কষ্টে কাটে নষ্টপ্রহর, পর্ব- ১৬: তথ্য-প্রযুক্তি ও আমাদের উন্নয়ন
লিখেছেন লিখেছেন মাহরুফ চৌধুরী ২৩ মে, ২০১৩, ০৫:৫৩:১১ সকাল
ষোল: তথ্য-প্রযুক্তি ও আমাদের উন্নয়ন
বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি ছাড়া আমাদের জীবনকে আমরা কল্পনাই করতে পারি না। প্রযুক্তি মানুষের দৈনন্দিন কর্মকান্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই স্মেলসরের মতে, ‘আধুনিকতা’ বিভিন্ন ধরনের আন্ত:সম্পর্কযুক্ত প্রযুক্তিগত, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রক্রিয়াকে ধারণ করেছে যা, ‘… in the realm of technology, the change from simple and traditionalized techniques towards the application of scientific knowledge’ [Smelser, 1968:126]। আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় প্রযুক্তির অনিবার্যতাকে আমাদের স্বীকার করতেই হবে। সেই জন্যেই, ‘… we can say that the modern world has been shaped by technology. It tumbles from crisis to crisis; on all sides there are prophesies of disaster and, indeed, visible signs of breakdown’ [Schumacher, 1973:122]।
প্রযুক্তি সামাজিক প্রক্রিয়া হিসেবে যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখব যে প্রযুক্তি সামাজের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা এবং অবস্থানের মধ্যে প্রোথিত। বিষয়টা একটু খোলাসা করে বলা যায়, প্রযুক্তি একটিকে সেই সমাজকেই প্রতিফলন করে যেখানে সেটা জন্ম বা উদ্ভব হয়েছে এবং সেই সমাজকেই প্রভাবিত করে। প্রযুক্তি সমাজের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে অন্যান্য প্রভাবকের মধ্যে একটি। তাই এন্ডারসনের মতে, যখন প্রযুক্তি একটি সমাজ থেকে অন্য সমাজে স্থানান্তরিত বা গ্রহণ করা হয়, তখন এটা সেই সমাজের ‘social values, institutional forms and culture’ [Anderson, 1985:57]-কেই প্রতিফলিত করে যে সমাজে থেকে এটাকে গ্রহণ করা হয়েছে। তাই বলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রকৃতপক্ষে নেতিবাচক নয় যদিও তা অনেক ক্ষেত্রেই সাংস্কৃতিক চলমান ধারা ব্যাহত করে থাকে। এটা নির্ভর করে প্রযুক্তির ব্যবহারের উপর। যেমন, ‘Technologies which gather women in certain areas, such as grain mills, can facilitate social activity and opportunities for education. For example, women in Asia have received literacy training while they wait for their rice to be ground at mills and women in Africa have received nutrition training while waiting in line at clinics’ [Anderson, 1985:66]।
প্রকৃতপক্ষে কেউই কখনো প্রযুক্তির উপর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে না। কিন্তু এটাকে হয়ত কিছুটা মানিয়ে নিতে কিংবা স্বপক্ষে ব্যবহার করতে সক্ষম হবে এটা মেনে নিয়েই যে প্রযুক্তির সাথে আরো অনেক কিছুরই সম্পর্ক রয়েছে। তাই সামগ্রিক উন্নয়নের কাজ সাধিত হয় একটি আন্ত:সম্পর্কিত বিষয়াবলীর (সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত বিষয়াবলী) ব্যবস্থার মধ্যে যেখানে একটি বিষয়ের উপর কাজ করলে অন্য বিষয়ের উপর তার প্রভাব পড়বে। সে যাই হোক, প্রযুক্তির ব্যবহারে প্রয়োজন জ্ঞানের এবং শেখার সক্ষমতা। এদুটো জিনিসের মধ্যে দুমুখী সম্পর্ক রয়েছে। আমরা শিখি কারণ একটা অবস্থার সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান আছে বলে। অপর দিকে, আমরা আমাদের জ্ঞানকে বৃদ্ধি করি শেখার মাধ্যমে। অতএব, শেখা ও জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য আমাদের প্রয়োজন তথ্যের। আর বর্তমান সময়ে সে তথ্য আমরা লাভ করি ‘তথ্য-প্রযুক্তি’র মাধ্যমে। সেজন্যই বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টের ভূমিকায় বলা হয়েছে, ‘… economies are built not merely through the accumulation of physical capital and human skills, but on a foundation of information, learning and adaptation. Because knowledge matters, understanding how people and societies acquire and use knowledge- and why they sometimes fail to do so- is essential to improving people’s lives, especially the lives of the poorest’ [World Bank, 1999:iii]। গরীব লোকজনদের গরীব হওয়ার পিছনে শুধু অর্থনৈতিক অবস্থা নয়, জ্ঞানীয় অবস্থাও দায়ী- ‘Poor countries- and poor people- differ from rich ones not only because they have less capital but because they have less knowledge’ [World Bank, 1999:1]। তাই অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতার সাথে জ্ঞান বেশী মাত্রায় সম্পর্কযুক্ত। পক্ষান্তরে বলা যায় যে, গরীব লোকজন যে জ্ঞান রাখে সেটাকে মূল্যায়ন করা হয় না, কারণ তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতা নেই।
সাম্প্রতিক সমাজের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো কারখানায় পণ্য উতপাদনের উপর নয়, ক্ষমতা ও সম্পদ নিধারিত হয় তথ্যে প্রবেশাধিকারের উপর তথ্য নির্ভর সমাজে- ‘the global moulds the local, and electronic flows shape the economy through relations between units that are far away from each other in terms of space’ [Borja and Castells, 1997:1]. তাই এটা বোঝা দরকার যে, জ্ঞান থাকা এক কথা, আর সেই জ্ঞানকে কাজে লাগানো আরেক কথা। কিভাবে জ্ঞানকে ব্যবহার ও সংগঠিত করা কিংবা মানিয়ে নেয়া যায় তার জন্যে বিভিন্ন ধরনের জ্ঞানের প্রয়োজন যাকে আমরা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বলতে পারি। এ প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তাই একটি জাতির অর্থনৈতিক অগ্রগতির একটি অনিবার্য নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত রূপান্তর এমনভাবে হচ্ছে যে, তথ্য, বুদ্ধি এবং চিত্র স্থানান্তরিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী বহুজাতিক করপোরেশনের মাধ্যমে যার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে জাতিগত রাষ্ট্রের এবং সাংস্কৃতিক রূপ তৈরীতে।
‘… cultural differences will loom larger from now on and that all societies will have to pay more attention to culture as they deal not only with internal problems but with the outside world… it is now vitally important to develop a deeper understanding of what makes… cultures distinctive and functional, since the issues surrounding international competition, political and economic, increasingly will be cast in cultural terms’ [Fukuyama, 1995:5-6].
তথ্য গ্রহণ ও ব্যবহার হলো জ্ঞান অর্জনের এবং সৃজনের একটি কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু। পক্ষান্তরে জ্ঞান তথ্যের উতপাদন করে যেটা আবার জ্ঞান তৈরীতে সহায়ক হয়। বর্তমান বৈশ্বায়ন প্রক্রিয়া এধরণের তথ্যের সরবরাহ এবং তথ্যকে প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রত্যাশা করে যা কিনা কোন অবস্থাতেই তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া সম্ভব নয়।
তথ্যসূত্র:
Anderson, M. B. (1985). Technology transfer: Implications for women, in Overholt, C., Anderson, M. B., Cloud, K. and Austin, J. E. (eds) Gender roles in development projects: A casebook, pp. 60-68. West Hartford CT: Kumarian Press.
Borja, J. and Castells, M. (1997). Local and global management of cities in the information age. London: Earthscan.
Fukuyama, F. (1995). Trust: The social virtues and the creation of prosperity. Harmondsworth: Penguin.
Schumacher, F. E. (1973). Small is beautiful: A study of economics as if people mattered. London: Blond and Briggs.
Smelser, N. J. (1968). Towards a theory of modernization, in Smelser, N. J. (eds) Essays in sociological explanation. Englewood Cliffs, NJ: Prentice-Hall.
বিষয়: বিবিধ
১৩০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন