ইসলামে গনতন্ত্রের ব্যখ্যা কী
লিখেছেন লিখেছেন সূর্য চৌধুরী ০২ মে, ২০১৩, ১০:২৬:০৪ রাত
আচ্ছালামু আলাইকুম, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আপনাদের সবাইকে ভালো রেখেছেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে সামন্জস্যপূর্ণ হওয়াতে এই লেখাটি অতীব জরুরী মনে করলাম। দয়া করে সকলেই পুরোটা পড়বেন।
আমরা কমবেশী সবাই জানি যে ইসলাম গনতন্ত্র সমর্থন করেনা। অনেকে আবার রেফারেন্স দিতে পারেন না, তাদের জন্য সাহায্যকারী হবে এই নোটটি আশা করি। প্রথমেই আমরা গনতন্ত্র সম্পর্কে জানবো।
গনতন্ত্র কী?
যে পদ্ধতিতে সকলের মত সাপেক্ষে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাকেই গনতন্ত্র বলে।
গনতন্ত্রের মুলনীতি কি?
গনতন্ত্রের মুলনীতি হলো জনগনই সকল ক্ষমতার উত্স। অর্থাত্ কাওকে উপযুক্ত চয়নের একমাত্র ক্ষমতা জনগনের।
গনতন্ত্রের কার্যক্রম কী?
গনতান্ত্রিক ভোটদান পদ্ধতিতে উপস্থিত প্রাপ্তবয়স্ক যোগ্য (Qualified) সকলেই তাদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রদান করে এবং সংখ্যাগুরুতার ভিত্তিতে নিবার্চন (Selection) করা হয়।
এবার আসুন দেখি ইসলামিক যুক্তি এ সম্পর্কে কি বলে?
১। গনতন্ত্রে প্রাপ্তবয়স্ক সবার স্বাধীন মতামতের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক মানেই বুদ্ধিমান কিংবা জ্ঞ্যানী নয়। এ কারনে নির্বাচনে জ্ঞ্যানী এবং নির্বোধ সকলেই অংশ নেয়। অথচ বিশ্বে জ্ঞ্যানীর চেয়ে নির্বোধের পরিমান অত্যাধিক বেশী। আর যেহেতু সংখ্যাগুরুতার ওপর ভিত্তি করে নিবার্চন হয়ে তাই কোন সমাজে নির্বোধ বেশী থাকায় তারা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে এবং ভুল ব্যক্তিকে চয়ন করে বসে।
রেফারেন্সঃ "যদি তুমি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথামত চল, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দিবে।"
(সূরা আন’আম-১১৬)
তাই গনতন্ত্র নিঃসন্দেহে একটি ভুল সমাজ ব্যবস্থা।
২। গনতন্ত্রের মুলনীতি হলো জনগনই সকল ক্ষমতার মুল উত্স।
কিন্তু আল্লাহ বলছেন সকল ক্ষমতার মুল উত্স ও অধিকারী একমাত্র তিনি।
রেফারেন্স:
"কর্তৃত্বতো কেবল আল্লাহরই।"
(সূরা আন আনাম-৫)
"তুমি বলো, হে সর্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান কর এবং যার নিকট থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নাও। যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর। যাকে ইচ্ছে পদদলিত কর। সব
কিছুই তোমার হাতে। নিশ্চয় তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান।"
(সুরা আল ইমরান-২৬)
তাই গনতন্ত্র একটি ভুল ও শিরকি সমাজ ব্যবস্থা।
৩। গনতন্ত্রে প্রতিটি রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় নিজস্ব সংবিধান তৈরী করা বাধ্যতামুলক।
কিন্তু ইসলামে আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করাটা একেবারেই হারাম হারাম এবং হারাম।
রেফারেন্সঃ
"আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিধান দেয়না তারা হল কাফের।"
{সূরা মায়িদা-৪৪}
"আল্লাহ যা অবতীর্ণ
করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিধান দেয়না তারা হল জালেম।"
{সূরা মায়িদা-৪৫}
তাই গনতন্ত্র একটি বিদাআতি সমাজ ব্যবস্থা।
৪। গনতন্ত্র হলো জুয়া কেননা এটি অনিশ্চিত ব্যবস্থা এবং কে জয়ী হবে এবং পরাজয় হবে তা কেউ জানেনা। এটি ভাগ্যের ব্যাপার তাই গনতন্ত্র হলো ভাগ্যপরীক্ষার মতোই।
আর জুয়া কিংবা ভাগ্যপরীক্ষা ইসলামে হারাম।
রেফারেন্স:
"হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈধ নয়। অতএব,
এগুলো থেকে বেঁচে থাকো যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।"
(সুরা মায়িদাহ-৯০)
"তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তবে বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পারো।
(সুরা আল বাকারা-২২৯)
তাই গনতন্ত্র হারাম এবং সম্পূর্ণ ইসলাম পরিপন্থী।
প্রমানিত করা হলো যে ইসলাম গনতন্ত্রবিরোধী। এবার গনতন্ত্র কয়েকটি প্রশ্নের জবাব দিবো।
* রাসুলে পাক সাঃ খলিফা নির্বাচনে কোন পথ অবলম্বন করতেন?
উত্তর: রাসুলে কারীম সাঃ খলিফা নির্বাচনে জ্ঞ্যানী ও বুদ্ধিমান সাহাবীদের চয়ন করতেন এবং তাঁদের সমন্বয়ে কয়েক সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল তৈরী করেছিলেন যারা সবকিছু বিচার বিশ্লেষন করে খলিফা নির্বাচন করতেন। যেহেতু সেখানে বুদ্ধিমান লোকদের দ্বারা সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হতো তাই নিবার্চন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতো।
* ইসলামে কোন তন্ত্রে বিশ্বাসী?
উত্তর: যে তন্ত্রে শিরকি কিংবা কারচুপি নেই সে তন্ত্র। আর একমাত্র খিলাফতই সঠিক ব্যবস্থা কেননা এতে সংখ্যাগুরু নির্বোধদের প্রয়োজন হয়না, জনগন ক্ষমতার উত্স হয়না, এতে কোন শিরকের সুযোগ নেই এবং এটি জুয়া বা অনিশ্চিত না। বাদশাহ বা খলিফা যদি অত্যাচারি হয়ে থাকে তবে প্রজাদের প্রতিবাদ করাও ফরজ আঈন।
* খিলাফত কি কি?
উত্তর: রাজতন্ত্র খিলাফতের একটি রুপ যেখানে খলিফারুপে বাদশাহ থাকবে। অর্থাত্ এক নায়কতন্ত্র... তবে অবশ্যই সত্ ও যোগ্য প্রার্থী নিবার্চনে সমাজের বুদ্ধিমান ব্যক্তিদেরই থাকতে হবে।
তাই গনতন্ত্র কখনই ইসলাম সমর্থিত নয়, আর গনতন্ত্রের পক্ষ নিয়ে এখানে বিতর্ক করতে এলে কুরআনের আয়াত অস্বীকার করতে হবে, যা একজন মুসলিম কখনই করবেনা। আশা করি সকলেই বুঝতে পেরেছেন, আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১৫৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন