আন্দোলন নয়, বিদেশী চাপে সরকার
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া পারভীন হাবিবা ১৭ মে, ২০১৩, ০৮:১২:০১ সকাল
নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে ‘নির্দলীয় আর নির্বাচিত’ এই দুই বাক্য নিয়ে প্রধান বিরোধী দল ও সরকার অনড়। দাবি আদায়ের আন্দোলন তেমন জোরদার করতে পারছে না বিরোধী দল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার নিজেদের দাবি আদায়ে সরকারকে কয়েকবার আল্টিমেটাম দিলেও আন্দোলনের পালে সুবাতাস পায়নি দলটি। সরকারের সাড়ে চার বছরের আন্দোলনে সরকারকে তেমন চাপে ফেলতে পারেনি তারা।
জোরদার আন্দোলন না থাকলেও দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অস্থিরতার মধ্যে নানামুখী কূটনৈতিক চাপে স্বস্তিতে নেই সরকার। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা, যুদ্ধাপরাধের বিচার, মানবাধিকার পরিস্থিতি সর্বশেষ তৈরি পোশাক কারখানায় ধসসহ বিভিন্ন ইস্যুতে চাপে রয়েছে সরকার।
কূটনৈতিক মহল থেকে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিতর্কের একটা সুরাহা করার জন্য সরকারের ওপর তাগিদ দিচ্ছে। এসব কূটনৈতিক তৎপরতায় খুবই অস্বস্তিতে আছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। কূটনীতিকদের অবস্থানে বিভিন্ন সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নীতিনির্ধারকসহ সরকারের মন্ত্রী উপদেষ্টারাও। আবার কূটনীতিকেরাও কোনো কোনো ইস্যুতে প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করছেন।
সরকারের ঘনিষ্ট একাধিক সূত্রমতে, সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ দিন দিন বাড়ছে। সম্পতি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা দেশের এই পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারকে অব্যাহতভাবে চাপে রেখেছে। এছাড়া সৃষ্ট রাজনৈতিক বিরোধের নিষ্পত্তির উপায় বের করতে তৎপর হয়ে উঠেছে দেশী-বিদেশী নানা মহল। বিশ্বের ক্ষমতাসীন দেশের পাশাপাশি দাতাগোষ্ঠীসহ সকল মহলই চাইছেন সরকার ও বিরোধী দল এ নিয়ে একটি সমঝোতায় উপনীত হোক।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন জাতিসংঘের সহকারী মহাপরিচালক ওয়াসকার ফার্নান্দেজ তারানকো। এ সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, সুশীল সমাজ, বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে তিনি সবদলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে দেশে কোন্ ধরনের সরকার থাকবে অর্থাৎ কোন্ ধরনের সরকারের অধীনে ওই নির্বাচন হবে তা বড় দুই দল সংলাপে বসে ঠিক করুক। এ বিষয়টি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ অন্য কয়েকটি দেশের কূটনীতিক ও দাতাগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাও দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত ও স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে বড় দুই দলেরই নীতিনির্ধারক মহলে এ নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক মহল এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরা সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে সংলাপে বসতে।
তবে এ বিষয়টি নিয়ে বিদেশী কোন চাপ নেই দাবি করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, “সংলাপের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সব সময় আন্তিরিক। আমরা সবসময়ই শর্তহীন আলোচনার বসতে রাজি ।”
আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভুইয়া ডাবলু নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “আওয়ামী লীগের উপর বিদেশী চাপ থাকার কোনো কারণ নেই। আমাদের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা আলোচনায় বসার জন্যে বিরোধী দলকে অনেক আগেই আহ্বান জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। গণতান্ত্রিক আলোচনায় আমরা সব সময় প্রস্তুত।”
রাজনৈতিক দলগুলোতে ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে নির্বাচনী আমেজ। দুই প্রধান নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া নিজ নিজ সমাবেশ থেকে প্রকাশ্য জনগণের ভোট প্রার্থনাও শুরু করেছেন। কিন্তু সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন হবে কি না, এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলসহ দেশের অধিকাংশ মানুষের শঙ্কা এখনও কাটেনি। সবার কাছে একই প্রশ্ন, দুই দলের মধ্যে সমঝোতা না হলে শেষপর্যন্ত আগামী নির্বাচন হবে তো?
বিষয়: বিবিধ
১০৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন