয়া, গনতন্ত্রের মানস কন্যা, বিশ্বশান্তির পায়রা, সার্টিফিকেট ধারি দেশপ্রেমিক শেখ হাসিনা “চোর” বরে অভিহিত করেছেন; তারা? না কি জামায়াত-শিবির? না কি হেফাজতে ইসলাম? না কি ঐ ভবনের মালিক রানার? না কি গার্মেন্টস ব্যাবসায়িরা? না কি আমি এই হতভাগার? মানবাধিকার কমিশনের সুবচন পটিয়শি চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানকে ঘটনার পর থেকে আর খুযে পাওয়া যাচ্ছে না, তবে কি তিনি ও সাভারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত?এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে তাঁর নিখোজ বিঞ্জপ্তি চোখে পড়ার মত। তিনি নতুন কোন মানবাধিকারের সংগা আমাদেরকে উপহার দেন নি। কোন প্রকার বিবৃতিও তাঁর কাছ থেকে আমরা পায় নি। তাঁর অবস্থানও প্রশ্নের সম্মুখিন।

মুল আলোচনায় আসা যাক।

সম্প্রতি সাভারে ভবন ধসে আমার দেশের অনেক সোনার সংসার ভেঙে চুরমার, চুরমার হয়েছে অনেক আশার, অনেক সপ্ন, বিলিন হয়েছে বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ও সেই সাথে আমরা হারিয়েছি গার্মেন্টস শিল্পের অনেক সম্ভাবনা। ওরা লাশ নয় ওরা আমার বোন, আমার ভাই, আমার মা, আমার বাবা, আমার বেচে থাকার অবলম্বন। অনেক পরিবারে তারাই একমাত্র আয়ের উৎস, তাদের আয়েই চলে পরিবারের মানুষের মুখের আহার।তাদের শ্রমের উপরই আমাদের দেশের মোট আয় নির্ভর করে, তারাই আমদের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে আমাদের চলার রাস্তাকে বেগবান করছিল। তাদের উৎপাদিত শ্রমের ফসলই আমরা সানন্দে ঘরে তুলি আর তাদেরকে নিয়েই করি রাজণীতি। সামান্য রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবেও তাদের কে ব্যাবহার করি। বাংলাদেশের মোট জিডিপি’র একটা বড় অংশ তারা। আজ তাদেরকে নিয়ে আমরা ঘৃণ্যতম মিথ্যাচার করি।আমরা কি ভেবে দেখেছি তাদের পরিবারের কথা, তাদের সন্তান সন্ততির কথা। তাদের বুকভরা কান্নার রোল কি আমাদের কানে কখনও পৌছাবে..? পৌছাবেনা কারণ ওরা আপনার আমার মত উচু তালার মানুষ না। ওরা্ রাজণীতি বোঝে না তাই আমরা রাজনীতিবিদরা তাদের কে নিয়ে রাজনীতি করতে পারি। তাদের জিবন নিয়ে আমরা খেলতে পারি।

এবার আসি সেদিনের ঘটনায়। আগেরদিন সকার ১০ টা’র দিকে ভবনে ফাটল দেখা দিলে সাময়িকভাবে গার্মেন্টস ছুটি ঘোষনা করা হয়। পরদিন শ্রমিকদের মাইকিং করে সেখানে নিয়ে আসা হয় এবং কাজে যেতে বাধ্য করা হয়, অনেকে অভিযোগ করেছেন লাঠি দিয়ে তাদের কে গরূর পালের মত ঐ ভবনে ঢোকানো হয় এবং সে কাজে রানা প্লাজার মালিক যুবলীগ নেতা সোহেল রানাও জড়িত ছিল। রানা সবাইকে আরও অভয়বানিও শূনিয়েছিলেন যে এ ভবন ভাংবে না সুতরাং তোমরা কাজ করো। তার কিছূক্ষনের মধ্যেই ঘটে যাই এই বিশাল হতাহতের ঘটনা। রানা নিজেও আহত হন বলে অনেকে দেখেছেন, অতপর তাকে উদ্দার করে পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসা দেয়া হয়। তারপার থেকেই তিনি নিখোজ। শুরু হল রাজনীতির কালো খেলা, বক্তৃতা, সেনিার, টক সো, ঝাল সো, মিষ্টি সো। সরকার ঘোষনা করল সরকারি শোক দিবস।বিরোধীদল দিল হরতাল। নিহতের পরিবার পেল লাশ, আবার পেলোও না । অনেকে বলছেন পুলিশের সহয়তায় লাশ করা হচ্ছে গুম নামের সেই আধুনিক মোড়কে আচ্ছাদিত। আমাদের প্রধানমন্ত্রি সেখান থেকে ফেরার পর থেকে আর কোন মিডিয়াই লাশের সঠিক সংখ্যা যানাচ্ছে না। সর্বশেষ সরকারি তথ্যমতে মৃতের সংখ্যা ৪০০ এর মত উদ্ধার হয়েছে প্রায় ২৫০০-৩০০০ জন, এবং এখনও নিখোজ আছে ১৩০০ মানুষ। তাহলে আরও নিখোজ মানুষগুলো তারা কোথায়? তারা কি তাহলে গুমের শিকার? প্রশ্ন থেকে যায়।

যুবলীগ ক্যাডার রানা নামের জন্তুটি না কি আওয়ামিলীদের সোনার ছেলে, তিনি মুরাদ জং এর একান্ত কাছের লোক বলেও পরিচিত এমনকি সয়ং প্রধানমন্ত্রির সাথেও ছিল তার বেষ দহরম মহরম সম্পর্ক। তাহলে কি দলীয় কারনে তাকে বাচাতে প্রধানমন্ত্রির এই মিথ্যাচার? যে, “রানার মালিক যুবলীগের কেউ না”। তিনি ঘটনার প্রথমদিকে আরও বলেছিলেন, “আমরা এ ব্যাপারে আগেই অবগত ছিলাম, তাই কতৃপক্ষ কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি। যারা গিয়েছিল তারা তাদের ফেলে আসা জিনিস পত্রগগুলো আনতে গেছিল অথবা চুরি করতে যেয়ে থাকতে পারে।” আমার কথা হল তাহলে এত মানুষ কি একবারে চুরি বা জিনিসপত্র আনতে গেছিল? তাদের সম্পদটা কি তাদের জীবনের চেয়েও মূল্যবান? নিশ্চই না। তাহলে কেন এই মিথ্যাচার? তিনি সুন্দর করে মিথ্যা বলতে পারেন জানতাম কিন্তু এ বিষয় নিয়ে তাঁর এ মিথ্যাচার কি খুবই জরুরি ছিল? এটা কি উনার ভাবমুর্তি ক্ষুণ্য করে নি? রানাকে সরিয়ে দিয়ে লাশের রাজনীতি করতে চেয়েীছলেন যা জাতির জন্য অপমানকর ও হতাশার। অবশেষে রানাকে বেনাপোল থেকে উদ্ধার কার হল অনেক নাটকিয়তার মধ্য দিয়ে, দেয়া হল ভবন আইনে মামলা যার শাস্তি ৬ মাসের জেল ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানা।

আবরও প্রধানমন্ত্রির কথায় আসি। উনি দেশের কর্তা ব্যাক্তি, উনার কাছ থেকে এ ধরনের কথা আশা কারা যায় না। উনি বেশি কথা বলতে পছন্দ করেন তাই বলে কি লাশের সাথে? প্রধানমন্ত্রির উচিৎ ছিল দলমতের বাইরে এসে ব্যাপারটার সুষ্ঠ সমাধান করা এবং দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যাবস্থা করা যাতে এরুপ ঘটনার আর পুনারাবৃত্তি না ঘঠে।এবং শত্রু মিত্র সবার সহেযোগিতা কামনা করা। তাঁর এবং তার সুন্দরী বিদেশ মন্ত্রি দিপু মনি না কি দিপু নানি কতৃক বিদেশি সাহায্য নিতে অশিকৃতি তাদেরকে এবং তাদের সরকার কে আরও সমালোচার সামনে দাড় করিয়ে দিয়েছে ।যুক্তরাজ্য সাহায্য করলে কি আমাদের মান সম্মান ধুলাই ধুসরিত হয়ে যেত? সরকারের কাছে কি সম্মান ই বড়? কই তাও তো মনে হয় না। সম্মান থাকলে কি সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারত? অনেক আগেই পদত্যাগ করত । তবে কি ঐ সকল মানুষ আজ যারা নিহত তাদের প্রতি কি তাঁর কোন প্রকার দায়বদ্ধতা নেই? সধারণ মানুসগুলোর কি কোন প্রকারে বেচে ফিরে আসার অধিকারও ছিল না?

এবার আসি মাননীয় স্বরাষ্টমন্ত্রি ম.খা.আলমগীর এর কথায়, উনি বিবিসির সাথে একান্ত স্বাক্ষাৎকারে বলেছেন, আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্চে ইমারত তৈরিতে নীতিমালা অনুসরন করা হয়নি বলই এই ঘটনা ঘটেছে। তবে ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে হরতাল সমর্থক জামাত-শিবিরের হাত থাকতে পারে, তারা ভবনের বিভিন্ন পিলার ধরে ধাক্কা ধাক্কি করেছেন এ খবর তাঁর কাছে আছে। উনি মিথ্যাচার আর প্রপাগান্ডার আরও বড় ইতিহাস রচনা করলেন। এতে কি এ পদে থাকা তার অযোগ্যতার প্রমান পাওয়া যায় না? বাংলাদেশ সরকারে এখন কি শূধূ পাগল গুলোই মন্ত্রিত্ব পাই? কোন ভাল মানুষ কি দেশে নাই? তিনি কি শুধুমাত্র সরকারের মন্ত্রি না কি দেশের তা আজ প্রশ্নের সম্মুখিন। তাঁর কাছেও কি তাহলে লাশের চেয়ে রানা নামের যুবলীগই অগ্রগন্য? তাই যদি হয় তাহলে মনে রাখবেন রানার ভোট ১টা আর যারা মারা গেছে তাদের ভোট কিন্তু অনেক বেশি। আবার এদিকে ভবন ধসের প্রতিবাদে শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করলে তিনি পুলিশ দিয়ে গুলি করিয়েছেন যাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অনেক শ্রমিক। এগুলো কার স্বার্থে? মানূষ হত্যা করে কি মুখ বন্ধ করা যায়? যায়না। বন্ধ করা গেলে বাংলাদেশ স্বাধিন হতো না।

আমাদের দেশের নবনির্বাচিত রাষ্টপতি এখন পর্যন্ত সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না, অথচ তিনি মুজিবের কবরে প্রনাম করে এসেছেন, কি কারণে? কার স্বার্থে? তিনি নাকি নিরপেক্ষ থেকে দেশ পরিচালনার জন্য দায়ভার নিয়েছেন! তাঁর কাছ থেকে কি দলের বাইরে আসা সম্ভব? মনে হয় না। তিনি কেন একটি দলিয় মাজারে সেবা দিতে গেলেন?

কোথায় গেলেন আমাদের ইমরান? কোথায় লাকি আক্তার? তারা কেন আজ রানার ফাসীঁর দাবি করে না? তবে কি এখানে কথা বললে সরকার বিরোধী হয়ে যাবেন? তাদের খাদ্যের অভাব হবে? আমার দাবি একটাই রাজাকারদের বিচারের পাশাপাশি রানার বিচার চাই।

একটি বিষয় লক্ষনীয় যে, উদ্ধার তৎপরতায় সরকারের কোন অঙ্গসংগঠন সহায়তা না করলেও শিবির মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে( সূত্র:আমাদের সময়) যা তাদের কাছে ভালো না লাগায় ছাত্রলীগের মাধ্যমে বাধা প্রদান করলে সেনাবাহিনি ঐসকল ছাত্র নামধারী কুলাঙ্গার লীগ কে ধোলাই করেছেন। এখানেও কি মানবিকতা নেই? না কি সব আজ রাজণীতি নামক কালো গহবরে নিমজ্জিত? এখান থেকে সরকারের বেশি রাজনৈতিক চিন্তা না করলে কি চলতো না? মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাদের কে উদ্ধার কারটাই এখানে মূখ্য বিষয় ছিল, রাজনীতি নয়।

বিষয়: বিবিধ

১১৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File