সাভারের রানা প্লাজার ভয়াবহ ডিজাস্টার এবং একটি ফিউচার ইকুয়েশান।

লিখেছেন লিখেছেন শামিল ২৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:৫৪:৩৩ সন্ধ্যা

সাভারের রানা প্লাজার ৯ ফ্লোরের বিশাল একটি ভবন ধসে পডেছে। শত মানুষ মারা গেছেন। সহস্র মানুষ আহত হয়েছেন। ভিকটিম সবার সর্বোচ্চ কল্যান কামনায় দয়াময় আল্লাহর দরবারে দুয়া করছি।

বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে এই ঘটনার এনালাইস করেছেন। আমি শুধু আমার সামান্য নলেজ থেকে কিছু তথ্যএর আউটলাইন ও একটি ফিউচার ইকুয়েশান শেয়ার করতে চাচ্ছি। লেট'স চেক ইট আউট..…

বিশ্বের যেসব শহরের স্থাপনা মারাত্বক ঝুঁকির মাঝে আছে, ঢ়াকা তার মাঝে অন্যতম একটি। এর সাথে সাথে ঢ়াকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর, নারায়নগন্জ, নরসিংদী অন্যতম।

এর কারণ তিনটাঃ

(১) মাস পপুলেশান

(২) ভূমিকম্প ঝুঁকি

(৩) অনুপযুক্ত স্থাপনা নির্মান

¤ প্রথমটি নিয়ে বলার কিছু নাই। পলিটিশিয়ানদের এককেন্দ্রিক সেন্ট্রালাইজিং মেন্টালিটি আর ইন্ডিফিরেন্ট হেলথ পলিসি এটার জন্য ১০০% দায়ী।

¤ ভূমিকম্পের ঝুঁকিটা ইদানিং অনেক বেডে গেছে প্যাসিফিক ওকেনের কয়েকটি সুনামি ভাইব্রেশনের কারণে। সমুদ্রতটে থাকা যেই চ্যুতিগুলি অনেক পুরাতন, সেগুলি মাঝে মাঝেই ভূত্বকের ম্যাগনেটিক বিবর্তনের ফলে ম্যাপে নিদৃষ্ট জায়গা থেকে ধীরে ধীরে সরে যায়, আনকনভিন্সেবল শেকের কারণে আলোডিত হয়, এবং আরো অনেক অনেক কারণে এই আর্থকোয়াক হয় সী লেভেলে, যেটা সত্যিকারেই ভয়াবহ। যদি ইন্ডিয়ার আন্দামান, ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা বা জাভা, কিংবা শ্রীলংকার সী লেভেলে হিট করে, তবুও বাংলাদেশ পুরোপুরি নডে যায়।

আমার জানা মতে বাংলাদেশের ভূগর্ভে অনেক পুরাতন কিছু ভূচ্যুতি আছে টাঙ্গাইলের ভাওয়াল গড অঞ্চলে (যেটা ঢ়াকার খুবই নিকটবর্তী) এবং সিলেট সহ কিছু অঞ্চলে। ফলে এই দুই জায়গা থেকে যে কোন সময় আর্থকোয়াক হিট করতে পারে।

যদি কখনো টাঙ্গাইলের ভাওয়াল গড অঞ্চলের ভূ চ্যুতিতে শেক হয় এবং এটা যদি ৫/৬ রিখটার স্কেলেও হিট করে, তবে ঢ়াকার মিনিমাম ২৫% থেকে ৩০% বিল্ডিং মাটির সাথে মিশে যাবে। মিনিমাম ৬০% স্থাপনা ড্যামেজ হবেই। শতকরা অংশটা বেশি হবার সম্ভাবনাও আছে। দেড কোটি জনসংখ্যার এই ঢ়াকায় কি পরিমাণ মানুষ হতাহত হবে, চিন্তা করতে পারছেন?

৯ তালার এক রানা প্লাজাতে যদি হতাহতে সংখ্যা সহস্র ছাডিয়ে যায়, তবে ঢ়াকার ৩০% পিপলের মানে কি? কল্পনা করতে পারছেন?

গাণিতিক হিসাবে ৪৫ লাখ মানুষ হতাহত হবে!!!

এটা আরো ভয়াবহ হতে পারে ঢ়াকা ওয়াসার কারণে। ল্যুক গায়েজ। ঢ়াকায় দেড কোটি মানুষের যদি প্রতিদিনের নৈমিত্তিক গোসল, প্রাকৃতিক কাজ, খাওয়া সহ সব মিলিয়ে মিনিমাম যদি ১০ লিটার করেও পানি লাগে, (দশ লিটার পানিতে যে চাহিদা পূরণ হবেনা, এটা আমরা জানি) তবুও দৈনিক পানি চাহিদা দাডায় ১৫ কোটি লিটার!!! যার একমাত্র উপায় ভূগর্ভস্থ মিঠা পানি উত্তোলন। আর অতি সামান্য পরিমান যোগ হয় শীতলক্ষায়ার পানি রিফাইন করে। বুডিগঙ্গা তো বহু আগেই অনুপযুক্ত হয়ে গেছে।

ঢ়াকা ওয়াসা এখন ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ারের তৃতীয় স্তর থেকে পানি উৎপাদন শুরু করেছে। ৮০ এর দশকে ১ম স্তর এবং বিংশ শতাব্দীর গোডার দিকে ভূগর্ভস্থ দ্বিতীয় স্তরের পানির লেয়ার শেষ হয়ে গেছে। এদিকে মিঠা পানির সবচেয়ে বড সোর্স ভারতের সাথে বাংলাদেশের অভিন্ন নদীগুলার উজানে পরিকল্পিতভাবে বাধ তৈরি করে পারি আটকে দেয়াতে নদীতে ফ্লো নাই। ফলে ভূগর্ভে পানি জমা হয়ে পানির স্তর রিস্টোর হচ্ছেনা। আগামী ৫/৭ বছর পর ভূগর্ভস্থ পানির এই তৃতীয় স্তর ও যদি শেষ হয়ে যায়, তবে যে কি হবে, আল্লাহ মালুম! (কে জানে, হয়তো ইন্ডিয়ার সাথে ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে ফুলস্কেল মিলিটারি অপারেশনেও নামা লাগতে পারে আমাদের)

এবার বলি এটা কিভাবে এলার্মিং। যদি পূর্ণমাত্রায় রিখটার স্কেলের ৫/৬ মাত্রায় ও হিট করে, তবেও সাধারণ ক্ষতির তুলনায় দ্বিগুন হবে ভূগর্ভস্থ পানির ২ লেয়ার জায়গা খালি থাকাতে। শেক খাবার সাথে সাথে অতিমাত্রায় দূর্বল ও ভূগর্ভস্থা ফাঁকা লেয়ারগুলির উপরের সারফেস মাটি নিচের দিকে ধসে জাবে। ফলে অনেক বহুতল ভবনের নিচের অংশ মাটির নিচে ঢ়ুকে যাবে, ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

¤ অনুপযুক্ত স্থাপনা নির্মানের বিষয়ে কমবেশি অনেকেই জানেন। ঢ়াকায় বালু দিয়ে ডোবা/খাল/বিল ভরাট করে স্থাপনা নির্মান, সয়েল টেষ্ট না করেই স্থাপনা নির্মান, সয়েল টেষ্টের রিপোর্ট না মেনেই স্থাপনা নির্মান, ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা রিয়েল এস্টেট কোম্পানীর তৈরি ঝুকিপূর্ণ স্থাপনা, রাজউকের নিয়ম নাম মেনেই স্থাপনা নির্মান, ৫ ফ্লোরের ঢ়ালাই দিয়ে ৮ ফ্লোর বানানো, সঠিক মাত্রায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়াল না ব্যাবহার করা, অদক্ষ ইন্জিনিয়ার দিয়ে স্থাপনা নির্মান সহ বহু বহু আত্ববিধ্বংসী রিজনের কারণে ভয়ানক ঝুকিপূর্ণ স্থাপনা দাডিয়ে আছে ঢ়াকায়।

অথচ দেখার কেউ নাই।

রনি প্লাজার ইনসিডেন্ট ঘটায় সবাই সেই বিল্ডিংএর মালিক, ভবনের অফিস মালিকদের ধুইতেছেন। এক বারের জন্যেও আই লেভেল ব্রড করে এই ব্যাপারগুলা ভেবেছেন? বিকজ, ভাওয়ালের ভূত্বকে চ্যুতি যেহেতু আছে, সেহেতু আর্থকোয়াক আজ হোক আর কাল হোক, হবেই। ঢ়াকায় যেহেতু ভূগর্ভস্থ ২টি পানির লেয়ার খালি হয়ে গেছে, সেহেতু এখানে চেইন রিএকশনের কারনে দূর্বল সারফেস ধসে বিপর্যয়টা আরো মারাত্বক হবেই, আনকেইপাবল ম্যাটেরিয়াল আর এডিকোয়েট ফাউন্ডেশান না হবার কারণে ঝুকিপূর্ণ সয়েল সারফেসে বিল্ডিং যেহেতু আছে, সেহেতু সেটা ফল করবেই। কারো সন্দেহ আছে?

ভাবেন ভাইলোগ, ভাবেন। এই পরিস্থিতি হলে কি করবেন? এর জন্য দায়ী কারা হবে, এরকম ডিজাস্টার হলে কয় জন মানুষকে উদ্ধার করতে পারবে আমাদের টোটাল ড্যামেজ কনট্রোল ইউনিট? নোংরা রাজনীতি, আর ফয়দা লাভের বিজনেসে শিকার করে আমাদের কোথায় নিয়ে যাইতেছে পলিটিশিয়ানেরা? নিজেদের মাঝে কামডাকামডিতে ব্যাস্ত রেখে ভারত টিপাই বাধ, তিস্তা, ফারাক্কা, ফ্রি ট্রানজিট, বিডিআর মিউটিনি, সুন্দরবনের রামপাল সহ সবগুলা জায়গাতে পুন্দা মারা শেষ এক চেতনার শিশ্ন খাডা করিয়ে দিয়ে!!!

জাগেন ভাইলোগ, জাগেন। প্লিজ জাগেন।

বিষয়: বিবিধ

২৭৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File