সরকারের দায়িত্বশীলতা একান্তই জরুরি
লিখেছেন লিখেছেন শিব্বির আহমদ ওসমানী ০৫ মে, ২০১৩, ০৬:২৬:০৩ সন্ধ্যা
শিব্বির আহমদ ওসমানী: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আহূত ৫ মের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। সরকার এখনো কোনো ইতিবাচক মন্তব্য করছে না। বরং নানাভাবে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে উসকানি দিচ্ছে। ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে হেফাজতে ইসলাম কঠোরহস্তে দমন করা হবে’ ধরনের কথা বলে কিছুটা হুমকি-ধমকিও দেয়া হচ্ছে। ১৩ দফা দাবি সম্পর্কেও সরকারের ভূমিকা অস্বচ্ছ। বরং সরকারদলীয় নীতিনির্ধারকদের মন্তব্যগুলো পরস্পরবিরোধী, একই সাথে অসহিষ্ণু ও অসংলগ্ন। এর ফলে হেফাজতে ইসলাম শুধু ভুল বার্তাই পাচ্ছে না, এরা সরকারের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধও বটে। স্বাভাবিক কারণেই সরকারের মুখোমুখি অবস্থানে যেতে বাধ্য হচ্ছে দেশের আলেম সমাজ।
হেফাজতে ইসলামের দাবিদাওয়া নিয়ে সরকার শুরু থেকেই দুর্বোধ্য আচরণ করছে। কোনো বিশেষ মহলের দাবিদাওয়া মানা-না-মানা এক বিষয়, আবার দাবি প্রত্যাখ্যান করাও অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। তবে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা সম্পর্কে সরকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ঠিক কাজ করেনি। বরং দেশকে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। সরকার শুধু এর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দেয়নি, বিভিন্ন গোষ্ঠীকে উসকানি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ১৩ দফা সম্পর্কে সরকারপক্ষ ও সরকারের সমর্থক দল নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
হেফাজতে ইসলামের দাবি কোনোভাবেই রাজনৈতিকভাবে তর্কিত বিষয় নয়। দল-মত নির্বিশেষে এসব দাবি জনগণ ধর্মীয় ও সামাজিক স্বার্থে গ্রহণযোগ্য ভাবছে। এর সাথে রাজনৈতিক এজেন্ডা মিলিয়ে দেখা কিংবা কাউকে ক্ষমতায় বসানো, কাউকে ক্ষমতা থেকে নামানোর বিষয়টি একেবারেই গৌণ এবং পরোক্ষ বিষয়।
হেফাজতে ইসলাম তাদের বক্তব্য সম্পর্কে সজাগ এবং যুক্তিগ্রাহ্য ভাষায় সতর্কও। এর কোনো কোনো দাবি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির ব্যাপারেও এরা অসতর্ক নন। নারীনীতি সম্পর্কে একাধিকবার ব্যাখ্যা দিয়েও তারা ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে সচেষ্ট। এর ফলে জনমনে কোনো বিভ্রান্তি নেই। অন্তত দেশের বেশির ভাগ মানুষ ১৩ দফার প্রতি নৈতিক সমর্থন দেয়াকে ধর্মীয় দায় বিবেচনা করছে। হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত বিভিন্ন সমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগম প্রমাণ করে ১৩ দফার প্রতি জনগনের ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে।
আমরা মনে করি, হেফাজতে ইসলাম কোনো গতানুগতিক দল নয়, বরং এটি ইসলামি-ভাবাপন্ন ও ধর্ম নির্বিশেষে ধর্মপন্থীদের একটি কমন প্ল্যাটফরম। সরকার ধনুকভাঙা পণ করে হেফাজতে ইসলামকে ঠেকানোর চেষ্টা করলে এটা হবে জনগণকে ঠেকানো এবং ইসলাম ঠেকানোর নামান্তর। এর ফলস্বরূপ বিভক্ত জাতি আরো বিভক্ত হবে, সামাজিক ও ধর্মীয় অস্থিরতার কারণে রাজনৈতিক সঙ্কট আরো বেশি ঘনীভূত হবে। সরকারের উচিত তাদের বক্তব্য-ভূমিকা স্পষ্ট করা। দাবি মানা-না-মানা সরকারের নিজস্ব কৌশলগত অবস্থানের বিষয় হতে পারে, তবে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে দাবির পক্ষে অবস্থান নেয়াও হেফাজতে ইসলামের এখতিয়ারের বিষয়। সরকার এ ক্ষেত্রে বাধা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে সব দায় তাকেই বহন করতে হবে।
আমরা আশা করি, সরকার দূরদর্শী হবে। দাবিগুলো বিবেচনায় নেয়ার মতো প্রজ্ঞার পরিচয় দেবে এবং আলোচনা করে সমাধানের ব্যবস্থা করবে। তাতেও পরিণামদর্শী হতে না পারলে হেফাজতে ইসলামকে তাদের কর্মসূচি পালনে বাধা না দিয়ে সহযোগিতা করাই হবে প্রকৃত গনতান্ত্রিক আচরণ এবং সরকারি দায়িত্বশীলতা। এ ক্ষেত্রে সরকারের যথার্থ দায়িত্বশীল ভূমিকাই আমরা প্রত্যাশা করি।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন