শেখ পরিবার হচ্ছে একটি অভিশপ্ত ও খুনি পরিবার: আওয়ামী লীগ হচ্ছে কুলাংগারদের দল এবং শেখ হাসিনা কুলাংগারদের সভানেত্রী-তরেক রহমান

লিখেছেন লিখেছেন এম এন হাসান ২৫ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:১৬:৫৩ রাত



এই প্রথম তারেক রহমানের কোন প্রোগ্রামে গেলাম। বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমানকে দেখতে নয়,বিএনপির প্রতি অনুরাগ থেকেও নয়,গিয়েছিলাম বাংলাদেশের সম্ভাব্য ভবিষ্যতের রাষ্ট্রনায়কের মুখ থেকে বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনা জানতে।বলা হয়েছিল সেমিনারে বাংলাদেশের জন্য দিক নির্দেশনামুলক স্ট্রাটেজী নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হবে। কাছ থেকে তাকে দেখলাম।একটু খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটেন।বুঝতে অসুবিধা হয়না তার উপর কি নির্যাতন হয়েছে।একজন হাস্যজ্জোল,ভদ্র,নমনীয় মানুষ বলে মনে হয়েছে তাকে। ২৪ই আগষ্ট বিকেল ৫ টায় বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদ ইউকে নামে লন্ডনের কুইন মেরী ইউনিভার্সিটিতে বিএনপি'র একটি অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি "Strategy for A Prosperous Bangladesh" বিষয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।

যাওয়ার আগে একটু দ্বিধায় ছিলাম কেননা বিএনপি'র আভ্যন্তরীন কোন্দলে গত রমজানের ইফতার পার্টিতে তারেক রহমানের উপস্থিতিতেই তারা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পরার করার খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রোগ্রাম শুরুর জন্য নির্ধারিত সময়ের (বিকেল ৫:১৫ মিনিটে) মধ্যে প্রধান অতিথি (তারেক রহমান)সহ বাকী অতিথিরা এসে হাজির হওয়ায় ভাল লাগল।প্রোগ্রাম শুরু হল তারেক বন্দনা দিয়ে।তারেক রহমান ও ডক্টর মুমিন চৌধুরী ছাড়া বাকীদের তারেক বন্দনা একেবারে অসহনীয় পর্যায়ে বলে মনে হয়েছে। কিভাবে মানুষ পারে একটা মানুষের উপস্থিতিতে এতটা তেল মারতে...লজ্জায় আমিই বরং টেবিলের নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।যাক,এটাই নাকি তাদের প্রোগ্রামের ধরন।

রীতি অনুযায়ী প্রধান অতিথি সবার পরে বক্তব্য দেন।তার আগে "বিশেষ অতিথিগন" তেল মারেন প্রধান অতিথির।আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী আজ এর ব্যাতিক্রম ঘটেছে।তারেক রহমান ইফতার পার্টির 'মারামারি' থেকে শীক্ষা নিয়েছেন বলে মনে হল।নিজেই আয়োজকদেরকে সবার সামনে ডেকে বললেন আমি ১ থেকে দেড় ঘন্টা কথা বলব এবং অন্য সকল অতিথিদের আগেই,সবাইকে তার কথা শুনতে হবে।যাক,বক্তৃতা কে দেবে না দেবে এইসব নিয়ে যে হাঙ্গামা তারা করেন সেটা আপাতত ঘটলনা।তারেক রহমান শুরু করলেন।

অনুষ্ঠানটা পেশাজীবিদের হলেও,তিনি বক্তব্যকে দুটো ভাগে ভাগ করে শুরু করলেন। প্রথম ভাগে তিনি রাজনৈতিক ও কিছু ঐতিহাসিক বিষয়ে বক্তব্য রাখলেন। তার রাজনৈতিক আলোচনার থিম ছিল অগাষ্ট মাস কেন্দ্রিক বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেসকল বিতর্ক রয়েছে সেগুলোর ক্লেরিফিকেশন দেয়া।সংক্ষেপে তার রাজনৈতিক অংশের বক্তব্য নিন্মরুপ;

১। ১৫ ই অগাষ্ট: ১৫ ই অগাষ্টের জন্য জিয়াউর রহমানকে জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তিনি যুক্তি দেখিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।তিনি বলেছেন শেখ মুজিব জানতেন এমন একটি ঘটনা ঘটতে পারে সেজন্য তিনি ৩টি ট্যাংক নামানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ১৪ই আগষ্ট রাতে (কাদের সিদ্দিকির একটি আর্টিকেলকে তিনি রেফারেন্স হিসেবে নিয়েছেন)। জাসদ,ইনু,আনোয়ার হোসেন,কর্নেল তাহেরের ভুমিকা তিনি তুলে ধরেন এবং হাসিনাকে বলেন তিনি স্বয়ং তার পিতার খুনি ও খুনের প্লট যারা তৈরি করেছিলেন তাদেরকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।"কতটা নির্লজ্জ হলে একটা মানুষ তার পিতা ও পুরো পরিবারকে যারা খুন করল তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করতে পারেন,একমাত্র ক্ষমতার লোভেই এটা করা সম্ভব",হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তারেক এই মন্তব্য করেন। এরপর তিনি ৭ই নভেম্বরের সিপাহী-জনতা বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের সাহসী ভুমিকার কথাও বলেন।

২। ২১ আগষ্টের বোমা হামলা: ২১ আগষ্ট ২০০৪ সালে ঢাকায় আওয়ামীলিগের অফিসের সামনে যে বোমা হামলা হয় তার জন্য তিনি দাবী করেন শেখ হাসিনা সেই বিষয়ে জানতেন।তিনি বলেন ঐদিন জনসভা হওয়ার কথা ছিল মুক্তাঙ্গনে,সে লক্ষ্যে জনসভায় নিরাপত্তার লক্ষে সরকারের সকল প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল।কিন্তু জনসভা শুরুর মাত্র ২৪ ঘন্টা আগে আওয়ামীলিগ সভা মুক্তাঙ্গনে থেকে স্থান পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু এভিনিওতে নিয়ে যায়,ফলে সরকার নিরাপত্তার জন্য যে প্রস্তুতি দরকার ছিল সেটা নিতে পারেনি। শেখ হাসিনা যে হামলার কথা জানতেন সেটার উদাহরন দিতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন,শেখ হাসিনা বারবার আইভি রহমানকে গাড়িতে উঠতে বলেছিলেন কিন্তু তিনি উঠেননি,কারন গাড়িতে উঠলে হয়ত তিনি বেঁচে যেতেন।যেহেতু তিনি অন্য কাউকে আর বার বার গাড়িতে উঠতে বলেনি সেহেতু বুঝা যায় তিনি এমন একটি ঘটনা আগেই জানতেন।

পুরো বক্তৃতায় তিনি বর্তমান সরকারকে "অবৈধ সরকার", "অনির্বাচিত সরকার" এই শব্দগুলো বারবার উচ্চারিত করেছেন। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে নিয়ে কিছু আক্রমণাত্বক কথাও তিনি বলেছেন। শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক কোথাও কাউকে কুলাংগার বলে গালি দিয়েছিলেন,সেটার রেশ টেনে তারেক তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন; "আওয়ামী লীগ হচ্ছে কুলাংগারদের দল এবং শেখ হাসিনা সেই কুলাংগারদের সভানেত্রী"। শেখ মুজিবুর রহমানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, শেখ মুজিব চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীকে হত্যা করে যে রাজনীতি শুরু করেন আওয়ামীলিগ আজও সেটা জারি রেখেছে।শেখ হাসিনা হেফাজতে ইসলামীর লোকদেরকে যেভাবে হত্যা করেছে সে উদাহরনও টেনেছেন তারেক রহমান। তিনি বলেন; "শেখ পরিবার হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য একটি অভিশপ্ত ও খুনি পরিবার"।

শেখ মুজিব সম্পর্কে একটি নতুন ও কিছুটা "অদ্ভুদ" তথ্য দিয়েছেন তারেক রহমান।তিনি জানান শেখ মুজিব ১৯৭২ সালে যখন দেশে ফেরেন তখন তার পকেটে ছিল পাকিস্তানী পাসপোর্ট,আর এর মাধ্যমে যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজেদের সব উজার করে দিয়েছিল,তাকে দেখার জন্য,সংবর্ধনা দেয়ার জন্য এসেছিল তাদের সাথে তিনি মশকরা করেছেন।

পুরো বক্তব্যে তারেক রহমানকে একজন রাষ্ট্রনায়কচিত (স্টেটসম্যান) ভাব মর্যাদার মনে হলেও তার উপরোক্ত মন্তব্যগুলো খুবই বেমানান মনে হয়েছে।মনে হয়েছে বাংলাদেশে যে নোংরা রাজনীতির সংস্কৃতি চালু রয়েছে গত ৬ বছর বৃটেনে থেকে তার মধ্যে অনেকে বিষয়ে অনেক পরিবর্তন আসলেও প্রতিপক্ষকে অশ্লীল আক্রমণ করার সংস্কৃতিতে থেকে তিনি এখনো বের হয়ে আসতে পারেননি,যেটা একজন স্টেটসম্যানের থাকা জরুরী।

বক্তব্যের ২য় ভাগে তারেক রহমান বাংলাদেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাবনা,ভাবনা,চিন্তা তুলে ধরেন।এই অংশের বক্তব্য পুরোটাই তিনি পূর্ব থেকে লিখে আনা পেপার দেখে পড়ে শোনান।সেখানে তিনি দেশে আইনের শাসন,দুর্নিতী দমন, সুশাসন,অর্থনৈতিক উন্নয়ন,ঢাকার জানজট নিরোসনে ওবারগ্রাউন্ড রেইল চালু করন,বাংলাদেশের কয়েকটি শহরকে পৃথীবির বিখ্যাত কয়েকটি শহরের সাথে সংযোগ করে দেয়ার চিন্তার কথা বলেন।তিনি গ্রামোন্নয়নে কৃষির কথা বেশ জোড় দিয়ে আলোকপাত করেন।নারী ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা নিয়েও তার ভাবনা তুলে ধরেন।দেখে দেখে পড়ার কারনে এবং বক্তব্য অস্বাভাবিক দীর্ঘ হওয়ায় অনেকের মাঝেই এক পর্যায়ে কিছুটা বিরক্তের ভাব দেখা দেয়।এক্ষেত্রে তার দলীয় নেতা-কর্মিরা ক্ষণে ক্ষণে (ক্ষেত্র বিশেষে অহেতুক) হাত তালি দিয়ে উপস্থিত মেহমানদের জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করেন।

প্রোগ্রামের শেষের অংশটা ছিল কিছুটা বিশৃঙ্খল।তারেক রহমানের বক্তব্য শেষ হতেই কিছু নেতা কর্মি তার সাথে হাত মেলানোর জন্য তার টেবিলের কাছে ভীড় জমাতে চেষ্টা করেন।একই সাথে ভলন্টিয়াররা সবাইকে নিজ নিজ আসনে বসতে বলতে থাকেন।কিছুটা হট্টগোলের সৃষ্টি হতে দেখা যায়।

শেষের অংশে বিএনপি'র মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিষ্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীমের বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয়।শুরু হয় আবারো তৈল মর্দন.....বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মুহিদুর রহমান, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিষ্ট জগলুল হোসেইন, ইতিহাসবিদ ডক্টর মুমিন চৌধুরীও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। শিক্ষাবিদ ডক্টর এম এ মালেকের সভাপতির বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

বিষয়: বিবিধ

১২৪৬ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

258196
২৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:০৩
আবরণ লিখেছেন : এই তেল মর্দনকারীরা আগেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে নেতাদেরকে সাবধান হতে হবে।
258199
২৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:০৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে এই পোষ্টটি দেওয়ার জন্য।
আমাদের একটি বাজে সংস্কৃতি হচ্ছে মোসাহেবি বক্তব্য দেয়া। তারেক রহমান যখন প্রথম যুগ্ন মহাসচিব হন তখন একটি জেলা সম্মেলনে এই ধরনের তেলবাজিতে বিরক্ত হয়ে এক নেতা কে প্রশ্ন করে বসেন যে তার ইউনিয়নে কয়টি প্রাইমারি স্কুল তা তিনি জানেন কিনা! তবে দশ চক্রে ভগবান ও ভুত হয়ে যায়!!
১৪ই আগষ্ট ঢাকা শহর মুলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ ট্যাংক মোতায়েন এর ঘটনার সত্যতার সমর্থন সৈয়দ আলি আহসান এর লিখায় ও পাওয়া যায়। তিনি সেই রাতে পরিক্ষা নেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন এবং তার সাথে তৎকালিন ইউওটিসি অর্থাক বিএনসিসি এর দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার এর সাথে কথা হয়েছিল এবং তার কাছ থেকে তিনি এই বিষয়ে জেনেছিলেন বলে লিখেছেন।
258217
২৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:৩৯
সেলিম জাহাঙ্গীর লিখেছেন : এমন আতেলগিরি পোস্ট স্পষ্ট বলে দেয় এটা একটা ছাগু।
258226
২৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:০৭
হতভাগা লিখেছেন : এসব কথা বলে তারেক রহমান তার দলকে আরও বেশী বিপদে ফেলবে ।

নেতারা সবে মাত্র গর্ত থেকে বের হতে উঁকি ঝুঁকি মারছে ঠিক সেই মুহূর্তে তারেকের এইসব কথা বার্তা তাদেরকে আরও অনেক দিন গর্তেই ঢুকিয়ে রাখবে । এজন্যই তো খালেদা ঈদের পরে '' হেন করেঙ্গা , তেন করেঙ্গা '' বললেও বাস্তবে কিছুই করতে পারছেন না ।

তারেক তো পগার পার হয়ে গেছে । এসব দেশে এসে বলুক যদি সাহস থাকে ।
258250
২৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:০০
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালাম..

অ-নে-ক দিন পর সাক্ষাত দিলেন
বিরতি বেশী দীর্ঘ হলে বিস্মৃতির কারণ ঘটে!

তারেক রহমান আগের কাজ ফেলে রেখে পরের কাজে বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন-

আর তৈলশাস্ত্রের ছাত্ররা তাঁকে সামনে খুব একটা এগুতে দেবে বলে মনে হয়না

চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা শেয়ার করায় ধন্যবাদ-
জাযাকাল্লাহ Praying Praying
258290
২৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ০২:৪০
এম_আহমদ লিখেছেন : চালিয়ে যান। সাথে আছি।
258398
২৬ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:২৪
ইবনে হাসেম লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই। অনেকদিন পর এলেন ব্লগে । তবে যা জানালেন, তাতে আশান্বিত হবার তেমন কোন লক্ষণ দেখছিনা। আল্লাহ কবে যে আমাদের গুনাহের শাস্তি রদ করে এগিয়ে যাবার পথ দেখাবেন তা তিনিই ভালো জানেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File