রেজাল্ট পরবর্তীঃআত্মহত্যা - এর জন্য দায়ী কে???
লিখেছেন লিখেছেন সুপ্ত আত্তাঁ ১০ মে, ২০১৩, ১২:০৮:২৯ দুপুর
তোমাকে সম্পদ পাহারা দিতে হয়, কিন্তু জ্ঞান তোমাকে পাহারা দেয়।
- হযরত আলী (রাঃ)
গতকাল অনলাইনে একটি সংবাদ পড়ে বাকরুদ্ধ হয়ে আছি। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ না পাওয়ায় ছাত্রের আত্মহত্যা'।
শিক্ষা ব্যবস্থার কি এতটাই পরিবর্তন করার প্রয়োজন ছিল যেখানে জিপিএ ৫ না পাওয়াতে একজন কিশোরকে আত্মহত্যা করতেহয়? যে বয়সে নীল আকাশে ঘুরি উড়াবে, দাড়িয়াবান্দা গোল্লাছুট খেলবে, পরীক্ষা শেষে মামার বাড়ি বেড়াতে যাবে,সেই বয়সে কিনা অসম প্রতিযোগীতার চাপ নিতে না পেরে ছোট্ট এক ভাইয়াকে আত্মহত্যা করতে হল! এ বয়সে আত্মহত্যা বিষয়টা কি সেটাই তো ওদের বোঝার কথা ছিলনা!!
এখন আর বাচ্চাদের স্বপ্ন দেখতে দেয়া হয়না। স্বপ্ন দেখেন বাবা মা আর পূরণ করার দায়িত্ব পড়ে সন্তানদের উপর। কেন? ওদের কি মন নেই? মনের ভিতরে নানান রঙ্গের ইচ্ছা নেই?
জানি তারা এখন সারাদিন টো টো করে ঘুরেবেড়ায়না, রোদে পুড়ে খেলাধূলা করেনা, ঘাস ফড়িং এর পিছু পিছু ছোটেনা। তারা বাবা মা'র অনেক লক্ষ্মী সন্তান এখন। প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার জন্য তাদেরকে তাদের ওজনের চেয়েও বেশি ওজনের বই খাতার ব্যাগ কাঁধে করে বয়ে বেড়া তে হয়। ছোট্ট বয়সেই তাদের মোটা ফ্রেমের চশমা ব্যবহার করতে হয়, রাত জেগে জেগে টর্চার করে পড়া শিখতে হয়। এত কিছুর পরও যদি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল না করে, তবে বাবা মা'র কাছ থেকেই সহ্য করতে হয় কঠিন ভাষায় গন্জনা। যারা সহ্যকরতে পারেনা, তারা আত্মহননের পথ বেছে নেয়। আপন রাজ্য তৈরী করার আগেই চাপের কাছে হার মেনে যায় রাজা। শূন্য হয়ে পড়ে থাকে রাজ্যের খেলনাগুলো।আত্মহুতি এই শিক্ষা ব্যবস্থার সত্যিই কি প্রয়োজন ছিল আমাদের দেশে?
মনে পড়ে এসএসসি পরীক্ষার কিছুদিন আগে হঠাৎ আমার বাবা মারা যান। এই ঘটনা আমার মনের ভিতর গভীর ক্ষত'র সৃষ্টি করে যা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া অনেক কষ্টকর ছিল। না পারছিলাম পড়াশুনা করতে, না পারছিলাম নিজের রাজ্যে বিচরনকরতে। বাড়িতে বিমর্ষ হয়ে পড়ে থাকি। সারাদিন অস্তিরতার মধ্যে থাকতাম পড়তেনা পেরে,সেই সময় আমার আম্মা মাথায় হাত দিয়ে বলতেন- "তোমাকে খুব ভাল রেজাল্ট করতে হবে এমনতো কখনো বলিনি, এত ভয় কিসের? যা হবার হবে, তুমি নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দাও"। মায়ের এমন ভালবাসাতেই হয়তো পরীক্ষাগুলো দিতে পেরেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ! রেজাল্টও ভাল হয়েছিল।
আজকের দিনে কিশোর কিশোরীদের পাশে বাবা মা'রা যদি এভাবে থাকত তাহলে হয়ত ওদের প্রতিভার অঙ্কুর প্রস্ফুটিত হবার আগেই ঝড়ে পড়ত না। যারা লেখাটি পড়বেন তাদের প্রত্যেককে অনুরোধ করছি-আপনার সন্তানকে স্বপ্ন দেখার সুযোগ দিন, তাদেরকে স্বাধীন হতে দিন। সুন্দরকিছু স্বপ্ন নিয়ে তারা বেঁচে থাক। এতেআপনার লাভ না হোক, ক্ষতি তো হবেনা। সম্মান লাভের জন্য ওদের নিজের জগত্ থেকে বের করে আনবেন না, আদরের সন্তানটিকে মৃত্যুকূপে ফেলে দেবেন না। প্লিজ।।
বিষয়: বিবিধ
১৪১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন