কষ্টে কাটে নষ্টপ্রহর, পর্ব- ১১: সংস্কৃতি-ভিত্তিক আত্মপরিচয় ও প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় ঐক্য

লিখেছেন লিখেছেন মাহরুফ চৌধুরী ১৪ মে, ২০১৩, ১২:০৭:৩৪ রাত

এগার: সংস্কৃতি-ভিত্তিক আত্মপরিচয় ও প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় ঐক্য

একুশ শতকের প্রারম্ভে একটি ধারণা প্রত্যক্ষ করা যায় যে ‘সংস্কৃতি-ভিত্তিক’ সামষ্টিক আত্মপরিচয় আমাদের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর ভীত নাড়িয়ে দিচ্ছে, এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতাকে হুমকীর সন্মুখীন করছে। এটাকে অনেকেই মনে করেন স্নায়ু-যুদ্ধের অবসানে নিয়ন্ত্রণের ধারার পরিবর্তনের ফল হিসেবে, এবং গোষ্ঠীগত ‘আদিম-আত্মপরিচয়’-এর প্রতি আনুগত্যের পুন:রুত্থান হিসেবে। সেই যাই হোক, ব্যাপক আলোচনার আগে আমাদেরকে ‘জাতি’ ও ‘রাষ্ট্র’-এর ধারণার মধ্যে সম্পর্ক এবং ‘জাতীয়তাবাদ’ ও ‘রাষ্ট্রীয় দেশপ্রেম’-এর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা দরকার। সেই সাথে আমাদেরকে ‘উপজাতীয় জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘নৃতাত্ত্বিকতা’-র ধারণা নিয়েও আলোচনা করা দরকার।

‘নৃতাত্ত্বিকতা’ (Ethnicity) শব্দটি কখনও কখনও ব্যবহৃত হয়,

‘a group with a subjective belief in its common origin(hence the term ethno-nationalism). However, the way in which ethnicity emerged as a concept in the modern social sciences initially separated it from discussion of nationalism. It was used either to refer to minorities within a larger group, or to refer to identities in a very general sense (such that all people had ethnicity)’ [Allen and Eade, 2000:507]।


উপরের সংজ্ঞার দ্বিমুখী ব্যবহার প্রভাবিত হয়েছে বিভিন্ন তাত্ত্বিকদের দ্বারা যারা মুলত ‘উপায়বাদী’ (Instrumentalist), ‘সম্পর্কবাদী’ (Relationalist) কিংবা ‘আদিমতাবাদী’ (Primordialist)। ১৯৬০-এ দশকের পূর্ব পর্যন্ত পাশ্চাত্যের অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরাই আদিমতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গী থেকে সুকৌশলে নিজেদেরকে দূরে রেখেছে। এর প্রধান কারণ হলো ঔপনিবেশিক সময়ের ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের দাবীর ভিত্তিটি তৈরী করা হয়েছিল বলে। সে যাই হোক, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নৃতাত্ত্বিকতা সম্পর্কে আদিমতাবাদী ধারণা অবশেষে রূপ নিয়েছে ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ (Multiculturalism)-এর আলোচনায়। পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে ‘নৃতাত্ত্বিকতা’ একটি জনপ্রিয় ধারণা হিসেব বিকাশ লাভ করে। এই কারণে বহুসংস্কৃতিবাদকে প্রায়শই সমর্থন করা হতো যা আজ ‘নব্য বর্ণবাদ’ (New Racism)-এর ধারণার বাহক হিসেবে দেখা দিয়েছে সেইসব দেশে।

১৯৯০-এর দশকে স্নায় যুদ্ধের অবসানে বিশ্বব্যবস্থাপনায় নতুন করে নানা কিছুর আমদানী আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা লক্ষ্য করা যায়। আর এই ক্ষমতার পালাবদলের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নৃতাত্ত্বিকতা ও জাতীয়তাবাদের (এমনকি নৃতাত্ত্বিক-জাতীয়তাবাদের) মধ্যে ঐক্যসূত্র স্থাপন এবং ব্যাপকভাবে স্থুল আদিমতাবাদী ব্যাখ্যাগুলোকে অবলম্বন করতে দেখা যায়। বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে, হান্টিংটন এবং ক্যাসেলস-এর মতো দু’জন প্রখ্যাত তাত্ত্বিকে অভিমতকে তুলে ধরা যায় এখানে। এরা উভয়ই আদিম-আত্মপরিচয়ের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে যুক্তি দেন. কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বেশ কিছু পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করলে দেখা যাবে যে এরকমের নৃতাত্ত্বিক আদিমতাবাদের আবাহন করা বিপদগামিতার সামিল [Huntington, 1997; Castells, 1997]।

খন্ডিত কিংবা সাধারণভাবে না দেখে, এই ধরণের আদিম-আত্মপরিচয়গুলোকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন তাদের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের আলোকে। এসব কখনওই সামাজিকভাবে আরোপিত, কিংবা কোন তত্ত্বের একটি বিশেষ উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা উচিত হবে না। কিংবা অবস্থাগুলোকে স্নায়ু যুদ্ধোত্তর সময়ের সহজীকৃত ধারণার মাধ্যমে দীর্ঘ দিনের পুরাতন স্বস্তিপূর্ণ ও শান্তিময় আত্মপরিচয়ের মৌল উপদানগুলোকে প্রতিস্থাপন করা ঠিক হবে না। এতে করে দেখ দিবে প্রবল অস্তিত্বের সংকট। আর তা-ই আমরা দেখছি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে আত্মপরিচয়ের কৃত্রিম উপাদান হিসেবে নিত্য নতুন আরোপিত আত্মপরিচয়ের ধারণায়।

তথ্যসূত্র:

Allen, T. and Eade, J. (2000). The new politics of identity, in: Allen, T. and Thomas, A. (ed). Poverty and development into the 21st century. P. 485-508. Oxford: Oxford University Press.

Castells, M. (1997). The power of identity. Oxford: Blackwell.

Huntington, S. P. (1997). The clash of civilizations and the remaking of the world order. London: Touchstone.

বিষয়: বিবিধ

১৫৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File