ক্ষুধার্ত পৃথিবী-বিপন্ন মানবতা; এর শেষ কোথায়?
লিখেছেন লিখেছেন অয়েজ কুরুনী আল বিরুনী ২৭ আগস্ট, ২০১৪, ১২:৪৩:৪০ রাত
বিস্তীর্ণ মরুভূমি- চারদিকে ধু ধু করছে উত্তপ্ত বালু, মাথার উপরে প্রখর সূর্যটা আগুন ছড়াতে ছড়াতে পশ্চিম দিকে ঝুঁকে পড়বে বলে আভাস দিচ্ছে। সেই মরুর বুকে একটি মানব শিশু; বয়স তার কতইবা হবে দুই, কিংবা তিন? ক্ষুধার যন্ত্রণায় মাটির দিকে ঝুঁকে ধুকছে আর আসন্ন মৃত্যুর প্রহর গুনছে। হাত দশেক দূরে বেশ বড়সড় একটি শকুন তার ক্ষুধার্ত হিংস্র চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে শিশুটির দিকে। দেখে মনে হচ্ছে সে শিশুটির শরীরের হাড়গুলি গুনছে আর খাবার সামনে দেখে লোভাতুর ক্ষুধার্ত শিশুর মত মনে মনে শিশুটিকে ১০১ বার গিলছে।
দৃষ্টি-সীমা একটু দূরে ফেললে দেখতে পাবেন সভ্য সমাজের এক প্রতিনিধি ক্যামেরার লেন্সে চোখ রেখে তৃপ্তির নিশ্বাস ফেলছে আর মাঝে মধ্যে ক্যামেরাটির ফ্লাশ জলে উঠছে।
কাহিনীর পরের পাতাগুলি না হয় মুছেই ফেললাম।
এক বছর পর ফটোগ্রাফারকে পুলিৎজার পুরস্কার দেওয়া হল। দেশ বিদেশ থেকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা আসতে লাগল। চারদিকে ধন্য ধন্য পড়ে গেল।
কিন্তু সেই শিশুটির কি হয়েছিল কেউ কি জানতে চাইবেনা।
আজ আমরা সবকিছুর মাঝেই ফায়দা খোজার চেষ্টা করি। সাংবাদিকতার পিছনের চেহারা দেখলে আমার কেন জানি রাগ-ঘৃণা ইত্যাদি অনেক কিছুই শুরু হয়। এখানে একটা কথা প্রচলিত আছে তা হল “যত খারাপ ঘটনা; ততই জাঁকজমক পূর্ণ খবর”। তাই একজন মানুষকে সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে দেখেও এরা ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকে। হয়ত চাইলে তিনি তাকে বাচাতে পারতেন। কিন্তু বাচালে তো আর নিউজ হবে না। যাকগে গালাগালি করে কি লাভ যখন আমি নিজেই কিছুটা এদিকে ঝুঁকে আছি!
আজো পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর হয়ে মৃত্যুবরণ করছে আর তাদের কজনের খবর আপনি রাখেন। আমি দেখেছি সুন্দরবনের গভীরে দুবেলা দু’মুঠো ডাল ভাত জোটাবার জন্যে নারী অপ্রাপ্ত বয়স্ক ৮/৯ বছরের শিশুকে বাঘের মুখ হতে খাবারের টাকা জোগাতে। হ্যাঁ নিজের চোখেই দেখা। তারা আমাকে তাদের একজন মনে করে নিয়ে খাইয়েছিল প্রীতি ভরা গরীবি খাবার। সংগ্রামী নারীরা কেউ স্বামী পরিত্যক্তা, কেউ যৌতুকের অভাবে অবিবাহিতা। কেউ আবার বিধবা। শিশুদেরও একই অবস্থা। তাদের আশপাশে আর কোন আয়ের উৎস নেই, আছে শুধু বাঘ আর কুমিরের মুখের সামনে পাহারায় থাকা অপার সম্পদের উৎস সুন্দরবন। ডাঙ্গায় পুঁজিবাদী চিংড়ি ঘের মালিক মহাজন, পানিতে কুমির বনে বাঘ আর জলদস্যু সহযোগিতায় আছে দুর্নীতিবাজ ঘুষখোর বনরক্ষী্রা। এত কিছুর মুখ বাচিয়ে তারা মাছ জালানী কাঠ সংগ্রহ করে আনার পর আছে কোম্পানি নামক ফড়িয়া মধ্যস্বত্তভোগি দালাল। যারা এই কমিশন সেই কমিশন, বাজার দর কম ইত্যাদি ফন্দি করে অবশেষে নুন আনতে পানটা ফুরায় কি পান্তার ভাঙ্গা থালাটিও গায়েব করে ফেলে।
আপনার ঢাকা শহর সহ সারাদেশের নিষিদ্ধ-পল্লীগুলির কথাই ধরুন। এই মেয়েগুলি কি সাধে তাদের দেহ বিকোতে বসেছে? আপনার আমার মত ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কালো লোলুপ জানোয়ারটি কি এর জন্য দায়ী নয়? কেউ হয়েছে ধর্ষণের শিকার তিনকুলে কেউ নেই বিয়ে তো হবেই না, তো বেচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা তাদেরকে বাধ্য করেছে এই পথে নামতে। এদের ও প্রজন্ম তৈরি হবে আর প্রজন্ম হতে প্রজন্ম এরা এখান থেকে আর বেরোতে পারবে না। যারা নিষিদ্ধ-পল্লীর পক্ষে আমি তাদের গাছের উৎস নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ করি। বাতাসে উড়ে আসা ফলের বীজেও সুন্দর গাছ হয় আবার ফলও ধরে এরাও হয়ত ওইরকম কিছু হবে। কারণ কোন সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন মানুষ একথা ভাবতে পারেনা যে সামান্য কটা টাকার বদলে তার মা-বোন-মেয়ের মত অন্য কারো মা বোন মেয়ে অন্যের উন্মাদ মুহূর্তে ফুল হয়ে পিষ্ট হবে বাস্তবতার যাঁতাকলে। এদের পুনর্বাসন হওয়া উচিৎ। কেউ কেউ আবার এদের পক্ষ হয়ে মাথায় কাঁঠাল রেখে কোষ বের করে খাওয়ার চেষ্টা করে। আরে এরা তো সমাজকে পবিত্র রাখতে নিজেদেরকে উৎসর্গ করছে। এদের এই করা উচিত সেই করা উচিত। তাদেরকেও বুঝায় তোমরা মহান দায়িত্ব নিজেদের কে বিলীন করে দিচ্ছ। এ ঋণ কখনো শোধ হবে না। (আসলেই কেউ কেউ মনে হয় এইখানেও ঋণ করে শোধ না করে পালিয়ে আসে)। রাতের বেলা তারা মাই ডার্লিং আর দিনের বেলা শালা বেশ্যা কোথাকার!
আমরা যাদেরকে ক্রস ফায়ারে দেই সমাজের সবচেয়ে ঘৃণিত নিন্দিত মানুষ তারা। তারা আমাদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে রেখেছিল। চাঁদাবাজি ছিনতাই মাদক পাচার নারী পাচার চুক্তিতে খুন টেন্ডার-বাজি ইত্যাদি এহেন কাজ নেই যা তারা করেনা। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছেন এরা কেন এমন হয়? কেন শহিদ ডাকাত, কানকাটা সেলিম, সুইডেন আসলাম, মেশিনগান মদন ইত্যাদি তৈরি হয়? যদি কখনো কারো গভীরে প্রবেশ করার সুযোগ হয় তাহলে দেখতে পাবেন এদের বেশির ভাগই বস্তি থেকে উঠে আসা। সমাজপতি আর ধনীদের আলি-শান প্রাসাদ হতে যে উচ্ছিষ্ট খাবার ময়লা পানি পড়ে তা এসব বস্তিতেই। এদের কারো জন্মগত ভাবে মা-বাবার পরিচয় নেই। বড় হয় বস্তির কোন এজমালি নানী বা দাদী ইত্যাদি সম্পর্কীয়দের কাছে, যারা তাদেরকে দুমুঠো খাবার দেবার লোভ দেখিয়ে শারীরিক পরিশ্রম, ভিক্ষা, চুরি, মাদক বহন, অস্ত্র-বহন ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করত। আপনি যখন আপনার সন্তানকে নিয়ে বিলাসবহুল এসি গাড়ি থেকে আপনার শিশুকে হাত ধরে নামিয়ে স্কুলের দরজায় পৌঁছতেন একটু খেয়াল করলে দেখতেন আপনার আশে পাশে কিছু শিশু পিঠে প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে বোতল, ময়লা কাগজ কুড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কখনো বা দারোয়ানের ঘাড়ধাক্কা খেয়ে অসহায় মুখে ফিরে যাচ্ছে অন্য কোথাও। শৈশব হতে যারা কখনো কারো কাছ থেকে তুমি শব্দ শুনেনি। কেউ কখনো তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়নি। গালি আর গলাধাক্কা খেয়ে যারা বড় হতে থাকে আর ভাবতে থাকে তার এই অবস্থার জন্য ধনীরাই দায়ী (আসলেও তাই)। তাই সে ছোটখাটো চুরি থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে সে বেছে নেয় ধনী সমাজের বিরুদ্ধে এক অঘোষিত লড়াইয়ের পথ। আর তাই মানুষ খুন করতে মোটেও হৃদয় গলে না তার। আর আমরা কেউ কেউ তাদেরকে নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি ধরে রাখার জন্য ব্লাড হাউন্ড পোষার মত সন্ত্রাসী গালকাটা আবুল, কপাল-ফাটা মদন দের পুষি। ধরা পড়লে সাংবাদিকদের কাছে মতামত দেই এদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করি।
আজ পৃথিবী ধ্বংসের মুখে কারণ আমরা আজ আর মানুষ নেই। জানোয়ার হয়ে গেছি অথবা তার চেয়েও নিচে।
বিষয়: বিবিধ
২৪০৫ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এসব দূর্ভিক্ষ কৃত্রিম এবং যারা এর জন্য দায়ী তারা আবার পুলিতজার বিজেতারই দেশের হর্তাকর্তা যারা দূর্ভিক্ষের দেশের উপর ছড়ি ঘোরায় । তাদের মসনদ নিয়ন্ত্রন করে।
সেখানে মারামারি বাঁধিয়ে তারা তাদের দেশের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসার রাস্তা খুলে দেয় , কারণ এসব অস্ত্র ব্যবসায়ীরা নির্বাচনের সময় তাদের ফাইনান্স করেছিল ।
দূর্ভিক্ষ নিয়ে ছবি বানিয়ে অস্কার লাভ করে সেই সব ছড়ি ঘোরানো দেশের চলচিত্র নির্মাতারা ।
অভিনেতারা এখানে এসে মানবতা মূলক কাজ করে বিশাল মানবতাবাদী হিসেবে পরিচিত হয় । সেখানে তাদেরই সৃষ্ট দূর্ভিক্ষে এতিম হওয়া শিশুদের দত্তক নিয়ে খুব সমীহ আদায় করে বিশ্ববাসীর ।
ল্যাবরেটরীতে তৈরি হওয়া ঔষধ যা নিজেদের দেশে ট্রায়াল দিতে আইনের কাহিনীতে পড়া লাগে , সেটা এড়াতে তারা এসব দেশের মানুষকে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করে । দেখায় যে , খুবসে বিনামূল্যে সেবা + ঔষধ দিয়ে যাচ্ছে ! খুব মানব সেবা হচ্ছে ! গায়ের রং ভিন্ন হলেও অন্য সব কিছু তো একই।
নেগোশিয়েটরের নামে লোক পাঠিয়ে প্রত্নতত্ত্ব সরিয়ে ফেলে ।
এটা একটা ভিসিয়াস সাইকেল । শুধু '' কৈয়ের তেলে কৈ ভাজা '' নয় , এটা কৈয়ের তেলে কৈ চাষ করে সেই কৈ আবার কৈয়ের তেলে ভেজে খাবার মত ব্যাপার। পুলিতজার বিজেতাও এই চক্রেরই অভিনেতা ।
**********************************************************
০ খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাপার তো ! যদি ২-৩ বছরের মধ্যে হয় তাহলে নিশ্চয়ই সেই নিজ চোখে দেখা ছবিটি ক্যামেরার চোখে দেখে নিয়েছেন । বুঝতেই পারছেন কি বলতে চাচ্ছি ?
************************************************************
পতিতাবৃত্তি পৃথিবীর আদিমতম পেশা ।
প্রথম প্রথম সব অনিচ্ছার জায়গাতে মানুষ স্বেচ্ছায় আসে না । পরে যখন টাকা কামাতে শুরু করে লাগামহীনভাবে তখন এই পেশাতেই সে নিজেকে জড়িয়ে রাখে, ক্যারিয়ার গড়ে তোলে এবং নতুন নতুন রিক্রুট আনে ।
এদের উচ্ছেদ বা পূর্নবাসন কোনটাই করা উচিত নয় । টানবাজার উচ্ছেদ করার ফলে সেখানকার পতিতারা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল । এটা শামীম করেছিলেন ১৯৯৬-২০০১ এর আমলে । এতে লাভের চেয়ে যে ক্ষতিই বেশী হয়েছে তা গত ১০ বছরে বোঝা গেছে ।
আবার এদের পূর্নবাসন করলে সমাজে যেসব ভাল মানুষ ছিল তাদেরকে ইনফেকটেড করে ফেলবে ।
কোথাও কোন মারাত্নক রোগ হলে সেখানকার লোকদেরকে আইসোলেট করে রাখা হয় । যাতে রোগটা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
এটার জন্য দরকার প্রয়োজনীয় চিকিতসা । আক্রান্তদেরকে Cure করতে হবে আর যারা এখনও আক্রান্ত হয় নি তাদের জন্য Preventive measure নিতে হবে ।
একমাত্র ইসলামী অনুশাসনই এটা পারে , কারণ.....
এটা ইসলাম ধর্মের কথা হতে পারে না । এটা সেই ধর্মের কথা যেখানে ধর্মীয় উতসবের জন্য বেশ্য/পতিতার ঘরের মাটি অবশ্যই দরকার , না হলে পূঁজা হবে না ।
এরাই আক্রান্ত করে ইসলাম ধর্মের দূর্বলমনাদের । ওদের কাছে এটা তাদের ধর্মীয় কাজেরই সম্পুরক কিন্তু মুসলমানদের কাছে হারাম।
***********************************************************
খারাপ মানুষ দুনিয়াতে আগেও ছিল , এখনও আছে এবং থাকবে । এখন এইসব খারাপ মানুষ তাদের খারাপীটা তখনই করে যখন খারাপ কেউ তাদের নিয়ন্তা হয় ।
এখন কারা খারাপ বা ভাল মানুষ চুজ করে ? যাদের স্বভাব যেরকম তারা তাদের স্বভারের অনুরুপ মানুষই চুজ করবে
নিজেদেরকেই আগে চিন্তা করতে হবে - দুনিয়াটাকে খারাপভাবে চালাবো না ভাল ভাবে চালাবো ?
ভাল পোস্ট দিয়েছেন
মন্তব্য করতে লগইন করুন