মিসরের ব্রাদারহুডের বর্তমান অবস্থার সাথে বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনৈতিক সাফলতা/ব্যার্থতার সমীকরণ

লিখেছেন লিখেছেন শামিল ০৩ জুলাই, ২০১৩, ০৯:৩৮:২৬ রাত

আবার সারভাইভাল অফ দ্যা ফিটেষ্ট এর স্টোরি!!!

গত ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন মিসরের তাহরির স্কয়ারের আন্দোলন শুরু হয়, তার পর থেকে টানা পনেরোটা দিন শুধু "আলজাজিরা", "বিবিসি", "সিএনএন" আর "এবিসির" দরজায় কডা নাডছিলাম চ্যানেল চেঞ্জ করে করে।

বহু নাটক, হিসেব নিকেশের পর আল জাজিরার ব্রেকিং নিউজে যখন বড করে 'রেভুলেশান' শব্দটা চলে এলো, তখন একজন সাধারন মিসরীয় মুসলমানের মত আমারও চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গিয়েছিলো। ঘাডের উপর চেপে বসা ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার পডাশুনা উপেক্ষা করে যে নিউজের প্রত্যাশায় তাকিয়ে ছিলাম ২১" বাক্সটার দিকে, 'আয়মান মহিয়ালদিন" নামের আলজাজিরার রিপোর্টার আমাকে প্রত্যাশিত সেই নিউজটা দিলো।

গত কয়েক দিনে মিসরের সেই রেভুলেশান আবারো সারভাইভাল অফ দ্যা ফিটেষ্টের সর্বশেষ চ্যালেঞ্জের মুখে দাডিয়ে গেছে। এর থেকে যদি মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড বেরিয়ে আসতে না পারে, তবে ব্রাদারহুডই শুধু আরেকবার ডুববে না, তাদের সাথে সাথে বাংলাদেশে থাকা ব্রাদারহুডের জ্ঞাতি ভাই জায়ামায়াতের রাজনীতিও ডুবে যাবে।

কারণ, একটা রেজাল্টলেস থিওরী যতই স্ট্রং হোকনা কেন, সেটা যদি সবদিক থেকে প্রোটেকটেড না হয়, তবে রেজাল্ট দিতে পারেনা।

জামায়াত যেহেতু ইসলামিক রেভুলেশান করতে চায়, সেহেতু তাদের রেভুলেশনারী মেন্টালিটি নিয়েই এগিয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিলো ইরানের মত। যেই পদ্ধতিতে ইরান ৮ বছরেই সফল হয়ে গেছে। অথচ জামায়াত সেই পথে যায়নাই। তারা হঠৎ ইকোনমিক সক্ষমতা অর্জন করতে শুরু করেছে, যেটা বেশ প্রশ্নবিদ্ধ মনে হবার যথেষ্ট কারন বিদ্যমান।

অথচ জামাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বোধকরি গত চল্লিশের দশকে। সেমতে তাদের আন্দোলনের বয়স প্রায় ৬০ বছর+ হবে। এতদিনেও তারা সফল হতে পারেনাই কেন?

¤ স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে তাদের অবস্থান নেবার কারনে, ও ৭১ সালে তাদের সমর্থনে সংঘটিত পাকি আর্মিদের কুকর্মের কারনে বাংলাদেশের সাধারন সমাজে গ্রহণযোগ্যতার অভাবে সৃষ্ট ব্যার্থতা?

¤ এটা কি তাদের থিওরীর ব্যার্থতা?

¤ নাকি সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙ্গে যাবার পর পুঁজিবাদী দুনিয়াতে সারভাইভ করার জন্য ইয়াহুদীদের মত ইকোনমিতে মাসল অর্জন করতে চাইছে তারা? পরে এই মাসল দিয়ে রাষ্ট্রকাঠামোকে নাডাবে?

¤ নাকি গোলাম আজম আগে তাবলীগের কুমিল্লা/রংপুর জেলার আমীর থাকার কারণে মস্তিষ্কে বদ্ধমূল হয়ে প্রেথিত থাকা পিসফুল চেঞ্জের একটা থিওরীকে রক্তাক্ত বিপ্লবের থিওরীর সাথে ৫০% + ৫০% করে একটা মাঝামাঝি রেজাল্ট আনতে চেয়েছে?

যাই হোক, গত ষাটের দশকে ব্রাদারহুডের যে পরিণতি হয়েছিলো জামাল নাসেরের আমলে, সেইরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন এখন জামাত। যদি তারা পরবর্তীতে ২০/৩০ অথবা ৪০/৫০ বছর যাবার পর মুসলিম ব্রাদারহুডের মত পিসফুল চেঞ্জ এনে ক্ষমতাতেও আসে, পারবে কুলিয়ে থাকতে? কারন, মানুষ একবার পুঁজীবাদের মজা পেয়ে গেলে, ব্যাক্তিস্বাধীনতার মজা পেয়ে গেলে পুনরায় শৃংখলিত হতে চাইবে না। কোন কারণে শৃংখলিত হলেও সেটা ছিডে বেরিয়ে আসতে চাইবে। এটাই স্বাভাবিক।

এই থিওরীর লাষ্ট স্টেজের বাস্তবতাটাই বুঝা যাবে বর্তমান মিসরে ব্রাদারহুডের অবস্থা থেকে। তুরস্কের "একে পার্টির" মত যদি সারভাইভাল অফ দ্যা ফিটেষ্টের শেষ এক্সামও অতিক্রম করে যেতে পারে মুরসির ব্রাদারহুড, তবে বোধকরি এটাকে একটি সফল থিওরী হিসেবে আখ্যা দেয়া যাবে ইরানের মত। যেভাবে তারা ইরাকের ঘাডে চেপে আক্রমন শানানো আমেরিকার মোকাবেলা করে সারভাইভাল অফ দ্যা ফিটেষ্টের এক্সাম উৎরিয়ে গেছে।

বিষয়: বিবিধ

২০৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File