কবি কাজী নজরুল,আজো কেন উপেক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ?
লিখেছেন লিখেছেন জাহিদ পিয়াল ২৬ মে, ২০১৩, ০৮:৫৮:০৪ সকাল
আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ, দ্রোহ, প্রেম, সাম্য, মানবতা ও শোষিত মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে আসা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৪তম জন্মবার্ষিকী।
বাধার দুর্লংঘ পর্বত পাড়ি দেয়া ‘দুখু মিয়া’ খ্যাত এ কবি ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলা ১৩০৬ সনে বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়ায় এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয় শিক্ষা। এরপর তিনি বাল্য বয়সেই লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে একটি লেটো দলে যোগ দেন এবং ১৯১৭ সালের শেষদিকে নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
বিংশ শতাব্দীতে সকলকে চমকে দিয়ে নজরুল বাংলার সাহিত্যাকাশে আত্মপ্রকাশ করেন দোর্দন্ড প্রতাপে।কবিরূপে তাঁর অভ্যূদয়কে কেবল তুলনা করা চলে ধূমকেতুর সঙ্গে।প্রথম দিকেই মোসলেম ভারত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, উপাসনা প্রভৃতি পত্রিকায় তার কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে উপন্যাস বাঁধন হারা এবং কবিতা বোধন, শাত-ইল-আরব, বাদল প্রাতের শরাব, আগমনী, খেয়া-পারের তরণী, কোরবানি, মোহরর্ম, ফাতেহা-ই-দোয়াজ্দম্ ইত্যাদি। তিনি একাধারে বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক,জনপ্রিয় বাঙালি কবি,সঙ্গীতজ্ঞ,গীতস্রষ্টা,দার্শনিক,স্বাধীনতার কবি এবং ঐতিহ্য ও চেতনার কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ই আগস্ট নজরুল ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশ করেন।ঐ পত্রিকার ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২২ সংখ্যায় নজরুলের কবিতা আনন্দময়ীর আগমনে প্রকাশিত হওয়ায় ৮ নভেম্বর পত্রিকার উক্ত সংখ্যাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় ও ২৩ নভেম্বর তার যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং একই দিনে তাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়।তিনি ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদায় বিভূষিত হন।
তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল অত্যাচার,অনাচার,নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে।
বিদ্রোহের মূর্ত প্রতীক জাতীয় কবি মধ্য বয়সে পিক্স রোগে আক্রান্ত হন এবং মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯শে অগাস্ট, ১২ই ভাদ্র ১৩৮৩ সনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। প্রিয় কবির জন্মদিনে তাকে পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এবং তার বিদেহী আত্নার মাগফেরাত কামনা করছি। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম কিংবা মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান-কবিতা আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছে, এমনকি আমাদের রণসংগীতের রচয়িতা ও তিনি।
কিন্তু, অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, জাতীয় কবি হওয়া সত্ত্বেও কাজী নজরুল আমাদের জাতীয় জীবনে যথাযথ মর্যাদা পাননি আজো। এক শ্রেণীর বুদ্ধি প্রতিবন্দ্ধীরা বিভিন্ন উপায়ে তাকে উপেক্ষা ও অমর্যাদা করার পায়তারা করে যাচ্ছে, হয়ত পরিকল্পিতভাবেই সাহিত্য-সংস্কৃতি ও শিক্ষাঙ্গনে নজরুলেকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল সাহিত্য বাদ দিয়েও বাংলা বিভাগে ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রাখা হয়েছে। যা কিনা নজরুলের প্রতি অবমূল্যায়নের-ই নামান্তর।
আমরা মনে করি খণ্ডিত নজরুলচর্চা আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়। সূতরাং নজরুল ইনস্টিটিউট ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো কার্যকর ও গতিশীল করার পাশাপাশি তার জীবন ও কর্মের উপর গবেষণা এবং সামগ্রিক নজরুলচর্চা জোরদার করতে হবে।
লেখক; ব্লগার এমডি জাহিদুল ইসলাম
বিষয়: বিবিধ
২০৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন