মুসলমানদের বড় ঈদ (মিলাদুন্নুবী) - একটি নিবেদন
লিখেছেন লিখেছেন মুিজব িবন আদম ১২ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:১০:৩১ সন্ধ্যা
মুসলমানদের বড় ঈদ (মিলাদুন্নুবী) - একটি নিবেদন।
প্রায় ১৮ বছর আগের কথা। তখন আমি ভারতের IAT পুনাতে পেশাগত বিষয়ে প্রশিক্ষনরত। মেরিন প্রোপালশন সিস্টেমের PLC Module নিয়ে কাজে ব্যাস্ত।
এসময় একদিন আমার একজন ক্লাশমেট (মনোজ বাজপেয়ী) এসে বললো, "Tomorrow, we want a big dinner party from you ."
আমি বললাম, OK. But why tomorrow? What is the problem at next weekend? It is not possible tomorrow.
আমার কথা শুনে সে যেন খুবই অবাক হলো। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল - Why! Because, tomorrow is your Eid. Did you forget?
- কাল ঈদ? Tomorrow Eid!
এবার আমি অবাক হলাম।
আমার অবাক হওয়া দেখে, মনোজ অপ্রস্তুত হয়ে আমাকে এক মিনিট অপেক্ষা করতে বলে কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেল।
আমি নিজের কাজে মন দিলাম।
মিনিট দশেক পরে সে রানাকে নিয়ে এসে হাজির।
রানা উড়িস্যার লোক, ধর্মে খ্রীষ্টান। ওদের ভাষা অনেকটা বাংলার মতই।
সে এসে বলল - কাল ডিনার খাওয়ানোতে কোন ফাঁকি চলবে না।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ও তখন বলল - কাল তোমাদের বড় ঈদ। মনে করেছো আমরা খবর রাখি না?
ওর কথার উত্তরে আমি শুধু বললাম - মানে?
এতে রানা ব্যাখ্যা দিল - "Christmas Day যেমন আমাদের বড়দিন, কাল তেমনি তোমাদের যে বড় ঈদ।"
ক্ষণিকের জন্য নিজেকে বড়ই অজ্ঞ মনে হল। বুঝার চেষ্টা করলাম। একটু মাথা খাটাতেই ব্যাপারটি পরিস্কার হয়ে গেল। কাল ১২ই রবিউল আউয়াল। তারমানে, এরা মহানবীর জন্মদিনের কথা বলছে। ঈদে মিলাদুন্নবীকে এরা বড় ঈদ বুঝাচ্ছে।
তারপর এতগুলো বছর পেড়িয়ে গেছে। আজও রবিউল আউয়াল মাস এলে আমাকে বিষয়টা ভাবায় এবং ভোগায়। কেননা ওদের ঐ চিন্তার উপসংহার টানতে পারিনি। পারিনি এজন্য যে, মুসলিম হয়েও আমরা অনেকে তাদের মতই ভাবি বা ভাবতে চাই। অথচ যা মহানবী (স এর তীরধানের প্রায় ছয় শত বছর পর শাসক কর্তৃক প্রবর্তীত। [ Note: This act was first performed by a ruling king, Muzafarudeen Ibn Arbal in the Muslim area of Mosul, Iraq in 604 Hijri (Dowlul Islam, p104)]
হাদিসের সূত্র ধরে সর্বজন স্বীকৃত যে, নবী (স জন্মগ্রহন করেছেন সোমবার। কিন্তু তরিখের ব্যাপারে রয়েছে নানা মত। এক্ষেত্রে ২, ৯ বা ১২ রাবউল আউয়াল সহ আরও অনেক ভেদাভেদ। এ নিয়ে দুনিয়া জুড়ে প্রচুর গবেষণাও হয়েছে। এখানে কেবল বিষয়টি সহজ করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত "হযরত রাসুলে করীম (সা - জীবন ও শিক্ষা" বইটির ২০ তম পৃষ্ঠা এবং আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী প্রণীত "আর রাহীকুল মাখতুম" বইটির ৬২ তম পৃষ্ঠা দেখার অনুরোধ করছি।
তবে ভেদাভেদ নেই যে তারিখটি নিয়ে, তাহলো নবী (স এর মৃত্যুদিবস (১২ই রবিউল আউয়াল), অর্থাৎ তাঁর নিশ্চিত মৃত্যুদিবসে বড় ঈদ পালন। এটা কী মহানবীর প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, না মহব্বত? এটা আসলে কী??? রহমাতুল্লিল-আল-আমীন হিসেবে এই জিনিষ কি প্রাপ্য?
আমরা কোন প্রিয়জনের মৃত্যুদিবসে কি উৎসব করি? আপনারা কেউ কি করেন? আসলে প্রিয়জনের মৃত্যুদিবসে উৎসব করার জন্য কোন বোকাকেও পাওয়া যাবে না। তাহলে অমরা কি বোকাদের চেয়েও বোকা? নইলে শোকের দিনে এত আনন্দ আসে কিভাবে? যে চোখ অশ্রু সিক্ত থাকার কথা, তাতে উৎফুল্লতা আসে কোথা থেকে? কিভাবে এমন হতে পারে? দুনিয়ার সবচেয়ে বেশী প্রিয় মানুষটির মৃত্যুদিবসে বিশাল এক কষ্ট বুকের মধ্যে চেপে রেখে দেখতে হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। সেই সাথে শিরেক হবার ভয়ে মনটা আরও কেঁদে ওঠে।শিরেক। শিরেক। শিরেক।
একজন প্রকৌশলী হয়ে ইসলামিক বিষয়ে ফতওয়া দেবার কোন অধিকার আমার নেই। কেবল নিরবে নিভৃতে আল্লাহর কাছে কান্না করা ছাড়া কিছুই করতে পারি না।
তাই বিজ্ঞ আলেম সমাজের কাছে একান্ত বিনীত অনুরোধ, আপনারা বিষয়টি নিয়ে একটি সুন্দর সমাধানের জন্য কিছু করুন। মহানবী (স কে সঠিক সম্মান ও মর্যাদা দিতে মহান আল্লাহ যেন আমাদের সবার সহায় হন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আফসোস! মুসলমানেরা এই পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে দিলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন