হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা; বিরুধিতা কাম্য নয়
লিখেছেন লিখেছেন শিব্বির আহমদ ওসমানী ০৩ মে, ২০১৩, ১১:৫৫:৫৪ সকাল
শিব্বির আহমদ ওসমানী: হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল বা মহল নয়। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যান্ত আলোচিত-সমালোচিত বিষয়গুলো নিয়ে দেশের হক্কানী আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পক্ষ থেকে একটি ধর্মীয় উদ্যোগ মাত্র। তাদের ঘোষিত ১৩ দফা সর্বস্তরে আলোচনার ঝড় তুলেছে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী তেরো দফার ভিতরে তাদের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ প্রত্যক্ষ করেছেন। যারা বিতর্কীত করার চেষ্টা করেছেন তারা মূলত বিতর্কের জন্যই বিতর্ক করছেন।অনেকটা মিথ্যা ও অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি নিয়ে কোনো কোনো মহল থেকে উত্থাপিত সমালোচনা ও বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ তাদের সংশ্লিষ্ট দাবির ব্যাখ্যা প্রকাশ করেছে। ১৩ এপ্রিল শনিবার হেফাজতে ইসলামের আমির দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী তার কার্যালয়ে সব অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি নিরসনে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ১৩ দফা দাবির ব্যাখ্যা প্রকাশ করেন।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশর সম্মানীত আমীর দৃঢ়তার সাথে বলেন, হেফাজতে ইসলাম উত্থাপিত ১৩ দফা দাবি নিয়ে কোনরূপ বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের সুযোগ নেই। আমরা বিগত ৯ মার্চ জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে দেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামি নেতা ও বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এই দফা-দাবি প্রণয়ন করেছি। আমাদের সব দাবি মুসলমানদের ঈমান-আকিদার সংরক্ষণ এবং দেশের স্বাধীনতা, সামাজিক শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। সুস্থ বিবেকের কোনো নাগরিকই আমাদের কোনো দাবির বিরোধিতা করতে পারেন না। আল্লামা শাহ আহমদ শফী আশা প্রকাশ করে বলেন, ১৩ দফা দাবি নিয়ে এ ব্যাখ্যা প্রকাশিত হওয়ার পর আর কোনো বিভ্রান্তি থাকবে না।
আল্লামা শফী জানান, ১২ ও ১৩নং দাবির বক্তব্য প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় এ দুটিকে একীভূত করা হয়েছে এবং পরিস্থিতির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ১৩ নম্বরে নতুন দাবি সংযোজন করে হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলোকে আর যুগোপযোগী ও স্পষ্ট করা হয়েছে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশর আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী উপস্থাপিত হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির ব্যাখ্যা নিচে উপস্থাপন করা হলো:
১. সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন করতে হবে।
ব্যাখ্যা: বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগই মুসলমান। আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস মুসলমানদের ঈমানের প্রধান বিষয়। এদেশের মানুষ ধর্মপরায়ণ এবং তাদের ধর্মীয় চেতনা অত্যন্ত শাণিত। আজানের ধ্বনিতে এদেশের মানুষের ঘুম ভাঙে। ইসলামি আচার-আচরণ, সংস্কৃতি তাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এ বিশাল ধর্মপ্রাণ জনগণের বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন হিসেবেই সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসকে সংবিধানের প্রধান মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মহাজোট নেতৃত্বাধীন এবং বামপন্থীদের প্রভাবাধীন বর্তমান সরকার কারও মতামতের তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে সংবিধান সংশোধন করে। সর্বশেষ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মূলনীতি থেকে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দিয়ে সে জায়গায় ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি যুক্ত করে। সরকার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে একতরফাভাবে এ কাজটি করে দেশকে ধর্মহীনতার দিকে নিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করেছে, যাতে বামপন্থী ও নাস্তিক ধর্মবিদ্বেষীদের বহুদিনের পুরনো আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়। এর মাধ্যমে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানের ওপর প্রচণ্ড আঘাত হানে সরকার। দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখসহ দল-মত নির্বিশেষে সব মানুষ এর তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ে এবং হরতালসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। কিন্তু সরকার কারও কোনো দাবির প্রতিই কর্ণপাত করছে না।
এরপর সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির আলোকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে শুরু করে— এরই মধ্যে যার প্রতিফল আসতে শুরু করেছে। পাঠ্যপুস্তকে ইসলামবিরোধী বক্তব্য সংযোজন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বইয়ে অশালীন যৌনশিক্ষার বিষয় যুক্ত করা, ধর্মীয় চেতনা ধ্বংস, অপসংস্কৃতি বিস্তারের নানা উদ্যোগ নেয় সরকার। দেশে নাস্তিক্যবাদের বিস্তার এবং ধর্ম অবমাননা ভয়াবহ আকারে দেখা দেয়, যা জাতি এরই মধ্যে প্রত্যক্ষ করেছে।
এ কারণেই সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতিটি পুনঃস্থাপনের জন্য এদেশের তৌহিদি জনতা দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে রাজপথে নেমেছে। হেফাজতে ইসলাম অত্যন্ত যৌক্তিক কারণেই দেশের মানুষের ঈমান, আকিদা ও চিন্তা-চেতনার সঙ্গে জড়িত এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে তাদের প্রধান দাবি হিসেবে পেশ করেছে। এরই মধ্যে ৬ এপ্রিল লংমার্চের মাধ্যমে সারাদেশের কোটি কোটি মানুষ এ দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছে। সরকারি প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ঢাকার মহাসমাবেশে জড়ো হওয়া লাখ লাখ তৌহিদি জনতার সঙ্গে সারাদেশের মানুষ এই দাবিসহ ১৩ দফা দাবির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এটি এখন দেশের তৌহিদি জনতার প্রাণের দাবি। এ দাবি অত্যন্ত পরিষ্কার এবং যৌক্তিক।
২। আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।
ব্যাখ্যা: পৃথিবীর কোনো ধর্ম কিংবা দেশ-সমাজে ধর্ম অবমাননাকে স্বীকৃতি দেয়নি। কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কোনো অধিকার কারও নেই। তারপরও একশ্রেণীর ধর্মান্ধ, ধর্মদ্রোহী নাস্তিক মুরতাদ ধর্ম অবমাননা করে থাকে এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকে। এজন্য পৃথিবীর বহু দেশে ধর্ম অবমাননার কঠোর শাস্তির বিধান সম্বলিত আইন রয়েছে।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশ হওয়া সত্ত্বেও, এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও একশ্রেণীর ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক মুরতাদ ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ক্রমাগতভাবে ইসলামের ওপর আঘাত করে আসছে। এই ধর্ম অবমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রতিকারে এদেশের আলেম ওলামাসহ তৌহিদি জনতা তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন করার পাশাপাশি ধর্ম অবমাননার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে আইন পাসের দাবি জানিয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু কোনো সরকারই গুরুত্বপূর্ণ ও ন্যায্য এ দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি। সর্বশেষ শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্লগারদের ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে চরম অবমাননা ও কটূক্তির খবর জনসমক্ষে আসে। তার আগে সর্বোচ্চ আদালত ব্লগারদের ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলেও বর্তমান সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আগে সালমান রুশদী, তসলিমা নাসরিনের মতো ব্যক্তিরা বিছিন্নভাবে ধর্ম অবমাননা করেছে। তৌহিদি জনতার প্রতিবাদ আন্দোলনের মুখে তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ধর্ম অবমাননার এই প্রবণতা এখন মারাত্বক রূপ ধারণ করেছে। নাস্তিক মুরতাদ ও ভিন্নধর্মী ইসলামবিদ্বেষীরা এখন সংঘবদ্ধভাবে এ কাজটি করছে। অনলাইনে ব্লগে, ফেসবুক-টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করে কার্টুন এঁকে তারা এ কাজটি করে যাচ্ছে। এটা দেশের তৌহিদি জনতা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। তাই ধর্ম অবমাননার জন্য কঠোর শাস্তি তথা সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে আইন পাস করা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ধর্ম অবমাননার মাধ্যমে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যাতে দেশে কোনো বিশৃঙ্খলা বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে না পারে— এদিক বিবেচনায়ও এ ধরনের আইন করা জরুরি।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের একাধিক বাণীতে নাস্তিক মুরতাদদের ন্যায্য শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। এ শাস্তির কার্যক্রম বহাল করার জন্য ইসলামী রাষ্ট্র কিংবা শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের দরকার নেই। শরিয়তের যেসব বিধান মতে মুসলিম সমাজে বিয়ে হয়, তালাক হয়, সম্পদ বণ্টন হয়, সেসব প্রচলিত ধারায় এ আইন বাস্তবায়ন করা যায়। মরহুম প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের অবমাননাকারীদের শাস্তির বিধান থাকতে পারলে কোটি কোটি মুসলমানের প্রাণাধিক প্রিয় আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের কটূক্তিকারীরা নিরাপদ থাকবে, তাদের কঠোর কোনো শাস্তির বিধান বা আইন থাকতে পারবে না— এটা যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এই ন্যায় আইনের জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হবে কেন? সরকার স্বপ্রণোদিতভাবে এ আইন বাস্তবায়ন করে ঈমানি দায়িত্ব পালন করতে পারে।
৩। তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কতিপয় ব্লগার, নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপতত্পরতা ও প্রচারণা বন্ধ করতে হবে এবং যেসব নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তি-সংগঠন যে কোনো মাধ্যমে আল্লাহ-রাসুল (সা.), ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতঃ দেশের ৯০% মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে, তাদেরকে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
ব্যাখ্যা: তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্লগার এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে অনেকে মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার আড়ালে কোটি কোটি মানুষের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, প্রিয় নবী রাসুল (সা.), পবিত্র কোরআন ও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে জঘন্য কুত্সা ও অবমাননায় জড়িত। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ছাড়াও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে এবং সভ্যতা-ভব্যতা ও গণতন্ত্রের কোনো মাপকাঠিতেই এমন কুত্সা ও অবমাননা মেনে নেয়া যায় না। ওরা ইসলামের এমন জঘন্য অবমাননা করেছে, যা পশ্চিমা বিশ্বের কোনো অমুসলিমের মুখে কখনও শোনা যায়নি। সুস্থ বিবেকের কোনো মুসলমানের পক্ষে এসবের সম্পূর্ণটা পড়ে দেখার সাধ্যও নেই। ধর্ম অবমাননাবিরোধী আইনের আওতায় এসব ব্লগারকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দাবি করছি আমরা। কারণ, এদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে দ্বিগুণ উত্সাহে এ ধরনের হীন তত্পরতা অব্যাহত রেখে দেশকে চরম বিশৃঙ্খলা ও গণঅসন্তোষের দিকে নিয়ে যেতে পারে; যা দেশের স্বাধীনতা, শৃঙ্খলা ও আইনি কাঠামোর জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করতে পারে।
৪. দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নারীজাতির সার্বিক উন্নতির বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে তাদের নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মস্থল, সম্মানজনক জীবিকা এবং কর্মজীবী নারীদের ন্যায্য পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরে-বাইরে, কর্মস্থলে নারীদের ইজ্জত-আব্রু, যৌন হয়রানি থেকে বেঁচে থাকার সহায়ক হিসেবে পোশাক ও বেশভূষায় শালীনতা প্রকাশ এবং হিজাব পালনে উদ্বুব্ধকরণসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; এবং একই লক্ষ্যে নারী-পুরুষের সব ধরনের বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে অবাধ ও অশালীন মেলামেশা, নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, নারীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার সহিংসতা, যৌতুক প্রথাসহ যাবতীয় নারী নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
ব্যাখ্যা: তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নাস্তিক্যবাদী ব্লগাররা শুধু আল্লাহ, রাসুল, ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেই থামেনি; সঙ্গে সঙ্গে আবহমান বাংলার রক্ষণশীল সামাজিক অনুশাসন এবং সংস্কৃতির ওপরও আঘাত করে অনেক কর্মকাণ্ড এরই মধ্যে করে ফেলেছে। বিয়েবহির্ভূত, ঘনিষ্ঠ অনাত্মীয় নারী-পুরুষের দৃষ্টিকটু বিচরণ ও রাস্তায় একঙ্গে, এমনকি একই তাঁবুতে অবস্থান করে রাতযাপনের মতো অনৈসলামিক, অনৈতিক, অসামাজিক এবং এদেশের আবহমান কৃষ্টি-কালচার সংস্কৃতিবিরোধী কাজ প্রকাশ্যে ঘটছে শাহবাগে। ধর্মীয় অনুভূতি ছাড়া যা পারিবারিক, সামাজিক এবং জাতীয় সাংস্কৃতিক দৃষ্টিতেও কখনও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
শাহবাগে যে কালচারের চর্চা চলেছে ও চলছে, তা দেশে চালু হলে নারীদের নিরাপত্তা সব ক্ষেত্রেই বিঘ্ন হবে। দেশের নারী সমাজকে ইভটিজিং, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি থেকে বাঁচিয়ে রেখে, সর্বোপরি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশেই উপরোক্ত কর্মকাণ্ড বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। ইসলাম নারীর মর্যাদা, নিরাপত্তা ও যৌন হয়রানি থেকে বেঁচে থাকার জন্য হিজাব প্রথা বাধ্যতামূলক করেছে এবং পুরুষদেরও বৈধ সম্পর্কের বাইরে নারীদের সঙ্গে দৃষ্টি অবনত ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে বলে চমত্কার ভারসাম্য রক্ষা করেছে। কাজেই হিজাব পালন করে অথবা যৌন উদ্দীপনা তৈরি করে না—এমন শোভনীয় পোশাক পরে নারীদের নিরাপদ কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে বা ঘর থেকে বের হতে তো কোনো বাধা নেই। ইসলাম নারীর নিরাপত্তার দিকটা কঠোরভাবে দেখে। কেবল সুযোগসন্ধানীরাই এটাকে নারী অবদমন বলে অপপ্রচার চালায়। আমাদের কথা পরিষ্কার যে, হিজাব বা শালীনতার সঙ্গে নারীদের নিরাপদ পথ চলাচল, শিক্ষার্জন ও কর্মক্ষেত্রে যেতে কোনো বাধা নেই। উদাহরণস্বরূপ, নারীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য আলাদা বালিকা বিদ্যালয় বা মহিলা কলেজ থাকতে পারলে আলাদা কর্মক্ষেত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে আপত্তি তোলার যুক্তি থাকতে পারে না।
৫. নারীনীতি ও শিক্ষানীতির ইসলামবিরোধী ধারা ও বিষয়গুলো বিলুপ্ত করতে হবে এবং শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলামের মৌলিক শিক্ষা মুসলিম ছাত্রদের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে।
ব্যাখ্যা: ত্যাজ্য সম্পত্তিতে সম-অধিকারের আইনসহ নারীনীতির পবিত্র কোরআন-সুন্নাহবিরোধী ধারাগুলোই আমরা সংশোধনের দাবি করছি। এছাড়া জাতিসংঘের বিতর্কিত সিডও সনদ বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। এই সিডও সনদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় নেতা পোপ ও ভ্যটিকানসহ অনেক মুসলিম ও খ্রিস্টান দেশ আপত্তি জানিয়েছে। এই সিডও সনদ কার্যকর হলে পারিবারিক ব্যবস্থা বলে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। এ বিতর্কিত সনদে বিয়েবহির্ভূত অবাধ যৌনাচারের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে সন্তানের পিতৃপরিচয় বিলীন হয়ে যাবে। আমরা নারীসমাজকে স্পষ্ট করে জানাতে চাই, ইসলাম সর্বোত্তম উপায়েই নারীদের মর্যাদা, অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার পক্ষে। আর বর্তমানের নাস্তিক্যবাদীরা নারীদের কেবল অলঙ্কারিক ও ভোগ্যপণ্য হিসেবেই বিবেচনা করে।
অন্যদিকে সরকার ঘোষিত শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষাকে সঙ্কুচিত করা হয়েছে। এখানে ধর্মশিক্ষা রাখা হলেও ছাত্রছাত্রীদের মন ও মননকে ধর্মহীন করার জন্য কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। চলতি ২০১৩ সালের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইগুলোতে ইসলামের যে অপব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে, তা চরম অগ্রহণযোগ্য। তাছাড়া কোমলমতি ছেলে-মেয়ে শিশুদের ক্লাসে একসঙ্গে বসিয়ে যেভাবে যৌন শিক্ষা চালু করা হয়েছে, তা এদেশের ভবিষ্যত্ প্রজন্মের নৈতিকতা ও সুস্থ সামাজিক অনুশাসনকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। মানুষকে যাবতীয় পশুপ্রবৃত্তি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অন্যায়-অপরাধ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে ধর্মশিক্ষা বা ধর্মীয় অনুভূতির বিকল্প নেই। এ কারণে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ থেকেই আমরা দাবি জানিয়ে আসছি যে, শিক্ষার সব স্তরে সঠিক ধর্মশিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইসলাম সবসময় অন্যায়, অবিচার, ঘুষ-দুর্নীতি, মদ-জুয়া, মিথ্যা, খুন, ধর্ষণ, মারামারি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখে। সুতরাং সুস্থ মানসিকতাপূর্ণ আদর্শ নাগরিক গঠনে ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প কিছু হতে পারে না।
৬. ভাস্কর্যের নামে মূর্তিস্থাপন, মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলনের নামে শির্ক সংস্কৃতিসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা: দেশে ভাস্কর্যের নামে আবক্ষ নারী-পুরুষ বা জীবজন্তুর মূর্তি তৈরি ও ফুল দিয়ে সেসবকে সম্মানপ্রদর্শনের রেওয়াজ যে হারে শুরু হয়েছে, তা
৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কখনও কাম্য হতে পারে না। ইসলামে স্পষ্টভাবে মূর্তি তৈরি ও সম্মান প্রদর্শনকে শির্ক ও হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আমরা কখনও প্রাণহীন শিল্পকর্মের বিরোধী নই। বরং ইসলাম সৌন্দর্য ও জ্ঞান-উদ্দীপক শিল্পকর্মকে উত্সাহিত করে।
অপরদিকে মঙ্গলপ্রদীপ ও মোমবাতি প্রজ্বলন অগ্নিপূজক ও পশ্চিমা সংস্কৃতি। কথিত গণজাগরণ মঞ্চ থেকে এটাকে এদেশে ঢালাওভাবে প্রচলনের জোর চেষ্টা চলছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে অগ্নিপ্রজ্বলনের মতো পশ্চিমা ও বিজাতীয় এই সংস্কৃতির প্রচলন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারও ধর্মীয় আচরণে এ ধরণের কোনো সংস্কৃতি চর্চার বিধান থাকলে সেটা তারা নিজেদের পরিসরে পালন করতে পারে। কিন্তু কথিত গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ঘোষণা দিয়ে ঢালাওভাবে এদেশের তরুণ ও ছাত্রসমাজকে দিয়ে এই সংস্কৃতি চর্চা করিয়ে জাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এদেশের তৌহিদি জনতা এটা মেনে নিতে পারে না। এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক এবং বাস্তবসম্মত।
৭. রেডিও টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা: বর্তমানে উপরোক্ত গণমাধ্যমে ইসলামী নিদর্শন নিয়ে হাসি-তামাশা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। খুনি, দাঙ্গাবাজ, সন্ত্রাসী ও দেশদ্রোহী চরিত্রে পায়জামা-পাঞ্জাবি ও দাড়ি-টুপি চরিত্রধারীদের উপস্থাপন করা হয়। যা স্পষ্টতই ইসলাম ও মুসলমানদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হেয় করা ছাড়া আর কিছু নয়। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এমন আচরণ কোনোভাবেই চলতে দেয়া যায় না এবং এটা সুস্থ চিন্তার মতপ্রকাশও হতে পারে না। এর কুফল বর্তমানে সমাজে পড়তে শুরু করেছে। কথিত শাহবাগিরা দাড়ি-টুপিধারী, বয়োবৃদ্ধ মুসলমান ও ইসলামি সংস্কৃতির প্রতি যেভাবে হামলে পড়ছে, তা অমুসলিম দেশেও সচরাচর দেখা যায় না। আমাদের এই দাবির যৌক্তিকতাও বলার অপেক্ষা রাখে না।
৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা: বর্তমানে রাজনৈতিক কারণে মসজিদ-মাদরাসায় অনাকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন ধরনের হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। জুমার দিন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের বিভিন্ন গেট বন্ধ রাখা, গুলিবর্ষণ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, তল্লাশির নামে হয়রানি, বুটজুতা নিয়ে পুলিশের মসজিদে প্রবেশসহ হরেক রকমের অবমাননা ও মুসল্লিদের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় ওয়াজ ও তাফসির মাহফিলে বাধাদান, মাইক খুলে নেয়া ও অনুমতি না দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। ধর্মকর্ম পালনে এবং মসজিদে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে চাপিয়ে দেয়া ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
৯. দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ঈমান ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও ও খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মান্তরকরণসহ সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা: পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে পশ্চিমা খ্রিস্টান বিশ্ব সুগভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, এটা এখন আর কারও কাছে গোপন বিষয় নয়। খ্রিস্টান মিশনারিগুলোর পার্বত্য এলাকায় ধর্মান্তরকরণ প্রক্রিয়া এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, যা এদেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। এছাড়া অনেক চিহ্নিত এনজিও দেশের শিক্ষায় অনগ্রসর ও অনুন্নত এলাকায় বেছে বেছে সাহায্য-সহযোগিতা ও শিক্ষাদানের আবরণে মুসলমান শিশু-কিশোর ও বয়স্কদের খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। আমাদের দাবি হলো, সরকার আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীসহ অন্যান্য তদারকি সংস্থার কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এসবের নিয়ন্ত্রণ করে সন্দেহভাজনদের দেশ থেকে বহিষ্কার করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে হুমকিমুক্ত রাখতে হবে।
১০. কাদিয়ানিদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা: কখনও শেষ নবী, কখনও ঈসা (আ.) এবং কখনও ইমাম মাহদীর দাবিদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানির অনুসারী আহমদিয়ারা নিজেদের মুসলমান দাবি করে এদেশের সরলমনা মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে কাদিয়ানি বা আহমদিয়া জামাতভুক্ত করে ঈমানহারা করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক সরলমনা মুসলমানই ঈমানহারা হচ্ছেন। কাদিয়ানি তথা আহমদিয়াদের এই ঈমানবিধ্বংসী প্রতারণা বন্ধ করার জন্য বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশেও তাদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। এবং তাদের প্রতারণাপূর্ণ সব অপতত্পরতা ও অপপ্রচার নিষিদ্ধ করতে হবে। এই দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের।
১১। রসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদরাসার ছাত্র, মসজিদের ইমাম-খতিব ও তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন, নির্বিচারে গুলিবর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা: দেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের যৌক্তিক ঈমানি দাবিগুলোর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন রসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র, মসজিদের ইমাম-খতিব এবং তৌহিদে বিশ্বাসী মুসলমান। কেবল ইসলামের কথা বলতে বা দাবি জানাতে গিয়ে তারা যে মিছিল সমাবেশ ও প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছে, তাতে দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে, নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও গণহত্যা চালানো হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এদের ধর্মকর্ম পালনে হুমকি ও ভয়ভীতি দানের খবরও আসছে। একটা স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমনটা চলতে পারে না।
১২. অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদরাসার ছাত্র, ইমাম-খতিব ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
ব্যাখ্যা: হেফাজতে ইসলামের ঈমান-আকিদা ও ইসলামের ইজ্জত সংরক্ষণ, দেশের স্বাধীনতা, সংস্কৃতি, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন নিরাপদ রাখার চলমান আন্দোলনে অন্যায়ভাবে অনেক আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র, মসজিদের ইমাম-খতিব ও তৌহিদে বিশ্বাসী নিরীহ নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে আহত হয়ে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। আমরা অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র, ইমাম-খতিব ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
১৩. বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
ব্যাখ্যা: আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে উজ্জ্বল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। বাংলাদেশে বহু সম্প্রদায়ের সম্প্রীতিমূলক অবস্থান বিশ্বের অনেকের কাছেই দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। বাংলাদেশের এই সুনামকে নস্যাত্ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারী মহল এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সহাবস্থানকে কলঙ্কিত করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে হামলায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত ও শাস্তিদান এবং দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর ন্যায্য অধিকার ও নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার দাবি জানাচ্ছি।
আমরা মনে করি, রাজনৈতিক কারণে যারা এ দাবিগুলোর বিরোধিতা করছেন তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আর যারা বিদ্বেষের কারণে সমালোচনা করছেন তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই তা করে ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন হচ্ছেন। আদর্শিক কারণে যারা এর প্রতিপক্ষ সেজেছেন তারা মাহাগ্রন্থ আল-কোরআনেরও সংশোধন চায়। তাদের উদ্দেশ্য অত্যন্ত খারাপ ও মিথ্যা। তারা নারীদের নিয়ে বহুজাতিক কোম্পানির মতো বানিজ্য করতে চায়।
অনেকে এ ১৩ দফাকে মধ্যযোগীয় বর্বরতা বলেন। কারণ তারা ইতিহাস চর্চা করে না। তারা জানে না মধ্যযোগ ইউরোপ ও আফ্রিকার জন্য অন্ধকার হলেও এটা ছিল ইসলামের সোনালী যুগ। এই সময় মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স, সাহাবায়ে কেরাম এবং পরবর্তী উমাইয়া-আব্বাসীয় শাসনের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ সময় ইতিহাসে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। তাই বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা না করে সমর্থন করা উচিৎ। চোখ থাকতে অন্ধ ও বিবেক থাকতে অজ্ঞ সেজে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত না করাই আমাদের কাম্য। সরকারের উচিৎ ১৩ দফা নীতগতভাবে মেনে নেয়া। তারপর কখন কিভাবে এসব দাবি পূরণ করা করা যায় তা নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহন করা। সেটাই হবে দূরদর্শিতা এবং গণমানুষের হৃদয়স্পন্দন অনুধাবন করার সার্থকতা।
লেখক: শিক্ষক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।
E-mail:
[Link: http://amarbangla24.com/?p=11591]
বিষয়: বিবিধ
১৫৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন