আওয়ামী-লীগ কার্যত বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন!!

লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া পারভীন হাবিবা ২৬ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:০৪:০৩ সকাল

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মোজেনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে পাচ্ছেন না। এর মধ্যে নতুন করে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েছেন ইসলামী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি তাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু তারা প্রধানমন্ত্রীর সময় পাচ্ছেন না। পদ্মা সেতু ইস্যুতে কানাডার সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। ভারতঘনিষ্ঠতার কারণে চীন বিরূপ, নাখোশ পাকিস্তান। শুধু কূটনৈতিক নয়, বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কও ভালো যাচ্ছে না। বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশিরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সব মিলিয়ে সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বৈদেশিক বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও সম্পর্কের গভীর সংকট চলছে। কিন্তু সেদিকে সরকারের কোনো নজর নেই।

বিদেশি কূটনীতিকরা রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে এ দেশের ভাবমূর্তির সংকটের কথা বলেছেন। তারা সতর্ক করছেন- আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা, আগুন, সংঘর্ষের খবর প্রকাশের পর বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে দ্বিধান্বিত বিদেশিরা। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখান থেকে নিজেদের বিনিয়োগ তুলে নিয়ে যাবেন। অবশ্য কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শুধু প্রতিবেশী ভারত ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ দেশ ও দাতা সংস্থার সঙ্গে চলছে টানাপড়েন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, মুসলিম বিশ্ব ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে চলছে বৈরিতা। এ ভাবমূর্তির সংকট উত্তরণের অঙ্গীকার সত্ত্বেও তা পূরণ হয়নি। ফলে বিপুল সম্ভাবনা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কূটনীতিকরা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান সময়ে আরব দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের আলোচনা চলছে। তারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নের শর্ত দিচ্ছেন।

সহিংসতা ও সংঘাতের খবর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ওপর কী প্রভাব ফেলছে জানতে চাইলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রভাবশালী সদস্য ডেনমার্কের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত সেন্ড অলিং বলেন, বাংলাদেশকে সাহায্য দেওয়ার সংস্কৃতি পাল্টে বাণিজ্য ও অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়তে ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতরা তাদের দেশের বিনিয়োগ বাংলাদেশে আনতে উৎসাহিত করেন। এ জন্য তারা বাংলাদেশে ব্যবসায়ের সুযোগবিষয়ক নিবন্ধ, ডকুমেন্টারি দেখানোর পাশাপাশি আগামী দিনগুলোতে এ দেশ নিয়ে অনেক ইতিবাচক সম্ভাবনার কথাও বলেন। কিন্তু রাজপথের সহিংসতা, সরকার এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে আস্থাহীনতা ও বৈরিতার কারণে তাদের সব প্রচেষ্টা নস্যাৎ হয়ে যায়।

জাপানের রাষ্ট্রদূত শিরো সাদাশিমো জানান, গত মাসে সনি ও টয়োটার বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে এসেছিলেন। কিন্তু তারা সহিংসতার কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামে হোটেলের বাইরে যেতে পারেননি। কোনোরকমে বিমানবন্দরে গিয়ে ফিরে গেছেন জাপানে। বাংলাদেশে সহিংস পরিস্থিতির জন্য জাপানের বিনিয়োগকারীরা উৎসহ হারিয়ে ফেলেছেন বলে জনিয়েছেন রাষ্ট্রদূত।

এর আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মোজেনা বলেছেন, আমাকে গভীর রাতে ফোন করে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের টাকায় চলা বাণিজ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এটা আমার কূটনৈতিক জীবনে কখনো ঘটেনি। এ পরিস্থিতিতে আমরা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আসতে বলতে পারছি না। এ ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর কাছে উদ্বেগ জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ উন্নয়ন সহযোগীরা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান কূটনীতিক ক্যাথরিন অ্যাস্টন সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে এ ব্যাপারে চিঠি পাঠিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জাপানের রাষ্ট্রদূত শিরো সাদাশিমা বলেছেন, রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার প্রভাব বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর পড়ছে।

সম্পর্কের বৈরিতা : কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, সরকারের চলতি মেয়াদে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কোনো দেশের সঙ্গে এ সরকারের সম্পর্ক ভালো নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈরিতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি হয়। আট মাসেও প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাননি মার্কিন রাষ্ট্রদূত। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি-চেষ্টা কানাডার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে। এ ইস্যুতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের ভিসা দেয়নি কানাডা। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা হোসেন পুতুলের উদ্যোগে ঢাকায় অটিজম সম্মেলনে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে অতিরিক্ত সম্মান দেওয়ায় পাকিস্তান কথা দিয়েও সম্মেলনে তাদের স্পিকারকে পাঠায়নি। ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে চীন সোনাদিয়ার গভীর সমুদ্রবন্দরসহ প্রায় সব প্রকল্প ঝুলিয়ে রেখেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক এখন বৈরিতায় পরিপূর্ণ।

সংকটে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য : রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে বৈদেশিক বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিঘি্নত হচ্ছে অভ্যন্তরীণ রপ্তানি বাণিজ্য ও শিল্পায়ন। রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়ে যাচ্ছে তৈরি পোশাকশিল্পের। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নজর এখন প্রতিযোগী দেশগুলোর প্রতি। দেশের রাজনৈতিক সহিংসতায় তারা বিনিয়োগ সরিয়ে দিচ্ছেন অন্যত্র। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বৈদেশিক সম্পর্কের টানাপড়েনের ক্ষেত্রে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে। কখনো সম্পর্কের গতি বেশি থাকে, কখনো কম। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের গতি আরও বাড়ানোর উদ্যোগ থাকা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিদেশি বন্ধুরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে বিনিয়োগনির্ভরতা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তির কারণে চীন আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। চীন আমাদের ভালো বন্ধু। তারা চায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক তারা মানতে পারছে না। তিনি বলেন, ভারত আমাদের থেকে শুধু নেওয়ার রাজনীতি করে দেওয়ার রাজনীতি করে না।

বিষয়: বিবিধ

২০১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File