কষ্টে কাটে নষ্টপ্রহর, পর্ব- ৯: সংকট কাল ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম
লিখেছেন লিখেছেন মাহরুফ চৌধুরী ১৩ মে, ২০১৩, ০৫:২৪:৫২ সকাল
নয়: সংকট কাল ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম
স্বাধীনতার পর থেকেই আমরা শুনে আসছি যে জাতি একটি সংকট কাল অতিক্রম করছে। সেই সংকট কালের তাত্ত্বিকদের কাছে আমার প্রশ্ন- কবে শেষ হবে আমাদের এ সংকট কাল? সংকট, সংকট আর সংকট- সর্বত্রই সংকট। কিন্তু সেসব সংকট নিরসনে আমাদের উদ্যোগ কোথায়? অর্থের সংকট, খাবারের সংকট, আবাসন সংকট, পোষাকের সংকট, ঔষধের সংকট, বিদ্যুত সংকট, গ্যাস সংকট, পানি সংকট, যানবাহন সংকট, শিক্ষার সংকট, রাজনৈতিক সংকট, সামাজিক সংকট, আর সর্বশেষ আমাদের চারিত্রিক সংকট। তার উপরে রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের যা না ক্ষতি করতে পেরেছে তার চেয়ে অধিক ক্ষতি করছে সামাজিক ও মানবিক দুর্যোগ। স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশ ও জাতির কর্ণধারেরা যদি একটি একটি করে সংকট নিরসনে উদ্যোগী হতেন, প্রচেষ্টা চালাতেন জনগণের দুর্ভোগ কমাতে, তবে স্বাধীনতার এত বছর পরেও দিন দিন আমাদের সংকট অন্তত এত ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যেত না।
শত সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমাদের অনেক অগ্রগতি হয়েছে এবং হচ্ছে। এব্যাপারে কারো সন্দেহ থাকলেও আমি ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত। আমাদের সেই অগ্রগতিটা হয়তো অনেক উন্নয়নশীল জাতির তুলনায় ধীরলয়ের। আমাদের দেশব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির প্রসার ঘটেছে। শিল্প-বাণিজ্য বিস্তার লাভ করেছে। যদিও এসবের অধিকাংশই হয়েছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় এবং তাতে রাষ্ট্রীয় অবদান খুবই অল্প। তবুও সেটা আমাদের অর্জন। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশীরা ছড়িয়ে পড়েছে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজি কল্যাণে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তাই বিশ্ব-বাজারের শ্রমের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে আমাদের জনশক্তিকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তরিত করে বিশ্বের শ্রম-বাজারগুলোতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রবেশ করলে আমাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের পথ সুগম হবে। অন্তত বাজার অর্থনীতির এযুগে আমরা কিছুটা হলেও শ্রমরফতানী সংকট কাটিয়ে উঠা উচিত আমাদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ডকে আরেকটু শক্ত ভীত দেয়ার জন্য।
দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের মাধ্যমেই একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করা ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আমাদের স্বাধীনতা অর্থহীন। স্বৈরতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র কিংবা গোষ্ঠীতন্ত্রের আসফালনে আমরা ভীত বা হতাশ নই, আমরা আশাবাদী। কারণ ‘অত্যাচারী চিরকালই ভীরু’ আর পৃথিবীর ইতিহাসে কোন শাসকই হটকারিতার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারেনি। তাই মুক্তবুদ্ধির বিকাশের ধারায় আমজনতার জাগরণের মাধ্যমেই আমাদের মুক্তির পথ। তাই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে আত্ম-বিশ্বাস নিয়ে, প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে সকল অন্যায় অত্যাচার অবিচারের বিরুদ্ধে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য আমাদেরকে দলীয় ও মতাদর্শগত সংকীর্ণতা পরিহার করে উদার এবং আন্তরিকভাবে কর্মে ব্রতী হতে হবে। তবেই না আমাদের ভৌগোলিক স্বাধীনতা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির মধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণের পথ প্রশস্ত করবে। আমরা যদি আমাদের ব্যক্তিগত কর্মে এই দিকগুলোর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে পারি, তবে আমাদের ভবিষ্যত অতি তাড়াতাড়ি আমাদের হাতে মুঠোয় এসে পরবে। হতাশা আর ব্যর্থতা নিয়ে হাপিত্যাস নয়, কর্ম ও ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠুক আমাদের জীবন, জাতীয় কল্যাণের পথ হোক প্রশস্ত। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের স্বাধীনতা তখনই অর্থময় ও তাৎপর্যমন্ডিত হয়ে উঠবে, যখন আমরা দেশকে নিয়ে এবং আমাদের জাতিসত্তার পরিচয়কে নিয়ে গর্বিত হতে পারব বিশ্বসভায়। আমরা আমাদের সব চাওয়া পাওয়ার ঊর্ধ্বে দেশ ও জাতির স্বার্থকে বড় করে দেখব- এটাই হোক আমাদের সবার অঙ্গীকার।
বিষয়: বিবিধ
১৬৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন