শাহাদা।(সাক্ষ্য) (১)
লিখেছেন লিখেছেন ফারুক হোসেন ০৮ এপ্রিল, ২০১৪, ০৮:০৫:১৭ রাত
নবী ইব্রাহিম না ছিলেন ইহুদী , না ছিলেন খৃষ্টান। উনি এমনই আদর্শবান মুসলমান ছিলেন যে , আল্লাহ , রসূল মুহম্মদকে আদেশ করেছেন ইব্রাহিম নবীকে অনুসরন করার জন্য। "অতঃপর আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছি যে, ইব্রাহীমের দ্বীন অনুসরণ করুন, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন এবং শির্ককারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।১৬:১২৩"
আমাদের রসূল ও তার অনুসারীগন সেটাই করেছেন আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পনের মাধ্যমে।
"যদি তারা তোমার সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হয় তবে বলে দাও, "আমি এবং আমার অনুসরণকারীগণ আল্লাহর প্রতি আত্নসমর্পণ করেছি।" আর আহলে কিতাবদের এবং নিরক্ষরদের(যাদের কাছে আগে কোন কিতাব নাযিল হয় নি) বলে দাও যে, তোমরাও কি আত্নসমর্পণ করেছ? তখন যদি তারা আত্নসমর্পণ করে, তবে সরল পথ প্রাপ্ত হলো, আর যদি মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তাহলে তোমার দায়িত্ব হলো শুধু পৌছে দেয়া। আর আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে সকল বান্দা।৩:২০"
তাহলে কেনো আজ লক্ষ লক্ষ মুসলমান হাদীস সাহিত্যের এক বিতর্কিত চরিত্র আবু হুরায়রাকে অনুসরনের ফাঁদে আটকে গেছে? কোরানের শিক্ষাকে অস্বীকার করেও তারা কি ভাবছে তারা সঠিক পথে আছে? আল্লাহ বলেছেন:
"আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা কিতাবের কিছু অংশ পেয়েছে-আল্লাহর কিতাবের প্রতি তাদের আহবান করা হয়েছিল যাতে তাদের মধ্যে মীমাংসা করা যায়। অতঃপর তাদের মধ্যে একদল তা অমান্য করে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তা এজন্য যে, তারা বলে থাকে যে, দোযখের আগুন আমাদের স্পর্শ করবে না; তবে সামান্য হাতে গোনা কয়েকদিনের জন্য স্পর্শ করতে পারে। নিজেদের উদ্ভাবিত ভিত্তিহীন কথায় তারা ধোকা খেয়েছে।৩:২৩-২৪"
দেখুন আজকের মুসলমানেরাও একি কথা বলে থাকে যে , দোযখের আগুন তাদের স্পর্শ করবে না; আর যদি করেও তবে সামান্য হাতে গোনা কয়েকদিনের জন্য স্পর্শ করতে পারে। এগুলো সবই ভিত্তিহীন কথাবাত্রা। আসলেই আল্লাহ্র সুন্নতে কোন নড়চড় নেই।
শাহাদা।
প্রতিটি মুসলমানকে সুন্নি মাযহাব মোতাবেক ঘোষনা দিতে হয় যে , "আমি সাক্ষ্য দিতেছি আল্লাহ ছাড়া কোন প্রভু নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিতেছি যে মুহম্মদ আল্লাহ্র রসূল।" আরবিতে "আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলুল্লাহ।" এই যে সাক্ষ্য দেয়া , একেই শাহাদা বলে। নুতন কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলে সর্ব সমক্ষে এই ঘোষনা পাঠ করতে হয় এবং যারা জন্মগতভাবে মুসলমান , তাদের এই শাহাদা মুখস্ত জানা ও বলা আবশ্যকীয়। অন্যদিকে কেউ যদি এই সাক্ষ্য দিতে রাজি না হয় , তবে সে আর মুসলমান থাকে না। একারনেই এই শাহাদাকে ইসলামের ৫ স্তম্ভের অন্যতম বা প্রধান স্তম্ভ হিসাবে গন্য করা হয়। শুধু তাই নয় , নামাজের ভিতরে এই শাহাদা না পড়লেও নামাজ হয় না।
এখন দেখা যাক , এই অতি গুরুত্বপূর্ন শাহাদা কিভাবে ইসলামে অন্তর্ভুক্ত হলো। এই শাহাদার উৎপত্তি আবু হুরায়রা থেকে এবং এটা হাদীসগ্রন্থে রসূলের হাদীস হিসাবে লিপিবদ্ধ। এই হাদীসের অনেকগুলো ভার্সান আছে , যা তিরমিজি ও অন্যান্য গ্রন্থে পাবেন। হাদীসটি নিম্নরুপ-সুত্র "Mishkat-ul-Masabih", translation by Maulana Fazlul Karim, Volume 1, Chapter 1, no.27.
একদিন আবু হুরায়রা লোকজনের কাছে যেয়ে বল্লেন , রসূল তাকে বলেছেন লোকজনকে জানাতে যে এখন থেকে এই শাহাদা আবৃত্তি করা লাগবে , " আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলুল্লাহ।" অন্য হাদীসে এসেছে " মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু।" আবু হুরায়রা প্রথম যে ব্যক্তির সামনে পড়লেন , তিনি হলেন ২য় খলিফা সায়্যিদিনা ওমর। ওমর তার এই শাহাদার কথা শুনেই তার বুকে ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে বল্লেন , এই মিথ্যা অবমাননাকর কথা বল , তোমার এত সাহস!! আবু হুরায়রা কাদতে কাদতে বল্লেন , রসূল নিজেই তাকে একথা মানুষজনকে জানাতে বলেছেন। ওমর একথায় সন্তুষ্ট না হয়ে যখন তাকে আরো মারতে লাগলেন , তখন আবু হুরায়রা এক জোড়া চামড়ার জুতা দেখিয়ে বল্লেন , রসূল তাকে এই জুতা জোড়া দিয়েছেন প্রমান হিসাবে। ওমর যখন দেখলেন এটা সত্যিই রসূলের জুতা , তখন তিনি শান্ত হলেন। এরপর থেকে সকলেই খুশিমনে শাহাদা আবৃত্তি করা শুরু করল। সেই শুরু , যা এখনো চলছে।
এই হলো আবু হুরায়রার শাহাদার অবিশ্বাস্য ইতিহাস। এই ইতিহাসকে বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে কিছু প্রশ্নের জবাব জানা প্রয়োজন। প্রথমত আবু হুরায়রা রসূলের সঙ্গ পেয়েছিলেন রসূলের মৃত্যুর আগের ২ বছর। তাহলে ইসলামের প্রথম দিকের মুসলমানরা কোন শাহাদা পড়ে মুসলমান হতেন বা আবৃত্তি করতেন? দ্বিতীয়ত আবু হুরায়রার শাহাদার মধ্যে কি এমন অবমাননাকর বক্তব্য ছিল যে , ওমর এমন ক্ষেপায় ক্ষেপলেন যে আরেক সাহাবীর উপরে চড়াও হয়ে মারধর করলেন? কোরান আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, "মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল।৪৮:২৯" ওমরের আবু হুরায়রার উপরে চড়াও হয়ে মারধোর করা কি সহানুভূতিশীলতার উদাহরন?
আরেক হাদীসে এই ঘটনার ধারাবাহিকতাই বর্ননা করা হয়েছে যে , ওমর রসূলকে চ্যলেন্জ করে জানতে চেয়েছেন - তিনি সত্যিই কি আবু হুরায়রাকে নিজের জুতা দিয়ে পাঠিয়েছেন মানুষের মাঝে এই শাহাদা প্রচারের জন্য? রসূল উত্তর দিলেন - হ্যা। তখন ওমর দ্বিমত পোষন করে বল্লেন - এই শাহাদা মানুসকে 'অলস' করে ফেলবে। শাহাদা মানুসকে কিভাবে অলস করে ফেলবে , তার ব্যাখ্যা হাদীস বিশারদরাই ভালো দিতে পারবেন। তবে এই অবান্তর হাদীসের বর্ননাকারী ও কিন্তু ঐ আবু হুরায়রা। অবান্তর বল্লাম , কারন এই হাদীস ও কোরানের শিক্ষার পরিপন্থি। ওমর , যিনি একজন মুমীন ছিলেন , তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন -
"মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলেঃ আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তারাই সফলকাম।২৪:৫১" এরপরেও কি ওমরের পক্ষে সম্ভব রসূলের সাথে দ্বীমত পোষন করা? আমার তো এই হাদীস দুটি রামের জুতা জোড়ার কথা স্মরন করিয়ে দেয় , যা ভরত সিংহাসনে রেখে রামের অবর্তমানে দেশ শাসন করেছিলেন। ইসলামের ভিত্তি কি এইরকম গল্পের উপরে দাড় করানো সম্ভব!!
তবু ও না হয় শাহাদা মেনে নেয়া যেত বা benefit of doubt দেয়া যেত যদি না এই শাহাদা প্রতি নামাজে বৈঠকের সময় আবৃত্তি করা বাধ্যতামূলক করা হত। কারন এটা শির্কের সমতুল্য। কোরানের আলোকে আবুহুরায়রার শাহাদা কেন গ্রহনযোগ্য নয় , তা পরবর্তী পোস্টে লেখার ইচ্ছা রইল।
বিষয়: বিবিধ
১২৯৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো পড়ে
মন্তব্য করতে লগইন করুন