আইনের শাসন

লিখেছেন লিখেছেন ফারুক হোসেন ১০ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৭:৫৮:০২ সন্ধ্যা

10 Dec, 2013 কাদের মোল্লার আইনজীবি আ্যাড. তাজুল ইসলাম গিয়েছিলেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁকে দেখতে। বাইরে এসে তিনি ফেসবুকে তার অনুভূতি প্রকাশ করেন এভাবে........

আজ সকালে কারাগারে আব্দুল কাদের মোল্লা সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। মৃত্যুদন্ডের চূড়ান্ত আদেশ প্রাপ্ত একজন মানুষের সাথে এরূপ সাক্ষাৎকার এটাই আমার জীবনে প্রথম। আমি মুগ্ধ ও স্তম্ভিত। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কি করে একজন মানুষ এমন অবিচল ও শংকাহীন থাকতে পারে? একজন সত্যিকার ইসলামী আন্দোলনের নেতার মতোই স্মিত হেসে আমাদের সাথে কথা বলছিলেন তিনি। আইনী বিষয়ে পরামর্শের পাশাপাশি তিনি বলছিলেন তার নিজের কথা। বললেন তিনি জীবনে যেসব অপরাধের কথা চিন্তাও করেননি তার দায় তার উপরে চাপানো হয়েছে। যে জায়গায় তিনি কখনো যাননি, যাদের কখনো দেখেননি সেই জায়গায় ঐসব লোকদের হত্যার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে। ভূয়া ও সাজানো লোকদেরকে সাক্ষী বানিয়ে আদালতে আনা হয়েছে। এমন কঠিন অবস্থায় কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- “আজীবন শহীদি মৃত্যু কামনা করেছি। অনেক আগে ছাত্রজীবনে শহীদ সাইয়েদ কুতুবের শাহাদাতের ইতিহাস বলতে গিয়ে অধ্যাপক গোলাম আজম আমার গলায় স্নেহের হাত রেখে বলেছিলেন, একদিন এই ফাঁসির দঁড়ি তোমার গলায়ও পড়তে পারে।” এ ইতিহাস বলতে গিয়ে ক্ষণিকের জন্য আবেগাপ্লুত হলেন তিনি। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন।

“আব্দুল কাদের মোল্লা কোন অপরাধ করেনি। তোমরা নিশ্চিত থাকো, তার মাথা উঁচু ছিল- উঁচুই থাকবে। তোমরা কখনো আমার চোখে পানি দেখবে না ইনশাআল্লাহ।”

মুহূর্তেই ছোট খাটো শরীরের এই মানুষটি আমার কাছে চোখে অসীম হিমালয়ের মত উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। আর আমার দু’চোঁখের জমাট বরফ কেন যেন শ্রাবণের অবাধ্য মেঘ হয়ে ঝরে পড়তে লাগলো...........।


কোথায় যেন পড়েছিলাম - আইনের ফাক গলে ১০ জন অপরাধি পার পেয়ে গেলেও ক্ষতি নেই , একজন নিরপরাধ ও যেন শাস্তি না পায়। একারনেই আমেরিকার মতো উন্নত দেশে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীরা বছরের পর বছর জেলে থাকে ও আইনের ধাপে ধাপে আপিলের সুযোগ নিয়ে সময় ক্ষ্যপন করে। এমনো দেখা যায় ১৫-২০ বছর পরে নুতন প্রমান ও সাক্ষীর ভিত্তিতে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী বেকসুর খালাস পেয়েছে ও ক্ষতিপূরন পেয়েছে বিনা দোষে জেলে থাকার জন্য। এদের সংখ্যা একেবারে কম নয়।

আমরা জীবন নিতে পারি কিন্তু মৃত মানুষকে জীবিত করার ক্ষমতা আমাদের নেই। একারনে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার আগে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। একটু আগে breaking news এ দেখলাম আজ রাতের আগেই কাদের মোল্লার পরিবারকে তার সাথে শেষ দেখা করতে বলেছে। আপিল বা রিভিউ করার সুযোগ না দিয়ে এই যে তাড়াহুড়া করে কাদের মোল্লাকে ফাসি দেয়া হচ্ছে তাতে জিঘাংসা চরিতার্থ হতে পারে , রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরন হতে পারে কিন্তু এটাকে কোনভাবেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা বলা যায় না। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে যুদ্ধাপরাধী বিচারের নামে অস্পষ্ট বিচারের মাধ্যমে দেশ কে বিভক্ত করে আজকের এই অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য আওয়ামি লীগকে একদিন কাঠগড়ায় দাড়াতে হলে আমি আশ্চর্য হব না।

সত্যিই যদি কাদের মোল্লা নির্দোষ হয়ে থাকে , যেমনটি তার দাবী , তাহলে তাড়াহুড়া করে তাকে ফাসিতে ঝুলানোর দায় আমাদের সকলের উপরে আসে। সেই দায় থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য এই পোস্ট।

১৭:৩৭ পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূ পৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না।

বিষয়: রাজনীতি

১২০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File