বেহেশত/জান্নাতের বিবরন
লিখেছেন লিখেছেন ফারুক হোসেন ১২ আগস্ট, ২০১৩, ০৫:৪৯:২০ বিকাল
বেহেশত ও বেহেশত নিয়ে আলোচনার চেয়েও সুন্দর , মজাদার আর কি আছে.....এর আকাঙ্খা বুকে ধারন করেই অধিকাংশ মুসলমান নরকসম এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরলোকে যাত্রা করে।
প্রায় সকল ইসলামি পন্ডিতগণ বেহেশতের সুখ , বিলাসিতা এবং আনন্দদায়ক বর্ণনা সম্বলিত কোরানের আয়াতসমূহের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করে থাকেন তাদের 'পার্থিব' জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে। এগুলো হলো- ঝুলন্ত পাকা টসটসে খেজুর , আঙ্গুর ও বিভিন্ন উপাদেয় ফল মূল সমৃদ্ধ বৃক্ষসমূহ , যার জন্য হাত বাড়িয়ে পাড়াও লাগবে না শুধু পাওয়ার ইচ্ছার অপেক্ষা, খাওয়ার ইচ্ছা হলেই এগুলো নিজে নিজেই মুখের ভিতরে ঢুকে যাবে , ঠান্ডা ঝর্ণার মুক্তার মতো স্বচ্ছ পানি , তাজা দুধ মদ ও মধুর নদী , ৭০টা কুমারী হুরী .....
যাই হোক , কোরান আমাদের 'সীমাবদ্ধ' এই বুঝের ব্যাখ্যা বহু আয়াতেই দিয়েছে। আল্লাহ বলেছেন , বেহেশতের বর্ণনাগুলো সাদৃশ্য বা রূপক ছাড়া আর কিছুই নয় , পার্থিব বাস্তবতা নয়।
৭৪:১৫ পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার সাদৃশ্য (مَثَلُ) নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর যারা স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় তাদের জন্যে আছে রকমারি ফল-মূল ও তাদের পালনকর্তার ক্ষমা। পরহেযগাররা কি তাদের সমান, যারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি অতঃপর তা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে?
বেহেশতের এই বর্ণনা হলো সাদৃশ্য বা রূপক। বাস্তবের বেহেশত আমাদের সকলের কল্পনা ও জ্ঞানের উর্ধে। বাস্তবের এমন কোন ফুটন্ত পানির কথা আমরা জানিনা যা নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এমন কোন শরাবের কথা জানিনা যা সুস্বাদু।
৩২:১৭ কেউ জানে না তার জন্যে কৃতকর্মের কি কি নয়ন-প্রীতিকর প্রতিদান লুক্কায়িত আছে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে বেহেশতের সুখ ও আনন্দ লুক্কায়িত , গুপ্ত। যেমনটি দোযখের আযাব ও। দোযখে আগুনের মাঝখানে 'জাকুম' নামে এক গাছ আছে যার ভিতরে ফুটন্ত পানি আছে যা পোড়ায়।
বাস্তবে এমন কোন গাছের কথা কি জানি যা আগুনের মাঝে জন্মে ও ফুটন্ত পানি ধারন করে?
যারা জননাঙ্গের দৃষ্টিকোন থেকে বেহেশতে যৌণসুখের কল্পনায় বিভোর , তাদের স্মরন করিয়ে দিতে চাই - বেহেশতে বাচ্চা জন্ম দেয়ার কোন ব্যাপার স্যাপার নেই অর্থাৎ নুতন কোন বাচ্চা জন্মাবে না বা কেউ প্রেগন্যান্ট হবে না বা প্রসব বেদনা ও থাকবে ন। যেকারনে বেহেশতে জননাঙ্গের প্রয়োজনীয়তাও নেই হয়ে যাবে। যেমনটি নেই হয়ে যাবে মলনালী/rectum, কারন বেহেশতে কেউ পায়খানা করবে না। বেহেশত যেহেতু শান্তির আবাস , সেহেতু থাকবে না কোন রোগ শোক , ব্যাক্টেরিয়া ভাইরাস। ফলে দরকার হবে না শরীরের রোগপ্রতিরোধক অঙ্গের (immune system)। হয় এসব অঙ্গ প্রত্যাঙ্গ নাই হয়ে যাবে বা অব্যাবহারের ফলে এপেনডিক্সের মতো অবিকশিত rudimentary হয়ে যাবে।
১৫:৪৭ তাদের অন্তরে যে হিংসা ছিল, আমি তা দূর করে দেব। তারা ভাই ভাইয়ের মত সামনা-সামনি আসনে বসবে।
এর অর্থ দাড়ায় পরজন্মে শারীরিক অঙ্গের মতো মানসিক চিন্তার ও পরিবর্তন ঘটবে। সুতরাং নুতন সৃষ্টিতে (Nash'a Ukhra) আমরা ভিন্ন জন্ম ও ভিন্ন শারীরিক ও মানসিক গঠনই মনে হয় পেতে যাচ্ছি।
৭৫:২২-২৩ সেদিন অনেক মুখমন্ডল সুখি হবে। তারা তার পালনকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকবে।পালনকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকায় সুখ!! এমনি হবে পরজন্মের উচ্চ মার্গের সুখ , যা এই পৃথিবীতে আমাদের বুঝে আসে না।
পরকালের সুখ যে এমনি হবে তা পরিস্কার ভাবে আল্লাহ বুঝিয়েছেন পাপীদের উদ্দেশ্যে বলা নিচের এই আয়াতে-
৩:৭৭ আর তাদের সাথে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি দৃষ্টিও দেবেন না।এমনি কঠিন শাস্তি ও দুর্ভোগ পাপীরা রোজ হাশরের ময়দানে উপলব্ধি করবে।
আমরা কেমনে পালনকর্তা আল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকব? এটা কি আমাদের এই মানবিক চোখ দিয়ে তাকিয়ে থাকব , যা কিনা শুধু মাত্র দুরত্ব ও আকৃতি (shapes) দেখতে পারে? নাকি অন্তরের চোখ দিয়ে তাকিয়ে থাকব? এটাই রহস্য। এই রহস্যের উত্তর জানতে হলে আমাদের রোজ হাশরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকা লাগবে এবং এই তাকিয়ে থাকার মধ্যে যে চরম সুখ ও শান্তি , তার গভীরতা রোজ হাশরের আগে পর্যন্ত গুপ্ত লুক্কায়িতই থেকে যাবে।
বেহেশত ও দোযখ গুপ্ত, এখনো সৃষ্টিই হয় নি। এর সাদৃশ্য হলো গুটি পোকা ও নয়ন জুড়ানো প্রজাপতির সৌন্দর্যের মাঝের সাদৃশ্যের মতোই। কুৎসিত গুটিপোকা দেখে কি প্রজাপতির সৌন্দর্যের কথা কল্পনায় আসে , যদি ও এরা একি প্রাণী।
৭৬:১৯ তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরগণ। আপনি তাদেরকে দেখে মনে করবেন যেন বিক্ষিপ্ত মনি-মুক্তা।
ইসলাম বিদ্বেষীদের সবচেয়ে ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় আক্রমনের লক্ষ্য হলো এই আয়াতটি , যা তাদের অসুস্থ সমকামী যৌণকামনার বহিঃপ্রকাশ। চোখের সামনে নিজের বা পরের ছোট বাচ্চা কিশোর ঘুরঘুর করতে দেখে ও তাদের সাথে (যৌণতা মুক্ত) খেলা করে আনন্দ পায় না এমন লোক খুজে পাওয়া দুষ্কর। সিরিয়াল খুনী ও নিজের বাচ্চাকে আদর করে , ভালবাসে। মনে রাখা দরকার , বেহেশতে যেহেতু নুতন বাচ্চা জন্ম নেবে না , সেকারনে কিশোর সঙ্গের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হওয়ার জন্যই এই ব্যাবস্থা।(সত্যি সত্যিই কিশোর থাকবে নাকি কিশোর সঙ্গের আনন্দকে বোঝানোর জন্য এই সাদৃশ্য আয়াত , আমি জানি না)
বেহেশতের সুখ ও শান্তি পেট ও চ্যাটের আকাঙ্খা পূরনের জন্য যে নয় তা বুঝতে হলে কোরানের সকল বাণী অনুধাবন করা প্রয়োজন। আমরা ভ্রমনে আছি , লক্ষ্য পালনকর্তা পর্যন্ত পৌছানো।
৮৪:৬হে মানুষ, তোমরা পালনকর্তার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যেই নিরন্তর এগিয়ে চলেছ।"O humans, you are irreversibly heading for a meeting with your Lord." (84:6)
অনেক দুর পথ পাড়ি দেয়া লাগবে। আল্লাহ যেহেতু চিরজীবি চিরস্থায়ী , সেহেতু মনে হয় এই যাত্রা ও অনন্তকাল ধরেই চলতে থাকবে। বেহেশতের বাসিন্দা পূন্যবান নারী ও পুরুষ বলবে -
৬৬:৮ তারা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে , এই ভ্রমন এই যাত্রা বেহেশতে ও দোযখেও চলতে থাকবে। যে পূণ্যবান সে বেহেশতের সুখ ও আনন্দের মাঝে থেকে এই পথ পাড়ি দেবে , আর পাপী দোযখের কষ্টের মাঝে থেকে এই পথ পাড়ি দেবে।
তোমার প্রভুর কাছেই সমাপ্তি।
বিষয়: বিবিধ
১৮০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন