নীলের তীরে লাল বর্ণের কবিতা

লিখেছেন লিখেছেন রায়ান মাসরুর ২২ আগস্ট, ২০১৩, ০৭:০৭:৩৪ সকাল

নতুন শতাব্দীর জঘন্যতম একটি হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়ে গেল মিশরে। রক্তস্নানে ধুয়ে গেছে রাবা, নাহদা স্কয়ার, রামসিস, হেলওয়ান, আলেকজান্দ্রিয়ার কালো রাজপথ। আসমা, আম্মার, হাবিবার মত প্রায় তিন হাজার ইখওয়ান কর্মী জেনে বুঝেই দাড়িয়ে গেছেন বুলডোজার আর ট্যাংকের সামনে। উপরে উড়ছিল হায়েনার প্রায় অর্ধশত জঙ্গী বিমান ও হেলিকপ্টার। ইখওয়ান তথা ব্রাদারহুড কর্মীদের আশংকা সেক্যুলার শাসকরা যদি দখলদারিত্বের শক্তিতে স্থায়ীত্ব পায় তবে গোটা মুসলিম বিশ্বে মুসলমানদের উত্থান আন্দোলনের বাতি আবার অস্তমিত হয়ে পড়বে।

মিশরের মাটিকে যারা এই আন্দোলনের মাধ্যমে পবিত্র করেছেন তাদের মনোবল আর ঈমানের দৃঢ়তায় মাত হয়ে গেছে গোটা দুনিয়া। দুনিয়াকে ভালোবেসে ভোগ দখলের লড়াইটা যেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে সেখানে জান্নাত লাভের তীব্র আকাংখা নিয়ে শাহাদাতকে গ্রহণ করার প্রতিযোগিতা আধুনিক বিশ্ব এর আগে কখনো দেখেনি।

শহীদি তামান্নায় যুবকরা হাতে আর বুকে যখন নিজের পরিচয় লিখছে কালো সাইনপ্যান দিয়ে তখন এ দৃশ্য দেখে কাপন ধরেছে শয়তানের মসনদে।

বিক্ষোভে অংশ নেয়া ফাইউম জেলার ছাত্র আহমদ আব্দুল্লাহর সাথে কথা বললে সে জানায় আমরা শহিদী তামান্না বুকে ধারন করে মুরসির পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। বিজয় দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ। সে তার মায়ের সাথে সপ্তাহে একবার কথা বলে। বেশী না বলার কারন জানতে চাইলে বলে আমিতো এসেছি শহীদ হতে যদি বেশী কথা বলি তা হলে হয়তো মায়ের জন্য টান চলে আসতে পারে,আমি হয়তো শহিদ হওয়ার সৌভাগ্য থেকে মাহরুম হয়ে যেতে পারি।তাই খুব কম কথা বলি। সে আরো জানায় আমি প্রথম গনহত্যায় ছিল। কিন্তু শহিদ হতে পারলাম না। দোয়া কর আমি যেন শহিদ হোয়ে যাই। এটাই ছিল তার সাথে আমার শেষ কথা পরে তাবুতে গিয়ে অনেক খুজেছি কিন্তু আর পাইনি।

এরকম হাজার হাজার ছাত্র বুকে কপালে হাতে জামা গেঞ্জিতে কসটিপে নাম ও জেলার নাম এবং শহিদ পরে যার কাছে লাশ পৌঁছে দেবে তার মোবাইল নাম্বার লিখে সেনা অভ্যুথানের বিরুদ্ধে শান্তিপুর্ন বিক্ষোভ করে যাচ্ছে। বর্বর গনহত্যার পরে দেখা গেছে অনেক লাশের শরিরে এগুলো লেখা।রাবেয়া স্কয়ারে অবস্থানকালে অনেক ছাত্র ও সাংবাদিক আমাকে বলেছে ভাই কসটিকটা একটু লাগিয়ে দেন।আমি দিয়েছি আর তাদের ঈমানী চেতনা দেখে অবাক হয়েছি।বয়স মাত্র আঠার থেকে পঁচিশ তার মধ্যে কি জজবা আল্লাহ দিয়েছেন।সত্যিই অবাক হওয়ার বিষয়।এত গনহত্যার পরেও মনোবলে কোন কমতি নেই মুরসি সমর্থক এই ছাত্রদের।

রাবা স্কয়ারে মেয়ে আসমার শাহাদাতের পর মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখার সেক্রেটারি ড মোহাম্মদ বেলতাগীর লেখা (মেয়েকে উদ্দেশ্য করে) চিঠি ইসলামী আন্দোলনের লাখো লাখো আসমা আর আম্মারদের নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে জান্নাতের।

চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “সমবয়সীদের মতো, আর কয়েকটা ছেলে মেয়ের মতো, তোমার চাওয়া পাওয়া ছিলোনা। তোমার চাওয়া পাওয়া সবসময়ই ছিল ভিন্ন। ক্লাসে প্রথম স্থানটা সবসময় তোমারই ছিলো।

বাবার এ ব্যস্ত জীবনে তোমাকে আমি খুব বেশী সময় দিতে পারিনি। তোমার সাথে বাবার খুব একটা বসা হয়ে উঠেনি। কারণ, আল্লাহ্ আমাকে ব্যস্ত রেখেছেন তাঁর কাজের জন্য। তোমার সাথে আমার শেষ দেখা হয় রাবা আল আদাওইয়া স্কয়ারে। তুমি আমাকে বলেছিলে ‘বাবা, আমাদের সাথে থাকলেও তোমাকে সব সময় ব্যস্তই দেখি। আমাদের জন্য কি কিছু সময় হবেনা?’ জবাবে আমি বলেছিলাম ‘এ ছোট্ট জীবনটা মনে হয় আমাদের দেখা সাক্ষাতের জন্য বা কিছু স্নেহের মুহূর্ত কাটানোর জন্য খুব কম। তাই আল্লাহ্র কাছে দোয়া করি বেহেস্তে যেন আমাদের দেখা হয় যেখানে সময় হবে অফুরন্ত’।

তোমার শাহাদাতের দুদিন আগের ঘটনা। স্বপ্নে দেখি তুমি ধবধবে সাদা বিয়ের ড্রেস পরে আছো। সফেদ ড্রেসে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছিলো। তুমি যখন আমার পাশে বসলে আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘ আজ কি তোমার বিয়ের রাত?’ তুমি হেসে জবাব দিলে ‘ না বাবা, এটা রাত নয়। এখন বিকেল’।

আমাকে যখন বলা হলো বুধবার বিকেলে রাবা স্কয়ারে তুমি শাহাদাত বরণ করেছো, আমি বুঝলাম কেনো সেদিন তুমি বলেছিলে এটাতো রাত নয়, বিকেল। এখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস আল্লাহর দরবারে তুমি শহীদ হিসেবে কবুল হয়েছো।

আমি তোমার জানাজায় শরীক হতে পারিনি। সে এক অব্যক্ত কষ্ট ও কান্না। আমি তোমার মুখ শেষবারের মতো জানাজা শেষে দেখতে পাইনি। কপালে শেষ চুমু দেয়ার সুযোগ আমি পাইনি। বড় ইচ্ছে ছিলো তোমাকে বলি ‘আসমা, বিপ্লব শেষ হয়নি। শুরু মাত্র। আমরা হয় জিতবো অথবা তোমার মতো শহীদ হবো’।

তোমার শরীর এবং আত্মা এখন অনেক উঁচুতে। অনেক উঁচুতে। ফেরাউনের বংশধরেরা বুলেট দিয়ে তোমাকে হত্যা করেছে। কিন্তু তোমার আত্মাকে তারা হত্যা করতে পারেনি। আমার বিশ্বাস মহান আল্লাহ তোমার আত্মাকে অনেক সম্মানিত করেছেন।

মা আমার,

আমি তোমাকে চিরবিদায় দেবোনা। তবে বিদায়। দেখা হবে ওপারে। আল্লাহর অসীম ভালোবাসা আর দয়ায় তোমার সাথে দেখা হবে বাবার জান্নাতে ইনশাল্লাহ। আপাতত এ ধুসর পৃথিবী থেকে বিদায় ”

বিষয়: বিবিধ

১১৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File