আইফেল টাওয়ারের নির্মাণ ইতিহাস
লিখেছেন লিখেছেন জাহিদ পিয়াল ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৪:৪১:৫৫ বিকাল
ফ্রান্সের সুদৃশ্য নিদর্শন আইফেল টাওয়ার এর কথা তো আমরা সবাই অনেক শুনেছি। বিভিন্ন ফটোগ্রাফে কিংবা সিনে এই অপূর্ব ইমারত বা টাওয়ারটির চোখ ধাঁধানো কারুকাজও দেখেছি।
কিন্তু এই টাওয়ারটি নির্মাণের পেছনের ইতিহাস আমরা হয়তো অনেকে জানিই না। আজ অবশ্য আমরা আইফেল টাওয়ার বানানোর সেই অজানা গল্পটিই জানার চেষ্টা করবো।
ফ্রান্সের প্যারিস শহরে আইফেল টাওয়ার বা মিনারটি আসলেই পৃথিবীর কোন স্থাপনা নির্মাণের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনাই বটে। ধাতুর এই খাঁচা তৈরির সময় তার কদরই বোঝে নি প্যারিসের মানুষ৷ অথচ আজ আইফেল টাওয়ার শহরের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে গোটা বিশ্বে পরিচিত৷ ২০১২ সালে এই টাওয়ারটি পূর্ণ করে ১২৫ বছর। ১৮৮৭ সালের ২৬শে জানুয়ারি আইফেল টাওয়ার চালু হয়েছিল৷ শহরের মানুষ বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, প্যারিসের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেল৷ বিশিষ্ট জনরা গর্জে উঠেছিলেন, ‘এ যেন এক দৈত্য – শহরের লজ্জা'৷ এমনকি কমিটি গড়ে রীতিমত ‘আইফেল টাওয়ার হটাও' আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফরাসি সেনাবাহিনী নাৎসিদের অপব্যবহার রুখতে টাওয়ারের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলার কথা ভেবেছিল৷ তারপর হিটলার স্বয়ং আইফেল টাওয়ার ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যদিও তা অমান্য করা হয়েছিল৷
ফরাসি বিপ্লবের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সেসময়ে শহরে বসেছিল আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আসর৷ এই ঘটনাকে স্মরণীয় করে তুলতে গড়ে তোলা হয়েছিল এই টাওয়ার৷ ১৮৮৭ থেকে ১৮৮৯ – দুই বছর লেগেছিল টাওয়ারটি তৈরি করতে৷ এত কাণ্ড করে তৈরি করে চট করে আবার তা খুলে না নিয়ে পরিকল্পনা ছিল, মেলা শেষ হওয়ার ২০ বছর পর সেটি আবার খুলে নেওয়া হবে৷
কিন্তু সেই পরিকল্পনা আর কার্যকর হয় নি৷ কারণ ততদিনে আইফেল টাওয়ারের খ্যাতি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ দলে দলে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন এই ‘আয়রন লেডি'কে দেখতে, যা ততদিনে আইফেল টাওয়ারের ডাকনাম হয়ে গেছে৷ আশেপাশের দোকানে বিক্রি হচ্ছে আইফেল টাওয়ারের ক্ষুদ্র সংস্করণ৷ কবি, সাহিত্যিক, গায়ক, চলচ্চিত্র নির্মাতারা এই টাওয়ার দেখে প্রেরণা পেতে শুরু করেছেন৷ এই সব কাণ্ডকারখানা দেখে প্যারিসের মানুষ অবাক৷ অবাক স্বয়ং গুস্তাভ আইফেল'ও, যিনি এই টাওয়ারের স্থপতি৷ উদ্বোধনের দিন ফরাসি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার সময় তিনি ভাবতেই পারেন নি, যে তাঁর এই সৃষ্টি অমর হয়ে থাকবে৷
মনে রাখতে হবে, সেই যুগে প্রায় ৩০০ মিটার লম্বা এই টাওয়ার ছিল গোটা বিশ্বে মানুষের তৈরি সবচেয়ে উঁচু কোনো সৃষ্টি৷ ১৯৫৭ সালে একটি অ্যান্টেনা বসানোর পর উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ৩২৪ মিটার৷ ৭,৩০০ টন ইস্পাত দিয়ে তৈরি হয়েছে এই টাওয়ার৷ টেলিগ্রাফ ও রেডিও সংকেত পাঠানোর কাজেও ব্যবহার করা হয়েছে এই টাওয়ারকে৷ ১৯২১ সালে ফ্রান্সের প্রথম পাবলিক রেডিও সম্প্রচারও শুরু হয়েছে সেখান থেকে৷ এখন সূর্যাস্তের পর থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিনিট করে আলোর সাজে সেজে ওঠে ‘তুর দিফেল'৷ প্রায় ২০,০০০ বাল্বের সেই আলোর ছটা অপরূপ এক দৃশ্য উপহার দেয়৷
বিষয়: বিবিধ
৭১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন