মহাজোট সরকারের ইসলামবিদ্বেষ
লিখেছেন লিখেছেন পৃথিবী থেকে ১৫ মে, ২০১৩, ০৯:২০:৫০ সকাল
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার মুখে ইসলামপ্রীতির কথা বললেও একের পর এক ঘটনায় তাদের ইসলামবিদ্বেষই প্রমাণিত হচ্ছে। মহাজোটের ইসলামবিদ্বেষের সর্বশেষ প্রমাণ হচ্ছে ইন্টারনেটে মহানবী (সা.) সম্পর্কে কুত্সা রটনাকারী দুই ব্লগারকে জামিনে মুক্তি দেয়া। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৌশলগত কারণে তাদের গ্রেফতার করা হলেও কারাগারে তারা ছিলেন জামাই আদরে।
অথচ ইসলামের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের কারণে মহাজোট সরকার দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক আমার দেশ বন্ধ করে দিয়েছে এবং বরেণ্য সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৯টি মামলা করা হয়েছে।
শুধু আমার দেশ নয়, ইসলামের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিতি দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচারও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
কুকুরের মাথায় টুপি পরানোসহ আওয়ামী লীগের ইসলামবিদ্বেষী চরিত্র পুরনো হলে এর ভয়ঙ্কর প্রকাশ ঘটে শাহবাগে। সেখানে মহাজোট সমর্থক কিছু তরুণ ইসলামবিদ্বেষের নিকৃষ্টতম নজির স্থাপন করলেও তাদের সহায়তায় পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র মরিয়া হয়ে ওঠে। কথিত গণজাগরণ মঞ্চের আয়োজকদের ইসলামবিদ্বেষের কথা ব্যাপকভাবে প্রচারের পরও মহাজোট সরকার তাদের জামাই আদরে শাহবাগে রাখে। সরকারি উদ্যোগে তাদের জন্য মানসম্মত খাবার, পানীয়, বিনামূল্যে চিকিত্সা ও টয়লেট সুবিধাসহ বিলাসী জীবনের ব্যবস্থা করা হয়। শাহবাগ অবরুদ্ধ করে কয়েক মাস নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শাহবাগি নেতাদের গানম্যান দিয়েও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেয়া হয়।
কুখ্যাত নাস্তিক ব্লগার রাজিব হায়দার ওরফে থাবা বাবা মারা যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ‘শহীদ’ বলে মন্তব্য করেন।
সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন শাহবাগিদের জন্য পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করা হলেও সরকারের দ্বিমুখীনীতি দেখা যায় ইসলামপন্থীদের ক্ষেত্রে।
রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ ব্যয়ে শাহবাগে কয়েকমাস অবস্থান, মিছিল সমাবেশ, আনন্দফুর্তি করার ব্যবস্থা করলেও ইসলামপন্থীদের ক্ষেত্রে সরকারের রুদ্র মূর্তি ধারণ করে। তাদের বিরুদ্ধে হামলা, মামলা দিয়েই সরকার ক্ষান্ত হয়নি; ৬ মে ভোর রাতে ঘুমন্ত ও ইবাদতরত মুসল্লিদের ওপর চালানো হয় ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা।
নাস্তিক ব্লগাররা কারাগারে জামাই আদরে, নিম্ন আদালত থেকেই জামিন : সরকার জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য শাহবাগি কয়েক নাস্তিক ব্লগারকে গ্রেফতার করলেও কারাগারে তাদের জামাই আদরে রাখা হয়। লোক দেখানোর জন্য তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়। তবে তাদের ওপর কোনো নির্যাতন চালানো হয়নি। কিছুদিন কারাগারে থাকার পর নিম্ন আদালত থেকেই এদের দুজন রোববার জামিন পেয়েছে। এরা হলো ব্লগার রাসেল পারভেজ ওরফে অপবাঘ এবং সুব্রত শুভ ওরফে লালু কসাই। অথচ ইসলামপন্থী কারও নিম্ন আদালত থেকে জামিন পাওয়া প্রায় বিরল ঘটনা ।
ইসলামের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের কারণে সরকার মিথ্যা মামলায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার করে এবং রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর পৈশাচিত নির্যাতন চালায়। তার ওপর বর্বরতার মাত্রা এতটা ভয়াবহ ছিল যে তার বেঁচে থাকা নিয়েই আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল।
একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকের বরেণ্য সম্পাদকের ক্ষেত্রে সরকার এমন হিংস্র হলেও এসব নাস্তিক ব্লগারের ক্ষেত্রে তার কিছু করা হয়নি। লোহার নখের আঘাতে মাহমুদুর রহমানের মতো তাদের শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়নি। মাহমুদুর রহমানের মতো তাদের ইলেকট্রিক শকও দেয়া হয়নি।
আদালতে হাজির করার সময় এসব স্বঘোষিত ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগারের যেসব ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে তাতে স্পষ্ট যে রিমান্ডে এবং কারাগারে এসব নাস্তিক ব্লগারকে সরকার যথেষ্ট সমাদর করেছে।
তাদের মাহমুদুর রহমানের মতো দিনের পর দিনও রিমান্ডে থাকতে হয়নি। ইসলামের পক্ষে আপসহীন ভূমিকা গ্রহণের কারণে মাহমুদুর রহমানকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে ২৪ দিনের রিমান্ডে চেয়েছিল পুলিশ। আদালত তাকে ১৩ দিনের রিমান্ডে পাঠায়। তার জীবন বাঁচাতে রিমান্ড বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হলেও আদালত এ আবেদন নাকচ করে দেয়।
শাহবাগ ও শাপলা চত্বর : শাহবাগে তিন মাসেরও বেশি সময় অবস্থান বজায় রাখে কথিত গণজাগরণ মঞ্চ। সেখানে তাদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা খাবার, পানীয় এবং পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। ইসলামবিরোধী শাহবাগিদের সুবিধার্থে দীর্ঘ সময় অত্যন্ত ব্যস্ত শাগবাগ চত্বর অবরুদ্ধ করে রাখে সরকার।
তবে ইসলামপন্থী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ক্ষেত্রে সরকারের এ ‘কমনীয় রূপ’ আর ধরে রাখতে পারেনি। তাদের শাপলা চত্বরের সমাবেশ নিয়ে মহাজোট সরকারের গা জ্বালা শুরু হয়। সমাবেশের আগে নানা ধরনের অপপ্রচার ও পদে পদে বাধার সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হয়নি সরকার। শাপলা চত্বরে মাত্র একটি রাতের অবস্থানকেও সহ্য করতে পারেনি ইসলামবিদ্বেষী মহাজোট সরকার।
৬ মে ভোররাতে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের ওপর ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা চালিয়েছে মহাজোট। এতে অন্তত ৩ হাজার মুসল্লি নিহত হয়েছেন বলে হেফাজতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অনেক আলেম ও হাফেজও ছিলেন।
শাহবাগি ইমরানকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা, ধর্মীয় নেতারা কারারুদ্ধ : বাংলাদেশের সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন শাহবাগি ইমরান ও তার সহযোগীদের সরকার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনা তাদের সমাবেশে লোক জড়ো করা হয়েছে। ইমরানকে গানম্যান দিয়ে নিরাপত্তা দিচ্ছে সরকার। কিন্তু এ মহাজোট সরকারই আবার আলেমদের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ক্রাকডাউন চালাচ্ছে। শাপলা চত্বরে গণহত্যার পরও সরকারের জিঘাংসা থামেনি। এরপর হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীসহ আলেমদের গ্রেফতার করেছে, রিমান্ডে নিয়েছে। সরকার ১৬টি মামলায় লক্ষাধিক হেফাজতকর্মীকে আসামি করেছে। এদের বেশিরভাগই আলেম।
ইসলামন্থী তিনটি গণমাধ্যম আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধ : ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে শাহবাগের প্রথম মহাসমাবেশেই শাহবাগিরা দেশের বহুল প্রচারিত আমার দেশ-এর পাশাপাশি ইসলামপন্থী দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশন বর্জনের দাবি করেছিল। তাদের অভিযোগ, ইসলামের পক্ষে জোরালো অবস্থান গ্রহণকারী এসব গণমাধ্যম নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী।
সরকার শাহবাগিদের কথাই রেখেছে। প্রথমেই আমার দেশ বন্ধ করা হয়। এজন্য বহু খোঁড়া যুুক্তি দেখানো হলেও কোনো ‘যুক্তি’ দেখানো ছাড়াই দিগন্ত ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। মূলত শাপলা চত্বরে আলেম নিধনের খবর প্রচারের কারণেই ৬ মে শেষরাতে সরকার দিগন্ত ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়।
ইসলামের পক্ষে আপসহীন ভূমিকার কারণে মাহমুদুর রহমানের ওপর বর্বর নির্যাতন : আমার দেশ-এর সফল সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়েছিল বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপ কেলেঙ্কারি আমার দেশ-এ প্রকাশের পর। কিন্তু তখনও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। এর প্রায় চর মাস পর তাকে গ্রেফতার করা হয় যখন শাহবাগিদের ইসলামবিরোধী অপকর্ম নিয়ে আমার দেশ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামের জন্য জীবন বাজি রাখা সংগঠন হেফাজতে ইসলামের বিস্ময়কর উত্থান ঘটে। মূলত ইসলামের পক্ষে অভূতপূর্ব গণজাগরণে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে সরকার মাহমুদুর রহমানের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায় এবং হেফাজতে ইসলামের আলেমদের ওপর চালানো হয় নিষ্ঠুরতম গণহত্যা।
বিষয়: বিবিধ
১১৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন