ফেসবুকে শহীদ কামারুজ্জামান ও শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার সন্তানদের প্রতিক্রিয়া।
লিখেছেন লিখেছেন রায়ান মাসরুর ১২ এপ্রিল, ২০১৫, ১০:৪১:৫৭ সকাল
পিতাকে শেষ বিদায় দেয়ার পর কেমন আছেন তাদের পিতা এমনটা বারবার চোখের সামনে ভাসছিল কামারুজ্জামানের সন্তানদের। শুধু তাদেরই নয় সম্ভবত ফাসিঁর দন্ডপ্রাপ্ত প্রতিটি জামায়াত নেতার পরিবারেই একই দৃশ্য ছিল গতরাতে। ফেসবুকে তাদের সন্তানদের কিছু স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরলাম।
পিতার শাহাদাতের পর মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামীর ফেসবুক স্ট্যাটাস- "Inna lillahi wa inna ilaihi rajiun. Surely we belong to Allah and to Him shall we return."
ওয়ামী ৬ এপ্রিল লিখেন, "যারা পরকাল এবং শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস করেন তারা মানুষের গড়া আদালতের দেয়া রায়ে বিচলিত হতে পারেন না। বিশেষ করে সেই আদালতের রায়ে যে আদালত স্বৈরাচারের সাথে রাত্রিযাপন করে।"
ওয়ামী এর আগে ৭এপ্রিল ফেসবুকে লিখেন- "An innocent man will be killed tonight. We have received a letter from the jail authorities to visit my father Muhammad Kamaruzzaman for the last time before he starts his eternal journey in the afterlife. Please pray that such injustice does't happen to anyone else, even to a killer and dictator like Sheikh Hasina."
পিতার মৃত্যুর পর ফেসবুকের ওয়ালে শুধু ইন্নালিল্লাহ লিখলেও ৭ এপ্রিল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ছোট ছেলে হাসান ইমাম ওয়াফী লিখেন- "Stay strong and only ALLAH save your family InShaAllah................"
পিতার শাহাদাতের খবরে কামারুজ্জামানের একমাত্র মেয়ে আতিয়া নূর ফেসবুকে কোন প্রতিক্রিয়া না জানালেও তার ভাইদের মতো প্রোফাইল পিকচারটি কালো আবরণে ঢেকে ফেলেন।
প্রিয় চাচার কথা স্মরণ করে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার ছেলে মওদুদ মোল্লা তার ফেসবুকে লিখেন-
"আল্লাহ রাখবেন একসাথে আলাদা করবে কে?
১৯৯২ সালে আমরা কামারুজ্জামান চাচার সাথে এক বাসায় ২ তালা আর ৩ তালায় থাকতাম। পরে আর তা হয়ে উঠেনি।২০০১ সালে আব্বু একদিন বাসায় এসে বললেন, "কামারুজ্জামান ভাইয়ের সাথে মিরপুরে একসাথে প্লট নেবার সুযোগ পেয়েছি, দেখি নেয়া যায় কিনা।" পরে বিভিন্ন কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। পরে চাচাদের মিরপুরের বাসায় একদিন গেলে উনি আফসোস করে আব্বুকে বলেছিলেন, "মোল্লা ভাই, আমাদের সাথে থাকার কথা বলে আপনারা আর আসলেননা। আমি বড় একা পরে গেলাম।
আল্লাহর কারবার! বোঝা বড় দায়! আজ জান্নাতে তাদের একসাথে বাসা। একই বাগানে তাদের বিচরণ।
আল্লাহ আমাদের পরিবারকে সম্মানিত করেছেন। আমাদের গর্বে এতো তাড়াতাড়ি ভাগ পড়বে ভাবিনি। ধৈর্য রাখেন Hasan Iqbal, Hasan Iqram Waly, Hasan Imam Wafy, hasan wassey, Hasan Zaman Safi। সবার দেখা হবে জান্নাতের সিঁড়িতে ইনশাল্লাহ।
— feeling proud "
শহীদ কামারুজ্জামানকে শেষ বিদায় দিয়ে এসে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার মেয়ে আমাতুল্লাহ পারভীন-
"তিনি চলে গেলেন মহান প্রভুর সান্নিধেয় ,শহীদী মৃত্যুকে করলেন আলিঙ্গন।।প্রিয় বাবার মত প্রিয় চাচাকেও শেষ বিদায় জানিয়ে আসলাম।। কি আশ্চর্য সেই প্রশান্তচিত্ত, নির্ভীক আর দিঢ় ইমানের অধিকারী মুমিনকেই দেখতে পেলাম। চাচাকে আব্বুর কাছে সালাম পোঁছাতে বলেছিলাম, তিনি এখন নিশচয়ই আব্বুর সাথে জান্নাতের বাগানে অবস্তান করছেন। আর সহিদের মর্যাদা দেখে আবার সহিদ হবার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছেন। শহীদ কামারুযযামান চাচা আপনি আমাদের ক্ষমা করবেন। আমরা আপনাদের ধরে রাখতে পারিনি।জান্নাতের পাখি হয়ে উড়ে চলে গেলেন আমাদের সবাইকে ফাঁকি দিয়ে। হে আল্লাহ্ তুমি এই জালিমদের বিচার এই দুনিয়াতেই দেখায়ও।"
--- Amatullah Parvin
জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমাদ মাবরুরু লিখেন,
"জীবনে কিংবা মরনে দুজনের বন্ধুত্ব হয়ে রইলো অমলীন..
আমার ছোট বেলার স্মৃতি বলতেই মগবাজারের মীরবাগ এলাকার শৈশব। তখন সংগঠনের দায়িত্বশীলদের অনেকেই একসাথে একই এলাকায় থাকতাম। আমাদের বাসার কয়েক গজ দূরেই একটি বিল্ডিং ২য় আর ৩য় তলায় থাকতেন শহীদ কামারুজ্জামান ও শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা। সেখান থেকে বাসা পাল্টে কামারুজ্জামান চাচা তারপর মধুবাগের একটি বাসায় চলে যান এবং সেখানে অনেকদিন ভাড়া বাসায় ছিলেন তিনি।
জামায়াতের সাংগঠনিক জীবনে খেয়াল করলে দেখবেন যেখানেই শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার কোন ছবি পাবেন, সেখানে আবার শহীদ কামারুজ্জামানকেও পাবেন। পেশাগত দিক থেকেও ছিল মিল। দুজনেই ছিলেন সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি এবং প্রেসক্লাবের সদস্য। ছাত্রজীবনেও দুজনই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দুইজনই জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
২০১০ সালে যখন জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার করা হয়, তখন আমীরে জামায়াত, আল্লামা সাইদী এবং আমার পিতা (আলী আহসান মো: মুজাহিদ) একই দিন গ্রেফতার হন। আর তার ঠিক ১৪ দিন পর হাইকোর্ট থেকে একই সাথে গ্রেফতার হন শহীদ কামারুজ্জামান ও শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা। এরপর থেকে তারা একই সাথে গিয়েছেন রিমান্ডে, আদালতে এবং সর্বশেষ কারাগারে।
কারাগারে প্রথম ৩ জন ডিভিশন পেলেও আবারও মিল এই দুই শহীদের মধ্যে। তারা ডিভিশন পেলেন না। প্রায় ৭-৮ মাস কষ্ট করার পর এক সময় তারাও ডিভিশন পেলে এই ৫ নেতা এক সাথে থাকছিলেন। কিন্তু সেই সুখও বেশী দিন যেন সইলোনা। আবার আল্লামা সাইদী চাচা এবং আব্বাকে পৃথক দুই গাড়ীতে মুন্সীগঞ্জ আর নারায়নগঞ্জ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। আর মোল্লা চাচা আর কামারুজ্জামান চাচাকে এক সাথে এক গাড়ীতে কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। আবারও এক সাথে তারা।
গোটা বিচার চলাকালে সব সময় এই দুই জন এক সাথেই ট্রাইবুনালে আসতেন। মোল্লা চাচার মামলাটি সিরিয়ালী অাগে ট্রাইবুনাল-২ এ স্থানান্তরিত হয়, তার মামলাও আগে শেষ হয় আগে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকরও হয়। দেড় বছর সময় হয়তো লাগলো, কিন্তু কামারুজ্জামান চাচাও গত রাতে চলে গেলেন তাদের মানিকজোড় জুটির আরেক পার্টনার শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার কাছে। ক্ষনস্থায়ী এই পার্থিব দুনিয়ার মত করে তারা যেন জান্নাতের বাগানেও একই বৃন্তে দুটি ফুল হয়ে থাকতে পারেন, পরম করুনাময় আল্লাহর কাছে সেই দোয়াই করি।"
ফাসিঁর সময় বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাস দেন যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত নন্দিত জামায়াত নেতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী। তিনি লিখেন, -"১০:০১ মিনিটে অন্যায়ভাবে অবৈধ ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন ।?
শহীদ মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ...
দেখা হবে জান্নাতে ইনশাআল্লাহ ।
তিনি আবার লিখেন- "মোহাম্মদ কামারুজ্জামান আমার কে হন ?
কেন আমি তাঁকে ভালবাসি !?
কেন তাঁর জন্য আমার বুক ভেসে যাচ্ছে কান্নার জলে !!"
সোমবার সকালে মাসুদ সাঈদী লিখেন, ''যারা ষড়যন্ত্র করে কামারুজ্জামানকে হত্যা করেছে এবং ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছে ইতিহাস কখনো তাদেরকে ক্ষমা করবে না।
এই জালেম সরকারকে বিচারের নামে অবিচারের এবং পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ডের জন্য জনতার আদালতে একদিন জবাবদিহি করতে হবে।"
জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের আরেক ছেলে হাসান জামান সাফী তার ওয়ালে বাবার মৃত্যু নিয়ে বিস্তারিত লিখেন। হুবহু- "Inna-Lillahi-Wa-Inna-Ilaihi-Rajiun. May you Rest In Peace father.
Sheikh Hasina has successfully killed my father. Just because her father was murdered, she thinks everyone else’s father has to be murdered too. Framing an innocent 19 years old boy as Greater Myemensingh's chief organizer of Al-Badr, then torturing him for several years and finally hanging him to death for the crimes that were surely committed by someone else is worse than the crimes themselves. What this Witch has done to my father will never go unpunished.
"For more than four years you have suffered their torture but it wasn’t enough for them, they had to take your life. Sorry ABBU for not being able to save you from their tyranny. As a son I never expected a better father than you were. You will always remain as the greatest hero of my life. You were not only an amazing father but also a respected Islamic leader who has been loved by millions of people throughout the world. Everyone dies, no one lives forever but everyone isn’t lucky enough to be remembered as a martyr when they are gone. You will be in our hearts for eternity and there is no power which can take that away. This is not the end of you, as there are hundreds of thousands of people who follow your footsteps and a lot more will follow in the future. No matter what, finally you are out of this hellhole and I believe that men like you go to heaven after their death. Not only us family members but everyone who had the opportunity to know you are heartbroken because of your departure from this world. However, we are happy for you as well because you are in a much better place right now than you were."
Lastly, thanks a lot to all the lawyers who have tried their level best to save my father even at the very last second, the Jamaat and Shibir members who have risked their lives to protest against this tyranny, and also everyone else who has been with us through their prayers and supporting our family in various ways. We are extremely sorry for the lives that have been sacrificed trying to protest for my father. I know thanking you would not be enough and to be honest we can't even repay the debt we owe you but I can assure you one thing, none of your sacrifices will go in vein. We will always be grateful to you guys for what you have done."
বিষয়: বিবিধ
২০৭৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শহীদ মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ...
দেখা হবে জান্নাতে ইনশাআল্লাহ ।
তিনি আবার লিখেন- "মোহাম্মদ কামারুজ্জামান আমার কে হন ?
কেন আমি তাঁকে ভালবাসি !?
কেন তাঁর জন্য আমার বুক ভেসে যাচ্ছে কান্নার জলে !!"
মন্তব্য করতে লগইন করুন