ইতিহাস : পাতিহাস নাকি বিজ্ঞান (২)
লিখেছেন লিখেছেন ফারুক হোসেন ২৬ মার্চ, ২০১৪, ১০:২৩:১২ রাত
ক্লাসিকাল যূগের দার্শনিক ঐতিহাসিকদের কর্মের পান্ডুলিপি আবিস্কারের সাথে একটা প্যটার্ণ লক্ষনীয়। এই সকল প্রাচীন দার্শনিক ঐতিহাসিকদের সাথে তাদের পান্ডুলিপি আবিস্কারকের নাম ও কাজের মিল। এমনি কিছু ঘটনা--
প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর নাম শোনেনি এমন সুশীল জ্ঞানী গুণী খুজে পাওয়া যাবে না। তার জীবনকাল এখন থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে খৃঃপূঃ ৪২৮/৪২৭ থেকে খৃঃপূঃ ৩৪৮/৩৪৭। তিনি একাধারে অঙ্কশাস্ত্রবীদ , সক্রেটিসের ছাত্র , দর্শনের ডায়ালগের লেখক ও এথেন্সে পশ্চিমা বিশ্বের উচ্চশিক্ষার প্রথম বিদ্যাপীঠ বা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এরিস্টোটল তার ছাত্র ছিলেন। মজার ব্যপার হলো পশ্চিমা বিশ্বের দর্শনের জনক বলে আখ্যায়িত করা হয় যে সক্রেটিসকে , সেই সক্রেটিসের কোন পান্ডুলিপি কখনো কেউ খুজে পায় নি। সক্রেটিসের কর্ম সম্পর্কে বিশ্ব জেনেছে প্লেটোর লেখার মাধ্যমে। এখন প্লেটো যদি ভূয়া প্রমানিত হয় , তাহলে সক্রেটিসের ও কোন অস্তিত্ব থাকে না।
প্লেটোকে বলা হয় প্লেটোনিজমের জনক। প্লেটোর শিক্ষা বা প্লেটোনিজম তার মৃত্যুর পরে শতাব্দির পর শতাব্দি মানব জাতির চেতনা থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। বলা হয়ে থাকে ৬০০ বছর পরে ইউরোপের অন্ধকার যূগে ৩য় শতাব্দিতে প্লটিনাস বিস্মৃতির অতল থেকে প্লেটোনিজমকে পুনর্জীবিত করেন। প্লটিনাসের সাথে প্লেটোর নামের মিলকে দৈবাত ঘটনা বলে উড়িয়ে দেয়ায় যায়। এর পরে আবারো হাজার বছরের ও বেশি সময়ের জন্য প্লেটোনিজম শীত নিদ্রায় যায় বা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। শেষবারের মতো প্লেটোনিজমের পুনর্জনম ঘটে ১৫শ শতাব্দিতে গেমিস্টো প্লেটোনের মাধ্যমে। আবারো প্লেটোনের সাথে প্লেটোর নামের মিল। এটাকে কাকতালীয় বলা কি ঠিক হবে?
প্লেটোর পান্ডুলিপি মাটির তলা থেকে আলোর মুখ দেখে গেমিস্টো প্লেটোনের সময়ে। গেমিস্টো প্লেটোন প্রাচীন প্লেটোর একাডেমির আদলে ফ্লোরেন্সে প্লেটোনের একাডেমি স্থাপন করেন। প্লেটো ও প্লেটোন উভয়েই উটোপিয়া নিয়ে লিখেছেন। বলা হয়ে থাকে প্লেটোন বিখ্যাত Tractate on the Laws বইয়ের লেখক , যদিও তার অল্পই এখন পাওয়া যায়। প্লেটোনেরটা পাওয়া না গেলে ও প্লেটোর একি নামের আদি Tractate on the Laws এর পান্ডুলিপি পুরোটাই এখন পাওয়া যায়। প্লেটোন ও এরিস্টোটলের ভক্ত স্কলারিয়াসের মাঝে যে দার্শনিক তর্ক পাওয়া যায় তার সাথে প্লেটো ও এরিস্টোটলের তর্কের মিল পাওয়া যায়।
হোমারের নাম শোনেনি এমন কোন জ্ঞানী গুনী খুজে পাওয়া যাবে না। ইলিয়াড ও ওডিসি লেখার কারনে তিনি কাল জয়ী হয়েছেন। সঠিক তারিখ জানা না গেলেও ধারনা করা হয় তার জন্ম খৃঃপূঃ নবম শতকে। ইতিহাসে আরো এক বিখ্যাত এন্জিলবার্ট হোমারের খোজ পাওয়া যায় , যিনি আদি হোমারের ১৬০০ বছর পরে নবম শতকে রাজা শার্লামানের দরবারে রাজকবি ছিলেন। মজার ব্যপার হলো এই দুই হোমার -দুজনেই কবি এবং একজনের জন্ম খৃষ্টের জন্মের ৮০০ বছর আগে , আরেকজনের ৮০০ বছর পরে। এদেরকে ডুপ্লিকেট বললে খুব বেশি ভুল কি বলা যাবে? মার্টিন ওয়েস্টের মতো অনেক ঐতিহাসিকের মতে হোমার একটি কাল্পনিক চরিত্র বা বানানো নাম।
মধ্যযূগের ইরনেরিয়াস(Irnerius) ১০৮৮ সালে রোমান আইনের উপরে বক্তৃতা দেয়ার মাধ্যমে প্রাচীন ইরেনিয়াসের(Erennius) কর্মকে ৯০০বছরের বিস্মৃতির অতল থেকে তুলে এনে পুনর্জীবিত করেন। বলা হয়ে থাকে এই ইরনেরিয়াস আবার জাস্টিনিয়ানের প্রাচীন গ্রন্থাদির পান্ডুলিপির ও সংগ্রাহক।
প্রাচীন জ্যোতির্বিদ এপোলোনিয়াসের কর্মের সূর্য/চন্দ্র গ্রহন অংশটুকু (conical section) ১৫৩৭ সালের আগে প্রকাশিত হয় নি। মজার ব্যাপার হলো কেপলারই প্রথম জ্যোতির্বিদ , যিনি জ্যোতির্বিদ্যায় সূর্য/চন্দ্র গ্রহনের উপর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। জ্যোতির্বিদ এপোলোনিয়াসের সম্পূর্ন কর্ম কেপলারের জমানার পরেই আলোর মুখ দেখে। এমনকি হতে পারে জ্যোতির্বিদ এপোলোনিয়াসের সম্পূর্ন কর্ম পোল কপের্নিকাসের কর্মের সংশোধিত বা হুবহু প্রতিলিপি!! পোল হলো পোল্যান্ড বা পোলোনিয়ার অধিবাসি।
ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের , শত শত বছরের ব্যাবধানে অনেকগুলো ডায়োনিসিয়াস ও ভিক্টরের খোজ পাওয়া যায় , যারা সকলেই পাস্কালিয়ানের সুত্র ও ইস্টারের উপর কাজ করেছেন। ইতিহাসে এইরুপ ডুপ্লিকেট বা ডবলের ছড়াছড়ি।
চলবে--
বিষয়: বিবিধ
১২৬৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন