“নদী তুমি বয়ে যাও নীরবে”

লিখেছেন লিখেছেন অয়েজ কুরুনী আল বিরুনী ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৬:১০:৫০ সন্ধ্যা



পর্নোগ্রাফি, পরকীয়া, লিভ টুগেদার, হোটেলে রাত্রিবাস, মিশন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান, এরকম আরো বহু ফাঁদ আছে যাতে জড়িয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের যুব সমাজ। সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে এমন জগতে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে যা মাদকাসক্তির চেয়েও ভয়ংকর এবং তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে তারা।

তবে এগুলির মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হল নীল ছবি বা পর্নোগ্রাফি। উপরে বর্ণিত পন্থাগুলির মধ্যে সবচেয়ে সহজলভ্য এবং সস্তা এবং অন্যান্য কুকর্মগুলির প্রবেশদ্বার

ও বলতে পারেন।

যিনি একবার এই জিনিসে আসক্ত হয়ে যান তার বিবেকবোধ বলতে কিছুই থাকেনা। ফলে তার আশপাশের মানুষগুলির সাথে তার একটি অদৃশ্য দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে ধীরে ধীরে। ফলে স্বাভাবিক কাজকর্মে উদাসীনতা, শারীরিক অসুস্থতা, এবং আরো অন্যান্য বহুবিধ সমস্যা সৃষ্টি হয় বলে মনোবিজ্ঞানীদের অভিমত।

তবে মজার ব্যাপার হল মুসলিম সমাজ ছাড়া এই বিষয়টি আর কারো কাছে তেমন মাথাব্যথার বিষয় নয়; কারণ মুসলিম (নামকাওয়াস্তে নয়)যুবকরাই এর দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এটি এমন একটি বিষয় যা নিয়ে কথা বলাটাও ট্যাবু, অথচ এর একটি সমাধান দরকার। আধুনিক দেশগুলি এবং সেই মননধারি দেশি মানুষগুলি পর্নো দেখা স্বাভাবিক বলে মনে করে। তারা এগুলি তৈরি এবং বাজারজাত করে অর্থোপার্জন করা অন্যান্য সাধারণ ব্যবসা থেকে আলাদা কিছু মনে করেন না।

পশ্চিমা বিশ্ব, ইউরোপিয় দেশ এবং উন্নত বিশ্বের দেশগুলিতে ছেলে-মেয়েদের সাথে অবাধ চলাফেরার যে সুযোগ রয়েছে তার ফলে তারা তাদের প্রাকৃতিক চাহিদা পূরণ করার জন্য ৩০-৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়না বরং প্রকৃতির সাথে তার সম্পুর্ণ মিল রেখেই চলে। ফলে তারা মানসিকভাবে এই বিষয়ের প্রতি মোটেও উদগ্রীব হয়ে থাকেনা এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম এবং পানাহারের মত ওই বিষয়টিও তারা মেনে নিয়ে ‘ক্ষুধা পেলেই খাও” নীতি অবলম্বন করে চলে। আর শিয়া মতাবলম্বিরা এর বিকল্প হিসেবে নিয়েছে নিকাহে মুতয়া বা কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ যা পতিতা গমনের থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। ফলে তাদের পড়ালেখা গবেষণা সবকিছুর পেছনে এই চিন্তা ঘুরঘুর করেনা যে এই পড়ালেখা শেষ করব তারপর চাকরি পাব তার পর বিয়ে করব ততদিনে মনমাঝি ভাটির দেশে যাত্রা শুরু করেছে।

তাই এই দীর্ঘ সময় (বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া থেকে শুরু করে চাকরি পাওয়া পর্যন্ত) ব্যক্তিভেদে প্রায় ১২ থেকে ১৫ বিশ বছর কিভাবে কাটাবে তার কোনো সঠিক উপায় এ পুঁজিবাদী সমাজ বাতলে দেয়না। ধর্মের দোহাই দিয়ে মনকে কতক্ষণই আর আটকে রাখা যায়। অগত্যা মধুসূদন সম্মান আর ভাবমূর্তি রক্ষা করতে গিয়ে নীল ছবি দেখা আর নিজের উপর জুলুম করা ছাড়া আর কোনো পথ খুঁজে পায় না। বাবা-মা জানেন তাদের ছেলে-মেয়ে কচি শিশু, সুবোধ বালক, মুখের মাঝে রা নেই, কখনো কোনো মেয়েকে উত্যক্ত করেনা। মায়েরা অন্যদের সামনে গর্ব করে বলে আপা আমার ছেলেকে দেখ! বয়স ৩০ এর কাছাকাছি অথচ এখনো যেন কচি খোকা। লজ্জায় বিয়ের নামই মুখে আনতে পারেনা। আসল ব্যাপার হল সে বেচারা লজ্জা করতে করতে শেষমেশ সাহস এবং নিজের উপর আস্থা দুটোই হারিয়ে ফেলেছে। তাই সে এখন বিয়ের কথা লজ্জায় নয় ভয়েই মুখে আনেনা মা জননীরা বোধহয় সেটিও বুঝেন না।

লেখালেখির মসলা জোগাড় করতে বিভিন্ন মানসিকতার মানুষের সাথে মিশে যেটি দেখেছি বেশিরভাগ গ্রাজুয়েশন লেভেলের এবং চাকরিপ্রার্থিরা মোবাইল সহ বিভিন্ন যন্ত্রে অত্যন্ত যত্ন সহকারে নীল ছবি রাখেন এবং মাঝে মধ্যেই বিনোদনের অন্যান্য মাধ্যমের মত ব্যবহার করেন। কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে বিভিন্ন উদ্যানে চলে যান এবং মাঝে মধ্যেই জুনিয়রদের হাতে উত্তম মধ্যম খেয়ে ফিরেন।

আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নির্মল পরিবেশ, গাছগাছালির সবুজ গালিচা আমাদের মত গোবেচারাদের জন্য হারাম হয়ে গিয়েছে, যারা মাথা নিচু করতে গিয়ে পদে পদে দেয়ালে ধাক্কা খায়। ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন সময় সুযোগ এবং পরিবেশ বুঝে লাজলজ্জার মাথা খেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী মা-বাবার স্বপ্নকে ধারণ করে অবোধ শিশুর মত আঙ্গুল চুষে আর প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে একান্ত নিভৃতে সময় কাটায় আর আমাদের মত আবুলরা তাদের সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে পড়ে গিয়ে অপাংক্তেয় হয়ে নিজেরাই লজ্জিত হয়ে বুকে থুথু দিতে দিতে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তে পড়তে সরে যায়।

আশ্বিন কার্তিক মাসে গ্রামে কুকুরগুলিকে রাস্তাঘাটে একসাথে দুইজনকে ঘুরতে দেখে কত বার যে লাঠি ইট নিয়ে তাড়া করেছি দলবল সহ তার হিসাব নেই, এখন মনে হলেই হাসি পায়। আর এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উচ্চশিক্ষা নিতে এসে যে সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি প্রতিনিয়ত এবং দেখে যাও কিছু বলনা নীতি শিখছি তাতে মনটা প্রতিনিয়ত ভীতুর ডিম হয়ে যাচ্ছে। এত কিছুর মূলে আমাদের সাধ্য হীন উচ্চাভিলাষ আর পুঁজিবাদী সমাজের দেখানো সম্পদের পাহাড় গড়ার চিন্তা।

আমাদের বাবা-মায়েরা সন্তানদেরকে জ্যান্ত মাটিতে পুতে টাকার গাছ লাগাতে চান, এজন্যই আমাদের সুখ দুখ আবেগ প্রেম ভালবাসা কোন কিছুই তাদের কাছে মূল্য পায়না। চোখের সামনে দিয়ে কতজনের ভালবাসার মানুষ অন্যের ঘরে চলে যায়। আর নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে যারা সমাজের কর্ণধার বিসিএস ক্যাডার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী, কলামিস্ট হচ্ছে তাদের দ্বারা এদেশ যে এখনো টিকে আছে সেটাই অবাক করার মত বিষয়। এজন্যই মাঝে মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী নিপীড়নের মত সংবাদ খবরের কাগজে বের হয়।

সবশেষে একটি কৌতুক বলে শেষ করব;

হোস্টেলের এক বড় ভাই যার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে একদিন ছোট ভাইয়েরা তাকে প্রশ্ন করে বসল “ভাই আপনি বিয়ে করেন না ক্যান? বয়স তো কম হল না”। তার ঝটপট উত্তর “আগে নিজের পায়ে দাড়াই তারপর বিয়ে করব”। তখন জুনিয়রদের মধ্যে একটি দুষ্টু ছেলে বলে বসল “ভাই! নিজের পায়ে দাড়াতে দাড়াতে তো আরেক পায়ের বারোটা বেজে গেল”! যাই হোক যারা এই ভাইয়ের মত নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আছেন তাদের জন্য বলব আপনারা লেগে থাকুন, সৌদি রাজকুমারীদের বয়স কিন্তু মাত্র ৪০/৪২। তারা আপনাদের মুখপানে চেয়ে আছেন।নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পর প্রস্তাব দিয়েও দেখতে পারেন যদি লীগ যায় কি বলেন?

কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি তাই আজ থেকে নিজেকে বলছি “নদী তুমি বয়ে যাও নীরবে”।

আগামীতে আরো তিক্ত বিষয়ে লেখা নিয়ে আসছি

বিষয়: বিবিধ

১১০৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

264618
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩১
মামুন লিখেছেন : ভালো লাগলো লেখাটি।
পরবর্তী তিক্ত বিষয়ের লেখা পড়বার অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা রইলো। Rose Good Luck
264623
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪২
নিউজ ওয়াচ লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
264634
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১০
ইসলামী দুনিয়া লিখেছেন : চালিয়ে যান।
264655
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১০
নীল জোছনা লিখেছেন : নিজের পায়ে দাড়াতে দাড়াতে তো আরেক পায়ের বারোটা বেজে গেল”! Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File