নবীর (সা.) মর্যাদা

লিখেছেন লিখেছেন এম_আহমদ ০৮ অক্টোবর, ২০১৪, ১১:০৩:৫৫ রাত

মুল কথা: আল্লাহ তার নবী মুহাম্মাদকে (সা.) 'হে মুহাম্মদ' বলে সম্বোধন করেননি

আল্লাহ নবীর (সা.) মর্যাদাকে সুমহান করেছেন। কোরানে নবী মুহাম্মাদ (সা.) এঁর মর্যাদা সম্বলিত অনেক আয়াত রয়েছে। এই বিষয় নিয়ে শত শত বই পুস্তক প্রণীত আছে। আমাকে এখন নতুন করে কিছু বলার দরকার নেই।

আমরা আমাদের নবীর (সা.) নাম উচ্চারিত হলে তার জন্য দরুদ পাঠ করি। আমরা বলি, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম। অর্থ হল, হে আল্লাহ তাঁকে রহমত ও নিরাপত্তা বেষ্টনে রাখুন। অন্য অর্থে, হে আল্লাহ, তাঁকে ঊর্ধ্ব-জগতে, মালায়ে আ’লায়, রহমত ও শান্তির ধারায় স্মরণ করুন, (তাঁর মর্যাদা সমুন্নত করুন)। এই বাক্যকে আরও কয়েকটিভাবে অনুবাদ করা যায়, আমরা সেটা করতে যাচ্ছি না।

রাসূলের (সা.) নাম উচ্চারিত হলে যে বাক্যটি উচ্চারণ করি বাংলাদেশে এটাকে আমরা দরুদ বলি। যারা নবীর (সা.) প্রতি একবার দরুদ পাঠ করেন আল্লাহ তাদেরকে দশ মর্তবা সওয়াব দান করেন।

আমার এই কথাগুলো নবী (সা.) এঁর মর্যাদা বিষয়ক একটি স্থানকে কেন্দ্র করে। আমি বড় আকারে কিছু বলতে যাচ্ছি না। অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত রাখার চেষ্টা করব।

আমাদের নবী (সা.) ছিলেন আব্দুল্লাহর পুত্র। এটা সত্য। কিন্তু তাঁর নাম উচ্চারণের সংস্কৃতিতে ‘আব্দুল্লাহ-পুত্র’, ‘আব্দুল্লাহ-পুত্র’ –এভাবে বলার অভ্যাস নেই। বলেছি, আমরা কোথাও কোনো লেখায় বা কথায় তাঁর নাম দরুদ ছাড়া উচ্চারণ করি না। কোথাও একান্ত উচ্চারিত না হলে, সেখানেও আলোচনার প্রেক্ষিত সেই মর্যাদার স্থান পূর্ণ করে যায়, সেখানে অভ্যাসের স্খলন পরিলক্ষিত হয় না। নবীর (সা.) যুগেও তাঁকে মর্যাদাসূচক নামে সম্বোধন করা হত। যারা তাকে হে মুহাম্মাদ, আব্দুল্লার পুত্র –এভাবে ডাকত তারা কাফের ও মোনাফিক শ্রেণীর লোক বলে গণ্য হত।

কোরানে অনেক নবী/রাসূলের কথা এসেছে। আল্লাহ তাঁদেরকে তাদের নাম সহকারে ডেকেছেন বা সম্বোধন করেছেন। এটা কোনো অমর্যাদার ব্যাপার নয়। তবে নবী মুহাম্মদকে (সা.) অন্যভাবে মর্যাদা দিয়েছেন, সেই মর্যাদাকে ভিন্ন মাত্রায় স্থান দিয়েছেন। তিনি এভাবেই কারও মর্যাদা কারো উপর বেশি দিয়ে থাকেন (৩৭/১০৫)।

আমরা যে আমাদের নবীর নাম শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে উল্লেখ করি, তা আমাদের ধর্মীয় আখলাকের একটি অংশ। এই মুসলিম বিশ্বের যেকোনো স্থানে বিচরণ করে দেখুন সেই আখলাকের অনুপস্থিতি পাবেন না। এই আঙ্গিকের কথাবার্তা দীর্ঘ পরিসরের। তবে শুধু এতটুকু বলব যে আল্লাহ তার স্মরণকে উজ্জ্বল করেছেন, উঁচু পর্যায়ে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আল্লাহ তার এই রাসূলকে অন্যভাবে অপার মহিমায় বিভূষিত করেছেন। এই প্রবন্ধে তাঁর সম্বোধন নিয়েই আলোচনা।

কোরানের সম্বোধন

আল্লাহ কোরানে নবী/রাসূলগণকে ‘হে অমুক’ বলে, তার নাম ধরে সম্বোধন করেছেন। কিন্তু কোথাও মুহাম্মাদ (সা.) এঁর ব্যাপারে ‘হে মুহাম্মদ’ বলে কোনো উল্লেখ আসেনি। আমরা এই বিষয়টি এখানে বিবেচনা দেখতে যাচ্ছি।

আল্লাহ আদমকে (আ.) সম্বোধন করে বার বার বলেছেন, ‘হে আদম’, ‘হে আদম’। যেমন ‘হে আদম, আপনি তাদেরকে (ফেরেস্তাদেরকে) এসবের নাম বলে দিন’ (قَالَ يَا آدَمُ أَنبِئْهُم بِأَسْمَائِهِمْ , ২:৩৩)।

‘হে আদম, আপনি ও আপনার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করুন’ (وَيَا آدَمُ اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ, ৭:১৯)।

ইব্রাহীমকে (আ.) লক্ষ্য করে আল্লাহ বলেন, “আমরা তাকে ডাক দিয়ে বললাম, “হে ইব্রাহীম, আপনি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছন। আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।”’ (وَنَادَيْنَاهُ أَن يَا إِبْرَ‌اهِيمُ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّ‌ؤْيَا ۚ إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ , ৩৭:১০৪)।

নূহকে (আ.) লক্ষ্য করে বলেন, ‘হে নূহ, সে (আপনার অবিশ্বাসী পুত্র) আপনার পরিবারের কেউ নয়’ (قَالَ يَا نُوحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ, ১১:৪৬)।

তারপর, ‘হে নূহ, আমাদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাসহকারে আপনি অবতরণ করুন’ (قِيلَ يَا نُوحُ اهْبِطْ بِسَلَامٍ مِّنَّا ,১১:৪৬)

মূসাকে (আ.) লক্ষ্য করে আল্লাহ বলেন, ‘হে মূসা, আমি আপনাকে আমার রিসালাত ও কলিমা (বা সরাসরি বাক্যালাপ) দ্বারা জনগণের উপরে নির্বাচন করেছি (قَالَ يَا مُوسَىٰ إِنِّي اصْطَفَيْتُكَ عَلَى النَّاسِ بِرِ‌سَالَاتِي وَبِكَلَامِي, ৭:১১৪)

ঈসাকে (আ.) লক্ষ্য করে, ‘হে ঈসা ইবন-মারিয়াম, আপনি কি লোকদের বলেছিলেন, আমাকে ও আমার মাকে আল্লাহ্ ছাড়া দুইজন ইলাহরূপে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ কর?’ (إِذْ قَالَ اللَّـهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْ‌يَمَ أَأَنتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَـٰهَيْنِ مِن دُونِ اللَّـهِ, ৫:১১৬)।

নবী মুহাম্মদকে (সা.) সম্বোধন

আল্লাহ তার নবী মুহাম্মাদকে (সা.) ‘হে মুহাম্মাদ’ বলে সম্বোধন করেননি। বার বার বলেছেন, ‘হে নবী’, ‘হে রাসূল’।

আল্লাহ বলেন, ‘হে রসূল, আপনি তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না যারা দৌড়ে গিয়ে কুফরে পতিত হয়; যারা মুখে বলে: আমরা মুসলমান, অথচ তাদের অন্তঃকরণ মুসলমান নয় ...’ (يَا أَيُّهَا الرَّ‌سُولُ لَا يَحْزُنكَ الَّذِينَ يُسَارِ‌عُونَ فِي الْكُفْرِ‌ مِنَ الَّذِينَ قَالُوا آمَنَّا بِأَفْوَاهِهِمْ وَلَمْ تُؤْمِن قُلُوبُهُمْ ‌, ৫:৪১)।

‘হে রসূল, আপনার প্রভূর কাছ থেকে যা অবতীর্ণ হয় তা আপনি প্রচার করতে থাকুন’ (يَا أَيُّهَا الرَّ‌سُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّ‌بِّكَ, ৫:৬৭ )।

‘হে নবী, আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট আপনার জন্য এবং সেইসব মুমিনদের জন্য যারা আপনার অনুসরণ করে’ (يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللَّـهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ, ৮:৬৪ )।

হে নবী, কাফের ও মুনাফেকদের সাথে জেহাদ করে যান এবং তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করুন। তাদের ঠিকানা জাহান্নাম আর এটা এক মন্দ অভিলক্ষ্য, (বাসস্থান)’ (يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ‌ وَالْمُنَافِقِينَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْ ۚ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ‌, ৯:৭৩ )।

এভাবে আরও কিছু আয়াত রয়েছে। নবীর (সা.) স্ত্রীদের সম্বোধন করতে গিয়েও 'হে নবী' এই আঙ্গিকে কথা এসেছে। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবীর স্ত্রীগণ, আপনারা অন্যান্য নারীদের মত নন’ (يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ, ৩৩:৩২)।

বিষয়: বিবিধ

১৭১৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

272406
০৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:০৭
মাটিরলাঠি লিখেছেন :
Rose Rose Rose Rose
চমৎকার লেখা। ভালো লাগলো। জাজাকাল্লাহু খাইরান। Good Luck Good Luck
০৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:৩৯
216765
এম_আহমদ লিখেছেন : পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
272408
০৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:৪৪
আনিস১৩ লিখেছেন : Peace and blessing be upon him.
Thanks for addressing this issue.
০৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:৩৯
216766
এম_আহমদ লিখেছেন : পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
272629
০৯ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৪
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

মুহাম্মাদ রসুলুল্লাহ ﷺ

যেকোন লেখায় অন্ততঃ একবার/প্রথমবার (সা.)কে পূর্ণরূপে (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লেখা উচিত

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
০৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:৪০
216767
এম_আহমদ লিখেছেন : পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File