মাহমুদুর রহমানের মন্তব্য প্রতিবেদনঃ ভারতের ট্রানজিটে বাংলাদেশের ফায়দা না.......
লিখেছেন লিখেছেন আধারের পথ ১১ মে, ২০১৩, ০২:৫৪:৫৫ দুপুর
...আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার প্রসঙ্গ না তুললে আমার রচনাটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা ইতিহাসের অন্যতম ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড শুরু করলে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী উদ্বাস্তু ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। দীর্ঘ নয় মাস ধরে ভারতের জনগণ এবং সে দেশের সরকার শরণার্থীদের বাসস্থান এবং খাদ্যের ব্যবস্থা করে আমাদের অবশ্যই গভীর কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছে। অধিকন্তু, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহেও ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এগুলো সবই ইতিহাস। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত হওয়ায় ভারতও কি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক দিক দিয়ে লাভবান হয়নি? জন্মাবধি পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে চরম বৈরী সম্পর্ক বিদ্যমান না থাকলে ১৯৭১ সালে আমরা কি ভারতের কাছ থেকে একই ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা লাভ করতাম? প্রকৃত ঘটনা হলো, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা কোনোভাবেই একতরফা দয়া-দাক্ষিণ্যের কোনো বিষয় ছিল না। স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা করার জন্য আমরা যেমন ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ, একইভাবে নেহরু ডকট্রিনের আলোকে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্য পূরণে ১৯৭১ সালে আমাদের ভূমিকার জন্যও ভারতের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। চল্লিশ বছর আগে এক মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা প্রদান কোনো অবস্থাতেই ভারতকে আমাদের বিরুদ্ধে পানি আগ্রাসন চালানো, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নির্বিচারে বাংলাদেশী নাগরিককে বিভিন্ন উপায়ে হত্যা, আমাদের জমি দখল, বাংলাদেশের চারদিকে অবমাননাকর কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, বাংলাদেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সীমান্ত ঘেঁষে মাদকের কারখানা নির্মাণ এবং আমাদের মাতৃভূমির বুক চিরে তাদের পণ্য ও সামরিক সরঞ্জাম পরিবহনের ট্রানজিটের জন্য রাস্তা নির্মাণের নামে পুরো দেশটিকেই টুকরো টুকরো করার বৈধতা প্রদান করে না। সত্য কথা হলো, একমাত্র ভারতের প্রয়োজন মেটাতেই ট্রানজিট, বাংলাদেশের এখানে কোনোরকম ফায়দা নেই। ভারতের কাছ থেকে সুদে টাকা ধার করে আমরা যে রাস্তা নির্মাণ করব, তার ওপর দিয়ে প্রধানত ভারতীয় যানবাহন সেদেশের পণ্য ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে চলাচল করবে। ওই রাস্তা দিয়ে আমাদের কোনো পণ্য ভারতের বাজারে প্রবেশ করবে না। একমাত্র ভুটান এবং নেপাল ছাড়া অন্য কোনো দেশের সঙ্গেও ট্রানজিটের রাস্তা দিয়ে বাংলাদেশের কোনো কানেক্টিভিটিও তৈরি হচ্ছে না। ভারতের মধ্য দিয়ে আমরা সড়কপথে চীন, পাকিস্তান যেতে পারলে তবেই তাকে প্রকৃত আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি বলার সুযোগ ছিল। উপরন্তু ট্রানজিট দেয়া হলে বাংলাদেশ ক্রমেই ফিলিস্তিনিকরণ প্রক্রিয়ার দিকে ধাবিত হবে। দেশের জনগণকে নির্বোধ বিবেচনা করার উন্নাসিকতা শাসকশ্রেণী যত তাড়াতাড়ি পরিহার করতে পারেন ততই তাদের জন্য মঙ্গল। যারা বাংলাদেশকে ‘ট্রানজিটের দেশ’ নামকরণ করে হেয় করেন কিংবা কানেক্টিভিটির বিভ্রান্তিকর তত্ত্ব ফেরি করে ভারতের ট্রানজিট জায়েজ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন, ইতিহাস তাদের একদিন নির্ভেজাল রাষ্ট্রদ্রোহী রূপেই বিবেচনা করবে। বাংলাদেশকে অধিকৃত ফিলিস্তিনের দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি থেকে রক্ষা করতে হলে এই ট্রানজিটের বিরুদ্ধে একাত্ম হয়ে রুখে দাঁড়ানো প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের কর্তব্য। মনে রাখতে হবে, চুক্তি একবার স্বাক্ষরিত হয়ে গেলে সেটি রদ করা দুর্বল দেশের পক্ষে প্রায় অসম্ভব প্রয়াস। ১৯৭২ সালে সম্পাদিত বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তির অশুভ পরিণতি দেখার পরও আমরা যদি নির্বিকার ঘরে বসে থাকি, তাহলে একটি quasi-independent রাষ্ট্রের প্রায়মুখাপেক্ষি নাগরিক হওয়াই এদেশের জনগণের চূড়ান্ত বিধিলিপি।
From: http://jailtojail.blogspot.com/2011/09/blog-post_4729.html
বিষয়: বিবিধ
১৬১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন