আল কুর’আনে ‘মুরতাদ’ সম্পর্কিত আয়াতসমূহ :

লিখেছেন লিখেছেন ধূমকেতু ৩০ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:০৯:২১ রাত

(পর্ব-২)

পবিত্র কুর’আনে মুরতাদ, মুনাফিক ও যিনদীকের শাস্তির বিধানসম্পর্কিত আয়াতসমূহ

যে সমস্ত আয়াতে দুনিয়ার শাস্তির প্রসঙ্গ এসেছে, সেই সকল আয়াত সমূহ এবার তুলে ধরা হলো।

আয়াতঃ১ (আল্লাহ্, রাসূল, রাসূলের স্ত্রীগণ, সাহাবীগণ এবং মু’মিন পুরুষ-নারীকে কষ্ট দেয়া প্রসঙ্গে)

“(৫৭) যারা আল্লাহ্ ও তার রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ্ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।

(৫৮) যারা বিনা অপরাধে মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।” (৩৩নং সূরা আহযাব, আয়াতঃ ৫৭-৫৮)

ব্যাখ্যাঃ (রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে যে কোনো প্রকারে কষ্ট দেয়া কুফুরী।)

উক্ত আয়াতে কয়েকটি বিষয় লক্ষনীয়।

প্রথমত, আয়াতে বলা হয়েছে ‘আল্লাহকে কষ্ট দেয়া’র কথা। এর অর্থ কি? এর অর্থ হলো-এমন কোনো কাজকর্ম করা ও কথাবার্তা বলা, যা স্বভাবতঃ মর্মপীড়ার কারণ হয়ে থাকে। আল্লাহ্ তা’আলার পবিত্র সত্তা প্রভাব-গ্রহণজনিত সকল ক্রিয়ার উর্ধ্বে। তাকে কষ্ট দেয়ার সাধ্য কারও নেই। কিন্তু স্বভাবতঃ পীড়াদায়ক কাজকর্মকে এখানে পীড়া ও কষ্ট বলে ব্যক্ত করা হয়েছে।

দ্বিতয়িত, ‘রাসূলের কষ্ট দেয়া’র কথা বলা হয়েছে। সাহাবীদের কষ্ট দিলে রাসূলের কষ্ট হয়, রাসূলকে কষ্ট দিয়ে আল্লাহর কষ্ট হওয়ার শামিল। যেমন-

আবদুর রহমান ইবনে মুগাফফাল মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত।

“রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, আমার সাহাবীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরে তাদেরকে সমালোচনার লক্ষ্যস্থলে পরিণত করো না। কেননা, যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালবাসে, সে আমার ভালবাসার কারণে তাদেরকে ভালবাসে আর যে তাদের সাথে শত্রুতা রাখে, সে আমার সাথে শত্রুতা রাখার কারণে শত্রুতা রাখে। যে তাদেরকে কষ্ট দেয়, সে আমাকে কষ্ট দেয়, যে আমাকে কষ্ট দেয়, সে আল্লাহকে কষ্ট দেয়, যে আল্লাহকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ্ সত্বরই তাকে পাঁকড়াও করবেন।” (তফসিরে মাযহারী)

আলোচ্য আয়াতটি হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপের ব্যপারে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্ণনা করেন। হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপের দিনগুলোতে আবদুল্লাহু ইবনে উবাই মুনাফেকের ঘরে কিছু লোক সমবেত হয়ে এই অপবাদ প্রচার ও প্রসারিত করার কথাবার্তা বলত। তখন রসূলল্লাহ্ (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামের কাছে অভিযোগ পেশ করে বলেনঃ ‘লোকটি আমাকে কষ্ট দেয়।’ (তফসিরে মাযহারী)

আয়াত এবং এর ব্যাখ্যা দ্বারা স্পষ্ট জানা গেল যে, নবীগণের স্ত্রীর সম্পর্কে কটুক্তি করলে বা মিথ্যা অপবাদ দিলে নবীর কষ্ট হয়, আর নবীর কষ্ট হলে নবীর প্রেমিক সাহাবীগণ তৎকালীন মুনাফিক ‘আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাই’-এর উপর কি আচরণ করে।

(কোনো মুসলমানকে শরীয়তসম্মত কারণ ব্যতিরেকে কষ্ট দেয়া হারাম।)

৫৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, যে কোনো মুসলমানকে কষ্ট দেয়া ও অপবাদ দেয়া হারাম (যদি তারা আইনতঃ এর যোগ্য না হয়)। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেনঃ “কেবল সেই মুসলমান, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে, কেউ কষ্ট না পায় আর কেবল সে-ই মু’মিন, যার কাছ থেকে মানুষ তাদের রক্ত ও ধন-সম্পদের ব্যাপারে নিরুদ্বেগ থাকে।” (তফসিরে মাযহারী)

আয়াতঃ২ (মুসলমান হওয়ার পর ধর্ম ত্যাগের শাস্তি মৃত্যুদন্ড)

“(৬০) মুনাফেকরা এবং যাদের অন্তরে রোগ আছে এবং মদীনায় গুজব রটনাকারীরা যদি বিরত না হয়, তবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আপনাকে উত্তেজিত করব। অতঃপর এই শহরে আপনার প্রতিবেশী অল্পই থাকবে।

(৬১) অভিশপ্ত অবস্থায় তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, (তাদেরকে) ধরা হবে এবং প্রাণে বধ করা হবে।

(৬২) যারা পূর্বে চলে গিয়েছে, তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল আল্লাহর রীতি। আপনি আল্লাহর রীতিতে কখনও পরিবর্তন পাবেন না।” (৩৩নং সূরা আহযাব, আয়াতঃ ৬০-৬২)

ব্যাখ্যাঃ (মুরতাদ আর সাধারণ কাফেরদের শাস্তির ভিন্নতা।)

প্রথমত, আলোচ্য আয়াতে মুনাফিকদের দ্বিবিধ দুষ্কর্মের উল্লেখ করার পর তা থেকে বিরত রা হলে এই শাস্তির বর্ণনা করা হয়েছে যে, “ওরা যেখানেই থাকবে অভিসম্পাত আর লাঞ্ছনা ওদের সঙ্গী হবে এবং যেখানেই পাওয়া যাবে, গ্রেফতার করতঃ হত্যা করা হবে”। বস্তুত এটা কোনো সাধারণ কাফেরদের শঅস্তি নয়। কুর’আন ও সুন্নাহর অসংখ্য বর্ণনা সাক্ষ্য দেয় যে, কাফেরদের জন্য শরীয়তে এরূপ আইন নেই; বরং তাদের জন্য আইন এই যে, প্রথমে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হবে, তাদের সকল সন্দেহ দূর করার চেষ্টা করা হবে। এর পরও ইসলাম গ্রহণ না করলে মুসলমানদের অনুগত যিম্মী হয়ে থাকার আদেশ দেয়া হবে। তারা এটা মেনে নিলে তাদের জানমাল ও ইযযত-আবরুর হেফাযত করা মুসলমানদের মতই ফরজ হয়ে যাবে। তবে কেউ যদি তা না মানে এবং যুদ্ধ করতে উদ্যত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ আছে।

কিন্তু আলোচ্য আয়াতে মুনাফিকদেরকে সর্বাবস্থায় বন্দী ও হত্যার আদেশ শোনানো হয়েছে। এর কারণ এই যে, ব্যাপারটি ছিল মুনাফিকদের, তারা নিজেদেরকে মুসলমান বলত। কোন মুসলমান ইসলামের বিধানাবলীর প্রকাশ্য বিরোধিতা করলে শরীয়তের পরিভাষায় তাকে ‘মুরতাদ’ বলা হয়। তার সাথে শরীয়তের কোন আপোষ নেই। তবে সে তওবা করে মুসলমান হয়ে গেলে ভিন্ন কথা। নতুবা তাকে হত্যা করা হবে। রসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সুস্পষ্ট উক্তি এবং সাহাবায়ে কেরামের কর্মপরাম্পরা দ্বারা এটাই প্রমাণিত। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, মুসায়লামা কাযযাব ও তার দলের বিরুদ্ধে সাহাবায়ে-কেরামের ঐক্যমত্যে জিহাদ পরিচালনা এবং মুসাফলামার হত্যা এর যথেষ্ট প্রমাণ।

আয়াতের শেষে একে আল্লাহ্ তা’আলার শাশ্বত রীতি বলা হয়েছে। এ থেকে জানা গেল যে, পূর্ববর্তী পযগম্বরগণের শরীয়তেও মুরতাদের শাস্তি হত্যাই ছিল।

বিষয়: বিবিধ

১৫৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File