কলিমার স্বীকৃতিতে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনের ধারণা -পর্ব দুই
লিখেছেন লিখেছেন এম_আহমদ ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৪:২০:০৮ বিকাল
[১ম পর্ব]
ওয়ারাকাহ বিন নাওফলের অতি প্রাথমিক ব্যাখ্যা/সতর্ক বাণী
(৪:১) ঈমান বা বিশ্বাস হচ্ছে জীবনের যাত্রা পথে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিশ্বাসেই সুপ্ত থাকে আদর্শ, শিক্ষা, জীবন দর্শন, জীবনের আওয়াল ও আখের -সবকিছু। নবী মুহাম্মদের বাণীর (সা.) এই মূল কলিমা সংক্ষেপে বৃহৎ এক বিষয় বহন করছিল। আরব জাহানের লোকজন তাঁর এই বিশ্বাসের অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পেরেছিল। আর এজন্যই তারা প্রথম দিকে এটাকে ধ্বংস করতে বদ্ধ পরিকর হয়েছিল –প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যাশ্রয়ি হয়েও, যেমন ফিরাউন মুসাকে (আ.) ফাসাদ সৃষ্টির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিল এবং যেমনটি আজও হয়ে থাকে। এই বাণীর ধারকদেরকে ফাসাদী, সন্ত্রাসী, মৌলবাদী ইত্যাদি আখ্যায় আখ্যায়িত করা হয়। কারণ, এই বিশ্বাসের প্রকৃত রূপায়ন হতে গেলে সমাজ, সামাজিক মূল্যবোধ, জীবন ও জীবনের ধারা আগের মত থাকে না। ক্ষমতার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে এবং এর ফলে ‘প্রতিক্রিয়া’সৃষ্টি না হয়ে পারে না।
(৪:২) ওহী নাজিলের পর পরই খাদিজার চাচাত ভাই যিনি একত্ববাদী হানাফি ছিলেন, (মতান্তরে খৃষ্টধর্মে দীক্ষিত ছিলেন) এবং তাওরাত ও ইঞ্জিলের উপর জ্ঞান রাখতেন, তিনি নবীকে (সা.) এই বাণীর মোকাবেলায় চরম প্রতিক্রিয়া আসার কথা শুনিয়েছিলেন। যদিও সবার জানা, তবুও এই ধারায় ঘটনাটি সংক্ষেপে উল্লেখ করতে যাচ্ছি।
(৪:৩) নবীর (সা.) উপর ওহী নাজিলের ঘটনা তাঁকে চরমভাবে ভীতসন্ত্রস্ত করেছিল। এটা ছিল এক ভিন্ন জাগতিক, অকস্মাৎ বিষয়। তিনি তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে ভয় পান। হেরা গুহা থেকে কাঁপতে কাঁপতে এসে খাদিজাকে (রা.) বলেছিলেন, ‘আমাকে আবৃত্ত কর, আমাকে আবৃত্ত কর।’ খাদিজা (রা.) তাঁকে কম্বল দিয়ে আবৃত্ত করেন এবং তাঁকে নির্ভয় করেন, আশ্বস্ত করেন। তারপর এক সময় তাঁর চাচাত ভাই ওয়ারাকাহ বিন নাওফল, (যিনি ইবরানি ভাষায় লিখিত তাওরাত ও ইঞ্জিলের একজন আলেম ছিলেন), তার কাছে নিয়ে যান এবং নবীর (সা.) জীবনে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
(৪:৪) ওয়ারাকাহ হেরা গুহার ঘটনা শুনে সেখানে হাজির হওয়া সত্তাকে সেই ‘নামুস’ (‘সংরক্ষিত’ বিষয়ে জ্ঞাত), হিসেবে উল্লেখ করেন যিনি মুসার কাছে এসেছিলেন –তিনি সেই ‘জিবরাঈল’। ওয়ারাকাহ বলেন, ‘হায়, আক্ষেপ, আমি যদি যৌবনের সময়ে হতাম! তোমার জাতি তোমার প্রতি দুশমনি ও বিদ্বেষপ্রসূত অবজ্ঞায় তোমাকে দেশ থেকে, যে দেশে তুমি বড় হয়েছ, সেখান থেকে বের করে দেবে…।’ নবী (সা.) এতে আশ্চর্য হন এবং জিজ্ঞেস করেন, ‘তারা কি আমাকে বের করে দেবে?’ তিনি বললেন, এমন কেউ এই বাণী নিয়ে আসেন নি যাদের প্রতি বিরুদ্ধাচরণ হয় নি। আমি যদি সেই দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকি তবে তোমাকে দৃঢ়তার সাথে সাহায্য করব’ ((আব্দুল জালীল, (১৯৮৬), আশরাফুল কালাম মিন শামাইলি সাইয়্যিদিল আনাম, মাক্কাহ-আলমুকাররামাহ পৃ.২৭, এবং ইবন হিশাম (১৯৯৬), সীরাতে ইবন হিশাম (আরবি), কায়রো: মাথবা’আ আল-মাদানী পৃ ২০৩))।
ওয়ারাকাহ বেঁচে থাকলে দেখতে পেতেন যে তার কথার সত্যতা পরবর্তীতে কোরানে এভাবে এসেছিল, ‘কাফিরগণ তাদের রাসূলগণকে বলেছিল, তোমাদেরকে আমরা অবশ্যই দেশ থেকে বের করে দেব অথবা তোমরা অবশ্যি আমাদের ধর্মে ফিরে আসতে হবে’(১৪:১৩)।
আবু তালিবের নিকট প্রতিনিধি দল
(৫:১) ইসলাম প্রচারের চতুর্থ বৎসরের দিকে এক সময় আবু তালিব রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে কোরাইশদের কেউ কেউ মনে করেন যে তিনি আর বেঁছে ওঠবেন না। তাই মুহাম্মাদের (সা.) দাওয়াতের বিষয়টি তার মাধ্যমে নিষ্পন্ন করা দরকার। এই অভিলক্ষ্যে কোরাইশ নেতাদের এক প্রতিনিধি দল আবু তালিবের শয্যা-পাশে উপনীত হন। অন্য বর্ণনায় (ইবন সা‘দ) এটা রোগশয্যার ঘটনা নয়। বরং নবীর (সা.) দাওয়াতে যখন ইসলাম গ্রহণের ঘটনা প্রায় ঘটে যাচ্ছিল তখন সেই বাস্তবতা ঠেকাতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, (তখন হামযা ও ওমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেছেন)। উল্লেখিত প্রতিনিধি দলে লোক সংখ্যা ছিল প্রায় পঁচিশ। এদের মধ্যে ছিলেন আবু জেহেল, আবু সুফিয়ান, উমাইয়া ইবন খালফ, আ’ছ ইবনে ওয়াইল, আসয়াদ ইবন আল মুত্তালিব, উকবা ইবন আবু মুয়াইত, উতবা ও শাইবা প্রমুখ [এই সংখ্যা ইমাম নাসায়ি, আহমদ বিন হাম্বল, ইমাম আহমদ, তিরমিযী, ইবন জরীর, ইবন আবু শাইবা, ইবন হাতিম ও মুহাম্মদ ইবন ইসহাকের বরাত দিয়ে মাওলানা মাওদূদীর (রা.) উদ্ধৃতি থেকে গৃহীত –তাফহীমূল কোরান, ত্রয়োদশ খণ্ড, আধুনিক প্রকাশনী, অনুবাদক মাওলানা আব্দুর রহীম পৃ. ১০৪-৫, এই ঘটনার উল্লেখ তাবারির তফসীর, সূরাহ ৩৮:৫ তফসীরে রয়েছে]।
(৫:২) ইবন কাসীর সূরাহ সোয়াদের শানে নুযূলের ব্যাখ্যায় বলেন যে এই লোকজন আবু তালিবকে বলব:
‘আপনার ভাতিজা আমাদের দেব-দেবীদের সমালোচনা করছেন আর করছেনই। আপনি যদি তাকে ডেকে পাঠিয়ে এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিতেন (তবে উত্তম হত)।’
তারপর রাসূলুল্লাকে ডেকে আনা হল এবং প্রতিনিধি দলের অভিযোগ সম্পর্কে বলা হল। নবী (সা.) সব কথা শুনে বললেন:
‘হে চাচা, আমি তাদের কাছ থেকে কেবল একটি ‘বাক্যই’ চাই। তারা যদি এই বাক্য উচ্চারণ করেন, তবে গোটা আরব জগত তাদের অধীনস্থ হবে এবং অনারবগণ তাদেরকে জিজিয়া দেবে।’
এ কথা শুনে তারা ঔৎসুক্য দেখিয়ে বলল:
‘এক বাক্য? তোমার বাপ উৎসর্গিত হোক, আমরা বরং দশ বাক্য উচ্চারণ করব। বল, সেই বাক্যটি কি?’
আবু তালিব বললেন, ‘আমার ভাতিজা, সেই বাক্যটি কি?’
আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন:
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ -এক আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ‘ইলাহ’ নেই।’
এই উত্তর শুনে তারা ক্রোধে উত্তেজিত হয়ে নিজেদের কাপড় ছিঁড়তে উদ্যত হল (এটা রাগের আতিশয্য বুঝাতে আরবি অভিব্যক্তি/expression) এবং বলল:
‘আমরা কি ‘সকল ইলাহকে’ এক ‘ইলাহ’ করে ফেলব (অর্থাৎ সকল ইলাহকে বাদ দিয়ে এক ইলাহকে গ্রহণ করব অথবা সকল ইলাহের সিফাত এক ইলাহে দাখিল করে বাকিদেরকে বিসর্জন দেব)?’ [ইবন কাসির, মুখতাসার তাফসীর ইবন কাসীর, বাইরূত: দারুল কোরানিল কারীম, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৯৭-৯৮]
মক্কার ব্যবসায়ী ও নেতৃ-পর্যায়ের ভয়
(৬:১) মক্কার ব্যবসায়ী ও নেতাগণ ভয় করতেন যে তারা ইসলাম কবুল করলেই তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের নিরাপত্তা চলে যাবে, বা দুনিয়াবাসী এসে তাদেরকে শেষ করে দেবে। অথচ আল্লাহ তাদেরকে বার বার মক্কা ও কাবার অবস্থানগত যে নিরাপত্তা বিধান করেছেন সেই ইঙ্গিত করেন। কোরানে তাদের ভীতির কথা এভাবে এসেছে:وَقَالُوۤاْ إِن نَّتَّبِعِ ٱلْهُدَىٰ مَعَكَ نُتَخَطَّفْ مِنْ أَرْضِنَآ أَوَلَمْ نُمَكِّن لَّهُمْ حَرَماً آمِناً يُجْبَىٰ إِلَيْهِ ثَمَرَاتُ كُلِّ شَيْءٍ رِّزْقاً مِّن لَّدُنَّا وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ – “তারা বলে, যদি আমরা আপনার সাথে এই পথ অবলম্বন করি, তবে আমরা আমাদের দেশ থেকে উৎখাত হয়ে পড়ব।’ আমি কি তাদের জন্যে একটি নিরাপদ হরম প্রতিষ্ঠিত করিনি? এখানে সর্বপ্রকার ফল-মূল আমদানি হয় আমার দেয়া রিজিকস্বরূপ। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না” (২৮:৫৭)।
(৬:২) সূরাহ কোরাইশেও এই ধারণার অনুরূপ বিষয় প্রকাশ পায়। নবী (সা.) আগ থেকেই লক্ষ্য করেন যে নেতারা এই ভয় পাচ্ছে যে তাদের কর্তৃত্ব চলে যাবে এবং ব্যবসা বাণিজ্য নষ্ট হবে। তাই তিনিও তাদেরকে বার বার নির্ভয় করতে চেয়েছিলেন। বরং উলটোভাবে, কোরাইশরা যদি লা-ইলাহার কলিমা গ্রহণ করে তবে আরব অনারব এলাকা জুড়ে যে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে তাতে, বর্ধিতভাবে, কোরাইশদের নেতৃত্বের পরিসর খুলবে, বর্ধিত হবে, অর্থাৎ দীন গ্রহণ করাতেই তাদের ‘দুনিয়া’ শেষ হবে না বরং প্রশস্ত হওয়ার কথাই বলেন।
(৬:৩) যারা দ্বীনকে (আল্লাহর আনুগত্যকে) বিভাজন করেন, তারা আজও বিশ্বাস করেন যে ইসলামের পরিবর্তে অপরাপর আর্থ-সামাজিক জীবন-ব্যবস্থা ও শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজ উন্নত হবে; দেশের ‘মান-ইজ্জত’ বাড়বে; জাতি ‘ক্ষমতা’ লাভ করবে এবং উদার ও সভ্য হবে। তাদের ধারণায় ইসলামের জীবন ব্যবস্থা এবং এর আর্থ-সামাজিক রূপায়ণ ঘটালে দেশের ‘প্রগতি’ আটকে যাবে; দেশ দরিদ্রতা ও বর্বরতায় আচ্ছাদিত হয়ে পড়বে এবং ইউরোপ/আমেরিকার মানদণ্ডে দেশ প্রস্তর-যুগে চলে যাবে।
উতবাহ বিন রাবি‘আর প্রতিনিধিত্ব
(৭:১) ইসলাম প্রথম থেকেই রাষ্ট্রীয় অভিলক্ষ্যে ছিল। এজন্য যে সমাজের চতুর্দিকে অনৈতিকতার সয়লাব ঘটতে থাকলে তা ব্যক্তিকে ভাসিয়ে নেবে। তাই সামষ্ঠিক নৈতিকতায় ব্যক্তিক জীবন সূত্রায়িত হবে, সুশোভিত হবে; সামাজিক ও ব্যক্তিক আধ্যাত্মিক ঝর্ণা-ধারা পরস্পরে প্রবাহিত হবে। এর জন্য পরিবর্তনের প্রয়োজন। কিন্তু মক্কার অধিপতিগণ এই ভয়ই পাচ্ছিল। পরিবর্তনের ভয়। তাই মুহাম্মদকে (সা.) নিবৃত্ত করতে সেদিনের কিছু লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েছিল। তারা বনী উমাইয়্যাহ গোত্র-প্রধান উতবাহ বিন রাবি‘আহকে (আবুল ওয়ালীদ ) এই দায়িত্ব দেয়। উতবাহ একজন বাগ্মিতাসম্পন্ন কূটকৌশলী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি কাবার চত্বরে গিয়ে নবীর (সা.) সাথে দেখা করেন এবং হেকমতের সাথে আলোচনা শুরু করেন। কিছু কাব্যিক উদ্ধৃতি, হেকমতি কাওল ইত্যাদির মাধ্যমে যা বলেন সংক্ষেপে তা হল নিম্নরূপ:
আপনি একজন ভাল বংশের লোক। আপনি এক অতি বড় এক বিষয় নিয়ে আপনার জাতিতে হাজির হয়েছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে তাদের ঐক্য নষ্ট করেছেন; তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা নস্যাৎ করেছেন; তাদের দেব-দেবী ও দ্বীনের দোষত্রুটি দেখিয়েছেন; এবং তাদের পূর্ব-পুরুষের পথ ও প্রথা অস্বীকার (বর্জন) করেছেন। এবারে আমি আপনাকে কিছু প্রস্তাব করছি, দেখেন এগুলোর মধ্য থেকে কিছু গ্রহণ করা যায় কিনা।
উতবাহ ৪টি প্রস্তাবে করেন। (১) আপনি যদি এই বাণীর মাধ্যমে বিত্তশালী হবার ইচ্ছা রাখেন তবে বলুন। আমরা সবাই মিলে আপনার জন্য ধন-মালের ব্যবস্থা করব এবং আপনি সকলের চেয়ে অধিক ধনবান হবেন। (২) আপনি যদি এর মাধ্যমে মান-ইজ্জত কামনা করেন তবে বলুন। আমরা আপনার জন্য এক নেতৃত্বের পরিসর তৈরি করব এবং কোনো জরুরি বিষয় আপনাকে ছাড়া নিষ্পন্ন করব না। (৩) আপনি যদি (এই বাণীর মাধ্যমে) বাদশাহি প্রত্যাশা করেন তবে বলুন। আমরা এর জন্য সেই ব্যবস্থায় যাব। (৪) আর যদি (ঘটনা) এই হয় যে যে সত্তা (জিন/ভূত) আপনার কাছে আসেন তাকে যদি আপনি নিজ থেকে বর্জন করতে অক্ষম হন তবে বলুন। আমরা চিকিৎসকের ব্যবস্থা করব। এই উদ্দেশ্যে আমরা আমাদের ধনমাল খরচ করব যাতে করে আপনি সুস্থ হয়ে উঠেন।
এই কথাগুলো বলার পর নবী (সা.) তাকে বলেন, ওয়ালীদের পিতা, আপনার সব কথা কি বলা হয়ে গেছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর রাসূলুল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে কিছু না বলে তাকে সূরাহ সোয়াদ (সূরাহ ৩৮) পাঠ করে শোনালেন। উতবাহ এতে এতই প্রভাবিত হয়ে পড়েন যে যখন রাসুলুল্লাহ সেজদার আয়াতে এসে সেজদায় অবনত হন, তখন তিনিও তাঁর সাথে সেজদায় নত হয়ে পড়েন। পরে রাসুলুল্লাহ বলেন, ওয়ালীদের পিতা, আপনি শুনেছেন। এবারে আপনার যা ইচ্ছে তাই করুন।
উতবাহ ফিরে যান এবং কোরাইশদের কাছে গিয়ে যে মন্তব্য বা প্রতিবেদন করেন তা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন:
‘হে কোরাইশ সম্প্রদায়, আপনারা আমার কথা শুনুন এবং আমি যা বলি তা রূপায়িত করুন। ঐ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ) ও যে বস্তু (বাণী) নিয়ে সে আছে, তাকে এর উপর ছেড়ে দিন। তার ব্যাপারে আপনারা নিবৃত্ত হোন। আল্লাহর কসম, তার যে বাণী আমি শুনেছি তাতে এক ভবিষ্যৎ (বড় ব্যাপার) রয়েছে। (তার এই কাজের ফলে) আরবরা যদি তাকে চুরমার করে দেয়, (তবে আপনারা বাঁচলেন)। এটা যেন আপনারা ব্যতীত অপরের মাধ্যমে কামিয়াব হয়ে গেল (আপনাদেরকে কোনো আপদে পেল না)। আর যদি মুহাম্মদ আরবদের মোকাবেলায় বিজয়ী হয়ে যায়, তবে তার রাজ্য তো আপনাদেরই রাজ্য; তার সম্মান (ও ক্ষমতা) আপনাদেরই সম্মান (ও ক্ষমতা); আর আপনারা তা নিয়ে হয়ে পড়বেন সবচেয়ে সৌভাগ্যশীল।’
তারা বলল: ‘হে ওয়ালীদের পিতা, মুহাম্মাদ আপনাকে তার ভাষা দিয়ে মোহগ্রস্ত করে ফেলেছে’ (ইবন হিশাম, [১৯৯৬], সিরাহ ইবন হিশাম, ১ম খন্ড, কায়রো: দারুল হাদিস, পৃ.২৪১-৪২)।
(৭:২) উপরের বিবরণগুলোতে দেখা যায় যে কোরাইশগণ তাদের সমাজ পরিবর্তনের ভয় পাচ্ছিল। এই কলিমার দাওয়াতে সেই ভয়ের কারণ ছিল বলেই সেই ভয় পাচ্ছিল। এই প্রসঙ্গে এ কথা বলা উচিত যে যদিও এখানে রাষ্ট্রীয় ধারণার আলোচনা হচ্ছে কিন্তু রাষ্ট্র একমাত্র, একক ও বিচ্ছিন্ন কোনো উদ্দেশ্য নয়। সবকিছু বাদ দিয়ে কেবল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাতেই ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় না। এই আলোচনার মূল কথা হচ্ছে রাষ্ট্র ইসলামের বাহিরের বস্তু নয়। ইসলামের পূর্ণাঙ্গ পরিধির অংশ। এখানের আধ্যাত্মিকতা ব্যক্তি ও সমাজে ঝর্ণা-ধারার মত সচল। সমাজ যদি অনৈতিকতার সয়লাবে প্লাবিত হয় তবে এতে ব্যক্তি ভেসে যাবে। যুবক-যুবতিদের চারিধার যদি তাদেরকে অনৈসলামি কাজে প্রলুব্ধ করে, যদি শিক্ষা-দীক্ষায় সেই প্রলুব্ধকর কর্ম ও সংস্কৃতি উত্তম হিসেবে শিক্ষা দেয়া হয়, তবে তারা তাই দাপটে করবে।
এই রাষ্ট্র আবার অপরের অধিকার খর্বের বিষয় নয়। কাউকে জোরে আস্তিক বানানোর বিষয় নয়। অপরকে ধর্মান্তরিত করা নয়। শুধু এটাই বলা হচ্ছে যে অপরের দোহাই পেড়ে মুসলমানদের উপর নাস্তিক ও সেক্যুলারিষ্টদের চাপিয়ে দেয়া আদর্শ ও জীবন প্রণালী থেকে বেঁচে নিজেদের অধিকার মত ব্যক্তি ও সমাজ জীবন গড়ার অধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা।
পরবর্তী পর্বে ইলাহ শব্দের ব্যাখ্যা আসবে (ইনশাল্লাহ)।
বিষয়: বিবিধ
১১৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন