সাভার ট্রাজেডী্র এপিঠ-ওপিঠ
লিখেছেন লিখেছেন হুতোম পেঁচা ০১ মে, ২০১৩, ১২:৪৪:০৬ রাত
সাভারের রানাচেম্বারে নিহত হওয়া চারশ মানুষের লাশ আর নিখোজ় হওয়া হাজার খানেক মানুষের জীবনের দাম এ রাষ্ট্রের কাছে হয়তো বিশ হাজার টাকা,গার্মেন্টস মালিকের কাছে মুনাফা আর রাজনীতিবিদদের কাছে ক্ষমতায় যাওয়ার আরেকটি ইস্যু। সরকারের তৃপ্তির ঢেঁকুর দুই হাজার মানুষের জীবিত উদ্ধার,কিন্তু এক হাজার মৃতের জন্য নেই ব্যর্থতা আর শোকের গ্লানি। তাদের যাবতীয় মায়াকান্না অবশ্য বরাদ্দ থাকে আগষ্ট মাসের জন্য, তাই অন্যান্য মাসে ঘটে যাওয়া তাজ়রীন গার্মেন্টস ,রানা প্লাজার নিরীহ মানুষের জন্য থাকে না কান্নার বরাদ্দ। তাইতো মহামান্য রাষ্ট্রপ্রধান সাভারে গিয়েও এদের আহাজারি দেখতে পান না, শুনতে পান না এই বোবা আর্তনাদ।গনতন্ত্রের মানসকন্যা এ মৃত্যুর দায় চাপিয়ে দিলেন এই শ্রমিকদের অতিলোভের কারনে গার্মেন্টেসে ফিরে যাওয়াকে। দেশের বিরোধী দল এতই দরিদ্র যে ক্ষমতায় গেলে বিশ লাখ টাকা দিবে, এখন বিশহাজার দেয়ারও সামর্থ্য নেই। রাজনীতির নির্লজ্জতা কতটা উচ্চ শিখরে গেলে এতগু্লো মানুষের লাশ আহাজারি-আর্তনাদকেও তারা ক্ষমতায় যাওয়ার যাওয়ার সিড়ি হিসেবে ব্যবহার করে। বধির এদের বিবেক।তাই রানা সরকার দলীয় লোক হওয়ায় রানা কে বাঁচানোর যেমন চেষ্টা তেমনি রানাকে নিয়ে রাজনীতিক ফায়দা লোটারও চেষ্টা বি্রোধী দলের। এই রাজনীতির আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে এক ভয়ংকর মৃত্যুচক্র।সাভার ট্রাজেডির মূল খলনায়ক রানা হলেও রানা প্লাজা ডেথচেম্বার নির্মানে অনুমতি দিয়েছে রাজউক-সাভার পৌরসভা,আগের দিন এই ফাটল ধরা বিল্ডিং কে সামান্য প্লাস্টার খুলে পড়া বলে সার্টিফাই করেছে ইউএনও,আর ঠেলে ঠেলে এই নিরীহ মানুষগুলোকে ওই ডেথচেম্বারে ঢুকিয়েছে ঐ রানা আর গার্মেন্টেসের মালিকেরা।মুন্নিসাহার মত এক শ্রেনীর চণ্ডাল সাংবাদিকরা চেপে গেছে ফাটলের খবর,উদ্ধার করার জন্য কাটা সুরংগে ঊপুত হয়ে মানুষের অনুভূতি জানতে গিয়ে গুম হয়ে যায় হাজারো লাশের খবর।এ সব নরপিশাচদের তৈরী করেছে এ রাষ্ট্র। যাদের ঘামের টাকায় রাষ্ট্রের এ চশমখোরদের ফুটানি তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্রের নির্লিপ্ততা তৈরী করেছে এই ডেথসিস্টেম।
এই চিত্রের বিপরীতটা হলো সাধারন মানুষের অসাধারন সহমর্মিতা।শাহবাগি-হেফাজ়তী তরুন প্রজন্ম ঐ নষ্ট নেতাদের দিকে তাকিয়ে থাকে নি।তারা মানবতার ডাকে,বিবেকের চাহিদায়,ইমানের আলোকছটায় গিয়েছে সাভারে । এনাম মেডিকেল হয়তো রাষ্ট্রের কোনো স্বীকৃতি পাবে না,কিন্তু তাদের এই মহান সেবা আর আত্তত্যাগ পেয়েছে আপামর জনগনের স্যালুট ।যে ডাক্তার-নার্সরা টানা কাজ করেছেন এ অসহায় মানুষ গুলোর জন্য তাদের প্রতি ভালবাসা আর দোয়া থাকবে সবার।দেশের দরিদ্র সরকার ১২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে ব্যক্তি জিঘাংসার জন্য, অস্র-মিগ কেনার সামর্থ্য থাকে, থাকে না শুধু গরীবমানুষের জ়ন্য ড্রিল মেশিন, উদ্ধার যন্ত্র,শুকনা খাবার,পানির মত দামি জিনিষ কেনার পয়সা। যখন ওয়ার্ল্ডব্যাংক,আইএমএফ এর কাছে টাকা আনার জন্য ফকিরনীর মতো চেয়ে থাকে,পান থেকে চুন খসলেই বিদেশিদের পদলেহনে ব্যস্ত তখন আত্তসম্মান থাকে কেতাবে,পদ্মাসেতু দুর্নীতিতে সরকারের মুখশ্রী উজ্জ্বল হয়,আত্তসম্মান খুলে পরে শুধু অসহায় মানুষ গুলোকে উদ্ধারে বিদেশী সাহায্য নিতে। সাধারন মানুষ এই কোটি টাকার আত্তসম্মানে্র নিকুচি করেছে।এই নির্লিপ্ত সরকার ফকির হলেও এদেশের সাধারন মানুষ চিরকাল বড় মনের।তারা নিজেরাই এবার দেখিয়ে দিল এই নৈতিকতাহীন সরকারকে এদেশে এখনও মানবতা আছে। সাধারন মানুষের বন্ধু যে তারাই তা প্রমানিত যে সাহায্যের র্পযাপ্ততায়। এটা এদেশে এক বিরল ঘটনা।সাভার মানুষের মানবতার অন্য সংগা দেখেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে আটক নেতার ইবনে সিনা বিনামুল্যে চিকিতসা দেয়,৫ লাখ টাকার ঔষধ দেয়, আর মানবতার কোরাস গাওয়া প্রথম আলো, স্কয়ার, শাঈখ সিরাজদের ইনসেপ্টা তখন হাজার নৃত্যের তালে তারকাদের ডীংকা-চিকা নাচে দোলে। সাভার খুজে পায়নি এদেশের মানবতার বড় ইজারারদার সুলতানা কামাল, নাকিকান্না বিশেষজ্ঞ মিজানুর রহমান,তরুনদের আবেগ ব্যবসায়ী জাফর ইকবালকে।সাভারের দেখার কথাও না বিশ্ব সেলিব্রেটি ড ইউনুস কে যদিও গরিবের টাকায় তিনি আজ নোবেলজয়ী। সাভারের ঘটনার পর এসব সুশীল ভন্ড পরজ়িবীদের থেকে সেই বিদ্যুত মিস্ত্রী রুবেল,এনাম মেদিকেলের সাদা মানুস ডা এনাম, শাহবাগের সেই ডাক্তাররা কিংবা হেফাজতের সাদা কাপড় মাথায় জ়ীবনবাজী রাখা উদ্ধারকারীরা আজ আমাদের কাছে আইডল।
কিন্তু আমরা ভুলোমনা জাতি।আমরা ভুলে যাই,আমরা ভুলে থাকতে ভালোবাসি। আজ যদি সাভারের ঘটনা নতুন আরেকটা সাভার না আসা পর্যন্ত আবার ভুলে থাকব। শাহানা নামের যে মেয়েটি শেষ পর্যন্ত বাঁচতে চেয়েছিল তার দেড় বছরের বাচ্চাটির জন্য,সে মেয়েটি বাঁচতে পারেনি কিন্তু এ বাচ্চাটির দ্বায়িত্ব নেবে না এ রাষ্ট্র,নিতে হবে এ সাধারনকেই। এ মানব হত্যার বিচার এ দেশে হবে না যেমনটি হয়নি অতীতে কিন্তু এ নব উদ্যম যেন থেমে না যায় সাভার ট্রাজেডির পরে। । যে সাভার আমাদের মানবতা,আমাদের একত্ববোধ জাগিয়েছে তা নিয়ে আমাদের এখনি উদ্যোগ নিতে হবে এ জালিম রাষ্ট্রযন্ত্রকে মজলুমের আর্তনাদ শোনাতে। যে শাহানারা মরে গেল সমাজের নিষ্ঠুর মানুষগুলোর প্রতি ঘৃনা রেখে,সেই সেলাই দিদিমনিদের বাঁচাতে আরেকবার এক হতে হবে। এক রানার হাজ়া্রবার ফাঁসি হলে কিছু হবে না কারন যারা যা হারিয়েছে তা উপলব্ধি করার ক্ষমতা এ সমাজের নেই। এ রাষ্ট্র নিলিপ্ত থাকবে, এ সরকার-বিরোধীদল কোটি টাকার আত্তসম্মান নিয়ে বেশ্যার মত ঝগড়া করবে, প্রথম আলো আর মিজানদের মত সুশীলরা লাশের উপর নাচবে,বিজিএমইএ ইমেজ সংকটে ভুগবে কিন্তু সাধারনদের যে অসাধারন বীরত্ব আর মানবিকতা সাভারে দেখা গেল তাতে আর কোনো সাভার ট্রাজেডি এ দেশে যেন না হয়,আর কোন মা-বাবা,কন্যা-পুত্রের আহাজারিতে আমাদের আকাশ ভারী না হয়। আমরা এই দেশকে বাঁচাতে এখনি ভাবি।আ্মাদের লাশের উপর দাড়িয়ে আর কোনো রাজনীতি, আর কোনো মানবতার ব্যবসা যেন কেউ করতে না পারে।সাভারের নিহত সবার এই ত্যাগের বিনিময়ে রানাহীন,রানাদের গডফাদারহীন একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে পারি।
প্রায় চারশ মতো লাশ উদ্ধার হলেও নিঁখোজ রয়েছে প্রায় হাজার খানেক মানুষ।রাষ্ট্র আমাদের বেঁচে থাকার দ্বায়িত্ব না নিলেও মৃত হিসেবে থাকার দ্বায়িত্বটুকু যেন নেয়।এ নির্মম রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে সাধারন নাগরিকের আর চাওয়ার কিছু নেই।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন