আল্লাহকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী স্বীকার করে ভোট আ’লীগে চাই?
লিখেছেন লিখেছেন এম_আহমদ ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৯:৫৩:২২ রাত
আল্লাহকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী স্বীকার করে দপ্তরহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেছেন, আল্লাহর পরেই জনগণের ক্ষমতা। তাই জনগণ যাকে চাইবে সেই আগামীতে ক্ষমতায় আসবে। লিঙ্ক এখানেএইমাত্র আমাদের সময়ে একটি রিপোর্ট দেখলাম যেখানে সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের এই কথাগুলো এসেছে। এর অর্থ কী এই: আল্লাহকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী স্বীকার করে ভোট আ’লীগে চাই, না এর পিছনের অর্থ অন্য কিছু?
সুরঞ্জিত সাহেব কথার ফাঁকে ফাঁকে অনেক কিছু বলেন। তার অনেক কথায় পূর্বদিক উল্লেখ হলে, মূলত তা পশ্চিম দিক হতে পারে। হাসিনা সরকার প্রবীণদের বাদ দিয়ে যখন মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেরন তখন যারা উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন তিনিও ছিলেন তাদের একজন। অবশেষে তাকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে চোর বানিয়ে এমনভাবে সাইজ করা হয়েছে যে বেশি কথা বললে চুরির দায় তাকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। আর মুখ বন্ধ রাখলে দফতর বিহীন মন্ত্রী হয়ে বেঁচে থাকার অবকাশ থাকবে। আ’লীগের চোর-ডাকাতের সংখ্যার হিসেব যা’ই হোক ৭০ লাখ চুরি সেই সংখ্যায় একটা মামুলী বিষয়। বিগত কেয়ার-টেকারের সময় সুরঞ্জিত ও আমু ইংল্যান্ডে হাসিনার সাথে দেখা করতে আসলে তাদেরকে পাত্তা দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সুরঞ্জিত বলেছিলেন, আমরা তো রাজনীতিতে ভেসে ভেসে আসিনি (বা এমন ধরণের কিছু), অর্থাৎ কিছু যায় আসেনি। কেউ কেউ মনে করেন হাসিনা তার বাপের চেয়ে তিন চামচ বেশি। তাই কেউ তাকে আন্ডার-এস্টিমেট করা ঠিক নয়। আবার একথাও সত্য যে প্রবীণ রাজনীতিকদের মুখ বন্ধ করা সহজ সাধ্য বিষয় নয়, যদি তারা স্বেচ্ছায় বন্ধ না করেন।
জনগণের কাছে হাসিনার পক্ষে ভোট চাইতে গিয়ে আল্লাহর ক্ষমতা, আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার প্রসঙ্গ টানার প্রয়োজন আছে? সুরঞ্জিত সাহেব সহজ কথা সহজভাবে না বলে কেন চক্কর মারছেন? তিনি কী সত্যিই আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতার বিশ্বাসের পক্ষের? মোটেই না। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও এই সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক জটিল আলোচনা বিরাজ করছে। আল্লাহকে যদি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মানা হবে তবে জামাতের গঠনতন্ত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব থাকার কারণে আদালতি কৌশল করে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হল কেন? আ’লীগের এক পক্ষ রাজনৈতিক ময়দানে প্রতিপক্ষকে রাজনীতির আওতায় মোকাবেলা করার পক্ষপাতী। আর নাস্তিক, বামপন্থী কমিউনিস্ট তাড়িত পক্ষ চায় ওদেরকে যেভাবেই হোক ময়দান থেকে তাড়িয়ে দিতে। সুরঞ্জিতের কথা নিশ্চয় অমনি অমনি হয়ে আসেনি।
তবে সুরঞ্জিতের কথাতে ক্ষমতার বিভক্তির যে ধারণা এসেছে তা ইসলামের নয়, এখানে দ্বৈতবাদ (dualism) নেই, বহুবাদ (polytheism) নেই। আল্লাহর ইচ্ছা ব্যক্তিতে, পরিবারে, সমাজে, জগতে ও গোটা বিশ্বে কাজ করে। জনগণের চাওয়াতেও যে আল্লাহর ইচ্ছা কাজ করে –এই ধারণা এখানে অনুপস্থিত। সুরঞ্জিত যেহেতু ভেসে ভেসে রাজনীতিতে আসেননি তার জড় আছে, শিকড় আছে, তার কথাবার্তাতেও শিকড় আছে। এখানে তার কথা নিছক কথা না নয়, বরং কৌশল।
তবে কৌশল যা’ই হোক মূল বিষয়কে বেশি দিন চাপিয়ে রাখা যাবে না। রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি থাকবে না কেন? সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশের আইন (law of the land) কেন ইসলামী মূলনীতির ভিত্তিতে রচিত হবে না? ইসলামের মূলনীতি কি সংখ্যা লঘিষ্ঠের অধিকারের স্বীকৃতি দেয় না? নানান ফাইজলামীতে পানি ঘোলা করে কেন একটি বিশেষ শ্রেণীর ধ্যান ধারণা ও আদর্শ মোতাবেক শাসনতন্ত্র রচিত হবে? যদি উপযোগীতাবাদের (utilitarianism) দোহাই পাড়া হয় তবুও, সংখ্যা লঘিষ্ঠের অধিকার সংখ্যা সংরক্ষিত করে, সংখ্যা গরিষ্ঠের আদর্শেই law of the land প্রণীত হবে। কেননা সংখ্যা লঘিষ্ঠের কারণে সংখ্যা গরিষ্ঠ বঞ্চিত হতে পারে না, তাদের জীবন পদ্ধতি ও বিশ্বাস-প্রসূত মূল্যবোধ প্রতিহত হতে পারে না।
যদি রাজনৈতিক কৌশলের কারণেও আল্লাহকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী স্বীকার করা হয়, যদি ভোটের রাজনীতিতে একথা মূল্যবান হয়, তবে এখানে যা প্রমাণিত হয় তা হল রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে এই বিশ্বাস থাকাতে কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু তবুও এক শ্রেণীর লোক তাদের আদর্শ, তাদের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতিফলন শাসনতন্ত্রে ঘটিয়ে যাবে।
বিষয়: বিবিধ
১১২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন