হিজরী ক্যালেন্ডার ও ইবাদতের দিনক্ষণ

লিখেছেন লিখেছেন মুিজব িবন আদম ০৬ জুন, ২০১৪, ০৩:০৬:০১ দুপুর

ইসলামের নীতিতে রোজা, হজ্ব, ঈদ প্রভৃকির জন্য দিন গণনা এবং নামাজের ওয়াক্ত, ইফতার, সিহরী প্রভৃতির জন্য সময় বা ক্ষণ জানা দরকার। আল্লাহ সূর্য ও চাঁদের মাধ্যমে দিন ও ক্ষণ গণনার জন্য বলেছেন। সূরা বাকারার ১৮৯ এবং সূরা ইউনুসের ৫ নং আয়াত এক্ষেত্রে প্রণীধানযোগ্য।

এজন্য ইবাদত করতে দিনক্ষণ গণনায় সূর্য ও চাঁদের হিসাব করতে হয়। নবী (স‍) সাহাবাদের সেভাবেই শিখিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা) এর সময় ৬৩৮ খৃষ্টাব্দে মদিনার মুসলিম পন্ডিতবর্গ হিজরী ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করেন, যার গণনা প্রায় ১৬ বছর পেছনের ৬২২ খৃষ্টাব্দের ১৬ জুলাই থেকে শুরু করা হয়। অর্থ্যাৎ নবী (স) যেদিন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় পৌছলেন সেই দিনটিকে হিজরী সালের প্রথম দিন ( ০১ মহররম) নির্ধারন করে হিজরী ক্যালেন্ডার প্রণীত হয়েছিল। অত:পর তা মদিনার হিসাব অনুযায়ী চান্দ্র মাসের আলোকে অনুসৃত হতে থাকে।

কিন্তু পরবর্তীতে বিস্তৃত ভৌগলিক এলাকায় ইসলাম বিকশিত হলে হিজরী ক্যালেন্ডার অনুসরণে মতপার্থক্য দেখা দেয়। কেননা পৃথিবীর সকল স্থান থেকে চাঁদকে একই সময় দেখা সম্ভব নয়। নতুন চাঁদ (হিলাল) দেখা নিয়ে কয়েকটি মতামত নিম্নরূপ:

১/ প্রত্যেক বক্তি নিজে চাঁদ দেখা বা নিকটস্ত কারও দেখার উপর নির্ভর করা।

২/ স্থানীয় জনপদের কেউ চাঁদ দেখলে তা প্রচার ও জনপদের সবাই সেটা অনুসরণ করা।

৩/ মক্কা-মদিনায় চাঁদ দেখা গেলে ও তার নির্ভরযোগ্য খবর জানা গেলে অনুসরণ করা।

৪/ রাষ্ট্র তার ভৌগলিক সীমানায় চাঁদ দেখার ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক তা গণমাধ্যমে প্রচার ও জনগন সরকারের ঘোষনা অনুসরণ করা।

এসব মতামতের প্রত্যেক পক্ষেরই যুক্তি আছে। তবে ৪র্থ মতামতটি রাষ্ট্র কাঠামোতে আবদ্ধ থাকায় তার সমস্যাগুলো নিম্নে সন্নিবেশিত হল।

১। রমজান: আবদুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বণিত - "চাঁদ দেখে রোজা রেখো এবং চাঁদ দেখে রোজা ভাংগো এবং মেঘের কারনে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাসের ৩০ পূর্ণ কর" - হাদিসটি কোন দেশের ভৌগলিক সীমারেখায় বদ্ধ করার সুযোগ নেই। ইমাম আবু হানিফা (র) এর মতানুসারে মাসরেক থেকে মাগরিব পর্যন্ত যেকোন স্থানে কোন মুমিন চাঁদ দেখলে তা সকল মুমিনের জন্য অনুসরণীয়। তারপরও রাষ্ট্র কাঠামোতে একে আবদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে দুনিয়ার সব মুসলমান একই দিন জুমা পড়লেও একই দিনে রোজা রাখে না। কেউ কেউ বিভিন্ন স্থানের সময়ের ব্যবধানকে এর কারন হিসেবে দেখেন। কিন্তু একই জনপদ দুই রাষ্ট্রে ভাগ হয়ে গেলে (যেমন, দিনাজপুর বাংলাদেশ ও ভারতে বিভক্ত হয়ে আছে) সময়ের ব্যবধান না থাকা সত্বেও রোজা শুরু হয় ভিন্ন দিন। এ বিষয়টি বিবেচনার দাবী রাখে।

২। লাইলাতুল কদর: মহিমান্বিত এ রাতে কুরআন নাজিল হয়। হাদিস মোতাবেক রমাদানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে আমাদেরকে সেই লাইলাতুল কদর তালাশ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সীমানায় হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরী করে প্রায় বছরই যখন মক্কায় জোড় রাত তখন বাংলাদেশে বেজোড় রাত তালাশ করা হয়।

৩। ঈদ: ঈদের দিনে রোজা রাখা হারাম। রাষ্ট্রীয় সীমানার বিবেচনায় হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরী করে যখন মক্কায় ঈদ তখন বাংলাদেশে রোজা। শুধু পশ্চিমের মক্কায় কেন আমাদের পূর্ব দিকের দেশ জাপান, ইন্দোনেসিয়া ইত্যাদি দেশের মানুষ ঐদিন ঈদ পালন করছে। তখন আমরা রোজা রেখে হারাম কাজ করছি কিনা তা নিখুতভাবে নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।

৪।হজ্ব: হিজরী ৯ই জিলহজ্ব সারা দুনিয়া থেকে মুসলমানরা এসে আরফাত ময়দানে হাজির হন। এদিনে রোজা রাখার গুরুত্ব ও সওয়াব অনেক। কিন্তু বাংলাদেশের ৯ই জিলহজ্ব আরফাত ময়দানে কেউ অবস্থান করে না। কেননা মক্কার হিসেবে সেদিন ১০ই জিলহজ্ব। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় বিবেচনায় হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরী করে মীনার দিবস (০৮ জিলহজ্ব) থেকে তাকবীরে তাসরীক পাঠ হতে বঞ্চিত হন অনেক মুমিন।

৫। আশুরা: ঐতিহাসিকভাবে এ দিবসে আল্লাহর কুদরতের হাজার নিদর্শন রয়েছে। যেমন, মুসা (আ) লোহিত সাগর পাড় হন, নুহ (আ) এর নৌকা মহাপ্লাবন শেষে পাহাড়ে মাটির নাগাল পায়, ইউনুস (আ) মাছের পেট থেকে বের হন, ইউসুফ (আ) কুয়ার ভেতর থেকে উদ্ধার হন। মহররম মাসের ১০ তারিখটিও রাষ্ট্রীয় হিজরী ক্যালেন্ডারের কারনে হারিয়ে ফেলি। আশুরার রোজা রাখি ভিন্ন দিনে।

এ অবস্হার সমাধান দরকার। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন।

বিষয়: বিবিধ

২১৩৭ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

231356
০৬ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৪
পললব লিখেছেন : লোকাল টাইমই বিবেচনা করা উচিত্‌। আমরা টিভিতে সরাসরি কাবা শরিফের সকল নামাজ আদায় করা দেখতে পায়। তাহলে কি আমরা একই সময়ে ঐ সালাত আদায় করব???
০৭ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:৪১
178568
মুিজব িবন আদম লিখেছেন : একই সময় সালাত আদায় নয়। স্থানীয় সময়কে বিবেচনা করেই সালাত আদায় করতে হয়। আমার বক্তব্য সময় নিয়ে নয়, বরং তারিখ নিয়ে। সময় ও দিন এক মাপে ধরলেই যত অসুবিধা। তাই সময় ও দিন সম্পর্কে নিখুত চিন্তার অবকাশ আছে। দরকার কেবল চিন্তাশীলদের অবদান।
০৮ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৫
179051
পললব লিখেছেন : সময় দিয়েই কিন্তু তারিখ নির্ধারণ করা হয়। আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন, বিবিসি কিংবা সিএনএন রাত ১২টার পর গুড মর্নিং বলে খবর পড়া শুরু করে দেয়, যখন আমরা ঐ সময়টাকে রাত বলি। আরো অবগত আছেন ১২টার পর পরই কিন্তু তারিখ পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ কোনটা রাত আর কোনটা দিন স্পষ্ট নয়। কিন্তু ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুসারে রাত এবং দিন স্পষ্ট করা আছে। সূর্য ডোবার পরেই রাত এবং সুর্য উঠার পরই দিন শুরু হয়। তাছাড়া হিজরি ক্যালেন্ডারে তারিখ শুরু হয় রাত দিয়ে। এই সহজ হিসাবটা সহজভাবে অনেকেই নিতে পারে না। তাঁরা সৌরভিত্তিক তারিখ নিয়েই ব্যস্ত। আমাদের কথিত কিছু ইসলামিক স্কলাররা সৌরভিত্তিক তারিখ গণনা করে ইসলামের নিজস্ব তারিখকে এক করতে গিয়ে সহজ হিসাবটাকে জটিল করে ফেলেছে। তাই হিজরির তারিখকে সৌরভিত্তিক তারিখের সাথে তুলনা না করাই শ্রেয়। ধন্যবাদ।
231386
০৬ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সুবিধার জন্য রাষ্ট্রভিত্তিক দিন নির্ধারন করা হয়। এতে কোন সমস্যা আছে বলে এখনও বিশেষজ্ঞ আলেমগন প্রশ্ন উত্থাপন করেননি। সাধারনভাবে কোন একজন মুমিন এর সাক্ষই সকলের জন্য গ্রহনযোগ্য হলেও সময় এর ব্যাবধানের কারনে তা প্রযোজ্য হতে পারেনা। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় মুহুর্তেই সারা বিশ্বে সংবাদ পেীছান সম্ভব। কিন্তু একটু ভেবে দেখলে বুঝা যায় মক্কা-মদিনাতে যদি চাঁদ দেখা যায় সে সংবাদ মালেয়শিয়া ইন্দোনেশিয়াতে পেীছাতে সেখানে সেহরির সময় পার হয়ে যাবে।
231818
০৭ জুন ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৫
মুিজব িবন আদম লিখেছেন : রাষ্ট্রভিত্তিক দিন নির্ধারন করাতে কিছু সুবিধা আছে। তাই বলে এতে কোন সমস্যা নেই মনে করাও সঠিক নয়। এবিষয়ে বিশ্ব মুসলিম সমাজ বিভিন্ন মতভেদে বিভক্ত হয়ে আছে। যে কারনে বাংলাদেশের মত একটি ক্ষুদ্র দেশে একাধিক দিনে ঈদ পালিত হয়। সমস্যাকেই যদি চিহ্নিত করতে না চাই তবে সমাধানও কেউ খুজবে না। বিশেষজ্ঞ আলেমগন এ বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করবেন সেই প্রত্যাশায় থাকলাম। আল্লাহ আমাদের সহায় হন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File