কষ্টে কাটে নষ্টপ্রহর, পর্ব- ১: পটভূমি ও লেখকের ব্যক্তিগত অবস্থান
লিখেছেন লিখেছেন মাহরুফ চৌধুরী ০১ মে, ২০১৩, ০৪:৫৮:২৬ রাত
এক: পটভূমি ও লেখকের ব্যক্তিগত অবস্থান
সাম্প্রতিক এক প্রবাসী বাংলাদেশীর একটি প্রশ্নের সন্মুখীন হই। সেই প্রশ্নের জবাব দিতে আমার একটা কিতাব লেখার খায়েশ হয়েছে। তারই খসড়া তৈরী করে এই ব্লগে প্রকাশ করার চেষ্টা করব। আজ মহান শ্রম দিবস। এদিবসে মেহনতী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেই আজকের লেখা শুরু করলাম। আর পুরো মে মাস ব্যাপীই চেষ্টা করব উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব খুঁজতে। এই ৩০ দিনের লেখার প্রকল্পটি হাতে নিলাম গুগোলের একটি কন্ফারন্সের কৌশল থেকে যাতে করে একটা কিছু দাঁড় করানো যায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আর নিজের সাম্প্রতিক চিন্তাভাবনাগুলোকে অধীন জ্ঞান আর অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে একটা গাথুনি দিয়ে সবার সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হই।
প্রিয় পাঠক, পিপীলিকার নাকি পাখনা গজায় ‘মরিবার তরে’। আমারও হয়তো পাখনা গজিয়েছে তাই। তাছাড়া শারীরিক অবস্থাও তেমন ভাল যাচ্ছে না। মরিবই যখন তখন একটু বাতচিত করেই মরি, কি বলেন? তবে এই বাতচিত যেন আমাদের স্বনামধন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বাতচিতের মত না হয়ে যায়, পরম করুণাময়ের কাছে এ আর্জি পেশ করছি। আমি আশা করব, আপনারা সক্রিয়ভাবে আংশগ্রহণ করবেন আমার এই খন্ডকালীন ‘কিতাব রচনা’র প্রকল্পে আলোচনা, সমালোচনা আর পর্যালোচনায় যাতে আমার এলেখাটাকে তুলোধূনা মধ্যমে আমার বোধ-বুদ্ধিকে শানিত করতে পারেন। তবে আমাদের সমালোচনার যে সাংস্কৃতিক ধারা চালু হয়েছে, যেখানে শ্রদ্ধেয় বদরুদ্দীন উমর, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ কিংবা ফরহাদ মজহার-এর মতো ব্যক্তিদেরকে নেংটা করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, এলেখা শুরু করার আগেই তাই ভয়েই আমার হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছে।
দেশে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাপ্রবাহে বেশ মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়েই দিন গুজরান করলেও আমি কখনোই দেশ নিয়ে হতাশাবাদী নই। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময় ধরে প্রবাসে বসবাস করছি, কিন্তু প্রায়শই দেশ নিয়ে বিনিদ্র রাত কাটে নতুন স্বপ্নের জাল বুনে। যদিও ব্যক্তিক জীবনে অনেকটা উৎকেন্দ্রীক হয়ে অনেক প্রবাসীই স্বদেশের স্মৃতি রোমান্থন করে কাটিয়ে দেন যাপিত সময়, তবুও মাতৃভূমির সঙ্গে নাড়ীর সম্পর্কে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। তাই দেশ নিয়ে প্রবাসীদের চিন্তাভাবনা আর তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। আমি অনেক বিদেশীকেই যুক্তিতর্কের সময় অন্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করতে গিয়ে বলতে শুনি- ‘আমি জানি তুমি কোন অবস্থান থেকে এটা বলছো’- (I understand where you’re coming from)। তাই এখানে আমি ব্যক্তিগত অবস্থান কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করছি পাঠকের সুবিধার্থে। মাঝে মাঝে মনে হতে পারে যে ‘ধান বানতে শিবের গীত’ গাওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্র কিছুটা সবুর করলে হয়তো যোগসূত্র খুঁজেও পাবেন পরবর্তী কোন একটা ব্লগে।
বাংলাদেশীদের সম্পর্কে মার্কিন একটা সরকারী দলিলে বলা হয়েছে যে, ‘একটি অনুমান অতীত জাতি’ –an unpredictable nation- এর কারণ আমরা অতিসহজেই আবেগের প্রবল্যে যে কোন কিছু করে বসতে পারি- ভুলে যেতে পারি অতীত আর উপেক্ষা করতে পারি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতকেও। আবেগের উন্মাদনায় আমাদের যেমন স্মৃতি লোপ পায়, তেমনি আমরা হয়ে পড়ি বুদ্ধিহীন। তাই উন্নয়নের জন্য যে পরিবর্তের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন, সেটা আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা সাংস্কৃতি ইতিহাসে বারংবারই বাঁধাগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু তবু আমাদের সমাজ পরিবর্তনের স্রোত ঠেকে থাকেনি। এ আবেগপ্রবণ যেমন একদিকে আমাদের দুর্বলতা, তেমনি অপরদিকে আমাদের শক্তিও বটে।
আমি একজন পেশাজীবী। যদিও কোন মানুষই রাজনৈতিক চিন্তাধারার বাইরে বসবাস করতে পারে না, তবুও আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে কোন পেশাজীবীরই সরাসরি কোন রাজনৈতিক পরিচয় থাকা উচিত নয়। রাজনীতির রঙ্গমঞ্চ রাজনীতিবিদদের জন্য ছেড়ে দেয়াই কল্যাণকর। যদিও রাজনৈতিক বিষয়াবলী প্রাসঙ্গিকভাবে আলোচনায় এসে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে সেটা আসবে সামাজিক ও ঐতিহাসিক ঘটনার পর্যালোচনার কিংবা অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণে। তবে এটি সম্পূর্ণই একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিবর্তন এবং অগ্রগতির বিচার-বিশ্লেষণমূলক লেখা।
অংশগ্রহণমূলক আলোচনা, সমালোচনা আর পর্যালোচনা স্থান পাবে এলেখায়। তাই আমি পাঠকে নিসংকোচে, কিন্তু অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মতামত প্রকাশের আহবান জানাচ্ছি। প্রিয় পাঠক, প্রকাশিত লেখায় তথ্য-উপাত্তের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, কিংবা থাকতে পরে কোন ভুল তথ্য-উপাত্ত। সেক্ষেত্রে সেটা নজরে আনলে সাথে সাথেই সংশোধন করা হবে। তাছাড়া কোন ঘটনা বা কাহিনী কিংবা তথ্যসূত্র যদি এ লেখাকে সমৃদ্ধ করার জন্য সরবরাহ করা হলে সাদরে গৃহীত হবে এবং তার স্বীকৃতি থাকবে পরিমার্জিত ও সংশোধিত সংস্করণে। আমি আরও আশা করব, আপনারা মুক্তচিন্তার উদ্ভোধনে অন্যের অভিমতের প্রতি সন্মান রেখে আলোচনা-সমালোচনা-পর্যালোচনায় অংশগ্রহণ করবেন।
আমার এক সহকর্মী ব্লগ লেখার বিষয়ে পরামর্শ দিতে গিয়ে একদিন বলেছিলেন যে, ব্লগের লেখা হাজার-বারোশ’ শব্দের মধ্যে শেষ করা উচিত। নচেত পাঠকের ধৈর্য রাখতে পারে না এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে যারা এই ব্লগগুলো পড়ে তাদের চিত্তবিনোদন হয় না। তাই তার উপদেশটা এলেখার ক্ষেত্রে অনুসরণ করার চেষ্টা করব। সে হিসেবে মাস শেষে ৩০ ব্লগের সমন্বয়ে প্রায় ৩৬ হাজার শব্দের একটা লেখা তৈরী হবে বলে আশা করছি। দেখ যাক কতটুকু সফল হই। আশা করি আপনারাও সাথে থাকবেন।
এব্লগ-সন্দর্ভের ভাষা অনেকটাই পাঁচমিশালী স্বভাবের হলেও বানান রীতিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালাই অনুসরণের চেষ্টা থাকবে। ভাষা ব্যবহারে যদিও চেষ্টা থাকবে সহজ গদ্য ব্যবহারের, কিন্তু আমার ব্যক্তিগত লিখন রীতিতে আমি ‘আকরমীয় গদ্যে’র প্রভাব বলয় থেকে বেরুতে পারিনি কখনোই, তাই সংস্কৃত শব্দবন্ধ কিংবা বাক্যবন্ধ প্রায়ই পরিলক্ষিত হবে আমার এই লেখায়। আশা করি পাঠক সেটা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে, এবং মাঝে মাঝে পরামর্শ দিবেন কিভাবে গণমানুষের ভাষার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারি।
লেখার মাঝে সংগত কারণেই দ্বন্দ্ব-সংঘাত বিষয়ে তথ্য ও তত্ত্ব অবলীলায় এসে যাবে। তাই লেখাটা আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠতো যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত অধ্যয়ন বিভাগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এআলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন। প্রিয় পাঠক, যদি ঐ বিভাগে, কিংবা শান্তি ও সংঘাত বিষয়ে কোন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন, এমন কোন বাংলাদেশীর সাথে আপনা পরিচয় থাকে, তবু তাঁকে এলেখাটি পড়ার আমন্ত্রণ জানাতে আপনাকে অনুরোধ করছি।
একটি চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রতিটি ব্লগই নিয়মিত পরিমার্জন, পরিবর্ধন কিংবা সংশোধন করা হতে পারে সময়-সুযোগ পেলে। আর এপ্রক্রিয়ায় সবসময়ই পাঠকের অভিমত কিংবা আলোচনা, সমালোচনা ও পর্যালোচনাকে গুরুত্ব দেয়া হবে। সেক্ষেত্র সর্বশেষ ভার্সনটিই দৃশ্যমান থাকবে সজীব-ব্লগে। যদিও প্রশ্নের জবাব কতটুকু খুঁজে পাব জানি না, তবে এটুকু এমুহূর্তে বলতে পারি, আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণেই এলেখাটা প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে ।
পদটিকা:
আকরমীয় গদ্য- ১৮০১ সালে প্রতিষ্ঠিত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সংস্কৃত পন্ডিতদের দ্বারা পরিকল্পিত উপায়ে যে সংস্কৃতপ্রধান বাংলার প্রচল হয় এবং পরে বঙ্কিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়ের দ্বারা উৎকর্ষিত হয়, সেই গদ্য ধারাই সৈয়দ আকরম হোসেন তাঁর নিজস্ব স্বকীয়তায় আত্মস্থ করেন। এ আকরমীয় গদ্য ধারাই বাংলাদেশের বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে চলেছে- যা কখনোই আমজনতার ভাষা ছিল না, এবং হয়েও উঠেনি।
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন