অনুপ্রেরণা
লিখেছেন লিখেছেন অয়েজ কুরুনী আল বিরুনী ২৫ আগস্ট, ২০১৪, ১০:১৬:৩৪ রাত
অনুপ্রেরণা
(আরেকটু খানি হলেই পৌছে যাই লক্ষ্যে, তবে সে প্রেরণা অন্য দিক থেকে আসার অপেক্ষায়। শক্তি দিবে প্রেরণা দিবে বিজয়া......)
২০০৫ সালের কথা। যখন ছেলেটি ক্লাস এইটে বৃত্তি পরীক্ষার্থী। বৃত্তির স্পেশাল ক্লাস করার সময় সে লক্ষ্য করত পাশের ডিগ্রি শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এক ভাইয়ের হাতে একটি পুরাতন মাসিক ইংরেজি পত্রিকা। বড় ভাই সেটিকে জোড়া তালি মলাট লাগিয়ে অত্যন্ত যত্নের সাথে জোরে আস্তে মিলিয়ে মাঝে মধ্যে পড়েন আর অজপাড়াগাঁয়ের ছেলেটি ভাইয়ের ইংরেজির দক্ষতা দেখে অবাক হত। একদিন সে একটি পত্রিকা পেয়েও গেল গিফট। তার আনন্দ আর দেখে কে। কদিন আগে ১৫০ টাকা দিয়ে কেনা A T DEV এর ইংরেজি বাংলা ডিকশনারিটি হাতে নিয়ে সারাদিন পত্রিকাটি পড়ার চেষ্টা করে। গাঁ-গেরামের মাদ্রাসায় কি আর ইংরেজি পড়ায়? টেন্স, ভয়েস,ন্যারেশন শিখতে পারলেই ইংরেজির জাহাজ হয়ে যায় যেখানে! তার ইংরেজি ভীতি দূর হয়ে যায় আর এভাবেই চলতে থাকে তার বিদ্যা-শিক্ষার অদম্য জোয়ার।
একদিন মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে আলিম (উচ্চমাধ্যমিক) স্তরে উত্তীর্ণ হয় সে। ২০০৯ সালের কথা।
মাদ্রাসার এক শ্রদ্ধেয় সিনিয়র ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। তিনি স্থির করলেন আমাদের মত অজ পাড়া গাঁ হতে পাশ করা (এ প্লাস প্রাপ্ত) দেরকে তিনি সংবর্ধনা দিবেন হয়ত তিনি আমাদের মাঝে সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন যা অন্য কারো চোখে পড়েনি। যে কথা সেই কাজ। তিনি তখন ২য় বর্ষের ছাত্র। বহু চেষ্টা সাধনার পর তাঁর ডিপার্টমেন্টের বন্ধুদের নিয়ে এবং একজন বিভাগীয় শিক্ষককে রাজি করিয়ে তথাকথিত সভ্যতার শেষ সীমানা ছাড়িয়ে সুদূর সুন্দরবনের কোলঘেষা কপোতাক্ষের পাড়ে হাজির হলেন। আমরা একসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এতগুলি ছেলেমেয়ে দেখে অবাক সেই সাথে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের একজন জলজ্যান্ত শিক্ষক ও আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে। অবাক হয়ে আমরা তাঁদের কথাবার্তা চলাফেরা ছবি তোলা হাসি সব কিছু দেখছিলাম আর হয়তবা চোখের পাতায় ভর করেছিল সেই না দেখা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি, হয়তবা সেই মুহূর্তে আমি নিজেকে সেই সেরা বিদ্যাপীঠের একজন ভাবতে শুরু করেছিলাম; অন্যদের কথা জানিনা।
কিভাবে আলিম পাশ করে সেই পরিবারের ঢাবি পরিবারের একজন সদস্য হয়ে গেলাম জানিনা আজ দেখতে দেখতে তিনটি বছর পার হয়ে গেল।
সেদিন মার্চের সেই তপ্ত দুপুরে আমরা প্রাণ ভরে উপভোগ করেছিলাম তাদের সান্নিধ্য আর আমার সদ্য কেনা সস্তা মাল্টিমিডিয়া মোবাইল দিয়ে বারবার স্টেজের শর্ট নিচ্ছিলাম বিশেষ করে স্যারের বক্তব্যের সময়। তার কথার জাদুকরী প্রভাব আজো আমার কানে বাজছে।
তার সেই উপমা শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট যাকে জেলে পরিবারের হওয়ার কারণে স্কুলে ভর্তি হতে দিচ্ছিলনা স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেই ১১ মাইল পায়ে হেটে স্কুলে যাওয়া বালকের ছবিও হয়ত আজো কল্পনার ক্যানভাস হতে মুছে যায়নি।
সেই একটি মুহূর্ত, মধ্যবিত্ত দামের কাঠের ক্রেস্ট, আর কিছু বক্তব্যকে পূঁজি করে আমরা (১২ জন সম্ভবত) আজ দেশের নানা প্রান্তে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছি। তার মধ্য হতে ৫ জনই ঢাবিতে অধ্যয়ন করছে। বাকীরাও অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। তাদের চোখের স্বপ্ন আর বুকের সাহস হয়ত এখানেই থেমে থাকবেনা এক সময় হয়তবা তারা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বব্যাপি জ্ঞান আহরণ করতে বেরিয়ে পড়বে এ আশা করা বোধ হয় আকাশ কুসুম হবে না।
বিষয়: বিবিধ
১৩১২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাল লাগল। শুভকামনা রইল
মন্তব্য করতে লগইন করুন