"আমার ছেলেবেলা"

লিখেছেন লিখেছেন অয়েজ কুরুনী আল বিরুনী ২৫ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:২৮:৩৩ রাত

আগে এক সময় কিছু লিখতে ইচ্ছে হলে হাতে সাড়ে তিন টাকা দামের ইকোনো ডি এক্স কলম আর বাবার হাতে সেলাই করা হাফ দিস্তা কাগজের খাতা নিয়ে বসে যেতাম খাটে কিংবা গাছ গাছালির মাঠে



কত কবিতাই না লিখলাম জীবনে। তখন তো আর অন্তর্জাল(interneyt) ছিলনা যে যখন তখন চাইলেই পাবলিশ করে দেব। খাতার পাতা ছিড়ে ছোট/সমবয়সীরা প্লেন নৌকা বানিয়ে খেলত, তখন আমার কবিতার অবমূল্যায়ন দেখে গোপনে কেঁদে ফেলতাম কষ্টে। পাছে কেউ দেখে ফেলে এই ভয়ে আবার চোখ মুছে মন খারাপ করে ঘুরে বেড়াতাম বনে জংগলে।

নদীর তীরে রাতের বেলা একলা বসে হাওয়া খাওয়া আমার গ্রীষ্মকালীন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। ক্লাসের পড়া একেবারেই পড়তাম না, আমার মন পড়ে থাকত কবে মঙ্গলবার হাট বসে। হাটে গিয়ে সোজা বইয়ের দোকানে ঢুকে পছন্দমত একটা বই নিয়ে নিতাম হাতে। তারপর যতক্ষণ তা শেষ না হয় অথবা দোকানী উঠিয়ে না দেয় ততক্ষণ চলত বিনামূল্যে বই পড়া।

তারপর সেই গল্পগুলি সপ্তাহের বাকিদিন গুলি আমার সাগরেদদের সামনে বলে ওস্তাদি ফলাতাম। ওরা ও নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে হা করে আমার গল্প শুনত আর গালের মধ্যে মাছি ঢুকত আর বেরোত।

দিনের বেলা ভুতের গল্প পড়ে রাতে প্রাকৃতিক কর্ম সারতে একলা বের হতে চাইতাম না; ভয়ে গা ছমছম করত।

টাকার অভাবে কখনো গল্পের বই কিনে পড়তে পারতাম না বলে কি যে আফসোস হত তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। সমবয়সী বন্ধুরা যখন খেলনা বল পিস্তল গাড়ি কিনে ঘুরে বেড়াত আমি তখন বইয়ের দোকানের সামনে বসে একমনে গল্প পড়েই চলেছি।

মাঝেমধ্যে মায়ের বাজার করতে দেওয়া একশ টাকা থেকে ১০ টাকা বাচিয়ে পুরনো ম্যাগাজিন, মাসিক পত্রিকা ইত্যাদি কেজি তে কিনে এনে পড়তাম।

পাশের গ্রামে এক বন্ধু থাকত। সেও আমার মত বই-পোকা ছিল। সে এসে বলত তাদের গ্রামে একটি লাইব্রেরি আছে সেখান থেকে ওরা গল্পের বই নিয়ে ফ্রিতে পড়ে শুনে খুব হিংসে হত আমাদের গ্রামে লাইব্রেরি নেই বলে। ২০০৫ সালে একদিন শুনলাম বাজারে একটি লাইব্রেরি খোলা হয়েছে। প্রথম প্রথম সেখান থেকে বই বাড়িতে আনার অনুমতি ছিলনা। বিকাল তিনটা থেকে মাগরিব পর্যন্ত লাইব্রেরি খোলা থাকত। আমার এত অল্প সময়ে বই পড়ে লোভ সম্বরন হতনা , তাই লাইব্রেরিয়ান বাবু ভাইয়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাঞ্জাবির পকেটে বই নিয়ে আসতাম বাড়ি। সারারাত কেরোসিনের কুপির আলোতে বইটি শেষ করে পরের দিন আবার যথাস্থানে রেখে দিতাম ।

পরীক্ষার রাতগুলোতে মা মাঝে মধ্যে হঠাৎ আকষ্মিক অভিযান চালিয়ে ক্লাসের বইয়ের মধ্য থেকে আবিস্কার করতেন সাইমুম, ক্রুসেড কিংবা কাশ্মির জিহাদ অথবা অন্য কোন মজার বই। সে রাত ঠিকমত ঘুম হতনা। এত ফাঁকিবাজি করার পরও কিভাবে ফলাফল কিছু লোকের আগে থাকত বলে আবার কখনো কখনো কারো হিংসার পাত্র হয়ে যেতাম।

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১৩১০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

212956
২৫ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০১:৪৯
জোনাকি লিখেছেন : What a beatiful writing!MashaAllah!
212958
২৫ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০১:৫৬
অয়েজ কুরুনী আল বিরুনী লিখেছেন : দোয়া করবেন অধমেরে
এ মিনতি তব দ্বারে
213030
২৫ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:৫৫
কেলিফোরনিয়া লিখেছেন : আগে এক সময় কিছু লিখতে ইচ্ছে হলে হাতে সাড়ে তিন টাকা দামের ইকোনো ডি এক্স কলম আর বাবার হাতে সেলাই করা হাফ দিস্তা কাগজের খাতা---মিয়া ভাই, ভাসাই দিলেন তো আমারে... সৃতির ডেউয়ে ভাসাই দিলেন/ গল্প ছলে কাদাই দিলেন।
213308
২৬ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০১:৫৩
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : সুন্দর,সাবলীল ভাষায় সরল মনের অভিব্যক্তি। ভাল লাগলো খুব। Good Luck Good Luck Rose

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File