ইসলামের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক কি? (মৌলিক গবেষণা)
লিখেছেন লিখেছেন সূর্য চৌধুরী ০৩ জুন, ২০১৩, ১১:৫১:৩৭ সকাল
আস্তিক বনাম নাস্তিক মানেই ধর্ম বনাম বিজ্ঞান নয়। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের কোন বিরোধ নাই। আপনাকে ওপেন চ্যালেন্জ করছি, আপনি এমন কোন প্রমানিত বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা দেখাতে পারবেন না কুরআনের বিপরীতে যায়। স্টিফেন হকিং তার 'কোয়ান্টাম ফ্রাকচুয়েশন' তত্ত্ব আর ডারউইনের ইভোলিউশন বা বিবর্তনবাদ দুইতার কোনটাই এখনও প্রমান হয়নি। পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চারণ সম্পর্কে হকিং সাহেবের মনগড়া ব্যাক্ষাও টিকেনা। তিনি তার তত্ত্ব তুলে নেবেন শীঘ্রই আর ডারউইনের বিবর্তনবাদ এখনও প্রমানিত হয়নি। এটা বিজ্ঞানের কথা না, এটা নাস্তিক্যবাদের কথা।
স্যার আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, "বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ, ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গু"। আস্তিক নাস্তিক গন্ডগোল মুলত বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস নিয়ে। সাইন্স আর রিলিজিয়ন নিয়ে নয়। অনেকে বলে বিজ্ঞান নাকি ঈশ্বরকে সাপোর্ট করেনা। যারা একথা বলে তারা না বোঝে বিজ্ঞান, না বোঝে ধর্ম। কারন আইনস্টাইন ১৪ বছর পর্যন্ত অত্যন্তি ধার্মিক ছিলেন এবং পরে Deist হলেও ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন। আনার উইকিপিডিয়ায় বিস্তারিত জানতে পারেন।
বিজ্ঞান কি?
পরীক্ষা > পর্যবেক্ষণ > সিদ্ধান্ত > ফলাফল > তত্ব প্রকাশ
বিজ্ঞান কখনই এক কথায় বলেনা 'এটা নেই ওটা নেই'। বিজ্ঞান প্রমান করতে বলেছে। প্রমান করতে পারলে সেটা সায়েন্টিফিক। হাজার হাজার আস্তিক প্রমান করে এসেছে ঈশ্বর আছে।
আপনি হয়তো বলবেন স্টিফেন হকিং বলেছেন তাই ঈশ্বর নাই।
হকিংয়ের মানা না মানাতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যায়না।
কোনরুপ যুক্তি দিলেই তা প্রমাণ হয়না, খুবজোর নিজস্ব একটি মতামত বা মতবাদ দেওয়া যায়। অনেকের ধারনা, আস্তিকেরা নিম্ন জ্ঞ্যানের অধিকারী, আর সকল নাস্তিকরাই বিজ্ঞানী।
কথাটি একেবারে ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক।
আপনি যদি কুরআন এবং বিজ্ঞান, এই দুইটার যে কোন একটা পড়েন তাহলে কখনই প্রকৃত মুমিন হতে পারবেন না। অবশ্যই বিজ্ঞানও জানতে হবে। বিজ্ঞান জানাও ফরজ, আল্লাহর হূকুম। উদাহরণ, সুরা আলাকঃ ১।
"পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন"। এ থেকে বোঝা যায় কোরআন তেলাওয়াতের জন্য নয়, নিজের ভাষায় এর বার্তা পড়ার জন্য এবং কুরআনের সঠিক ব্যখ্যা জানার জন্য মাতৃভাষায় কুরআন পড়তে হবে।
কুরআন আর বিজ্ঞানের পার্থক্য কি?
কুরআন হলো শিরোনাম, যা পুবপ্রাপ্তি এবং খন্ডানো যায়না আর বিজ্ঞান তার বিশ্লেষন যা মতবদলায় তবে অবশেষে শিরোনামকেই মেনে নিতে বাধ্য হয়। বহুবার প্রমানিত।
অনেকে ভাবে বিজ্ঞান খ্রিষ্টানদের জন্য , আর কুরআন মুসলমানদের জন্য, এটি একটি ভুল বিশ্বাস। আমার মতে,
The Creator of Al Quran has also made The Science so you have to believe both cause there is no differency between The Quran & The Scince .
তাই বিজ্ঞানকে সরিয়ে রেখে আপনি কুরআনকে ব্যখ্যা করতে পারবেন না। আবার কূরআনকে রেখে বিজ্ঞানের সঠিকটা জানতে পারবেন না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ নিজেই কুরানকে বিজ্ঞানময় বলেছেন। (সুরা ইয়াসিন, আয়াত ০২)
আমার ক্ষুদ্র ধারনায় বলি,
"কূরআন হলো সঠিক পথ আর বিজ্ঞান তার আলো"।
এখন পথ (কুরআন) যদি না থাকে তবে খোলামাঠে হ্যারিকেন (বিজ্ঞান) নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
আবার হ্যারিকেন(বিজ্ঞান) না থাকলে পথে(কুরআন) আপনি অন্ধের মত হয়ে যাবেন এবং অন্ধকারে পথ চলতেও পারবেন না।
আন্দাজে হয়তো কিছুক্ষন যাবেন (কিছু অন্ধবিশ্বাসীরা করে) তারপর কি করবেন? হোঁচট খাবেনই।
ঠিক তেমনি বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম সঠিক ভাবে বোঝা যায়না। আবার ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞানও কিছু করতে পারেনা। বিজ্ঞান ও কুরআন আলাদা পড়লে আপনি হয় নাস্তিক হবেন অথবা অন্ধবিশ্বাসী। আর ইসলামে কোনটারই স্থান নাই।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ সুভান ওয়াতাআলা বলেন 'আর তোমাদের দান করা হয়েছে তাদের জন্য যুক্তি এবং নিদর্শন'। সুরা আন নিসা-১৭৬।
দুটোর যে কোন একটি পড়লেই আপনার কাছে তা রুপকথা মনে হবে। তবে বিজ্ঞান পড়ার আগে একটু ধর্মীয় জ্ঞ্যান থাকতে হবে এতে বিচ্যুতির আশংকা থাকেনা। আর একারনেই রাসুল সাঃ কম বয়সেই শিশুদেরকে ইসলামিক জ্ঞানের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। শিরোনাম অবশ্যই আগেই লিখতে হয়। ঠিক সেরকম আগে সংক্ষিপ্তরুপে ধর্মকে চিনতে হবে এরপর বিজ্ঞান পড়তে হবে এরপর উভয়ের সংমিশ্রণে পড়তে হবে।
আর এসকল চিন্তা আগেই করেছেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ আর তাই বলেছেন,
"প্রত্যেক মুসলমান নরও নারীর জন্য সু জ্ঞ্যান শিক্ষা করা ফরজ"।
মানুষ কেন নাস্তিক হয়?
উচ্চতর বিজ্ঞান পড়লেই কেউ নাস্তিক হয়না। একজন ব্যক্তি তখনই নাস্তিক হয় যখন সে বিজ্ঞানের বা কুরআনের অস্পষ্টত ধারনা লাভ করে। তখন বুঝতে না পেরে নিজের মনগড়া ব্যখ্যা শুরু করে আর তখন গোঁজামিল যুক্তিতে ভাবে ঈশ্বর নেই।
আমরা আস্তিকেরা বুকে হাত দিয়ে ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি আল্লাহ এক এবং তার কোন শরীক নেই। কিন্তু কোন নাস্তিকই শতভাগ নিশ্চয়তা নিয়ে বলতে পারেনা যে আল্লাহ নেই। তাদের অধিকাংশই সন্দেহবাদি। আর একটা মানুষ যখন একটি বিষয়ে কম জানবে তখন সন্দেহ করবে। যাইহোক সন্দেহ করাটা একটি মানসিক রোগ, এর নাম 'জেনালিস'। সাইকোলজি যারা পড়েন তারা নিশ্চয় শুনে থাকবেন।
নাস্তিকেরা ছোট বেলা থেকে যদি কুরআন পড়তো তাহলে পথভ্রষ্ট হতোনা। তারা শিরোনাম না পড়ে আগেই বিস্তারিত পড়তে গেছে তাই কুরআন ও বিজ্ঞানের মূল থিম তারা পায়নি।
বিবরন সর্বদা শিরোনামের নিকট দায়প্রাপ্ত।
একটা উদাহরন দিই,
একসময় চাঁদে যাওয়াটা সবার কাছে কাল্পনিক মনে হতো। হাদিসে রাসুল সাঃ এর চাঁদের দ্বিখন্ডনের কথা উল্লেখ আছে। অনেক আস্তিকও এটাকে শুধু মুখেই মানতো অথবা অন্ধবিশ্বাস করতো কিন্তু মনে মনে ঠিকই সন্দেহ করতো(কতিপয় সাহাবি ব্যাতিত অনেকের মনেই এটা অস্পষ্ট ছিল)।
কিন্তু মানুষ যখন চাঁদে গেল তখন পৃথিবীবাসি দেখলো, চাঁদে যাওয়াটা কাল্পনিক নয়, এটা সম্ভব। আবার নীলস আর্মস্ট্রং দেখলো চাঁদ সত্যিই দুইখন্ডে বিভক্ত অর্থাত্ রাসুল সাঃ এর হাদিস সত্য। তাই রাসুলের হাদিসও কাল্পনিক নয়।
আজকে কুরআনে দেওয়া মহাবিশ্বের তথ্যগুলির সত্যতা পেয়ে NASA ও নিশ্চিত হয়ে প্রকাশ করেছে, আল কুরআন সত্যিই ঈশ্বর প্রেরিত বিজ্ঞান এবং ইসলামই একমাত্র সঠিক ধর্ম। বিশ্বাস না হলে ইউটিউবে সার্চ দিন।
বিজ্ঞান মত বদলায় কিন্তু কুরআন স্থির,
১) থেলিস বলেছিলেন পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সুর্য ঘুরছে,
২) টলেমি বলেছিলেন পৃথিবী ও সূর্য স্থির।
৩) এরপর বিজ্ঞান বলল পৃথিবীই সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এবং সূর্য স্থির।
৪) আজকে বিজ্ঞান মানতে বাধ্য হয়েছে পৃথিবী সূর্যকেন্দ্রিক, সূর্য আত্মকেন্দ্রিক আবর্তমান। প্রতি ২০ কোটি বছরে একবার পূরো মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ প্রদক্ষিণ করছে।
৫) পরবর্তীকালের পর্যবেক্ষণ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, কেবলমাত্র সূর্যই নয় বরং সমস্ত তারকারাজি, যাদেরকে অনঢ়(Fixed Stars)মনে করা হতো, একদিকে ছুটে চলছে। তাদের চলার গতি প্রতি সেকেণ্ডে ১০ থেকে ১০০ মাইল বলে অনুমান করা হয়েছে। আর আধুনিক আকাশ বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞগণ সূর্য সম্পর্কে বলেন যে, সে তার সমগ্র সৌরজগত নিয়ে প্রতি সেকেণ্ডে ২০ কিলোমিটার (অর্থাৎ প্রায় ১২ মাইল)গতিতে এগিয়ে চলছে। (দেখুন এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা, স্টার ও সান শব্দ, উইকিপিডিয়ার স্টার ও সান নিবন্ধন এবং নিবন্ধিত পাতা)।
এই কথা কূরআন ১৪০০ বছর আগেই বলেছেন।
'আর সূর্য, সে তার নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে ধেয়ে চলছে৷ এটি প্রবল পরাক্রমশালী জ্ঞানী সত্তার নিয়ন্ত্রিত হিসেব৷' সুরা ইয়াসিন, আয়াত ৩৮।
'না সুর্যের ক্ষমতা আছে চাঁদকে ধরে ফেলে ৩৫ এবং না রাত দিনের ওপর অগ্রবর্তী হতে পারে, ৩৬ সবাই এক একটি কক্ষপথে সন্তরণ করছে৷' সুরা ইয়াসিন, আয়াত ৪০।
এখানে বোঝা যায় যে প্রত্যেকে তার কক্ষপথে নিজস্ব গতিতে চলছে। আর এইটা বিজ্ঞান ৫ বার মত বদল করে অবশেষে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ্ আল কুরআন ১৪০০ বছর আগে যা বলেছে এখনও তাই বলছে। একবারের জন্যও মত পাল্টায়নি।
এথেকে বোঝা যাচ্ছে,
একক ভাবে ধর্মও প্রতিষ্ঠা হয়না, বিজ্ঞানও নয়। এতদিন কুরআন হাদিসে পড়ে এসেছেন, এবার বিজ্ঞানের প্রমান দেখে নিন। বিজ্ঞান ও ইসলাম সর্বদাই এক। দুটোই আল্লাহর দান। সুরা ইয়াসিন, আয়াত ২।
ব্যাপারটা সত্যিই জ্ঞ্যানীসম্প্রদায়ের জন্য অত্যান্ত মুল্যবান হতে পারতো যদি পৃথিবীতে ইসলামিক বিজ্ঞানী থাকতো। আফছোস আমরা যাদের রোল মডেল ভেবে বসে আছি তারা কি এ সম্পর্কে অবগত? । কিন্তু তা আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা একজন পদার্থবীদ স্টিফেন হকিংকে বসিয়েছি বিজ্ঞানীর আসনে যিনি ডারউঈনের চামচামি ছাড়া কিছুই করতে পারেন নি। আর ডারউইন নিজের লজ্জা লুকাতে বাপ দাদাকে বানর বলতেও দুইবার ভাবলেন না।
বিজ্ঞানে মতামত দেওয়া হয় আর কুরআনে মতামতের অধিকার সবার নেই এই শুধু পার্থক্য। যারা মনে করেন কুরআন ও বিজ্ঞান দুটি আলাদা আমি সবসময় তাদের বিপক্ষেই বলে যাবো। কারন আল্লাহ্ এই বিজ্ঞান ময় কুরআন সম্পর্কে বলেছেন 'এটি হলো সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই এবং উপদেশ গ্রহনকারির জন্য রয়েছে পথ প্রদর্শনা'। সুরা বাকারাহ, আয়াত ০২।
- আমার নিজস্ব মৌলিক গবেষণামূলক বই 'আল কুরআন নিয়ে নাস্তিকেদের ভন্ডামীর জবাব' এর একটি অংশ মাত্র। ধন্যবাদ।
বিষয়: বিবিধ
২৯৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন