আরোপিত হাদিস (ইসনাদ) (১)
লিখেছেন লিখেছেন ফারুক হোসেন ১৮ আগস্ট, ২০১৫, ১১:১২:১৮ রাত
আরবিতে হাদিস বলতে বুঝায় - যে কোন ধরনের কথাবার্তা ,গাল গল্প , বিবৃতি ইত্যাদি। আমরা মুসলমানরা হাদিস বলতে বুঝি আমাদের নবী মুহাম্মদের কথা , নির্দেশ , বিবৃতি এবং বিভিন্ন সাহাবী কর্তৃক বিবৃত নবীর জীবণে ঘটা বিভিন্ন ঘটনার বিবরন , যাকে নবীর সুন্নাত বলা হয়ে থাকে। আজকের জমানায় লিখিত আকারে নবীর হাদিসের লিখিত যে বইগুলো পাওয়া যায় যেমন , বুখারি মুসলিমের সহীহ হাদিস গ্রন্থ , এগুলো সঙ্কলন ও লেখা হয়েছে নবীর মৃত্যুর ২০০/২৫০ বছর পরে। নবীর মৃত্যুর এত বছর পরে হাদীস লেখার পরে যখন এগুলোকে নবীর কথা ও কাজ বলে আরোপ করা হয় , তখন স্বভাবতই এগুলোর সত্যতা নিয়ে সকলের মনে সন্দেহ জাগাটাই স্বাভাবিক। এই সন্দেহ দুর করতেই ইসনাদের আগমন। ইসনাদ অর্থ ঠেকা দেয়া। , যেমন পড়ন্ত দেয়ালকে বাশ দিয়ে ঠেকা দেয়া , তেমনি হাদিসকে বাতিল হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য ইসনাদ দিয়ে ঠেকা দেয়া হয়। ইসনাদ হলো , নবীর সময় থেকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যে সকল লোক মুখে মুখে নবীর হাদিস মুখস্ত করে এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে পৌছায়ে দিয়েছে তাদের নাম ধাম। একেক প্রজন্মের সময় কাল ৪০ বছর করে ধরলে নবীর সময় থেকে বুখারী মুসলিমের সময়কাল পর্যন্ত ৫-৬ প্রজন্ম পেরিয়ে গেছে। এই ৫-৬ প্রজন্মের মাঝে কেউ বানিয়ে বানিয়ে কোন কথা ও কাজকে নবীর নামে চালিয়েছে কিনা বা নবীর কথার কোন পরিবর্তন করেছে কিনা তা বুখারি মুসলিমদের পক্ষে যতই গবেষনা করুক বা বাছ বিচার করুক না কেনো , জানা অসম্ভব। সুতরাং ইসনাদ দিয়ে কতটুকু হাদিসকে বাতিল হওয়া থেকে ঠেকা দেয়া গেছে তা জ্ঞানীদের গবেষনার বিষয়।
ভূমিকা--
৮৩৩ সাল। আব্বাসীয় খলিফা আল-মামুনের শাসনকাল। কবি আল-আত্তাবি বাগদাদের রাস্তায় মুড়ি খেতে খেতে হেটে প্রধান বাজার এলাকায় পৌছালেন। যে সময়ের কথা বলছি সেই সময়ে খেতে খেতে হাটাকে খারাপ চোখে দেখা হোত বা বলা যায় মানীদের ইজ্জত চলে যেত।
কবির এক বন্ধু তার এই খেতে খেতে বাজারে আসা দেখে বল্লেন , কেমন তোমার আক্কেল ? তুমি খাচ্ছ আর লোকজন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। এটা কি ভাল হলো?
কবি তাচ্ছিল্যের সাথে জবাব দিল , এরা আবার লোকজন হলো কবে? এরা তো গরু।
বন্ধু তার এ কথার তীব্র প্রতিবাদ করলে কবি বল্লেন , দাড়াও ! তোমাকে এক্ষুনি প্রমাণ করে দেখাচ্ছি , এরা মানুষ নাকি গরু?
কবি বাজারের মাঝে উচুমতো এক জায়গায় উঠে চেচাতে লাগলেন , এই সকলে এদিকে আসেন , আজ আমি আপনাদের আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ মুস্তাফা (দঃ) সম্পর্কে কিছু বলব। একথা শুনে বাজারের লোকজন দৌড়ে এসে তার চারপাশে ভিড় জমালো। তিনি বলতে লাগলেন , আমি এক লোককে জানি যে তার বাপের কাছ থেকে শুনেছে , তার বাপ শুনেছে দাদার মামাত ভাইর কাছে , দাদার মামাত ভাই শুনেছে এক হুজুরের কাছে, হুজুর আবু হুরায়রাকে বলতে শুনেছে নবীর এই হাদিস টি। এই ভাবে তিনি একের পর এক আবু হুরায়রা , আয়েশা , ইবনে আব্বাস , আল খুদরি বর্ণীত হাদিস ইসনাদ সহকারে বলতে থাকলেন। উপস্থিত জনতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার কথা শুনতে লাগল। তিনি সাইদি হুজুরের মতো এমনি মোহ বিস্তার করলেন যে ডান হাত উচু করলে উপস্থিত সকলের মাথা ডান দিকে ঘুরে আর বাম হাত উচু করলে বাম দিকে ঘুরে যায়। এ সময়ে তিনি অনেকের কাছ থেকে শোনা একটি মুতাওয়াতির হাদিস ইসনাদ সহকারে বর্ণনা করলেন - নবী বলেছেন , যে ব্যাক্তি তার জিহ্বার ডগা দিয়ে নিজের নাক চাটতে পারবে , সে নিশ্চিত বেহেস্তে যাবে। একথা শোনার সাথে সাথে সকলে জিহ্বা দিয়ে যার যার নাক চাটার চেষ্টা করতে লাগল। তখন তিনি পাশে দাড়ানো বন্ধুকে ফিসফিস করে বল্লেন , আমি তোমারে বলছিলাম না , এরা গরু। গরু যেমন জিহ্বা দিয়ে নিজের নাক চাটে, উপস্থিত এই জনতাকে ঠিক তেমনই গরুর মতো দেখাচ্ছে না!!
কি এমন ঘটলো? এই লোকগুলোর বিচার বুদ্ধি কি কারনে লোপ পেলো যে তারা গরুর মতো জিহ্বা দিয়ে নাক চাটার চেষ্টা করতে লাগল? কারন টা আর কিছু না। ইসনাদ সহকারে হাদিস শুনলেই তাদের বিচার বুদ্ধি লোপ পায়। তারা ভেবে ও দেখেনা , নবী এমন কথা বলতে পারেন কী না বা এমন কথা কোরানের তথা ইসলামের শিক্ষার পরিপন্থী কী না?
চলবে------
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহু খায়র। অনেক সুন্দর উত্তর দিয়েছেন।
মুসলিম জাতীর ইয়াকুত এর ভান্ডার প্রিয় নবী (সা) এর মুখনিসৃত বানী গুলোকে চক্রান্তের বেরাজালে আটকানোর জন্য একদল পাগল উঠে পরে লাগে। আসলে তাদের জ্ঞান নেই। কুয়োর ব্যাং এর মতো তারা অল্প পানিতেই সমুদ্র মনেকরে।
তারা ভুলেযায়,
রসুল (সা) যেসকল পত্র ফরমান পাঠিয়েছেন সেগুলো কিন্তু লিখিত ভান্ডারের হাদীস হিসেবে স্বীকৃত।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রা) বলেন: রসুল (সা) জীবনের শেষ দিন গুলোতে সরকারী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানোর জন্য "কিতাবুচ্ছাদাকাহ" রচনা করান। যাতে রয়েছে চতুস্পদ জন্তুর যাকাতের কিছু বিধান। (ইমাম তিরমযি তার জামে'য় আত তিরমিযিতে একথা সংকলন করেছেন সহীহ সানাদে।)
এরখম আরো অনেক সহীফা লেখা হয়েছে রসুল (সা) জীবিত অবস্থায় যেমন:
১. ছহীফায়ে আমর ইবনু হাযম (আহমাদ,আবুদাউদ, নাসায়ী,দারাকুতনী,দারিমী,হাকেম)
২. ছহীফায়ে আলী (আহমাদ)
৩. ছহীফায়ে ওয়ায়েল ইবনু হুজুর (ত্বাবরানী)
৪. ছহীফায়ে সাদ ইবুন উবাদাহ (তিরমিযি)
৫. ছহীফায়ে সামুরা ইবনু জুনদুব (হিফাজাতে হাদীস)
৬. ছহীফায়ে জাবের ইবনু আব্দিল্লাহ (মুসলিম)
৭. ছহীফায়ে আনাস ইবনু মালেক (হাকেম)
৮. ছহীফায়ে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (ইবনু সা'দ)
৯. মুসনাদু আবু হুরায়রাহ (বুখারী)
১০. মক্কাবিজয়ের ভাষন (বুখারী)
১১. পত্রাদি ও সন্ধি সমুহ
এগুলো থেকে স্পষ্ট প্রমানিত রসুল (সা) এর যুগে হাদীস লেখার বিধান ছিলো। জীবনের শেষদিকে তিনি হাদীস লেখাতে নিষেধ করেন নাই।
আরোও অহরহ প্রমান আছে যে রসুল (সা) এর যুগে হাদীস সংকলন করা হয়েছে। রসুল (সা) হাদীসকে কোরআনের সাথে মিশাতে না করেছিলেন তবে সংকলন করতে আদেশও করেছেন। পার্থক্যটি খুবই সুক্ষ বুঝতে হবে।
এছাড়াও সাহাবী যুগে, তাবেঈ যুগে ও হাদীস লেখা হয়েছে তাবাতাবেঈ যুগেও লেখা হয়েছে আর পরবর্তীতে তো সংকলন হয়েছেই।
একটু ভেবে দেখুন! রসুল (সা) এর দুই বা আড়াইশত বছর পরে হাদীস সংকলন হয়েছে বলে যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, তা কতযে ভিত্তিহীন এবং মনগড়া, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাস্তবে হাদীসের বিরুদ্ধে এ সকল অপচেষ্টা আসল উদ্দেশ্য হল, মুসলিম সমাজকে কুরআন ও সুন্নাহের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত করে দেয়া এবং পশ্চিমাদের বেপরোয়া স্বাধীন সভ্যতাকে মুসলমানদের উপর চেপে দেয়া।
ইনশা আল্লাহ! হাদীস অস্বিকার কারীগণ এতে সফলকাম কখনই হতে পারবে না। তাদের চাল বহুত দূর্বল।
এই মুসলিম ইতিহাসের মতো হাদীসের রিজালবিদ আর পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও নেই। রিজালশাস্ত্র মুসলিমদের জন্য একটি গর্বের বিষয় যা অন্য কোন জাতির পক্ষে আদউ সম্ভব না।
আল্লাহ আমাদেরকে বোঝার তাওফিক দিন আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন