জার্মানীর ছিনতাই ও দূর্ভাগ্যের ইউরোপ
লিখেছেন লিখেছেন ভালবাসার বাংলাদেশ ৩০ মে, ২০১৩, ০১:৫০:১২ রাত
সিভিট ফেয়ারে যাওয়ার সখ ছিল অনেক দিনের।কিন্তু সময় ও সুযোগ না হওয়াতে যাওয়া হয়নি।এবার যখনই বেসিস থেকে মেইল পেলাম ২০১৩ (৫-৯ মার্চ) হ্যানওভারের সিভিট ফেয়ারে ইপিবির মাধ্যমে অংশগ্রহণ করতে পারবে বেসিস মেম্বাররা, সাথে সাথে আবেদন করলাম।বাংরাদেশের সরকারী প্রতিষ্ঠানকে মানুষ সমালোচনা করলেও অতীতে ইপিবির সাথে অংশ নেওয়া সব স্মৃতিই সুখকর।আমার মনে আছে, ২০১২ সালে ডুবাইতে হওয়া জিটেক্স ফেয়ারে আমি ষ্টল ফাকা রেখে বের হয়ে গেলে ইপিবির কর্মকর্তারা আমার হয়ে দায়িত্ব শুধু পালন করেনি,সেই সাথে আমি ফিরে আসা পর্যন্ত ভিসিটরকে বসিয়ে রেখেছিল।
যাই হোক, আমার ভিসা আগে হলেও সাথের কয়েকজন বন্ধুর ভিসার পর টিকেট কাটব বলে অপেক্ষা করাতে একেবারে শেষ মূহুর্তে ১ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা দিয়ে টার্কিশ এয়ার লাইন্সের ঢাকা -হেনওভার-ঢাকা টিকেট করতে হলো।কিন্তু আগে করলে এই টিকেটই করতে পারতাম ৮৫ হাজারে!দূর্ভাগ্যের শুরু এখানে।এরপর যে বন্ধুর জন্য দেরীতে টিকেট কাটলাম সে নিজের থাকার ব্যবস্থা করেছে,আমি যখন রওনা দিচ্ছি তখনও আমার থাকার ব্যবস্থা নেই।তারাতাড়ি শেষ মূহুর্তে হোটেল খুজে কোথায়ও পেলাম না।কেননা,সব হোটেল সিভিটের রাস সিজন হওয়াতে ফাকা নেই।শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন ৫০ ইউরোতে হোষ্টেল.কম এ ১টা বেডের বুকিং দিলাম!
তুরুষ্কে ট্রেনজিট করে হ্যানওভারে পৌছলাম সকাল ১০টার দিকে।হোষ্টেল.কম এর বেডের অবস্থা দেখেই মন খারাপ হয়ে গেল।তিন তালা বেডের নিচের তালায় আমাকে থাকতে হবে।এর আগে কোন দেশে গিয়ে ন্যুন্যতম ৩ ষ্টার হোটেলের নিচে আমি থাকি নেই।আর এবার ভাগে পড়েছে একটা বেড।তাও নিজেকে শান্তনা দিলাম ৫-৯ তারিখ পর্যন্ত কষ্ট করে থাকতে পারলে ৯ তারিখেই জার্মানী ছেড়ে আশে পাশের দেশ গুলো ঘুরে ফিরে ১৬ তারিখে ব্যাক করে আবার রওনা দিতে পারব।অন্য জায়গায় ঠিক ভাল হোটেল পাব।
যাইহোক এখানে ল্যাপটপ হোষ্টেল কর্তৃপক্ষের জিন্মায় রেখে শুধু আইপেড আর ক্যামেরাটা নিয়ে মেলার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।মেলায় প্রথম দিন বেশ ভাল রেসপন্স পেলাম।মেলা শেষে হোষ্টেলে ফিরে দেখি আমি ছাড়া কেউ নেই।এবার আমি আইপেডটা হোষ্টেল কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়ে পাশে ষ্টেনটর নামক জায়গায় খেতে গেলাম।আমার মানি ব্যাগে ৪ হাজার ইউরো এবং বেশ কিছু ডলার ও ক্রেডিট কার্ড আছে।কিন্তু যেহেতু আমি ভেবেছি জার্মানী একটি সিকিউর কান্টি সেহেতু এটাকে আমি কোন ব্যাপার মনে করি নেই।ম্যাকডোনাল্ড থেকে একটি প্যাকেজ নিয়ে বাইরে বসে খাওয়া শুরু করলাম।খাওয়া শেষ করে যেই সিগেরেট ধরারাম ২টা ছেলে এসে আমার কাছে সিগেরেট চাইল।তাদের সিগেরেট দিতেই তাদের সাথে বেশ ভাল বন্ধত্ব হয়ে গেল।তাদের ছবি তুললাম বেশ কয়টা।তাদের সাথে কথা বলছি আর হাটছি।এই সময় তারা আমাকে নিয়ে গেল কয়েকটা শোকেসের সামনে।মানি শোকেসে মেয়ে সাজানো আছে।আমি বললাম,এখান থেকে চলো।ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ অসস্থিকর ছিল।ওরা আমাকে বলল,তাহলে কি বিয়ার খাবে?চলো এখানে কাছেই একটা বিয়ার শপ আছে।ওদের সাথে আগাতেই একটা মোটামুটি নির্জন গলিতে এসে বলল, তোমার ভিসিটিং কার্ডটা কি দেওয়া যাবে?আমি মানি বেগ বের করতেই একজন মানিবেগের উপর হামলে পড়ল।আমি মানি ব্যাগ রক্ষা করতে ঐছেলের হাত ধরতেই আমার হাতে খেলাম ছুড়ির আঘাত!অন্যছেলেটি আমার হাতে এবং বুকে লাথি মারাতে আমি পড়ে গেলাম।উঠে ওদের দৌড়ানো শুরু করলাম।ওরা দৌড়ে একটা গলিতে ঢুকে পড়ল।আমি একজনকে সব খুলে বলতেই আমাকে পুলিশ ষ্টেশনে নিয়ে গেল।পুলিশ সাথে সাথে বের হলো।কিন্তু কাউকেই আর খুজে পেল না।এরপর শুরু হলো কেস লেখার পালা।পুলিশ শুধু জার্মান ভাষা বুঝে!শেষে একজন ট্রেন্সলেটরকে আনা হলো।তাকে সব ঘটনা খুলে বলার পর কেস লিখে আমাকে দিল।আমার হাতে বেন্ডেজ করে দিল।সেই সাথে ছিনতাইকারীদের আমার ক্যামেরায় তোলা ছবি নিল ভবিষ্যতে ওদের খুজে বের করবে বলে!
আমাকে হোষ্টেল পর্যন্ত পৌছে দিল পুলিশের গাড়িতে।এর মাঝে আমি বাসায় কল করে বলে দিলাম আমার ক্রেডিট কার্ড সব বন্ধ করে দিতে এবং আমার ছিনতাই হয়েছে সেই তথ্য।
সকালে ঘুম ভাংগার পর শুরু হলো হাতে ব্যাথা।সেই সাথে ক্ষিদেও লাগল।কিন্তু আমার পকেটে ১টা ফুটো পয়সাও নেই।ট্রেনে করে ফেয়ারের দিকে রওনা হলাম।ফেয়ারে অংশগ্রহণকারীদের ট্রেনের টিকেট লাগে না।
ফেয়ারে পৌছে সবাইকে জানালাম।ইপিবির চ্যায়ারম্যানও ছিল।তিনি নিজে আমাকে নিয়ে আবার গেলেন পুলিশের কাছে,কোন কুল কিনারা করা যায় কিনা।পুলিশ জানাল,ফেয়ারের সময় হ্যানওভার একটা ক্রইম জোন হয়ে উঠে।ইউরোপের অন্য দেশ থেকে এসে এসব ক্রইম গুলো করে।তাদের কিছু করার থাকে না।আমাকে যারা ছিনতাই করেছিল ওরা হলো পোলেন্ড এর।
যাই হোক ইপিবির সবাই এবং অন্যরা সবাই দু:খ করল।আমি টিকেট চেইঞ্জ করে ৮ তারিখে রিটার্ন ডেট করলাম।দেশ থেকে আর্জেন্ট টাকা আনালাম।
বাকী দিন গুলোতে মেলায় কোন মনই বসলনা।ভিসিটরদের সাথেও কোন কনভার্সেশনেও গেলাম না।৮ তারিখে ফিরার সময় আমার ট্রেনজিট তুরুষ্ক।ভাবলাম ইস্তাবুলে একটু ঘুরে যাই।৩০ দিনের অন এরাইভাল ভিসা নিয়ে তুরুষ্কে ঢুকলাম।আমার সময় মাত্র ৮ ঘন্টা!তাই ইস্তাম্বুলেই ঘুরে আবার বেক করতে হবে।এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে একটু হেটেই এগুলাম।কয়েকটি ছবি তুললাম।এই সময় একটা গাড়ি এসে থামল।বলল এখানে ছবি তুলা নিষেধ।ছবি তুলেছ কেন?তোমার আইপেডটা দেও।ছবি ডিলিট করতে হবে।পূর্বের বাটপারদের কথা মনে হলো।কোন কথা না বলে দিলাম এক দৌড়।আবার এয়ারপোর্ট।এয়ারপোর্টে এসেই ইমিগ্রেশনে ঢুকে পড়লাম।এই সফর একটা কুফা সফর। তাই আর ঘুরা ঘুরী না করে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ মনে করলাম!
একসময় শাহাজালাল এয়ারপোর্টে এসে নামলাম এবং আমি সস্তির নিস্বেস ফেললাম!
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন