ইসালামের নবীর সাক্ষাৎকার

লিখেছেন লিখেছেন ফারুক হোসেন ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৩:৪২:৪৫ দুপুর

সা= সাংবাদিক

ম= নবী মুহাম্মদ

---------------------------------------------------------------------------------------------------

ইসলামের নবী মুহাম্মদ বর্তমানের বহুধা বিভক্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন--

সা- ও আমাদের প্রিয় নবী। আপনাকে কিছু প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার এই দয়ার কথা কখনো ভুলবো না।

ম- যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা' আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা। (১:২)

সা- হ্য , তাতো বটেই। দুঃখিত এমন প্রশ্নের জন্য--এখন আপনি কি আমাদের বলবেন , আপনি কে এবং ইসলাম ধর্মে আপনার অবস্থান কোথায়?

ম- বলে দাও, হে মানব মন্ডলী। তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রসূল, সমগ্র আসমান ও যমীনে তার রাজত্ব। একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা নয়। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর উপর তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার।(৭:১৫৮)

সা- বোঝা গেল আপনি আল্লাহ প্রেরিত রসূল। তো... রসূল হিসাবে আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য কী?

ম- আমি তাদের সাথে যে ওয়াদা করেছি, তার কোন একটি যদি আপনাকে দেখিয়ে দেই কিংবা আপনাকে উঠিয়ে নেই, তাতে কি? আপনার দায়িত্ব তো পৌছে দেয়া এবং আমার দায়িত্ব হিসাব নেয়া।(১৩:৪০)

সা- আপনি বলছেন আপনার দায়িত্ব হলো শুধুই কোরানের বাণী পৌছে দেয়া? না না , তা কি করে হয়!! আবার বলেন না কোন রকম ব্যাখ্যা ও শিক্ষা দেয়া ছাড়াই তোতা পাখির মতো কোরান আবৃত্তি করাই আপনার দায়িত্ব?

ম- প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে নির্দেশাবলী ও যাবুর এবং আপনার কাছে আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন, যে গুলো তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।(১৬:৪৪)

সা- ওকে ... তাহলে কোরানের বাণী আপনি মানুষের কাছে কিভাবে বর্ণনা বা ব্যাখ্যা করেন?

ম- আমি আপনার প্রতি এ জন্যেই গ্রন্থ নাযিল করেছি, যাতে আপনি সরল পথ প্রদর্শনের জন্যে তাদের কে পরিষ্কার বর্ণনা করে দেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে এবং ঈমানদারকে ক্ষমা করার জন্যে।(১৬:৬৪)

সা- ওয়াও! এর মানে দাড়ালো এই গ্রন্থ দিয়েই আপনি পরিষ্কার বর্ণনা বা ব্যাখ্যা করে দেন। কিন্তু .. তা কিভাবে সম্ভব?

ম- সেদিন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে আমি একজন বর্ণনাকারী দাঁড় করাব তাদের বিপক্ষে তাদের মধ্য থেকেই এবং তাদের বিষয়ে আপনাকে সাক্ষী স্বরূপ উপস্থাপন করব। আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাযিল করেছি যেটি এমন যে তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্যে সুসংবাদ।(১৬:৮৯)

আমি এই কোরআনে মানুষকে বিভিন্ন উপমা দ্বারা সব রকম বিষয়বস্তু বুঝিয়েছি। কিন্তু অধিকাংশ লোক অস্বীকার না করে থাকেনি।(১৭:৮৯)

অতঃপর আমি যখন তা পাঠ করি, তখন আপনি সেই পাঠের অনুসরণ করুন। এরপর বিশদ বর্ণনা আমারই দায়িত্ব।(৭৫:১৮-১৯)

সা- দেখা যাচ্ছে কোরান নিজেই নিজের ব্যাখ্যা দেয় এবং এর বিষদ বর্ণনা দেয়ার দায়িত্ব আল্লাহর। হুম .. কিন্তু যাই বলেন , শুধুমাত্র একটি পিয়নের ভূমিকা আপনার হতে পারে না। আপনার সম্পর্কে কত ভাল ভাল অত্যাশ্চর্য ঘটনা শুনেছি , তা তো আর মিথ্যা হতে পারে না।

ম- আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুতঃ কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন।(৩:১৪৪)

সা- দাড়ান দাড়ান , আপনি একি বলছেন? এত দিন যা শুনে এসেছি জেনে এসেছি তার কিছুর সাথেই তো মিলছে না। শুধু একটা --

ম- আপনি যতই চান, অধিকাংশ লোক বিশ্বাসকারী নয়। আপনি এর জন্যে তাদের কাছে কোন বিনিময় চান না। এটা তো সারা বিশ্বের জন্যে উপদেশ বৈ নয়। অনেক নিদর্শন রয়েছে নভোমন্ডলে ও ভু-মন্ডলে যেগুলোর উপর দিয়ে তারা পথ অতিক্রম করে এবং তারা এসবের দিকে মনোনিবেশ করে না। অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে। (১২:১০৩-১০৬)

সা- তাইতো বলি , আল্লাহর নামের সাথে কেন আপনার নাম ও উচ্চারিত হয় তা এখন বোধগম্য হচ্ছে। আমাদের ধর্মগুরুরা বলে থাকেন আপনার ব্যাখ্যা ছাড়া কোরান বোঝা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?

ম- তারা আপনার কাছে কোন সমস্যা উপস্থাপিত করলেই আমি আপনাকে তার সঠিক জওয়াব ও সুন্দর ব্যাখ্যা দান করি।(২৫:৩৩)

সা- আপনি বলছেন কোরানের ব্যাখ্যা কোরান নিজেই। ওয়াও!! পরীক্ষা করে দেখা যাক কোরানে সকল সমস্যার জবাব আছে কি না? না না আমি আপনাকে টেলিভিশন খারাপ হলে কিভাবে ঠিক করতে হবে সে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করব না , সে প্রশ্নটি থাকুক ফ্যসাদসৃষ্টিকারীদের জন্য। কিন্তু তারপরেও .. আমি শুনেছি কোরান বোঝা খুব কঠিন , মানে বলতে চাচ্ছি অন্য কেউ ব্যাখ্যা করে না দিলে কোরান বোঝা সম্ভব নয়।

ম- আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? (৫৪:১৭)

সা- বিষ্ময়কর! মুসলিম উম্মাহ ও ধর্মগুরুরা বলছে এক কথা আর আল্লাহ বলছেন সম্পুর্ন বিপরিত কথা। এখন অন্য প্রসঙ্গে যাই --

আপনি ইসলামের রোল মডেল , যাকে নাকি অনুকরন ও অনুসরন করা লাগবে?

ম- যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। (৩৩:২১)

সা- মুসলমানদের অনুকরন ও অনুসরনের জন্য আপনিই কি একমাত্র উত্তম নমুনা?

ম- তোমাদের জন্যে ইব্রাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার এবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে। কিন্তু ইব্রাহীমের উক্তি তাঁর পিতার উদ্দেশে এই আদর্শের ব্যতিক্রম। তিনি বলেছিলেনঃ আমি অবশ্যই তোমার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করব। তোমার উপকারের জন্যে আল্লাহর কাছে আমার আর কিছু করার নেই। হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা তোমারই উপর ভরসা করেছি, তোমারই দিকে মুখ করেছি এবং তোমারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন। (৬০:৪)

তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা কর, তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জানা উচিত যে, আল্লাহ বেপরওয়া, প্রশংসার মালিক। (৬০:৬)

সা- যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমাদের বলবেন , আপনাকে কোন মডেল কি দেয়া হয়েছিল ?

ম- অতঃপর আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছি যে, ইব্রাহীমের দ্বীন অনুসরণ করুন, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন এবং শিরককারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না। (১৬:১২৩)

সা- এক মিনিট .....মুসলমানদের আপনাকে মডেল মেনে অনুসরন করতে হবে এবং আপনি মডেল হিসাবে ইব্রাহিমকে অনুসরন করেন। এর অর্থ কি এই , আপনি যেভাবে ঘুমাতেন ঠিক সেভাবেই ঘুমাতে হবে বা কোলগেট দিয়ে দাত মাজা যাবে না?

ম- আর তুমি চল সে অনুযায়ী যেমন ওহী আসে তোমার প্রতি এবং সবর কর, যতক্ষণ না ফয়সালা করেন আল্লাহ। বস্তুতঃ তিনি হচ্ছেন সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।(১০:১০৯)

সা- তাই বলেন!! আসলেইতো .....আপনি অনুসরন করেন কোরানকে আর মুসলমানদের অনুসরন করতে হবে আপনাকে অর্থাৎ কোরানকেই। ধর্মগুরুরা বলে থাকেন আপনার মতো করে কাপড় পরতে হবে বা খেতে হবে , যেগুলা আমরা কোরানে পাইনা। এব্যপারে আপনি আল্লাহকে কি বলবেন?

ম- রসূল বললেনঃ হে আমার পালনকর্তা, আমার সম্প্রদায় এই কোরআনকে প্রলাপ সাব্যস্ত করেছে। (২৫:৩০)

সা- ও নবী আমার তো কান্না পাচ্ছে এসব শুনে। কোরানের পরিস্কার আয়াত শোনার পরেও যদি কেউ মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আমাদের কি করার আছে? প্লিজ সাহায্য করুন।

ম- অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলে দিনঃ আমি তোমাদেরকে পরিস্কার ভাবে সতর্ক করেছি এবং আমি জানি না, তোমাদেরকে যে ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তা নিকটবর্তী না দূরবর্তী।( ২১:১০৯)

আপনার সম্প্রদায় একে মিথ্যা বলছে, অথচ তা সত্য। আপনি বলে দিনঃ আমি তোমাদের উপর নিয়োজিত নই। (৬:৬৬)

সা- আরো অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করার ছিল , কিন্ত সময় শেষ। আশা করি ভবিষ্যতে যদি সুযোগ পাই তাহলে আপনাকে নিয়ে যে সকল রূপকথা ও গল্প চালু আছে , সে ব্যাপারে আপনার মতামত জানব ইনশাল্লাহ।

ম- বলুনঃ আমাকে তো এ আদেশই দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য। সুতরাংতোমরা কি আজ্ঞাবহ হবে? (২১:১০৮)

সা- হে প্রিয় নবী আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। ছালাম।

বিষয়: বিবিধ

১৬০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File