জয় স্কটল্যান্ড, জয় ব্রিটেন
লিখেছেন লিখেছেন এম_আহমদ ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৪:৫১:২৫ বিকাল
গতকাল স্কটল্যান্ড স্বাধীনতা প্রশ্নে জনগণের হ্যাঁ, না ভোটে গিয়েছিল। রাত ১০টার সময় ভোট কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয় এবং ১১টার দিকে আমি ছোট্ট একটি ব্লগ লিখি। কিন্তু তা বিডিব্লগে ছাপাতে পারি নি কেননা সাইট ডাউন ছিল, ঢুকা যায় নি। এখন সেই লেখাটি সামান্য পরিবর্তন করে প্রকাশ করলাম।
গতকাল ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ছিল স্কটল্যান্ডের এক ঐতিহাসিক গণভোটের দিন। এই ভোট ছিল স্কটগণ ব্রিটেন থেকে আলাদা হবে, কী হবে না, এই প্রশ্নে, অর্থাৎ আলাদা ভূখন্ডে স্বাধীন দেশ হবে কী হবে না প্রশ্নে।
স্কটল্যান্ডের লোকজন এই স্বাধীনতা প্রশ্নে ঘরে ঘরে ছিল বিভক্ত। এলাকায় এলাকায় সেই বিভক্তি ছিল। কেউ স্বাধীনতা চায়, কেউ চায় না –তারা ভূখণ্ড বৃটেন পছন্দ করে। কেন? এই প্রশ্নে উভয় পক্ষেই যুক্তি রয়েছে। এখানে ইতিহাসের বিষয় রয়েছে; ভৌগলিক জাতীয়তাবাদের ধারণা রয়েছে; আগামী দিনের (ভবিষ্যতের) বিষয় রয়েছে। এখানেও সম্পদের অসম বন্টনের (অন্য কথায় শোষণের) ধারণা রয়েছে। সব কিছুতে আবার দ্রষ্টাদের দৃষ্টিগত relativity রয়েছে। এখানেও employment বিষয়ক কথা আছে; এখানে স্কটিশ নর্থ-সী তেল ও গ্যাসের বিষয় রয়েছে; অন্যান্য রিসোর্সের বিষয় রয়েছে। এসব রিসোর্স গোটা ব্রিটেনে ব্যবহৃত হওয়ার বিষয় রয়েছে। আবার সেন্ট্রাল সরকার থেকে পরিচালিত হওয়া ও গঠন-উন্নয়নে দেশ সমৃদ্ধশালী হওয়ার কথাও রয়েছে –যা অস্বীকার করার উপায় নেই।
আলাদা হয়ে কী লাভ হবে? একত্রে থাকাতে ক্ষতিই কী? এমন ধরণের আলোচনা-ধারা এভাবে এসেছিল: আমরা স্কটিশ ছিলাম, এখনো আছি, আগামীতে থাকব। বিভক্ত হলেও স্কটিশ থাকব। তবে আমাদের বিভক্তি বা স্বাধীনতার অর্থ কী হবে? এই অর্থ খোঁজতে হবে নিজ ভূখণ্ডে, আন্তর্জাতিক ময়দানে, শক্তিতে, সামর্থ্যে। তারপর দেখতে হবে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ পর্যন্ত ইউরোপের গোটা ইতিহাস ছিল পারস্পারিক যুদ্ধের ইতিহাস। আগামীতে ইউরোপের ঐতিহাসিক যাত্রা কীরূপ হবে এবং সেখানে এই ক্ষুদ্র ভূখণ্ড, স্কটল্যান্ডের, কী হবে? অতি সংকোচিত ব্রিটেনের কী অবস্থা হবে? স্বাধীনতা তো কোনো rhetoric নয়। এটা অর্থবহ হতে হবে।
স্কটল্যাণ্ডবাসী নানান প্রশ্নের মাধ্যমে তাদের সেই সকল অর্থ খোঁজে এসেছেন। অনেক আলোচনা তারা বিগত কয়েক বছর ধরে করে আসছেন এবং, বিশেষ করে, গত ছয় মাস ধরে রেডিও, টিভি, আলোচনা চক্র, সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে, intensively। এই দীর্ঘ আলোচনা এজন্য জরুরি হয়েছিল যে স্কটল্যান্ড সকলের দেশ। এখানে কোনো এক পক্ষের পীড়াপীড়ি বা তির্যক কথাবার্তায় কাজ হবে না। দেশ সকলের।
আমি তাদের এই ‘হ্যাঁ’ ‘না’ অভিযানে নীরবে সভ্যতার একটা মাত্রাও লক্ষ্য করেছি। তারা এই অখণ্ড এবং বিভক্তি ঘিরে সম্যক, বিস্তর, আলোচনা করেছেন। একে অন্যের অবস্থান বোঝাবার চেষ্টা করেছেন এবং নিজেরাও বোঝতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। এখানে অর্থনীতি, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক অবস্থান, মিলিটারি ও স্ট্রাটেজিক অবস্থান –সবকিছুই আলোচিত হয়েছে। এতকিছুর পর রাত ১০টায় ভোটাভুটি শেষ হয়েছিল।
গত রাত আমরা জানতে পারিনি সকালে ভোট গণনা শেষ রায় গণরায় কোন দিকে যাবে। রাত ১১/১২টা পর্যন্ত বোঝা গিয়েছিল যে ‘না-পক্ষ’ ২% বেশি ভোটে এগিয়ে।
আজ সকালে রায় প্রকাশ পেয়েছে। না-পক্ষে ভোট পড়েছে ৫৫% এবং হ্যাঁ-পক্ষে ৪৫%। হ্যাঁ পক্ষ এই গণভোট মেনে নিয়েছে।
আজ স্কটল্যান্ডবাসী যেভাবে তাদের ইতিহাস, জাতীয়তা, দেশ ও দশ সামনে রেখে স্বাধীনতা প্রশ্নটি বিবেচনা করলেন তা বাংলাদেশের সেদিনকার প্রেক্ষিত সামনে রেখে কীভাবে তুলনা করা যেতে পারে?
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপাতত এই ফলাফল হলেও ৩-৪ বছর পর আবার হতে পারে নতুন করে নির্বাচন।
মূল কথা, মানুষ যখন কোনো কাজ সঠিক বিবেচনার সাথে করে তখন তাতে ভুল থাকলেও তেমন যায় আসে না। এখানে স্কটল্যান্ডবাসী অনেক বিবেচনা করেছেন। Maturity দেখিয়েছেন। এখন হ্যাঁ-পক্ষের লোকজন গণ-রায় মেনে নিয়েছেন। ইংল্যান্ডের প্রধান ৩ দল: লেবার, কন্সারভেটিভ ও লিব-ডেম, না-পক্ষের অভিযানে গিয়ে একজোটে আরও অধিক ক্ষমতা স্কটল্যান্ডে বিকেন্দ্রীকরণের আশ্বাস দিয়ে এসেছেন যা আগামী বৎসরের জাতীয় নির্বাচনের পর আইনি রূপ লাভ করবে। এটা স্কটগণের জন্য ভাল হয়েছে। স্কটল্যান্ড স্বাধীন হয়ে গেলে ব্রিটেন একান্ত দুর্বল হয়ে পড়ত। ইউরোপে, এবং সারা বিশ্বে, তারা অনেকটা নগণ্য হয়ে পড়ত। আর একটি ছোট্ট দেশ হিসেবে স্কটদেরই বা কী হত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন