জীবন সম্পর্কে আর কি বলবো
লিখেছেন লিখেছেন আশিক জ্যাকি ২৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:২৩:০৫ দুপুর
জীবন সম্পর্কে আর কি বলবো, বলার আর কিছুই নেই মুখে নেই কোন ভাসা এবং হাতে লেখারো ক্ষমতা নেই। জীবনে প্রথম যে মেয়েটিকে ভালোবেসেছিলাম তাকে অনেক ভালোবাসতাম। সেই ছোট বেলা থেকে ভালবাসতাম যে বয়সে আমরা হাফ প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়িয়েছি, পুতুল খেলেছি, একটা লাটায় আর একটা ঘুড়ি নিয়ে দুজনে মিলে উড়িয়েছি, ঘাস ফড়িং ধরে বেড়িয়েছি। ঠিক ঐ সময় থেকে আমি ওকে ভালোবেসেছি শুধু আমি একা না সেও আমাকে ভালোবাসতো। কৈশর বয়সে এসে সবুজ স্নিগ্ধ ধান ক্ষেতের পাশে, মেহগুনি বাগানে এবং কৃষ্ণচূড়া ছায়াতলে বসে কত গল্প করেছি কিন্তু এখন ঐ সব জায়গাগুলি দেখলে খুব কষ্ট হয় মনে হয় ফিরে যায় সেই বয়সে। কিন্তু তা’তো ফিরে পাবার নয় সেটা হারিয়ে গেছে গ্রীষ্মের পাতা শুন্য মেহগুনি পাতার মত।
আমার প্রথম প্রেমিকা আসলেই আমাকে ভালোবাসতো। কিন্তু তার ফ্যামিলির চাপে তার বিয়ে করতে হয়েছিল। তার বিয়ে হবার আগের দিন যখন আমি তাকে বললাম যে আমার সাথে চল। তখন সে আমাকে বল্ল “এখন আর কিছু করার নেই, কারন আমার হাত পা বাধা তবে একটা কথা জেনে রাখ আমি তোকে এখনো ভালোবাসি এবং সারাজীবন ভালোবেসে যাবো”। আসলেই সে আমাকে এখনো ভালোবাসে তার এখন দুইটা সন্তান দুইটায় ছেলে।বড় ছেলেটির সাথে যখন কথা বলি তখন ও তার বড় ছেলেকে বলে “দেখ তোমার মামা এসেছে মামাকে হ্যালো বলো”। তখন আমি ওকে বলি দেখ তুই কখনো তোর ছেলেকে দিয়ে আমাকে মামা বলাবিনা এইটা শুনলে আমার খুব কষ্ট হয় যে প্রেমিকার ছেলে আমাকে মামা বলে ডাকছে। তখন সে তার ছেলেকে আবার শেখায়”বাবু তোমার বাবা এসেছে তোমার বাবাকে হ্যালো বলো”। তখন ঐ ছোট বাচ্চাটা আমাকে বাবা বলে ডাকে, তখন আমার মনটা ভরে ওঠে।
এরপর থেকে যখন কেও থাকেনা তখন ও ওর বাচ্চাকে দিয়ে আমাকে বাবা ডাকানো শেখায়। “দেখেছেন আমি বাবা হয়ে গেছি!” আর যখন আমাদের সামনে অনেক লোক থাকে তখন অন্যরা যদি বলে দেখ দেখ তোমার মামা! তখন ছেলেটা বলে ওঠে “না ঐতা আমাল বাবা”।
হাহাহা হা হা হা হা। তখন যে এত আনন্দ লাগে মনে হয় চিৎকার করে হাসি কিন্তু ঐখানে হাসতে পারিনা।
আমার এই প্রথম প্রেমিকাকে হারানোর পর আমি খুব খারাপ হয়ে যায়,। জীবনে কোনদিন ঠিকমত সিগারেট ছুইনি কিন্তু একে হারানোর পর সিগারেট খাওয়া শুরু করি শুধুই সিগারেটনা তার সাথে আরো অনেক কিছু খেয়েছি যা এখনো মাঝে মাঝে খায়।তখন আমি আস্তে আস্তে অনেক খারাপ হয়ে উঠি নেশা, মারামারী, গ্যাঞ্জাম কত কিছু করেছি এবং কত মাকে যে তার ছেলে মেয়েদের হাত পা ভেঙ্গে দিয়ে কাঁদিয়েছি তার কোন হিসাব নেই। কেও আমাকে থামাতে পারিনি, থামাবে কিভাবে ? সে সময় তো আমার কোন প্রকার সেন্স থাকতো না সব সময় নেশার উপরে থাকতাম।
এভাবে ৩-৪ বছর চলার পর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমাকে বলে এসব আমাকে ছেড়ে দিতে। বেস্ট ফ্রেন্ডটি আবার ছিল মেয়ে তার চোখ দুটি ছিল অনেক সুন্দর একদম বিড়ালের চোখের মত কালার তার চোখ দেখে কত মানুষ যে পাগল হয়েছে তার কোন হিসাব নেই। কত মানুষের মাঝে আমিও ছিলাম একটা পাগল। কিন্তু তাকে কখনই বলার সাহস হয় নাই কারন সে হয়তোবা মনে করবে একটা ছ্যাকা খেয়ে এখন আমার পিছনে ছুটছে একারনে বলা হতনা। অনেক বার বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারি নাই। একদিন সে আমাকে বল্ল আমার নাম্বার নিবি? জবাবে আমি বললাম দে। তখন সে আমাকে তার মোবাইল নাম্বারটা দিল। ওই মোবাইলে একদিন ওকে আমার বাসায় ডাকলাম সে সমই আমি প্রচন্ড নেশাই ছিলাম যেটাকে বলে ফুল পিনিক। এর পর সে আসলো তার সাথে আমি সিড়িতে বসে কথা বলছিলাম হঠাত আমি সিড়ি থেকে নিচে পড়ে যায় তখন ও আমাকে জিজ্ঞেস করলো তুইকি নেশা করেছিস? আমি বললাম হ্যা। তখন ও বলে যে “তোকে না বলেছি নেশা করবিনা, আজ থেকে নেশা করলে আমার সাথে আর কথা বলবিনা”। তখন আমি ওকে বললাম নেশা ছাড়া আমার জীবনে আছে কি বল? তখন সে বলে “কেন আমি নেই?”।আমি বললাম তুইতো আছিস বন্ধু হিসেবে তুইতো আমার প্রেমিকা না। তখন সে বলে “তার মানে আমি যদি তোর প্রেমিকা হতাম তুই নেশা ছেড়ে দিতিস”? আমি সাহস করে বলেই ফেললাম হ্যা। তখন সে আমাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেই যেন নেশা না করি, যেন মারামারী না করি, মানুশের সাথে যেন ভালো ব্যাবহার করি, এবং প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
এরপর আমি প্রতিষ্ঠিত হবার তাগিদে ঢাকা শহরে চলে আসি এসে একটা কম্পিউটার ফার্মে জব নিই।খুব ভালোভাবে জীবন কাটতেছিল কোন প্রকার নেশা নেই, মারামারী নেই, মনে কোন অশান্তি নেই কারন সব সময় তার সাথে কথা বলতাম। কিন্তু মাঝে মাঝে প্রথম প্রেমিকার কথা মনে পড়ে যেত তখন দ্বীতিয় প্রেমিকা বলে “তুমি এখনো আমার সতীনের কথা মনে রেখেছো?” এরপর শুরু হয় আমার হাসি আর এই হাসির মাঝে কোন ফাকে যে ভুলে যায় ওকে তা বলার মত নয়। এভাবে খুব সুন্দর ভাবে চলতে থাকে আমাদের প্রেম। এখন আমি সব প্রকার নেশা ভুলে গেছি, ভুল করে যদি সাধারন একটা সিগারেটও খাই তাহলে মাথার ভিতরে চরম ভাবে ঘোরে।
কিছুদিন পর সব কি যেন হয়ে গেল কেমন যেন কালো ছায়ার মাঝে হারিয়ে গেল। কেমন জানি সে আমাকে ছেড়ে দূরে দূরে থাকতে চায়। একদিন আমি বলেই ফেললাম এমন করিস কেন? “জবাবে সে বলে তুই না আমার বন্ধু তায় এমন করছি”। আমি বললাম কি আমি তোর বন্ধু? তখন সে বল্ল “হ্যা তুইতো আমার বন্ধু এছাড়া আবার কি?” তখন আমি বললাম দেখ এমন করিস না আমার কিন্তু এই কথা শুনলে খুব কষ্ট হয়।সে বলে “আমি তোর বন্ধু এই কথা শুনলে তোর কষ্ট হয় এটা আবার কেমন কথা?” এভাবেই ঝগড়া মন কষাকষি দিয়ে শুরু হয় আমাদের প্রেমের জীবনের ফাটল।
অতপ্পর মানুষের মুখে জানতে পারলাম সে আমাকে ছেড়ে অন্য আর এক জনের সাথে প্রেম করছে। এরপর তাকে যখন জিজ্ঞাসা করলাম যে এগুলা কি শুনছি? জবাবে সে বলে “যেটা শুনেছিস সেটাই সত্যি”। এই কথা শোনার পর আমার মনের মধ্যে মনে হল বাজ পড়েলো। তারপর আমি বললাম যে তাহলে এতদিন এই প্রেমের অভিনয় কেন করলি? সে বল্ল “তোকে ভালো মানুষের পথ দেখানোর জন্য এই টুকু জেনে রাখ তুই আজ ভালো আছিস একমাত্র আমার জন্য”। আমি বললাম তোকে কে বলেছিল আমাকে ভালো করতে আমি যেমন ছিলাম তেমনি তো ভালো ছিলাম এখন তোর এই ছলনার জন্যতো আমি আরো খারাপ হয়ে যাবো। তুই দেখিস আগামী এক মাসের মধ্যে আমি মারা যাবো। এই কথা বলে সেই যে ফোনটা ডিস্কানেক্ট করলাম আজ এখন পর্যন্ত আর কানেক্ট হয় নাই।আমি যে মরে যাবার কথা বললাম ওকে, তা আমি বেচে আছি না মরে গেছি সেই খোজ খবরও নেই নাই।
এই হল আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের ধরন ও নাকি এক সময় নাকি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। যায় হোক অমন স্বারথপর মেয়ের জন্য তো জীবন দিয়ে লাভ নাই। কারন একটা স্বার্থপর মেয়ের জন্যতো সবাইকে কাদিয়েতো লাভ নাই তাই আর সেই মরার কথা মনে আনি নাই। তবে নেশা করেছি আগের থেকে কম।এখন আমি আর আগের মত নেই অনেক চেঞ্জ হয়ে গিয়েছি শুধু মাঝে মাঝে আমার প্রথম ভালোবাসার কথা মনে পড়ে এবং দ্বীতিয় ভালোবাসার চোখের কথা মনে পড়ে। কারন তার চোখটা ছিল অনেক মায়াবী। কিন্তু সেই মায়াবীর পেছনে ছিল কঠিন হিংস্র এক মুখ।
এরপর থেকে প্রতিজ্ঞা করেছি জীবনে বিয়ে যদি করি এমন মেয়েকে বিয়ে করবো যার মনটা হবে আমার প্রথম ভালোবাসার মত এবং চোখটা হবে দ্বীতিয় ভালোবাসার মত।
যায় হোক অনেক কথা বলে ফেলেছি আমার কথার মধ্যে যদি কোন প্রকার ভুল থেকে থাকে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং কমেন্টে সংশোধন করে দিবেন, আপনাদের মুল্যবান বক্তব্য দিবেন। এবং আমার জন্য দোয়া করবেন।
জীবনে যা কিছুই করবেন ভেবে চিনতে করবেন। কারন একটা কঠিন ভুল আপনার সারা জীবনের ক্ষতি বয়ে নিয়ে বাড়াবে।সব সময় ভুল ডিছিশান থেকে দূরে থাকুন।
আর কখনো ছ্যাকা খাইলে নিজেকে খারাপ পথে নিবেন না কারন যে আপনাকে ছ্যাকা দেই সে আসলে আপনাকে ভালোবাসতো না সে ভালোবাসতো আপনার পারিপারশিক জীবনকে আপনার সম্পদকে সুতরাং সব সময় ভালো পথে চলার চেষ্টা করবেন। ধন্যবাদ।
বিষয়: বিবিধ
২০২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন