ফিরে দেখা - প্রগতিশীল বনাম প্রতিক্রিয়াশীল

লিখেছেন লিখেছেন মুিজব িবন আদম ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৫:৪২:১৮ সকাল

১৯৮০ সাল। বরিশাল বি এম কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। বাবা চান ছেলে মন দিয়ে পড়াশুনা করুক। এসএসসির মত এইচএসসিতেও ভাল রেজাল্ট করে বুয়েট বা মেডিকেলে

ভর্তি হোক।

কিন্তু সদ্য প্রাপ্ত যৌবন। রক্তও গরম। বুকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্ন। কেবল মাসিমার ত্যাগী জীবনের আর্দশ সামনে। মনরমা বসু - মাসিমা। বরিশালের প্রলেতারিয়েত আন্দোলনের পুরধা। সেই সাথে আরও এক বিপ্লবী সহপাঠীর প্রেরণা। সব মিলিয়ে প্রগতিশীল রাজনীতির হাতেখড়ি।

তবে এইসএসসি পরীক্ষায় ইজ্জতটা থাকে। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায়ও টিকে যাওয়া। তাই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে পুরোপুরি সামিল হয়ে বীর দর্পে এগিয়ে চলা।

এর মধ্যে আসে ১৯৮৩ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারী। চোখের সামনে নিহত হয় - সেলিম ও দেলওয়ার। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি স্তর হিসেবে স্বৈরাচার বিরোধী

আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়া। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে প্রগতিশীল দাবীদার। একসময় ছাত্র ইউনিয়ন বুয়েট শাখার সভাপতি। বেশ কিছু বন্ধুরা আনাতলি

মুজিবভ বলে ডাকতো। এখনও দু-এক জনে তা বজায় রেখেছে।

এর মধ্যে আদমজীতে নিহত হলেন শ্রমিক নেতা তাজুল। চেতনায় বাসনা জাগলো তাজুল হবার। কখনো কখনো বিপ্লব স্পন্দিত বুকে মনে হতো আমিই তাজুল। তাই সার্বক্ষণীক

কমিউনিস্ট কর্মী হয়ে বিপ্লব করতে হবে, এমন প্রস্তুতি।

এরই মধ্যে শুরু হলো মিখাইল গর্বাচেভের নতুন রাজনীতি। মোচড় খেতে লাগলো বিশ্ব ব্যবস্থা। চোখের সামনে হাজির হলো বিশ্বজুড়ে সমাজতন্ত্রের ধস। প্রথমে মানতে পারছিলাম না। ধীরে ধীরে পরিস্কার হতে লাগলো ফাঁকা বেলুনের দশা। কাটতে লাগল বিপ্লবের মোহ। শুরু হলো প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন। তবুও অনুরাগ ছিল ছাত্র

ইউনিয়নের প্রতি। এ এক মমতা। যা দীর্ঘদিন লালন করেছি। স্ত্রী এ নিয়ে সময় জ্ঞান দিয়েছে দু-এক বার। খোঁচা দিলেও গা করিনি। মনে করতাম একটা আদর্শ নিয়ে অন্তত যৌবনের মূল্যবান কিছু সময় ব্যয় করেছি। হতে পারে কালের বিবর্তনে তা ভুল প্রমানিত। এরকম কত ভুলইতো মানুষ কখনো কখনো ঠিক মনে করে।

তবে আজ আর নেই সেই তারুণ্য। নেই কোন স্বপ্ন। শুধুই বাস্তবতা। আর তার সাথে বাস্তব অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন সমাজের মানুষের জীবন দেখার অভিজ্ঞতা। যা আমাকে

বদলাতে থাকে প্রতিনিয়ত। বদলাতে গিয়ে ৩৩ বছর আগে পড়া মুনীর চৌধুরীর রক্তাক্ত প্রান্তর কাটার মত দাগা দেয়। মনে পড়ে - মানুষ মরে গেলে পচে যায়। আর বেঁচে থাকলে বদলায়। কারনে অকারনে বদলায়।

কিন্তু আমার পরিবর্তন অকারনে হয়নি। সময় পেলে কোন একদিন হয়তো বিশদ বলবো।

এখন শুধু বলি, ২০১১ সালে বুয়েটের গ্রুপ মেইলে হজ্বে যাবার কথা লিখলে কেউ বলেছিল - আনাতলি মুসলমান হয়েছে? কেউ বলেছে মাসাল্লাহ। আরও কত মতামত!

সে যাক, সেই প্রগতিশীল দাবীদারের এখনকার সবচেয়ে প্রিয় বই হচ্ছে কুরআন। সকাল সন্ধা কুরআন না পড়লে মন খারাপ হয়। এবয়সে এসে কুরআন উপলব্ধির জন্য আরবী শেখার ঐকান্তিক প্রায়াশ। তাহলে কি আমি এখন প্রতিক্রিয়াশীল? কুরআন থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবন পরিচালিত করলেই তাকে প্রতিক্রিয়াশীল বলা কি ন্যায় সংগত? কুরআন অনুযায়ী হিসেব করে যাকাত দিলে কি একজন মানুষ প্রতিক্রিয়াশীল? কুরআন অনুযায়ী বাবা, মা, ভাই, বোন, প্রতিবেশী, আত্মিয়সজনদের হক আদায় করলে কি মানুষ প্রতিক্রিয়াশীল হয়? যদি সব ভাল গুন সত্যেও একজন মানুষকে প্রতিক্রিয়াশীল বলা হয়, তবে আমি প্রগতিশীলতা বর্জন করে সেই প্রতিক্রিয়াশীল হলাম। এবং মহান আল্লাহ যেন কুরআনী জীবন চালিত অবস্থায় মৃত্যু দান করেন। সেই কামনায় অপেক্ষমান।

বিষয়: বিবিধ

১৮৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File