সমুদ্রপথে মানবপাচার: দায় এড়াতে পারে না সরকার

লিখেছেন লিখেছেন শিব্বির আহমদ ওসমানী ৩০ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:০৯:৪৯ রাত

শিব্বির আহমদ ওসমানী: বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে মানবপাচার অনেক আগ থেকে চললেও এখন বিপজ্জনক রূপ নিয়েছে। দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় অনেক তরুণ কম খরচে বেআইনিভাবে জীবনের ঝুকি নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে সমুদ্রপথে রওনা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত কিছু দালাল অত্যধিক ঝুঁকির এ রুটে তরুণদের প্রলুব্ধ করছে। ভালো কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেশী টাকা আয়ের আশায় তারা জমি আর ভিটেবাড়ি বিক্রি করে দালালদের হাতে সর্বস্ব তুলে দিচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের আশ্রয় হচ্ছে থাইল্যান্ডের সমুদ্র উপকূলে, সেখানে তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আবারো বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন করা হচ্ছে।

বৈধভাবে একজন মানুষ মালয়েশিয়া গমন করতে কমপক্ষে তিন লাখ টাকার প্রযোজন পড়ে। সে ক্ষেত্রে দালালের মাধ্যমে সাগরপথে মালয়েশিয়া গমন করলে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার প্রয়োজন পড়ে। পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কড়া নজরদারি না থাকায় উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের দীর্ঘ ২৫ কিলোমিটার সমুদ্র চ্যানেল অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। এ সমুদ্র সৈকতটি সরাসরি বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকায় মালয়েশিয়া মানবপাচারের নিরাপদ রোড হিসেবে ব্যবহার করছে পাচারকারীরা। বিশেষ করে উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্প থাকায় ক্যাম্পভিত্তিক একাধিক দালালচক্র মালয়েশিয়া মানবপাচারের সঙ্গে সরাসরি জড়তি রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

এক খবরে বলা হয়েছে, কক্সবাজার এলাকায় দুই শতাধিক তরুণ সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পর থেকে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে এরা থাইল্যান্ড উপকূলে কোনো চক্রের হাতে আটক হয়ে আছে। এদের অনেকে সমুদ্র পাড়ি দেয়ার সময় অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে। মানবপাচারকারীদের মুক্তিপণ আদায়ে নির্যাতনের শিকার হয়েও অনেকে মারা গেছে। কক্সবাজারে উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা থাইল্যান্ড সফরকালে মানবপাচারকারীদের হাতে আটক হওয়া ব্যক্তিদের দেখে এসেছেন। তিনি যে ছবি তুলেছেন তা এক কথায় ভয়াবহ। এর আগে থাইল্যান্ডে আমরা বাংলাদেশী দাসশ্রমিকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হতে দেখেছি।

পত্রিকার রিপোর্টে কক্সবাজার থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে নিখোঁজ রয়েছেন, এমন একাধিক পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। এমনকি নির্যাতন বা অবৈধপথে যাওয়ার পর কারাগারে আটক ব্যক্তিদের তথ্যও প্রকাশ করা হয়েছে। এ থেকে অনুমান করা যায়, বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল মানবপাচারকারী চক্রের জন্য নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনিতেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন চালানোর কারণে এদের অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মিয়ানমার ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে। এদের সাথে বাংলাদেশীরা যোগ দিচ্ছে।

গোয়েন্দা সংস্থা ও রাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্ত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনিক কার্যালয় সর্বত্র মহড়া দিয়ে নানা অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অসংখ্য পাচারকারীর পৃথক পৃথক সিন্ডিকেট ছাড়াও তার রয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক পরিচয়ধারী কিছু দুর্বৃত্ত, অসাধু জনপ্রতিনিধি।

কি ভাবে দালালচক্র, সিন্ডিকেট চক্র মাসের পর মাস আইনবিরোধী, মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছে? এরা কি স্থানীয় প্রশাসনের অপরিচিত? ধরা পড়েও তারা সাজা পায় না কেন? সরকারের বিধি-বিধান প্রয়োগে যারা উদাসীন, কুণ্ঠিত কিংবা স্বার্থের ঘেরাটোপে বন্দী তাদের জবাবদিহিতা কে নেবে? সমুদ্রপথে অনেকের প্রাণ গিয়েছে, কত মায়ের কোল খালি হয়েছে, রাষ্ট্র, প্রশাসন এ ধরনের নির্মম মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না।

বাংলাদেশী নাগরিকদের জান-নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। এ দেশের নাগরিকেরা যাতে মানবপাচারকারী চক্রের হাতে না পড়ে, সেজন্য উপকূল নিরাপদ রাখা জরুরি; কিন্তু এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনী চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। দিন দিন সানবপাচারের মিছিল বাড়ছে। কিভাবে শত শত তরুণ উপকূল অতিক্রম করল, তা একটি বিরাট প্রশ্ন। এ কথাও সত্য যে, শুধু নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পার হচ্ছে, তারা বিদেশে ভালো কাজের আশায় এই ঝুঁকি নিয়েছে। দেশের তরুণদের যদি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করা হয়, এই ঝুঁকি থেকেই যাবে।

আমরা মনে করি, মানুষ যাতে আর ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে বিদেশ যেতে না পারে সেজন্য উপকূলে নিরাপত্তা আরো বাড়ানো দরকার। মানুষের মধ্যে সচতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সাথে বেকার তরুণ যুবকদের কর্মসংস্থানের দিকে সরকারের মনোযোগী হতে হবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে বেকার যুবকদের কাজে লাগাতে হবে।

[ লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান: এস.এ.ও ফাউন্ডেশন ও সিলেট ক্যামব্রিয়ান কলেজ।

http://www.facebook.com/shibbirahmedosmani.bd ]

বিষয়: বিবিধ

১০৪৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

279789
৩০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:১৮
শিব্বির আহমদ ওসমানী লিখেছেন : বেকার তরুণ যুবকদের কর্মসংস্থানের দিকে সরকারের মনোযোগী হতে হবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে বেকার যুবকদের কাজে লাগাতে হবে।
279938
৩১ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:৫২
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : খুব ভালো লাগলো পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File